এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগ ও সমযোজী যৌগের পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎযোজী যৌগ ও সমযোজী যৌগের পার্থক্য লেখো।
তড়িৎযোজী যৌগ ও সমযোজী যৌগের মধ্যে পার্থক্য –
তড়িৎযোজী যৌগ | সমযোজী যৌগ |
তড়িৎযোজী যৌগ বিপরীতধর্মী আয়নের সমবায়ে গঠিত। | সমযোজী যৌগে আয়নের কোনো অস্তিত্ব নেই। |
তড়িৎযোজী যৌগ গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে। | সমযোজী যৌগ অবস্থাতেই তড়িৎ পরিবহণ করে না। |
তড়িদ্যোজী যৌগ সাধারণত জলে দ্রাব্য কিন্তু জৈব দ্রাবকে অদ্রাব্য। | সমযোজী যৌগ সাধারণত জলে অদ্রাব্য কিন্তু জৈব দ্রাবকে দ্রাব্য। |
তড়িদ্যোজী যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত বেশি। | সমযোজী যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক কম। |
তড়িদ্যোজী যৌগে দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। | সমযোজী যৌগে ধীরে ধীরে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। |
সাধারণ উষ্ণতায় তড়িদ্যোজী যৌগ কেলাসিত কঠিন পদার্থ। | সমযোজী যৌগ সাধারণত তরল বা গ্যাসীয়। |
তড়িদ্যোজী বন্ধন দৃঢ় নয় এবং বন্ধনের নির্দিষ্ট অভিমুখ থাকে না। | সমযোজী বন্ধন দৃঢ় এবং বন্ধনের নির্দিষ্ট অভিমুখ আছে। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তড়িৎযোজী যৌগ ও সমযোজী যৌগ বলতে কী বোঝায়?
তড়িৎযোজী যৌগ – যেসব যৌগ বিপরীত আধানযুক্ত আয়নগুলির মধ্যে স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বলের (electrostatic force of attraction) মাধ্যমে গঠিত হয়, তাদের তড়িৎযোজী যৌগ বলে। উদাহরণ – NaCl, CaO
সমযোজী যৌগ – যেসব যৌগ পরমাণুগুলির মধ্যে ইলেকট্রন জোড় ভাগাভাগি (sharing of electrons) করে গঠিত হয়, তাদের সমযোজী যৌগ বলে। উদাহরণ – H₂O, CH₄
তড়িৎযোজী যৌগ জলে দ্রাব্য কিন্তু সমযোজী যৌগ জলে অদ্রাব্য হয় কেন?
তড়িৎযোজী যৌগ জলে দ্রাব্য কিন্তু সমযোজী যৌগ জলে অদ্রাব্য হয় কারণ –
1. তড়িৎযোজী যৌগ – জল একটি মেরু দ্রাবক। এটি তড়িৎযোজী যৌগের আয়নগুলিকে হাইড্রেশন (hydration) প্রক্রিয়ায় আবদ্ধ করে এবং তাদের মধ্যকার শক্তিশালী আকর্ষণ বল ভেঙে দেয়। ফলে যৌগটি জলে দ্রবীভূত হয়।
2. সমযোজী যৌগ – এগুলি সাধারণত অমেরু বা দুর্বল মেরুযুক্ত হয়। জলের সাথে তাদের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল দুর্বল হওয়ায় তারা জলে দ্রবীভূত হতে পারে না। তবে কিছু সমযোজী যৌগ (যেমন – চিনি, HCl) জলে দ্রাব্য কারণ তারা জলের সাথে হাইড্রোজেন বন্ধন তৈরি করতে পারে।
গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় শুধুমাত্র তড়িৎযোজী যৌগই বিদ্যুৎ পরিবহন করে কেন?
গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় শুধুমাত্র তড়িৎযোজী যৌগই বিদ্যুৎ পরিবহন করে কারণ গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎযোজী যৌগের আয়নগুলি মুক্ত হয়ে চলাচল করতে পারে এবং এই মুক্ত আয়নের প্রবাহের মাধ্যমেই বিদ্যুৎ পরিবহন ঘটে। অন্যদিকে, সমযোজী যৌগে কোনো মুক্ত আয়ন থাকে না; শুধু ভাগ করা ইলেকট্রন থাকে, যা বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য উপযুক্ত নয়।
তড়িৎযোজী যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সমযোজী যৌগের তুলনায় বেশি হয় কেন?
তড়িৎযোজী যৌগে আয়ন-আয়ন আকর্ষণ বল (ionic bond) অত্যন্ত শক্তিশালী। এই শক্তিশালী আকর্ষণ বল ভাঙতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়, তাই তাদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি। অপরদিকে, সমযোজী যৌগে ভ্যান ডার ওয়ালস বল বা হাইড্রোজেন বন্ধনের মতো দুর্বল আন্তঃআণবিক বল কাজ করে, যা সহজেই ভাঙা যায়। তাই তাদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক তুলনামূলকভাবে কম।
সমযোজী যৌগ সাধারণত তরল বা গ্যাসীয় হয় কেন?
সমযোজী যৌগের অণুগুলির মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল খুব দুর্বল। তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই দুর্বল বল ভেঙে অণুগুলি সহজেই মুক্ত হয়ে যায় এবং যৌগটি তরল বা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। তবে হীরার (Diamond) মতো কিছু জালিকাবদ্ধ সমযোজী যৌগের গলনাঙ্ক অত্যন্ত বেশি, কারণ তাদের সম্পূর্ণ গঠন শক্তিশালী সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ।
বন্ধনের নির্দিষ্ট অভিমুখ থাকা বা না থাকার অর্থ কী?
বন্ধনের নির্দিষ্ট অভিমুখ থাকা বা না থাকার অর্থ হল –
1. সমযোজী বন্ধনের নির্দিষ্ট অভিমুখ থাকে – সমযোজী বন্ধন গঠনের সময় পরমাণুগুলি একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক কাঠামো (যেমন, রৈখিক, ত্রিকোণীয়) তৈরি করে। তাই এখানে বন্ধনের একটি নির্দিষ্ট দিক বা কোণ থাকে।
2. তড়িৎযোজী বন্ধনের নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই – তড়িৎযোজী বন্ধন শুধু বিপরীত আধানযুক্ত আয়নগুলির মধ্যে স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বল। এই আকর্ষণ সবদিকে সমানভাবে কাজ করে, তাই এর কোনো নির্দিষ্ট দিক বা কোণ নেই।
“তড়িৎযোজী বন্ধন দৃঢ় নয়” – এর সঠিক ব্যাখ্যা কী?
এটি আপেক্ষিক একটি ধারণা। সমযোজী বন্ধনের তুলনায় তড়িৎযোজী বন্ধন সাধারণত বেশি শক্তিশালী (যা তাদের উচ্চ গলনাঙ্ক থেকে বোঝা যায়)। তবে তড়িৎযোজী যৌগ ভঙ্গুর প্রকৃতির; আঘাত করলে সহজেই ফেটে বা ভেঙে যায়। তাই এখানে “দৃঢ় নয়” বলতে যৌগটির যান্ত্রিক দৃঢ়তা বোঝানো হয়েছে, রাসায়নিক বন্ধনের শক্তি নয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগ ও সমযোজী যৌগের পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন