তড়িৎচালক বল ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তড়িৎচালক বল ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎচালক বল ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তড়িৎচালক বল ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।

তড়িৎচালক বল ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।

অভ্যন্তরীণ রোধ থাকার জন্য একটি তড়িৎ কোশকে তড়িৎচালক বল (E) এবং এর সঙ্গে শ্রেণিতে যুক্ত রোধ অভ্যন্তরীণ রোধ (r) -এর সমবায় হিসেবে ভাবা যায়।

ধরা যাক, E তড়িৎচালক বল এবং অভ্যন্তরীণ রোধবিশিষ্ট একটি তড়িৎ কোশকে R রোধ বিশিষ্ট রোধকের সঙ্গে যুক্ত করে একটি তড়িৎবর্তনী তৈরি করা হল। K চাবিটি বন্ধ করলে বর্তনীটি সংযুক্ত হয় ও বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। বদ্ধ বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা I হলে,

তড়িৎকোশ ও তড়িৎকোশ যুক্ত বর্তনী

I=বর্তনীর তড়িৎচালক বলবর্তনীর মোট রোধ=ER+r

∴ E = IR + Ir,

এখানে IR = কোশটির প্রান্তীয় বিভবপ্রভেদ = V = বহিঃরোধ (R) -এর মধ্য দিয়ে একক ধনাত্মক আধানকে ধনাত্মক তড়িদ্দার থেকে ঋণাত্মক তড়িদ্দ্বারে নিয়ে যেতে কৃতকার্য।

Ir = v = তড়িৎ কোশের অভ্যন্তরে ঋণাত্মক তড়িদ্দ্বার থেকে ধনাত্মক তড়িদ্দ্বারে একক আধানকে নিয়ে যেতে কৃতকার্য।

E = V + v

∴ E – V = Ir

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তড়িৎচালক বল (EMF) এবং প্রান্তীয় বিভবপ্রভেদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী?

তড়িৎচালক বল (E) হল একটি কোশ দ্বারা প্রদত্ত মোট শক্তি, যখন এটি কোনো তড়িৎপ্রবাহ সরবরাহ করে না। অন্যদিকে, প্রান্তীয় বিভবপ্রভেদ (V) হল বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ থাকাকালীন সময়ে কোশটির দুই প্রান্তের মধ্যে প্রকৃত বিভব পার্থক্য।
সূত্র – E = V + Ir, যখন কোশ থেকে তড়িৎপ্রবাহ নেওয়া হয় (I > 0), তখন অভ্যন্তরীণ রোধের (r) জন্য কিছু শক্তি হারিয়ে যায় (Ir হিসাবে)। এই জন্যই প্রান্তীয় বিভবপ্রভেদ (V) সর্বদা তড়িৎচালক বল (E) থেকে কম হয়। শুধুমাত্র একটি খোলা বর্তনীতে (যখন I = 0), E = V হয়।

একটি কোশের “ভোল্টেজ ড্রপ” হওয়ার কারণ কী?

ভোল্টেজ ড্রপ হওয়ার অর্থ হল কোশের প্রান্তীয় বিভবপ্রভেদ (V) এর তড়িৎচালক বল (E) থেকে কমে যাওয়া। এর একমাত্র কারণ হল কোশের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রোধ (r)। যখন তড়িৎপ্রবাহ (I) প্রবাহিত হয়, তখন এই অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হতে জুল তাপের আকারে শক্তি হারায়। এই হারানো শক্তিকেই Ir আকারে প্রকাশ করা হয়, যা ভোল্টেজ ড্রপের পরিমাণ নির্দেশ করে (কারণ E – V = Ir)।

একটি কোশের তড়িৎচালক বল (E) কীভাবে পরিমাপ করা যায়?

যেহেতু একটি খোলা বর্তনীতে (যেখানে I = 0) কোশের প্রান্তীয় বিভবপ্রভেদ (V) তার EMF (E)-এর সমান, তাই আমরা একটি অত্যন্ত উচ্চ রোধযুক্ত ভোল্টমিটার ব্যবহার করে সরাসরি কোশটির দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য পরিমাপ করতে পারি। ভোল্টমিটারের রোধ যত বেশি হবে, এটি থেকে নেওয়া তড়িৎপ্রবাহ তত কম হবে (I ≈ 0), এবং পরিমাপকৃত V-এর মান E-এর আরও কাছাকাছি হবে।

কি অবস্থায় একটি কোশের প্রান্তীয় বিভবপ্রভেদ (V) তার তড়িৎচালক বল (E) -এর সমান হবে?

যখন বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ শূন্য (I = 0) হবে, অর্থাৎ কোশটি একটি খোলা বর্তনীতে (open circuit) থাকবে। তখন V = E – Ir সূত্র অনুযায়ী, V = E – (0 × r) = E হবে। এজন্যই ভোল্টমিটার দিয়ে EMF মাপতে হলে তা সরাসরি কোশের দুই প্রান্তে সংযোগ করতে হয়, যেখানে কোনো প্রবাহ থাকে না।

একটি কোশের অভ্যন্তরীণ রোধ (r) পরীক্ষামূলকভাবে কীভাবে নির্ণয় করব?

একটি ভোল্টমিটার এবং একটি পরিবর্তনশীল রোধ (রিওস্ট্যাট) ব্যবহার করে।
1. প্রথমে খোলা বর্তনীতে (open circuit) ভোল্টমিটার দিয়ে EMF (E) মাপুন।
2. তারপর একটি রিওস্ট্যাট সংযোগ করে একটি নির্দিষ্ট প্রবাহ (I) প্রতিষ্ঠা করুন এবং প্রান্তীয় বিভব (V) মাপুন।
3. সূত্র E = V + Ir থেকে পাই, r = (E – V)/I।
বিভিন্ন I ও V এর মান নিয়ে গ্রাফ আঁকলে আরও সঠিক মান পাওয়া যায়।

শ্রেণি ও সমান্তরাল সমবায়ে কোশ সংযোগ করলে তড়িৎচালক বল (E) এবং অভ্যন্তরীণ রোধ (r) কীভাবে পরিবর্তিত হয়?

শ্রেণি সমবায় – nটি সমান কোশের জন্য, মোট EMF = nE এবং মোট অভ্যন্তরীণ রোধ = n r হয়। উচ্চ ভোল্টেজ পেতে এটি ব্যবহার করা হয়।
সমান্তরাল সমবায় – nটি সমান কোশের জন্য, মোট EMF = E (অপরিবর্তিত) থাকে, কিন্তু মোট অভ্যন্তরীণ রোধ = r/n হয়। বেশি সময় ধরে একই ভোল্টেজে প্রবাহ পেতে (স্রোত ক্ষমতা বাড়াতে) এটি ব্যবহার করা হয়।

একটি কোশ থেকে সর্বোচ্চ শক্তি কীভাবে পাওয়া যাবে?

বহিঃরোধে (R) সর্বোচ্চ শক্তি স্থানান্তর হয় যখন বহিঃরোধের মান (R) অভ্যন্তরীণ রোধের (r) মানের সমান হয়, অর্থাৎ R = r।
1. এই অবস্থায়, কোশের দক্ষতা 50% হয় (অর্থাৎ অর্ধেক শক্তি বহিঃরোধে এবং অর্ধেক শক্তি অভ্যন্তরীণ রোধে তাপ হিসেবে নষ্ট হয়)।
2. এটি সর্বোচ্চ ক্ষমতা উপপাদ্য (Maximum Power Transfer Theorem) নামে পরিচিত।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তড়িৎচালক বল ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎচালক বল ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

উচ্চবিভব ও নিম্নবিভব বলতে কী বোঝো? কার্যের ধারণা থেকে তড়িৎবিভবের পরিমাপ কীভাবে করা হয়?

উচ্চবিভব ও নিম্নবিভব কী? কার্যের ধারণা থেকে তড়িৎবিভবের পরিমাপ কীভাবে করা হয়?

কুলম্বের সূত্রটি বিবৃত করো ও গাণিতিক রূপসহ ব্যাখ্যা করো।

কুলম্বের সূত্রটি বিবৃত করো ও গাণিতিক রূপসহ ব্যাখ্যা করো।

কুলম্ব ও esu -এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

কুলম্ব ও esu -এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তড়িৎচালক বল ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।

উচ্চবিভব ও নিম্নবিভব কী? কার্যের ধারণা থেকে তড়িৎবিভবের পরিমাপ কীভাবে করা হয়?

কুলম্বের সূত্রটি বিবৃত করো ও গাণিতিক রূপসহ ব্যাখ্যা করো।

কুলম্ব ও esu -এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ ও ধাতব পরিবাহীর কাকে বলে? তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ ও ধাতব পরিবাহী মধ্যে পার্থক্য