তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।
Contents Show

তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে তেভাগা আন্দোলন এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।

তেভাগা আন্দোলনের কারণ –

  • ভাগচাষিদের দুরাবস্থা – সারাবছর রোদে পুড়ে, জলে ভিজে যে কৃষক জোতদারের জমিতে নিজ খরচে ফসল উৎপাদন করত, বাঁটোয়ার সময় সে পেত উৎপন্ন ফসলের মাত্র অর্ধাংশ। এই অসহনীয় দুরাবস্থা থেকে কৃষকরা মুক্তি চাইছিল।
  • জমিদার শোষণ ও অত্যাচার জমিদার ও তার কর্মচারীরা প্রায়শই কৃষকদের ওপর আরোপ করত বৈধ-অবৈধ নানা কর ও উপকর।
  • কৃষক সভার ভূমিকা – 1936 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘সারা ভারত কিষান সভা’-র কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ নানাভাবে অত্যাচারিত কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে আন্দোলনের পথে চালিত করেন।

তেভাগা আন্দোলনের সূচনা –

1946 খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহাকুমার আটোয়ারি থানার রামচন্দ্রপুর গ্রামে তেভাগা আন্দোলনের সূচনা হয়।

তেভাগা আন্দোলনের দাবিসমূহ –

তেভাগার সংগ্রামে কৃষকদের প্রধান দাবি ছিল –

  • উৎপন্ন ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের ওপর নিজ অধিকার স্থাপন।
  • জমিদারি প্রথার অবলুপ্তি।
  • রসিদ ছাড়া ধান না দেওয়া।
  • নিজ খোলানে ফসল তোলা প্রভৃতি।

তেভাগা আন্দোলনের মূলমন্ত্র –

তেভাগা আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল – ‘আঁধি নয়, তেভাগা নেই’, ‘লাঙল যার, জমি তার’, ‘জান দিব, ধান নাহি দিব’।

তেভাগা আন্দোলনের বিস্তার –

আন্দোলনের আগুন দিনাজপুর থেকে ক্রমশ ময়মনসিংহ, মেদিনীপুর, যশোর, পাবনা, মালদা প্রভৃতি জেলার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব –

দিনাজপুরের সুনীল সেন, জলপাইগুড়ির বৃদ্ধ ‘বুড়িমা’, চারু মজুমদার, মেদিনীপুরের বিমলা মণ্ডল প্রমুখ ছিলেন তেভাগা আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে।

তেভাগা আন্দোলনের ফলাফল –

আইন পাস আন্দোলনের তীব্রতায় বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ সরকার 1947 খ্রিস্টাব্দের 22 জানুয়ারি ‘বঙ্গীয় বর্গাদার নিয়ন্ত্রণ বিল’ আইন সভায় পাস করার সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন বিলে ভাগচাষিদের জমি থেকে উচ্ছেদ নিষিদ্ধ হয় এবং উৎপন্ন ফসলের দুই-তৃতীয়াংশে তাদের অধিকার স্বীকৃত হয়।

তেভাগা আন্দোলনের মন্তব্য –

তেভাগা আন্দোলনে কৃষকদের মরণ-পণ সংগ্রামের ব্রত, কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে নতুন মাত্রা সংযোজিত করে। একইসঙ্গে এই আন্দোলনে কমিউনিস্টদের সদর্থক ভূমিকা তাদের রাজনৈতিক ভিত শক্ত করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তেভাগা আন্দোলন কী?

তেভাগা আন্দোলন ছিল বাংলার কৃষকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রাম, যেখানে ভাগচাষিরা (শেয়াকৃষক) ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ দাবি করে আন্দোলন গড়ে তোলে।

তেভাগা আন্দোলন কখন শুরু হয়?

1946 খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহাকুমার রামচন্দ্রপুর গ্রামে এই আন্দোলনের সূচনা হয়।

তেভাগা আন্দোলনের প্রধান কারণ কী ছিল?

তেভাগা আন্দোলনের প্রধান কারণ ছিল –
1. ভাগচাষিদের অর্ধেক ফসল পেতে বাধ্য করা হতো, যা তাদের দারিদ্র্যের কারণ ছিল।
2. জমিদার ও জোতদারদের শোষণ ও অত্যাচার।
3. কমিউনিস্ট নেতৃত্বে কৃষকদের সংগঠিত করা।

তেভাগা আন্দোলনের মূল দাবিগুলো কী ছিল?

তেভাগা আন্দোলনের মূল দাবিগুলো ছিল –
1. উৎপন্ন ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ ভাগচাষিদের প্রাপ্য।
2. জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ।
3. রসিদ ছাড়া ধান না দেওয়া।
4. নিজ খোলানে ফসল তোলার অধিকার।

তেভাগা আন্দোলনের মূলমন্ত্র কী ছিল?

তেভাগা আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল –
“আঁধি নয়, তেভাগা চাই”
“লাঙল যার, জমি তার”
“জান দিব, ধান নাহি দিব”

তেভাগা আন্দোলন কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়ে?

দিনাজপুর ছাড়াও ময়মনসিংহ, মেদিনীপুর, যশোর, পাবনা, মালদা প্রভৃতি জেলায় এই আন্দোলন বিস্তার লাভ করে।

তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্বে কারা ছিলেন?

তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন – সুনীল সেন (দিনাজপুর), বুড়িমা (জলপাইগুড়ি), চারু মজুমদার, বিমলা মণ্ডল (মেদিনীপুর)।

তেভাগা আন্দোলনের ফলাফল কী ছিল?

ব্রিটিশ সরকার 1947 সালের 22 জানুয়ারি “বঙ্গীয় বর্গাদার নিয়ন্ত্রণ বিল” পাস করে, যাতে ভাগচাষিদের দুই-তৃতীয়াংশ ফসলের অধিকার দেওয়া হয় এবং জমি থেকে উচ্ছেদ নিষিদ্ধ করা হয়।

তেভাগা আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

তেভাগা আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল –
1. এটি ছিল বাংলার কৃষকদের প্রথম বড় সংগঠিত আন্দোলন।
2. কমিউনিস্ট নেতৃত্ব কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
3. এটি পরবর্তীতে ভূমি সংস্কার আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে।

তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক দল জড়িত ছিল?

সারা ভারত কিষান সভা এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (CPI) এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “তেভাগা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

দেশীয় রাজ্য বলতে কী বোঝো? দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত-বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব ঠিক কী ছিল, তাই নিয়ে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – বংশগতি – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – বংশগতি – বিষয়সংক্ষেপ

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।