এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেজস্ক্রিয়তার কারণ কী? তেজস্ক্রিয় রশ্মির ধর্ম ও প্রকৃতিগুলি লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তেজস্ক্রিয়তার কারণ কী? তেজস্ক্রিয় রশ্মির ধর্ম ও প্রকৃতিগুলি লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তেজস্ক্রিয়তার কারণ কী?
অথবা, তেজস্ক্রিয়তা ধর্ম দেখা যায় কেন?
পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অতি ক্ষুদ্র আয়তনের মধ্যে নিউক্লিয় বলের প্রভাবে প্রোটন ও নিউট্রনগুলি একসঙ্গে অবস্থান করে। এই নিউক্লিয় বল ছাড়া প্রোটনগুলির মধ্যে কুলম্বীয় বিকর্ষণ বল কাজ করে। কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার খুব বেশি পার্থক্য হলে এবং নিউট্রন এবং প্রোটনের অনুপাত 1.5 -এর বেশি হলে কুলম্বীয় বিকর্ষণ বল নিউক্লিয় বল অপেক্ষা খুব বেশি হয়। ফলে নিউক্লিয়াস অস্থায়ী হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভাঙন শুরু হয় এবং তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির ধর্ম ও প্রকৃতিগুলি লেখো।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির ধর্ম ও প্রকৃতিগুলি হল –
- তেজস্ক্রিয় রশ্মি ফোটোগ্রাফিক প্লেটের উপর কালো দাগ কাটে।
- পাতলা ধাতব পাতের ভিতর দিয়ে এই রশ্মি যেতে পারে।
- গ্যাসের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এই রশ্মি গ্যাসের পরমাণু থেকে ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন করে গ্যাসকে আয়নিত করে। কখনো-কখনো নতুন মৌলের সৃষ্টি করে।।
- তেজস্ক্রিয় রশ্মির গতিপথে কোনো তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র স্থাপন করলে রশ্মির গতিপথ সরলরেখা অভিমুখ থেকে বিচ্যুত হয়। গামা রশ্মির ক্ষেত্রে বিচ্যুতি ঘটে না।
- জিংক সালফাইড প্রভৃতি প্রতিপ্রভ পদার্থের উপর তেজস্ক্রিয় রশ্মির দ্বারা আঘাত করলে আলোক বিন্দুর সৃষ্টি হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তেজস্ক্রিয়তা কী?
তেজস্ক্রিয়তা হল কিছু ভারী ও অস্থিতিশীল পরমাণুর নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভেঙে গিয়ে শক্তিশালী তরঙ্গ বা কণা (তেজস্ক্রিয় রশ্মি) বিকিরণের প্রক্রিয়া।
তেজস্ক্রিয়তা কেন হয়? এর মূল কারণ কী?
তেজস্ক্রিয়তার মূল কারণ হল নিউক্লিয়াসের অস্থিতিশীলতা। যখন কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যার অনুপাত খুব বেশি হয়ে যায় (সাধারণত 1.5 -এর বেশি), তখন প্রোটনগুলির মধ্যকার তীব্র বিকর্ষণ বল (কুলম্বীয় বল) নিউক্লিয়াসের বন্ধনকারী শক্তি (নিউক্লীয় বল) কে অতিক্রম করে ফেলে। ফলে নিউক্লিয়াসটি স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙে যায় এবং তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে।
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ প্রধানত কত প্রকার ও কী কী?
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ প্রধানত তিন প্রকার:
1. আলফা (α) রশ্মি – ধনাত্মক আধানযুক্ত হিলিয়াম নিউক্লিয়াস (2টি প্রোটন ও 2টি নিউট্রন)।
2. বিটা (β) রশ্মি – ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন অথবা ধনাত্মক আধানযুক্ত পজিট্রন।
3 গামা (γ) রশ্মি – বৈদ্যুতিকভাবে নিরপেক্ষ এবং অত্যন্ত উচ্চ-শক্তিসম্পন্ন তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ।
তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলোর ভেদন ক্ষমতা কেমন?
ভেদন ক্ষমতার ক্রম হলো –
গামা রশ্মি > বিটা রশ্মি > আলফা রশ্মি
1. আলফা রশ্মি – বায়ু বা একটি পাতলা কাগজ দিয়ে সহজেই আটকানো যায়।
2. বিটা রশ্মি – অ্যালুমিনিয়ামের একটি পাতলা পাত দিয়ে আটকানো যায়।
3. গামা রশ্মি – সীসার পুরু পাত বা কংক্রিটের দেয়াল দরকার হয় এগুলো আটকাতে।
চৌম্বক ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলোর কী হয়?
তড়িৎ বা চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগ করলে রশ্মিগুলোর আচরণ ভিন্ন হয় –
1. আলফা রশ্মি – ধনাত্মক আধান থাকার কারণে সামান্য বিচ্যুত হয় (কারণ এগুলো ভারী)।
2. বিটা রশ্মি – ঋণাত্মক আধান থাকার কারণে আলফা রশ্মির বিপরীত দিকে শক্তভাবে বিচ্যুত হয় (কারণ এগুলো হালকা)।
3. গামা রশ্মি – নিরপেক্ষ হওয়ায় কোনো বিচ্যুতি ঘটে না।
তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার কী?
তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায় –
1. চিকিৎসাবিজ্ঞানে – ক্যান্সার চিকিৎসা (রেডিওথেরাপি), এক্স-রে, রোগ নির্ণয়।
2. শিল্পক্ষেত্রে – ধাতব পাতের পুরুত্ব পরিমাপ, পাইপলাইনে ফুটো শনাক্তকরণ।
3. কৃষিতে – কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ, নতুন প্রজাতির বীজ উৎপাদন।
4. পুরাতত্ত্ব ও ভূতত্ত্বে – ফসিল ও শিলা বা প্রস্তরের বয়স নির্ধারণ (যেমন – কার্বন-14 ডেটিং)।
তেজস্ক্রিয়তা কেন ক্ষতিকর?
তেজস্ক্রিয় রশ্মি জীবন্ত কোষের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং DNA -তে মিউটেশন ঘটাতে পারে। এর ফলে – ত্বকে পোড়া, ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
তেজস্ক্রিয়তা থেকে কীভাবে সুরক্ষা পাওয়া যায়?
তিনটি মূল নীতি অনুসরণ করলে তেজস্ক্রিয়তা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় –
1. সময় কমানো – উৎসের কাছাকাছি যত কম সময় থাকা যায় তত ভালো।
2. দূরত্ব বজায় রাখা – উৎস থেকে যত দূরে থাকা যায়, তত নিরাপদ।
3. প্রতিরক্ষামূলক আবরণ ব্যবহার – সীসা, কংক্রিট বা পুরু কাঁচের মতো প্রতিরক্ষামূলক বস্তু ব্যবহার করা।
অর্ধ-জীবন (Half-Life) বলতে কী বোঝায়?
কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থের অর্ধেক পরিমাণ ক্ষয় হতে বা তেজস্ক্রিয়তা অর্ধেক কমতে যে সময় লাগে, তাকে অর্ধ-জীবন বলে। এটি একটি মৌলিক ধর্ম এবং প্রতিটি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের জন্য আলাদা।
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে পার্থক্য কী?
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে পার্থক্য হল –
1. প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা – প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায় – যেমন ইউরেনিয়াম, রেডিয়াম, পোলোনিয়াম থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা।
2. কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা – গবেষণাগার বা পারমাণবিক চুল্লিতে নিউট্রন বোমাবর্ষণ বা অনুরূপ পদ্ধতিতে স্থিতিশীল নিউক্লিয়াসকে অস্থিতিশীল করে তৈরি করা তেজস্ক্রিয়তা।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেজস্ক্রিয়তার কারণ কী? তেজস্ক্রিয় রশ্মির ধর্ম ও প্রকৃতিগুলি লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তেজস্ক্রিয়তার কারণ কী? তেজস্ক্রিয় রশ্মির ধর্ম ও প্রকৃতিগুলি লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন