আজকের আলোচনার বিষয় হলো বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন। এই দিনটি শুধুমাত্র একটি নতুন শুরু নয়, বরং জ্ঞানের পথে পা রাখার এক উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা। প্রথম দিনের স্মৃতি প্রায়শই মনের কোণে গেঁথে থাকে, যা আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
স্কুলের গেটে পা রাখার সাথে সাথে এক অপার্থিব পরিবেশ অনুভূত হয়। চারপাশে নতুন মানুষ, নতুন মুখ, নতুন পরিবেশ – সবকিছুই মনে হয় অপরিচিত। মনে হয় যেন এক নতুন জগতে প্রবেশ করেছি। নতুন শিক্ষক, নতুন বন্ধু, নতুন জ্ঞান – সবকিছুর প্রতিই তখন থাকে অপার আগ্রহ।
প্রথম দিনের ক্লাস শুরু হয়। শিক্ষকের মুখোমুখি হওয়ার ভয়, নতুন বন্ধুদের সাথে কথা বলার লজ্জা – সবকিছুই মনে হয় এক অদ্ভুত অনুভূতি। কিন্তু ধীরে ধীরে সবকিছুই স্বাভাবিক হতে থাকে। নতুন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, শিক্ষকের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জনের আগ্রহ – সবকিছু মিলে প্রথম দিনটা কেটে যায় এক অসাধারণ আনন্দে।
বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন শুধু একটি স্মৃতি নয়, বরং জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব এবং জীবনে সফল হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা।
তোমার বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়েই মানুষ পথ চলে। স্মৃতির উত্তাপে সে তার মনকে সেঁকে নেয়। আবার সেই স্মৃতিই কখনও ভিজিয়ে দেয় বর্তমানকে। স্কুলজীবনের একটা পর্ব শেষ করার মুখোমুখি এসে এই স্কুলের প্রথম দিনের স্মৃতি বারে বারে মনের দরজায় কড়া নাড়ছে।
স্মৃতির সরণি ধরে –
আমার স্কুলের নাম মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়। আজ থেকে দশ বছর আগে এই স্কুলেরই প্রাথমিক বিভাগে এসেছিলাম ভরতির জন্য। সেদিনের ঘটনার অনেক কথাই আজ ঝাপসা হয়ে গেছে। মনে আছে বাবার হাত ধরে যখন প্রথম স্কুলের গেটের ভিতর ঢুকেছিলাম খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এত বড়ো বাড়ি। এখানে মা-বাবা পাশে থাকবে না। আমি কাঁদতে শুরু করেছিলাম। একজন ধুতি পরা লোক আমাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। পরে জেনেছিলাম তিনিই ছিলেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক। তিনি আমাকে একটা লজেন্সও দিয়েছিলেন। ক্লাসে ঢুকে দেখেছিলাম আমারই মতো অনেকগুলো ছেলে বসে আছে। তাদের অনেকে আমারই মতো কাঁদছিল। ঘরের দেয়ালে সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকা ছিল। আর কাদের যেন ফটো লাগানো ছিল। এখন বুঝি ওগুলো ছিল বরেণ্য সব মহাপুরুষদের ছবি।
যাত্রা হল শুরু –
একজন আন্টি প্রথম ক্লাসে এসেছিলেন। আমাদের নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তারপরে কিছু একটা গল্প বলেছিলেন। আমার খুব ভালো লেগেছিল। চোখের জলও ততক্ষণে শুকিয়ে গিয়েছে। ঠিক মা-এর মতো মনে হয়েছিল আন্টিকে। তারপরে ঘণ্টা বাজল। আন্টি চলে যাওয়ার পরে একজন স্যার এলেন। তাঁর কাছেই পরে আমরা অঙ্ক শিখতে শুরু করি। এরপরই আমাদের প্রথম দিনের ছুটি হয়ে যায়। বাবার হাত ধরে আবার বেরিয়ে পড়ি বাড়ির পথে।
উপসংহার –
দশ বছরের যাত্রা এবার শেষ হওয়ার পথে। যদি সুযোগ পাই ইচ্ছা আছে এগারো-বারো ক্লাস এখানেই পড়ার। সেই প্রথম দিন আলাপ হয়েছিল জাহাঙ্গির নামে একটা ছেলের সঙ্গে। সে আজও আমার প্রিয় বন্ধু। আর প্রিয়তম বন্ধু আমার স্কুল-মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন শুধু একটি স্মৃতি নয়, বরং জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব এবং জীবনে সফল হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা।
এই দিনটি আমাদের শেখায় নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া, নতুন বন্ধু তৈরি করা এবং শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।
তাই, আমাদের সকলের উচিত বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনটিকে গুরুত্ব সহকারে মনে রাখা এবং এই দিন থেকেই জ্ঞান অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়া।