এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগ কাকে বলে? তড়িৎযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎযোজী যৌগ কাকে বলে?
তড়িৎযোজী যৌগ – রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় একাধিক মৌলের পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ ও বর্জনের মাধ্যমে বিপরীত তড়িৎধর্মী আয়নে পরিণত হয়ে স্থিরতড়িৎ আকর্ষণ বল দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে যৌগ গঠন করে তাকে তড়িৎযোজী যৌগ বলে।
তড়িৎযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
তড়িৎযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য –
- তড়িৎযোজী যৌগগুলি সাধারণত কঠিন ও কেলাসাকার হয়।
- তড়িৎযোজী যৌগগুলি সাধারণত জলে দ্রাব্য কিন্তু জৈব দ্রাবকে অদ্রাব্য।
- তড়িৎযোজী যৌগগুলির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত বেশি হয়।
- তড়িৎযোজী যৌগের অণুগুলি ছোটো ছোটো চুম্বকের মতো আচরণ করে। এদের অণুগুলি পোলার।
- তড়িৎযোজী যৌগগুলি তড়িদবিশ্লেষ্য। এরা কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না, কিন্তু গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে।
- তড়িৎযোজী যৌগের একটি আয়ন তার বিপরীত তড়িৎগ্রস্ত আয়নকে যে-কোনো দিক থেকে আকর্ষণ করতে পারে। তাই তড়িৎযোজী বন্ধনের কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই।
- তড়িৎযোজী যৌগের সমাবয়বতা দেখা যায় না।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তড়িৎযোজী যৌগ কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না কেন?
তড়িৎযোজী যৌগের কঠিন অবস্থায় আয়নগুলি একটি দৃঢ় কেলাস জালকের মধ্যে আবদ্ধ ও স্থির অবস্থানে থাকে। এদের মধ্যে চলাচলের স্বাধীনতা নেই। তাই এরা তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না।
তড়িৎযোজী যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক উচ্চ হয় কেন?
তড়িৎযোজী যৌগের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নগুলির মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী স্থিরতড়িৎ আকর্ষণ বল (কুলম্বিক বল) কাজ করে। এই বন্ধন ভাঙার জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই এগুলোকে গলাতে বা ফুটাতে অনেক বেশি তাপের প্রয়োজন হয়।
“তড়িৎযোজী বন্ধনের কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই” – কথাটির অর্থ কী?
“তড়িৎযোজী বন্ধনের কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই” – কথাটির অর্থ হলো, একটি ধনাত্মক আয়ন (ক্যাটায়ন) তার চারপাশের যেকোনো দিক থেকে আসা ঋণাত্মক আয়ন (অ্যানায়ন) কে সমান বলেই আকর্ষণ করে। এটি কোনো নির্দিষ্ট কোণ বা দিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই তারা একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক কেলাস গঠন করে (যেমন – ঘনক্ষেত্র, ষট্কোণ ইত্যাদি)।
তড়িৎযোজী যৌগের কিছু উদাহরণ দাও।
তড়িৎযোজী যৌগের কিছু উদাহরণ হল – সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) – লবণ, পটাসিয়াম ব্রোমাইড (KBr), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl₂), ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড (MgO), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH), অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al₂O₃) প্রভৃতি।
সমাবয়বতা বলতে কী বোঝায়? তড়িৎযোজী যৌগে এটি দেখা যায় না কেন?
একই রাসায়নিক সংকেত থাকা সত্ত্বেও ভিন্ন গঠন ও ভিন্ন ভৌত ধর্মবিশিষ্ট যৌগগুলিকে সমাবয়বী যৌগ বলে।
তড়িৎযোজী যৌগে আয়নগুলির আকর্ষণ যেকোনো দিক থেকে হতে পারে এবং তারা সর্বদা একটি স্থির ও সুনির্দিষ্ট কেলাস জালক গঠন করে। তাই একটি নির্দিষ্ট যৌগের (যেমন – NaCl) কেবল একটি নির্দিষ্ট গঠনই সম্ভব, একাধিক গঠন নয়। এজন্য তড়িৎযোজী যৌগে সমাবয়বতা দেখা যায় না। (এটি মূলত সমযোজী যৌগের একটি বৈশিষ্ট্য)।
তড়িৎযোজী যৌগ সাধারণত জৈব দ্রাবকে (যেমন – কেরোসিন, বেনজিন) অদ্রাব্য হয় কেন?
তড়িৎযোজী যৌগ দ্রবীভূত হওয়ার জন্য দ্রাবক অণুর ডাইপোল মুহূর্ত (Polarity) উচ্চ হতে হয়। জলের ডাইপোল মুহূর্ত বেশি হওয়ায় এটি আয়নগুলিকে পৃথক করে হাইড্রেশন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু অধিকাংশ জৈব দ্রাবক অ-পোলার, ফলে তারা আয়নের সাথে যথেষ্ট শক্তিশালী আকর্ষণ বল তৈরি করতে পারে না। তাই তড়িৎযোজী যৌগ জৈব দ্রাবকে অদ্রাব্য হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগ কাকে বলে? তড়িৎযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন