তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা, নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে –

  • উষ্ণতা – তড়িৎবিশ্লেষ্যের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে আয়নগুলির গতিবেগ তথা গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, তাই ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি দ্রুত যথাক্রমে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে যায়। ফলে তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • তড়িৎবিশ্লেষ্যের গাঢ়ত্ব – মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য যত লঘু হয় সেটি তত বেশি পরিমাণে আয়নিত হয়। ফলে মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের লঘুতা বৃদ্ধি পেলে সেটির তড়িৎপরিবাহের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ প্রায় সম্পূর্ণ আয়নিত হওয়ার জন্য তার লঘুতা বৃদ্ধিতে তড়িৎপরিবাহের মাত্রার তেমন কোনো বৃদ্ধি ঘটে না কিন্তু গাঢ়ত্ব বৃদ্ধি পেলে তড়িৎপরিবাহের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের প্রকৃতি – তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হওয়ায় জলে গলিত বা দ্রবণে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নের সংখ্যা বেশি হয়, ফলে তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে এটি আংশিক বিয়োজিত হওয়ায় অল্প সংখ্যক আয়ন দ্রবণে মুক্ত হয়, তাই এক্ষেত্রে তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম হয়।
  • বিভব পার্থক্য – তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্যে নিমজ্জিত দুই তড়িৎদ্বারের মধ্যে বিভব পার্থক্য বৃদ্ধি পেলে তার তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তীব্র ও মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?

তীব্র ও মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো আয়নীভবনের মাত্রায়। তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ দ্রবণে প্রায় সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয়ে যায়, ফলে প্রচুর পরিমাণে আয়ন তৈরি করে (যেমন – NaCl, H₂SO₄)। অন্যদিকে, মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ দ্রবণে আংশিকভাবে আয়নিত হয়, ফলে কম সংখ্যক আয়ন তৈরি করে (যেমন – CH₃COOH, NH₄OH)। এই কারণেই তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের পরিবাহিতা বেশি হয়।

তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রবণের ঘনত্ব কমালে (লঘু করলে) পরিবাহিতা বাড়ে কেন?

মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে, দ্রবণ লঘু করলে আয়নীভবনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ আরও বেশি সংখ্যক অণু আয়নে ভেঙে যায়। ফলে আয়নের সংখ্যা বাড়ার কারণে মোট পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়। তীব্র তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে, লঘু করলে আয়নগুলির মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায় এবং একে অপরের উপর আকর্ষণ বল কমে, ফলে তারা আরও সহজে চলাচল করতে পারে, যা পরিবাহিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

বিশুদ্ধ জল তড়িৎ পরিবহন করে না, কিন্তু অ্যাসিড মেশালে করে কেন?

বিশুদ্ধ জল একটি অত্যন্ত মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য, তাই এতে মুক্ত আয়নের সংখ্যা খুবই কম থাকে। এই কারণে এটি প্রায় তড়িৎ পরিবহন করে না। কিন্তু যখন এতে অ্যাসিড (যেমন – HCl) মেশানো হয়, তখন অ্যাসিডটি জলে আয়নিত হয়ে প্রচুর পরিমাণে মুক্ত আয়ন (যেমন – H⁺ ও Cl⁻) তৈরি করে। এই মুক্ত আয়নগুলি তড়িৎ পরিবহনের জন্য দায়ী, তাই অ্যাসিড মিশ্রিত জল ভালো তড়িৎ পরিবাহী হয়।

তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোডে বিজারণ এবং অ্যানোডে জারণ ঘটে কেন?

তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাটায়ন (ধনাত্মক আয়ন) ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার অর্থাৎ ক্যাথোডের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং সেখান থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে। ইলেকট্রন গ্রহণ করাকে বিজারণ বলে। অন্যদিকে, অ্যানায়ন (ঋণাত্মক আয়ন) ধনাত্মক তড়িৎদ্বার অর্থাৎ অ্যানোডের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং সেখানে ইলেকট্রন বর্জন করে। ইলেকট্রন বর্জন করাকে জারণ বলে।

তড়িৎবিশ্লেষণে নিষ্ক্রিয় তড়িৎদ্বার (যেমন – প্ল্যাটিনাম) ব্যবহার করা হয় কেন?

নিষ্ক্রিয় তড়িৎদ্বারগুলি তড়িৎবিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় রাসায়নিকভাবে অংশগ্রহণ করে না। এদের প্রধান কাজ হলো কেবল ইলেকট্রন পরিবহন করা এবং বিক্রিয়ার জন্য একটি পৃষ্ঠ (surface) প্রদান করা। এর ফলে, তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ থেকেই প্রত্যাশিত উৎপাদ পাওয়া যায় এবং তড়িৎদ্বারটি নিজে বিক্রিয়া করে অন্য কোনো পদার্থ তৈরি করে না।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

লোহার দ্রব্যে তামার প্রলেপ দিতে হলে ক্যাথোড ও অ্যানোডরূপে কী কী ব্যবহার করা হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য হিসেবে কী ব্যবহার করা হয়? বিক্রিয়ার সমীকরণ দাও।

লোহায় তামার প্রলেপ দিতে কোন ধাতু ক্যাথোড ও অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য কী? বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

লোহায় তামার প্রলেপ দিতে কোন ধাতু ক্যাথোড ও অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য কী? বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।

তড়িৎলেপন পদ্ধতি বর্ণনা করো।

ধাতুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ ও তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।