এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগ গঠিত হওয়ার শর্তগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎযোজী যৌগ গঠিত হওয়ার শর্তগুলি লেখো।
তড়িৎযোজী বা আয়নীয় যৌগ গঠনের কিছু বিশেষ শর্ত হল –
- ক্যাটায়নের যোজ্যতা – তড়িৎযোজী যৌগ গঠনে অংশগ্রহণকারী যে মৌলটি ইলেকট্রন বর্জন করে ক্যাটায়নে পরিণত হয়, সেই পরমাণুটির যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রনের সংখ্যা 1, 2 বা 3 হতে হবে। ফলে মৌলটি সহজেই ইলেকট্রন দান করে ক্যাটায়নে পরিণত হবে।
- অ্যানায়নের যোজ্যতা – তড়িৎযোজী যৌগ গঠনে অংশগ্রহণকারী যে মৌলটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নে পরিণত হয়, সেই পরমাণুটির যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রনের সংখ্যা 5, 6 বা 7 হতে হবে, ফলে মৌলটি যথাক্রমে 3, 2 বা 1টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে অষ্টক পূর্তি করে।
- অংশগ্রহণকারী মৌলগুলির তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য – তড়িৎযোজী বন্ধনে অংশগ্রহণকারী যে মৌলটি ক্যাটায়ন গঠন করে সেটি উচ্চ তড়িৎ-ধনাত্মক এবং যে মৌলটি অ্যানায়ন গঠন করে সেটি উচ্চ তড়িৎঋণাত্মক সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ মৌল দুটির তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য খুব বেশি হবে।
- তড়িৎ-ধনাত্মক পরমাণুর কম আয়নীয় বিভব – যে পরমাণুটি ক্যাটায়নে পরিণত হয় সেই পরমাণুটির আয়নীয় বিভবের মান খুব কম হওয়া প্রয়োজন।
- অংশগ্রহণকারী পরমাণুর আকার –
- ক্যাটায়নের আকার – ক্যাটায়ন গঠনকারী পরমাণুটির আকার বড়ো হতে হবে। কারণ পরমাণুর আকার বড়ো হলে তার যোজ্যতা কক্ষের ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করে। তাই যোজ্যতা কক্ষের ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমে যায়, ফলে সহজেই ইলেকট্রন দান করে ক্যাটায়নে পরিণত হতে পারে।
- অ্যানায়নের আকার – আবার অ্যানায়ন গঠনকারী পরমাণুটির আকার ছোটো হতে হবে। আকারে ছোটো হলে বাইরের কক্ষের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বেশি হয়, ফলে ইলেকট্রন গ্রহণ করে সহজে অ্যানায়ন পরিণত হয়।
- যৌগমধ্যস্থ আয়নগুলির আধান – আয়নীয় যৌগে উপস্থিত ক্যাটায়ন কম ধনাত্মক আধানবিশিষ্ট ও অ্যানায়ন কম ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। ক্যাটায়নের আধান কম হলে পরমাণু থেকে বর্জিত ইলেকট্রনের ক্যাটায়নের দিকে ফিরে আসার প্রবণতা কম হয়। ফলে ক্যাটায়নটি বেশি স্থায়ী হয়। আবার অ্যানায়নের আধান কম হলে পরমাণু দ্বারা গৃহীত ইলেকট্রনের ওপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল বেশি হয়, ফলে পরমাণুটি থেকে সৃষ্ট অ্যানায়নে গৃহীত ইলেকট্রন সহজে অ্যানায়ন থেকে মুক্ত হতে পারে না। ফলে অ্যানায়নটি বেশি স্থায়ী হয়।
- ল্যাটিস শক্তি বা জালক শক্তি – তড়িৎযোজী যৌগ গঠনের সময় নির্গত শক্তি অর্থাৎ ল্যাটিস শক্তি বা জালক শক্তি বেশি হওয়া প্রয়োজন। উৎপন্ন ল্যাটিস শক্তির পরিমাণ যত বেশি হবে তড়িৎযোজী যৌগটি তত দৃঢ় হবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তড়িৎযোজী যৌগ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত কী?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল অংশগ্রহণকারী মৌল দুটির তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য খুব বেশি হওয়া। একটি মৌলকে উচ্চ তড়িৎ-ধনাত্মক (ইলেকট্রন দানকারী) এবং অপর মৌলটিকে উচ্চ তড়িৎ-ঋণাত্মক (ইলেকট্রন গ্রহণকারী) হতে হয়। সাধারণত, এই পার্থক্য 1.7 বা তার বেশি হলে আয়নীয় বন্ধন গঠিত হয়।
কোন মৌলগুলি সাধারণত ক্যাটায়ন (ধনাত্মক আয়ন) গঠন করে?
যে সকল মৌলের পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রনের সংখ্যা 1, 2 বা 3 (যেমন – Na, K, Ca, Mg, Al), তারা সহজেই ইলেকট্রন ত্যাগ করে স্থায়ী ক্যাটায়নে পরিণত হয়। এগুলি সাধারণত পর্যায় সারণির বাম দিকের (গ্রুপ 1, 2) এবং 13 -এর মৌল।
কোন মৌলগুলি সাধারণত অ্যানায়ন (ঋণাত্মক আয়ন) গঠন করে?
যে সকল মৌলের পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে ইলেকট্রনের সংখ্যা 5, 6 বা 7 (যেমন – N, O, F, Cl, Br), তারা যথাক্রমে 3, 2 বা 1টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাদের অষ্টক পূর্ণ করে অ্যানায়নে পরিণত হয়। এগুলি সাধারণত পর্যায় সারণির ডান দিকের (গ্রুপ 15, 16, 17) মৌল।
তড়িৎযোজী যৌগ গঠনে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের আকারের কী ভূমিকা আছে?
আকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে –
1. ক্যাটায়নের আকার – ক্যাটায়ন গঠনকারী পরমাণুর আকার বড় হওয়া ভালো, কারণ এতে যোজ্যতা ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে দূরে থাকে এবং সহজে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
2. অ্যানায়নের আকার – অ্যানায়ন গঠনকারী পরমাণুর আকার ছোট হওয়া ভালো, কারণ এতে নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ শক্তি বেশি থাকে এবং গ্রহণকৃত ইলেকট্রন দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারে।
‘ল্যাটিস শক্তি’ বা ‘জালক শক্তি’ বলতে কী বোঝায় এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ল্যাটিস শক্তি হল সেই শক্তি যা মুক্ত গ্যাসীয় ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি একত্রিত হয়ে কঠিন স্ফটিক গঠন করলে নির্গত হয়। এই শক্তি যত বেশি হবে, আয়নগুলি তত দৃঢ়ভাবে একে অপরের সাথে আবদ্ধ থাকবে এবং ফলে তড়িৎযোজী যৌগটি তত বেশি স্থায়ী ও দৃঢ় হবে।
তড়িৎ-যোজী ও সমযোজী যৌগের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী?
মৌলিক পার্থক্যটি বন্ধন গঠনের পদ্ধতিতে।
1. তড়িৎ-যোজী যৌগ – একটি মৌল ইলেকট্রন দান করে এবং অপর মৌল ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিপরীত আধানযুক্ত আয়ন সৃষ্টি করে। এই আয়নগুলির মধ্যে স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বলের মাধ্যমে বন্ধন গঠিত হয়।
2. সমযোজী যৌগ – মৌলগুলি ইলেকট্রন দান বা গ্রহণ না করে ইলেকট্রন জোড় ভাগাভাগির মাধ্যমে বন্ধন গঠন করে। এখানে সাধারণত তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য খুব কম হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগ গঠিত হওয়ার শর্তগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন