এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি হল —
- তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থগুলি সাধারণত আয়নীয় বা তড়িৎযোজী প্রকৃতির হয়।
- এরা গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে বিয়োজিত হয় এবং এই আয়নগুলিই তড়িৎ পরিবহন করে।
- উৎপন্ন মোট ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলির আধানের পরিমাণ সমান।
- তড়িৎবিশ্লেষণের ফলে উৎপন্ন ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডের দিকে এবং অ্যানায়নগুলি অ্যানোডের দিকে আকৃষ্ট হয়।
- তড়িৎ পরিবহনের ফলে তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের বিয়োজনে উৎপন্ন আয়নগুলি রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে।
- তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবাহিতা তড়িৎবিশ্লেষ্যের প্রকৃতি, দ্রবণে উপস্থিত তড়িৎবিশ্লেষ্যের গাঢ়ত্ব ও উষ্ণতার ওপর নির্ভরশীল।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ কী? উদাহরণ দাও।
যে সকল পদার্থ গলিত অবস্থায় বা দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়ে আয়নে বিভক্ত হয় এবং তড়িৎ পরিবহন করে, তাদের তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন – লবণ (NaCl), সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄), পটাসিয়াম নাইট্রেট (KNO₃) ইত্যাদি।
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ তড়িৎ পরিবহন করে কীভাবে?
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় স্বতন্ত্র ও মুক্ত ক্যাটায়ন (ধনাত্মক আয়ন) এবং অ্যানায়নে (ঋণাত্মক আয়ন) বিয়োজিত হয়। তড়িৎপ্রবাহ প্রয়োগ করলে এই মুক্ত আয়নগুলি চলাচল করতে পারে – ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডের (-) দিকে এবং অ্যানায়নগুলি অ্যানোডের (+) দিকে আকৃষ্ট হয়। আয়নগুলির এই চলাচলের মাধ্যমেই এরা তড়িৎ পরিবহন করে।
সকল পদার্থ কি তড়িৎবিশ্লেষ্য? অ-তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ কী?
না, সকল পদার্থ তড়িৎবিশ্লেষ্য নয়। যে সকল পদার্থ গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে বিয়োজিত হয় না এবং তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না, তাদের অ-তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। উদাহরণ – চিনি, এলকোহল, ডিস্টিল্ড ওয়াটার ইত্যাদি।
তড়িৎবিশ্লেষ্যের দ্রবণে মোট আধান শূন্য হয় কেন?
যেকোনো নিরপেক্ষ তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধানের পরিমাণ সমান থাকে। যখন এটি আয়নে বিয়োজিত হয়, তখন উৎপন্ন সমস্ত ক্যাটায়নের মোট ধনাত্মক আধান এবং সমস্ত অ্যানায়নের মোট ঋণাত্মক আধানের পরিমাণ সমান ও বিপরীতমুখী হয়। এই কারণে দ্রবণটি সামগ্রিকভাবে বৈদ্যুতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকে।
তড়িৎবিশ্লেষণের ফলে নতুন পদার্থ কীভাবে উৎপন্ন হয়?
তড়িৎবিশ্লেষণের সময়, ক্যাথোডে যাওয়া ক্যাটায়নগুলি ইলেকট্রন গ্রহণ করে (বিজারণ) এবং অ্যানোডে যাওয়া অ্যানায়নগুলি ইলেকট্রন ত্যাগ করে (জারণ)। ইলেকট্রন গ্রহণ ও ত্যাগের এই প্রক্রিয়ায় আয়নগুলি তাদের আধান হারায় বা পায় এবং স্থিতিশীল পরমাণু বা অণুতে পরিণত হয়ে নতুন পদার্থ গঠন করে। যেমন, গলিত NaCl -এর তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোডে সোডিয়াম (Na) ধাতু এবং অ্যানোডে ক্লোরিন (Cl₂) গ্যাস উৎপন্ন হয়।
তড়িৎবিশ্লেষ্যের পরিবাহিতা কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
তড়িৎবিশ্লেষ্যের পরিবাহিতা প্রধানত নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে –
1. প্রকৃতি – সবল তড়িৎবিশ্লেষ্য (যেমন – HCl) দুর্বল তড়িৎবিশ্লেষ্যের (যেমন – CH₃COOH) তুলনায় বেশি পরিবাহী।
2. গাঢ়ত্ব – সাধারণত, দ্রবণের গাঢ়ত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে আয়নের সংখ্যা বাড়ে, ফলে পরিবাহিতা বাড়ে (একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত)।
3. উষ্ণতা – উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আয়নগুলির গতিশক্তি বাড়ে এবং দ্রাবকের সান্দ্রতা কমে, ফলে পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন