এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদাহরণসহ পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভিদের জিয়োট্রপিক চলনের বর্ণনা দাও। অথবা, উদ্ভিদ অঙ্গের অনুকূল অভিকর্ষবৃত্তি এবং প্রতিকূল অভিকর্ষবৃত্তি চলনের পরীক্ষার বর্ণনা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

উদাহরণসহ পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভিদের জিয়োট্রপিক চলনের বর্ণনা দাও।
অথবা, উদ্ভিদ অঙ্গের অনুকূল অভিকর্ষবৃত্তি এবং প্রতিকূল অভিকর্ষবৃত্তি চলনের পরীক্ষার বর্ণনা দাও।
জিয়োট্রপিক আবিষ্ট বক্রচলনে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনের গতিপথ অভিকর্ষ উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষের প্রভাবে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের দিকে বৃদ্ধি পায়, তাই মূলকে অনুকূল অভিকর্ষবর্তী বা পজিটিভলি জিয়োট্রপিক বলে। আবার, কাণ্ড পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়, তাই কাণ্ডকে প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী বা নেগেটিভলি জিয়োট্রপিক বলে। কিছু লবণাম্বু উদ্ভিদ, যেমন – গরান, গেওয়া ইত্যাদির শ্বাসমূলে এই নেগেটিভ জিয়োট্রপিক চলন পরিলক্ষিত হয়।

উদ্ভিদের অনুকূল অভিকর্ষবৃত্তি এবং প্রতিকূল অভিকর্ষবৃত্তি জিয়োট্রপিক চলনের পরীক্ষা –
- পদ্ধতি – একটি পেট্রিডিশ বা কাচের পাত্রে ভেজা তুলো বা ব্লটিং পেপার রাখা হল এবং এর মধ্যে কয়েকটি অল্প অঙ্কুরিত মটর বীজ বিভিন্ন দিকে আটকে দেওয়া হল।
- পর্যবেক্ষণ – কয়েকদিন পর দেখা গেল যে, বীজের অবস্থান যে-রকমই হোক ভ্রূণমূল সর্বদা নীচের দিকে এবং ভ্রূণমুকুল সর্বদা উপরের দিকে বাড়ছে।
- সিদ্ধান্ত – অভিকর্ষ বলের জন্য মূল নীচের দিকে নামছে, তাই ভ্রূণমূল হল পজিটিভলি জিয়োট্রপিক বা অনুকূল অভিকর্ষবর্তী এবং ভ্রূণমুকুল উপরের দিকে উঠছে, তাই ভ্রূণমুকুল হল নেগেটিভলি জিয়োট্রপিক বা প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জিওট্রপিজম (অভিকর্ষবৃত্তি) কী?
জিওট্রপিজম হলো একটি উদ্ভিদের বৃদ্ধি সংক্রান্ত চলন (ট্রপিক মুভমেন্ট), যা অভিকর্ষ বল দ্বারা প্রভাবিত হয়। উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ অভিকর্ষজ বলের প্রতি সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট দিকে বৃদ্ধি পায়।
পজিটিভ জিওট্রপিজম (অনুকূল অভিকর্ষবৃত্তি) ও নেগেটিভ জিওট্রপিজম (প্রতিকূল অভিকর্ষবৃত্তি) বলতে কী বোঝায়?
পজিটিভ জিওট্রপিজম – যখন কোনো উদ্ভিদ অঙ্গ (যেমন – মূল) অভিকর্ষের দিকে অর্থাৎ নীচের দিকে বৃদ্ধি পায়, তাকে পজিটিভ জিওট্রপিজম বা অনুকূল অভিকর্ষবৃত্তি বলে।
নেগেটিভ জিওট্রপিজম – যখন কোনো উদ্ভিদ অঙ্গ (যেমন – কাণ্ড) অভিকর্ষের বিপরীত দিকে অর্থাৎ উপরের দিকে বৃদ্ধি পায়, তাকে নেগেটিভ জিওট্রপিজম বা প্রতিকূল অভিকর্ষবৃত্তি বলে।
মূল ও কাণ্ডের জিওট্রপিক প্রকৃতি কী?
মূল ও কাণ্ডের জিওট্রপিক প্রকৃতি –
1. মূল – সাধারণত পজিটিভলি জিওট্রপিক (অনুকূল অভিকর্ষবর্তী), কারণ এটি মাটির ভেতরে নীচের দিকে বৃদ্ধি পায়।
2. কাণ্ড – সাধারণত নেগেটিভলি জিওট্রপিক (প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী), কারণ এটি আলোর দিকে উপরে বৃদ্ধি পায়।
জিওট্রপিজমের পরীক্ষা কীভাবে করা যায়?
জিওট্রপিজমের পরীক্ষা –
1. পদ্ধতি – একটি পেট্রি ডিশে ভেজা তুলো বা ব্লটিং পেপার রেখে তাতে বিভিন্ন দিকে (উপর-নীচ, ডান-বাম, তির্যকভাবে) কয়েকটি অঙ্কুরিত মটর বীজ স্থাপন করা হয়।
2. পর্যবেক্ষণ – কয়েকদিন পর দেখা যায়, বীজগুলির প্রাথমিক অবস্থান যাই হোক না কেন, ভ্রূণমূলগুলি সর্বদা নীচের দিকে এবং ভ্রূণমুকুলগুলি সর্বদা উপরের দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
3. সিদ্ধান্ত – এটি প্রমাণ করে যে মূল অনুকূল অভিকর্ষবর্তী (পজিটিভলি জিওট্রপিক) এবং কাণ্ড প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী (নেগেটিভলি জিওট্রপিক)।
শ্বাসমূলে কি ধরনের জিওট্রপিজম দেখা যায়?
কিছু লবণাম্বু উদ্ভিদের (যেমন – গরান, গেওয়া) শ্বাসমূল মাটির বাইরে উঠে এবং উপরের দিকে বৃদ্ধি পায়। তাই এগুলি নেগেটিভলি জিওট্রপিক (প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী) প্রকৃতির হয়ে থাকে।
জিওট্রপিজমের পিছনে কার্যকরী হরমোন কী?
অক্সিন (Auxin) হল সেই হরমোন যা জিওট্রপিজম নিয়ন্ত্রণ করে। যখন একটি উদ্ভিদকে আনত করা হয়, অভিকর্ষের প্রভাবে অক্সিন কোষের নিচের দিকে জমা হয়।
1. কাণ্ডে – উচ্চ ঘনত্বের অক্সিন কোষের দ্রুত বিভাজন ও প্রসারণ ঘটায়, ফলে কাণ্ডটি উপরের দিকে (অভিকর্ষের বিপরীতে) বেঁকে যায়।
2. মূলে – মূলের কোষগুলি অক্সিনের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। উচ্চ ঘনত্বের অক্সিন মূলের বৃদ্ধি বাধা দেয়, ফলে মূলের নিচের দিকের চেয়ে উপরের দিকের কোষগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মূল নীচের দিকে (অভিকর্ষের দিকে) বেঁকে যায়।
জিওট্রপিজম উদ্ভিদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
জিওট্রপিজম উদ্ভিদের অস্তিত্ব ও সফলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ –
1. মূলের পজিটিভ জিওট্রপিজম তাকে মাটির গভীরে নিয়ে যায়, যেখান থেকে এটি জল ও খনিজ লবণ শোষণ করতে পারে এবং গাছকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখতে পারে।
2. কাণ্ডের নেগেটিভ জিওট্রপিজম তাকে মাটির উপরে সূর্যের আলোর দিকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে, যেখানে এটি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালাতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদাহরণসহ পরীক্ষার মাধ্যমে উদ্ভিদের জিয়োট্রপিক চলনের বর্ণনা দাও। অথবা, উদ্ভিদ অঙ্গের অনুকূল অভিকর্ষবৃত্তি এবং প্রতিকূল অভিকর্ষবৃত্তি চলনের পরীক্ষার বর্ণনা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন