উষ্ণতা বাড়লে ধাতব পরিবাহীর রোধ বাড়ে কেন?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উষ্ণতা বাড়লে ধাতব পরিবাহীর রোধ বাড়ে কেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “উষ্ণতা বাড়লে ধাতব পরিবাহীর রোধ বাড়ে কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

উষ্ণতা বাড়লে ধাতব পরিবাহীর রোধ বাড়ে কেন?

উষ্ণতা বাড়লে ধাতব পরিবাহীর রোধ বাড়ে কেন?

ধাতব পরিবাহীর মধ্যে অবস্থিত মুক্ত ইলেকট্রনগুলি তাদের তাপশক্তির জন্য এলোমেলোভাবে পরিবাহীর মধ্যে এক পরমাণু থেকে অন্য পরমাণুতে ঘোরাঘুরি করে। আবার পরমাণুগুলিও তাদের সাম্যাবস্থানের সাপেক্ষে আন্দোলিত হতে থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে ইলেকট্রনগুলির এবং পরমাণুগুলির এই তাপীয় গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। ফলে উচ্চতর তাপমাত্রায় যখন পরিবাহীর দু-প্রান্তে একটি বিভবপ্রভেদ প্রয়োগ করা হয়, তখন ইলেকট্রনগুলি তাড়িত হওয়ার সময় পরিবাহীর মধ্যস্থিত আধান ও পরমাণুর সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, অর্থাৎ ইলেকট্রনের গতিপথে বাধার পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার এই বাধাই হচ্ছে পরিবাহীর রোধ। তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ধাতব পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ধাতুর রোধ কেন তাপমাত্রার সাথে বাড়ে?

তাপমাত্রা বাড়লে ধাতব পরমাণুগুলির কম্পন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পরিবাহীর মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রনগুলির প্রবাহপথে বাধা সৃষ্টি হয়। ইলেকট্রনগুলির পরমাণুর সাথে সংঘর্ষের হার বেড়ে যায়, যা রোধ বৃদ্ধির প্রধান কারণ।

সকল পদার্থের ক্ষেত্রেই কি তাপমাত্রা বাড়লে রোধ বাড়ে?

না, সকল পদার্থের ক্ষেত্রে তা ঘটে না। এটি মূলত ধাতু এবং সাধারণ পরিবাহীদের (Conductors) জন্য প্রযোজ্য। অর্ধপরিবাহী (Semiconductors) যেমন সিলিকন, জার্মেনিয়াম এবং অন্তরক (Insulators) -এর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়লে তাদের রোধ বরং কমে যায়।

অর্ধপরিবাহীর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়লে রোধ কমে কেন?

অর্ধপরিবাহীতে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা স্বাভাবিক অবস্থায় খুব কম থাকে। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়লে অনেক ভ্যালেন্স ইলেকট্রন শক্তি পেয়ে কনডাকশন ব্যান্ডে চলে যায়। ফলে মুক্ত ইলেকট্রন ও হোল (hole) -এর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই মুক্ত আধানের সংখ্যা বৃদ্ধি, পরমাণুর কম্পনজনিত বাধাকে অতিক্রম করে ফেলে। তাই সামগ্রিকভাবে রোধের মান কমে যায়।

অর্ধপরিবাহীর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়লে রোধ কমে কেন?

তাপমাত্রা গুণাঙ্ক (Temperature Coefficient of Resistance) হলো কোনো পদার্থের রোধকত্ব (Resistivity) কী হারে তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয় তার একটি পরিমাপ। ধাতুগুলির জন্য এই গুণাঙ্ক ধনাত্মক (Positive), অর্থাৎ তাপমাত্রা বাড়লে রোধ বাড়ে। কিন্তু অর্ধপরিবাহী ও কার্বনের মতো পদার্থের জন্য এটি ঋণাত্মক (Negative)।

খুব কম তাপমাত্রায় (শূন্যের কাছাকাছি) ধাতুর রোধ কী হয়?

খুব কম তাপমাত্রায় পরমাণুগুলির তাপীয় কম্পন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ইলেকট্রন চলাচলের পথে বাধা অনেক কমে যায়। এ অবস্থায় ধাতুর রোধও অনেক কমে যায়। কিছু নির্দিষ্ট ধাতু ও সংকর ধাতুর জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় (Critical Temperature) রোধ একদম শূন্যে নেমে যায়। এই অবস্থাকে অতিপরিবাহিতা (Superconductivity) বলে।

বাতির ফিলামেন্ট (টাংস্টেন তন্তু) গরম হলে এর রোধ বাড়ে নাকি কমে?

বাড়ে। বাতি জ্বালানোর পর যখন ফিলামেন্ট প্রচণ্ড গরম হয়, তখন তার রোধ ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় অনেক গুণ বেড়ে যায়। এ কারণেই একটি বাল্ব যখন ঠান্ডা থাকে তখন এর মধ্যে প্রচুর বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় (Inrush Current), যা ধীরে ধীরে কমে যায় যখন ফিলামেন্ট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

রোধ বাড়লে পরিবাহীতে জুলের তাপ সৃষ্টি কী বাড়ে নাকি কমে?

জুলের তাপ (Joule Heating) বাড়ে। জুলের সূত্র অনুযায়ী—
H = I2Rt
যদি বিদ্যুৎ প্রবাহ (I) ধ্রুবক রাখা হয়, তবে রোধ (R) বাড়লে উৎপন্ন তাপ (H) ও সমানুপাতিকভাবে বাড়বে। এই কারণেই লোড বেশি থাকলে (রোধ তুলনামূলক কম থাকলে) তার কম গরম হয়, কিন্তু শর্ট সার্কিটের সময় (যখন রোধ প্রায় শূন্য) বিপুল প্রবাহমাত্রার কারণে তার প্রচণ্ডভাবে গরম হয়ে যায় এবং পুড়ে যেতে পারে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উষ্ণতা বাড়লে ধাতব পরিবাহীর রোধ বাড়ে কেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “উষ্ণতা বাড়লে ধাতব পরিবাহীর রোধ বাড়ে কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শুষ্ক করতে গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে গাঢ় HNO₃ ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় না কেন?