এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উত্তর-পশ্চিম ভারতে গম উৎপাদন বেশি হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

উত্তর-পশ্চিম ভারতে গম উৎপাদন বেশি হয় কেন?
গম রবিশস্যের অন্তর্গত ফসল হওয়াতে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশে (মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানা) গম চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সবুজ বিপ্লবের ইতিবাচক প্রভাব। উত্তর-পশ্চিম ভারতে গমের উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণগুলি হল –
অনুকূল আবহাওয়া –
গমবীজের অঙ্কুরোদগম থেকে ফসল পাকার সময় পর্যন্ত যে আবহাওয়া প্রয়োজন হয় তা উত্তর-পশ্চিম ভারতে বর্তমান। যেমন –
- আর্দ্র-শীতল আবহাওয়া – বীজের অঙ্কুরোদগম ও চারা বৃদ্ধির সময় আর্দ্র-শীতল আবহাওয়া প্রয়োজন।
- শুষ্ক আবহাওয়া – গম গাছের শিষ বেরোনোর সময় আর্দ্র-শীতল আবহাওয়া প্রয়োজন।
- উষ্ণ ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া – গম পাকার সময় উষ্ণ ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া প্রয়োজন। উত্তর-পশ্চিম ভারতে অনুকূল আবহাওয়ায় গম উৎপাদন ভালো হয়।
সবুজ বিপ্লবের প্রভাব –
ভারতের কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের সব থেকে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে গম উৎপাদনের ক্ষেত্রে। উচ্চফলনশীল গমবীজের ব্যবহার, জৈবসার, রাসায়নিক সারের ব্যবহার, আধুনির কৃষি পদ্ধতি উত্তর-পশ্চিম ভারতে গমের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে।
জলসেচ ব্যবস্থা –
- শতদ্রু নদীর ওপর ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনায় নির্মিত বাঁধের পশ্চাতের জলাধার থেকে খাল কেটে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিশাল অংশে জলসেচ করা হয়।
- সিরহান্দ খালের মাধ্যমে লুধিয়ানা, ফিরোজপুর, হিসার ও নাভা জেলার অনেক জমিতে জলসেচ করা হয়।
- পশ্চিম যমুনা খাল, উচ্চবারি দোয়াব খালের মাধ্যমে অনেক জমি চাষ করা হয়।
50-100 সেমি বৃষ্টিপাত –
গম চাষের জন্য ন্যূনতম 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত আবশ্যিক। গম বীজের পুষ্টির জন্য মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি প্রয়োজন।
পশ্চিমি ঝঞ্ঝা –
উত্তর-পশ্চিম ভারতে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার ফলে যে বৃষ্টিপাত হয় তা গম চাষের পক্ষে আদর্শ।
উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার –
সবুজ বিপ্লবের সময় মেক্সিকো, ফিলিপাইনস্ থেকে উচ্চফলনশীল গমবীজ আনা হয়। এ ছাড়া সোনার, সোনালিকা, সফেদ লারমা, ছোটে লারমা প্রভৃতি গমবীজ উত্তর-পশ্চিম ভারতে গমের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিল।
উপরিউক্ত কারণগুলি উত্তর-পশ্চিম ভারতে গমের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
উত্তর-পশ্চিম ভারতে গম উৎপাদন বেশি হয় কেন?
উত্তর-পশ্চিম ভারতে (প্রধানত পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ) গম উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ, উন্নত জলসেচ ব্যবস্থা, উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার এবং সবুজ বিপ্লবের প্রভাব রয়েছে।
জলসেচ কীভাবে গম উৎপাদনে সাহায্য করে?
উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভাকরা-নাঙ্গাল বাঁধ, পশ্চিম যমুনা খাল, সিরহিন্দ খাল ও অন্যান্য সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যাপ্ত জল সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়, যা গম চাষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সবুজ বিপ্লবের প্রভাব কী ছিল?
সবুজ বিপ্লবের সময় উচ্চ ফলনশীল গমবীজ (যেমন – সোনালিকা, সোনারু), রাসায়নিক সার ও আধুনিক কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গমের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
পশ্চিমি ঝঞ্ঝা গম চাষে কীভাবে সাহায্য করে?
শীতকালে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে হালকা বৃষ্টিপাত হয়, যা গমের চাষের জন্য উপযোগী।
গম চাষের জন্য কতটা বৃষ্টিপাত প্রয়োজন?
গম চাষের জন্য ন্যূনতম 50-100 সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। উত্তর-পশ্চিম ভারতে এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও সেচ সুবিধা গম উৎপাদনে সহায়ক।
উচ্চ ফলনশীল গমের জাতগুলি কী কী?
সোনালিকা, সোনারু, সফেদ লারমা, ছোটে লারমা প্রভৃতি উচ্চ ফলনশীল গমের জাত উত্তর-পশ্চিম ভারতে ব্যাপকভাবে চাষ হয়।
মৃত্তিকার ভূমিকা কী?
উত্তর-পশ্চিম ভারতে জলোঁড় মৃত্তিকা (Alluvial Soil) গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী, কারণ এটি উর্বর এবং জল ধারণক্ষমতা বেশি।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উত্তর-পশ্চিম ভারতে গম উৎপাদন বেশি হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন