বিদ্যাসাগরকে ‘বিদ্যাবণিক’ কেন বলা হয়? বিদ্যাসাগর সম্পর্কে টিকা লেখো।

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিদ্যাসাগরকে ‘বিদ্যাবণিক’ কেন বলা হয়? বিদ্যাসাগর সম্পর্কে টিকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বিদ্যাসাগরকে ‘বিদ্যাবণিক’ কেন বলা হয়? বিদ্যাসাগর সম্পর্কে টিকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বিদ্যাসাগরকে 'বিদ্যাবণিক' কেন বলা হয়? বিদ্যাসাগর সম্পর্কে টিকা লেখো।

বিদ্যাসাগরকে ‘বিদ্যাবণিক’ কেন বলা হয়?

বিদ্যাসাগর ছিলেন একাধারে সুলেখক, প্রকাশক, পুস্তক-বিক্রেতা ও মুদ্রণ ব্যবসায়ী। শিক্ষাসংস্কারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ যে অসম্ভব নয়, তা তিনি প্রমাণ করেছেন। শুধুমাত্র স্কুলপাঠ্য বই ছেপে ও বিক্রি করে তখন বিদ্যাসাগরের মাসিক আয় ছিল তিন-চার হাজার টাকা। ‘বর্ণপরিচয়’ বছরে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কপি বিক্রি হত। এই থেকে প্রাপ্ত বিপুল অর্থের প্রায় সবটাই তিনি সমাজ-সংস্কারমূলক কাজে ব্যয় করতেন।

বিদ্যাসাগর সম্পর্কে টিকা লেখো।

বিদ্যাসাগরের আসল নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। 1820 খ্রিস্টাব্দের 26শে সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর জেলার (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে ঈশ্বরচন্দ্র জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ভগবতী দেবী। ছোটোবেলা থেকেই বিদ্যাসাগর ছিলেন খুব মেধাবী ও একগুঁয়ে। নয় বছর বয়সে গ্রামের পাঠশালায় পড়া শেষ করে বাবার সঙ্গে কলকাতায় এসে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। কলকাতায় আসার সময় রাস্তার মাইল স্টোনে লেখা দেখে তিনি ইংরাজি সংখ্যা শেখেন। তাঁকে দুবেলা রান্না ও ঘরের অন্যান্য কাজ করে পড়াশুনা করতে হত। এছাড়া তেলের অভাবে রাত্রে রাস্তার আলোতে তাঁকে পড়াশোনা করতে হত। এভাবে পড়াশুনা করেও প্রত্যেক পরীক্ষায় তিনি প্রথম হতেন। অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য মাত্র 20 বছর বয়সে তিনি সংস্কৃত কলেজ থেকে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি প্রথমে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপক হন। পরে বিদ্যালয় সমূহের পরিদর্শক নিযুক্ত হন। দেশে শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি অনেক বিদ্যালয় ও কলেজ স্থাপন করেন। বই -এর অভাব দূর করার জন্য তিনি বর্ণপরিচয়, কথামালা, আখ্যান মঞ্জুরী, শকুন্তলা, সীতার বনবাস, বোধোদয়, ব্যাকরণ ইত্যাদি বহু বই লেখেন। তিনি হিন্দু সমাজে বহু-বিবাহ প্রথা বন্ধ করেন এবং বিধবা-বিবাহ প্রথা চালু করেন। বিদ্যাসাগর অত্যন্ত মাতৃভক্ত ছিলেন। বাবা-মাকে তিনি দেবদেবীর মতো ভক্তি করতেন। ঈশ্বরচন্দ্র শুধু বিদ্যার সাগরই ছিলেন না, তিনি দয়ার সাগরও ছিলেন। কারও দুঃখ দেখলে তাঁর প্রাণ কেঁদে উঠত। গরিব দুঃখীর প্রতি ছিল তাঁর অসীম দয়া। ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন তেজস্বী পুরুষ। কিন্তু তাঁর মনটি ছিল ফুলের মতো কোমল। কোনো অন্যায় তিনি সহ্য করতে পারতেন না। 1891 খ্রিস্টাব্দের 29 শে জুলাই এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ দেহত্যাগ করেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বিদ্যাসাগরের প্রকৃত নাম কী?

বিদ্যাসাগরের প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

বিদ্যাসাগরকে ‘বিদ্যাবণিক’ বলা হয় কেন?

বিদ্যাসাগর শুধু একজন শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারকই ছিলেন না, তিনি একজন সফল প্রকাশক ও ব্যবসায়ীও ছিলেন। তিনি নিজে বই লিখতেন, প্রকাশ করতেন এবং বিক্রি করতেন। তাঁর লেখা ‘বর্ণপরিচয়’ বছরে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কপি বিক্রি হত। বই বিক্রি থেকে তিনি প্রচুর আয় করতেন, যা তিনি সমাজসেবা ও শিক্ষা প্রসারে ব্যয় করতেন। এই কারণে তাঁকে ‘বিদ্যাবণিক’ (জ্ঞানের বণিক) বলা হয়।

বিদ্যাসাগর কোথায় ও কবে জন্মগ্রহণ করেন?

বিদ্যাসাগর 1820 খ্রিস্টাব্দের 26শে সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

বিদ্যাসাগর কীভাবে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি পেয়েছিলেন?

সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়নকালে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য মাত্র 20 বছর বয়সে তাঁকে ‘বিদ্যাসাগর’ (জ্ঞানের সাগর) উপাধি দেওয়া হয়।

বিদ্যাসাগরের লেখা কিছু বিখ্যাত বইয়ের নাম কী?

তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইগুলি হলো — বর্ণপরিচয় (বাংলা ভাষা শিক্ষার বই), কথামালা, আখ্যানমঞ্জরী, শকুন্তলা (সংস্কৃত নাটকের অনুবাদ), সীতার বনবাস, বোধোদয় (নীতিশিক্ষামূলক বই)।

বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারে কী অবদান রেখেছিলেন?

বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলন এবং বহুবিবাহ প্রথা বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় 1856 সালে বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়।

বিদ্যাসাগরের মাতৃভক্তির একটি উদাহরণ দাও।

বিদ্যাসাগর ছিলেন অত্যন্ত মাতৃভক্ত। তিনি মাকে দেবীর মতো ভক্তি করতেন। তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ আছে যে, তিনি মায়ের সেবার জন্য নিজে রান্না করতেন এবং সংসারের কাজে সাহায্য করতেন।

বিদ্যাসাগরের মৃত্যু কবে হয়?

1891 খ্রিস্টাব্দের 29শে জুলাই বিদ্যাসাগর মৃত্যুবরণ করেন।

বিদ্যাসাগর কেন ‘দয়ার সাগর’ নামে পরিচিত?

তিনি গরিব-দুঃখীদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। নিজের উপার্জিত অর্থ তিনি দান করতেন এবং অসহায় মানুষদের সাহায্য করতেন, তাই তাঁকে ‘দয়ার সাগর’ বলা হয়।

বিদ্যাসাগরের শিক্ষা ও সংগ্রামের জীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

ছোটবেলা থেকেই বিদ্যাসাগর অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও তিনি কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করতেন। তিনি রাস্তার আলোতে বই পড়তেন এবং সংস্কৃত কলেজে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পাস করেন। পরে তিনি শিক্ষক, লেখক ও সমাজসংস্কারক হিসেবে কাজ করে বাংলার শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থাকে উন্নত করেন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিদ্যাসাগরকে ‘বিদ্যাবণিক’ কেন বলা হয়? বিদ্যাসাগর সম্পর্কে রচনা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বিদ্যাসাগরকে ‘বিদ্যাবণিক’ কেন বলা হয়? বিদ্যাসাগর সম্পর্কে রচনা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Job Posts

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কী ভূমিকা ছিল?

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কী ভূমিকা ছিল?

জগদীশচন্দ্র বসু কে ছিলেন? জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে টীকা লেখো।

জগদীশচন্দ্র বসু কে ছিলেন? জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে টীকা লেখো।

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মসূচি কী ছিল?

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়? জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মসূচি কী ছিল?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের কী ভূমিকা ছিল?

বিদ্যাসাগরকে ‘বিদ্যাবণিক’ কেন বলা হয়? বিদ্যাসাগর সম্পর্কে টিকা লেখো।

জগদীশচন্দ্র বসু কে ছিলেন? জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে টীকা লেখো।

সমুদ্রবায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখো। দিনের বেলা সমুদ্র বায়ু প্রবাহিত হয় কেন?

নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা ডোলড্রামস্ বলতে কী বোঝো? নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে কেন?