বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার পরিচয় দাও।

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার পরিচয় দাও।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার পরিচয় দাও।
Contents Show

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার পরিচয় দাও।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত একজন কবি, কিন্তু মানবজীবনের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে রবীন্দ্র প্রতিভার ছোঁয়া লাগেনি। শিক্ষা সম্পর্কেও রবীন্দ্রনাথের ছিল স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনা। ঔপনিবেশিক শিক্ষার এক বলিষ্ঠ বিকল্প হিসেবে কবিগুরু বৈদিক শিক্ষাচিন্তার আদর্শ তুলে ধরেছেন।

ঔপনিবেশিক শিক্ষা-ব্যবস্থার সমালোচনা –

শিক্ষা-দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার কঠোর সমালোচক ছিলেন। পাশ্চাত্যের ‘কেরানি তৈরির শিক্ষা’ তাঁর মনঃপুত হয়নি। ‘তোতাকাহিনী’ শীর্ষক একটি ছোটোগল্পে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে নীরস ও যান্ত্রিক পড়াশোনার ভারে তোতাপাখির (অর্থাৎ ছাত্রের) করুণ অপমৃত্যু ঘটছে।

ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা –

ঔপনিবেশিক শিক্ষার কেরানি গড়ার কল ভেঙে সজীব মানুষ গড়তে 1901 খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ বোলপুর সন্নিকটস্থ ভুবনডাঙার মাঠে গড়ে তুললেন আধুনিক তপোবন-ব্রহ্মচর্যাশ্রম। বাস্তবিকই, এটি ছিল একটি ব্যতিক্রমী বিদ্যালয়। রবীন্দ্রনাথ মনে প্রাণে উপনিষদীয় চিন্তাধারায় প্রভাবিত ছিলেন। এই কারণে তিনি শান্তিনিকেতনে উন্মুক্ত আকাশের নীচে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করেন।

প্রকৃতির কোলে শিক্ষা –

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে, শিক্ষা হবে প্রকৃতির কোলে, মুক্ত আকাশের নীচে। চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনি একটি ‘খোপওয়ালা বড়োবাক্স’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীর নিবিড় যোগাযোগের কথা তিনি বারংবার উল্লেখ করেছেন।

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা –

শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক বিদ্যালয় পাঠভবনকে আরও বৃহত্তর রূপ দিতে রবীন্দ্রনাথ 1921 খ্রিস্টাব্দে একে মহাবিদ্যালয়ে পরিণত করেন। 1913 খ্রিস্টাব্দে তিনি সাহিত্যে যে নোবেল পুরস্কার পান, মূলত তাঁরই অর্থমূল্য দিয়ে এই মহাবিদ্যালয় গড়ে তোলেন, নাম দেন বিশ্বভারতী। এর উদ্দেশ্য ছিল প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের ভাবাদর্শের ভিত্তিতে সর্ববিদ্যার প্রসার এবং ‘বিশ্বমানব’ তৈরি করা। এই প্রসঙ্গে তিনি লেখেন – “যে আত্মীয়তা বিশ্বে বিস্তৃত হওয়ার যোগ্য, সেই আত্মীয়তার আসন এখানে পাতব।” রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর প্রায় 10 বছর পর 1951 খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন ভারত সরকার বিশ্বভারতীকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দান করেছে।

মূল্যায়ন –

বিশ্বভারতী রবীন্দ্রনাথের কাছে নিছক একটি বিশ্ব-বিদ্যালয় স্বরূপ ছিল না। এটি ছিল একটি আদর্শ। দেশ-কালের ঊর্ধ্বে এর অবস্থান, বিশ্বভারতী বিশ্বমানবতাবাদের প্রতীক। আর এখানেই রবীন্দ্রনাথ এক ও অনন্য।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার যান্ত্রিকতা ও সীমাবদ্ধতার বিরোধী ছিলেন। তিনি প্রকৃতি, স্বাধীনতা ও বিশ্বমানবতাভিত্তিক একটি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞানসাধনার সমন্বয় হবে।

ব্রহ্মচর্যাশ্রম ও বিশ্বভারতীর মধ্যে সম্পর্ক কী?

ব্রহ্মচর্যাশ্রম ও বিশ্বভারতীর মধ্যে সম্পর্ক হল –
1. ব্রহ্মচর্যাশ্রম (1901) – প্রকৃতির কোলে মুক্ত পরিবেশে শিক্ষাদানের প্রথম পরীক্ষা।
2. বিশ্বভারতী (1921) – ব্রহ্মচর্যাশ্রমের আদর্শকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করে একে মহাবিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
1. প্রকৃতিনির্ভর শিক্ষা (খোলা আকাশের নীচে পাঠদান)।
2. প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সমন্বয়মূলক শিক্ষা।
3. শিক্ষার্থীর স্বাধীন চিন্তা ও সৃজনশীলতার বিকাশ।
4. বিশ্বমানবতাবাদ ও সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বের আদর্শ।

বিশ্বভারতীর উদ্দেশ্য কী ছিল?

বিশ্বভারতীর উদ্দেশ্য ছিল –
1. “বিশ্বমানব” গঠন, যিনি সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ বা ধর্মীয় গণ্ডি অতিক্রম করবেন।
2. বিশ্বজুড়ে জ্ঞান-সংস্কৃতির আদানপ্রদানের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা।

রবীন্দ্রনাথ কেন ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন?

তিনি মনে করতেন, ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা কেরানি বা চাকরিজীবী তৈরি করে, যা মানবিক বিকাশকে স্তব্ধ করে। তাঁর মতে, শিক্ষা হওয়া উচিত জীবনঘনিষ্ঠ ও মুক্তমনের।

বিশ্বভারতী কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়?

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর 1951 সালে ভারত সরকার “বিশ্বভারতী অ্যাক্ট” পাস করে এটিকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেয়।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তায় প্রকৃতির ভূমিকা কী?

তিনি বলতেন, প্রকৃতিই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। শান্তিনিকেতনে গাছপালা, খোলা মাঠ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে শিক্ষাদান তাঁর এই চিন্তার প্রতিফলন।

বিশ্বভারতীর নামকরণের তাৎপর্য কী?

“বিশ্বভারতী” শব্দের অর্থ “বিশ্বের জন্য ভারতীয় জ্ঞানের আলয়”। এটি প্রাচীন ভারতের তক্ষশীলা ও নালন্দার আদর্শে গড়ে উঠেছিল।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক কেন?

বর্তমানের যান্ত্রিক ও প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাব্যবস্থায় তাঁর প্রকৃতি-নির্ভর, মানবিক ও সার্বজনীন শিক্ষাদর্শন একটি বিকল্প পথ দেখায়।

বিশ্বভারতীর সাংস্কৃতিক অবদান কী?

এখানে সঙ্গীত, নৃত্য, চিত্রকলা ও সাহিত্যের চর্চার মাধ্যমে শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে, যা রবীন্দ্রনাথের “শিক্ষাই সংস্কৃতি” ধারণার প্রতিফলন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার পরিচয় দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার পরিচয় দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

তেভাগা আন্দোলন কাকে বলে এবং এর মূল দাবি কী ছিল? তেভাগা আন্দোলনের নাম 'তেভাগা' কেন হয়েছিল?

তেভাগা আন্দোলন কাকে বলে এবং এর মূল দাবি কী ছিল? তেভাগা আন্দোলনের নাম ‘তেভাগা’ কেন হয়েছিল?

'একা' আন্দোলন শুরু হয় কেন? 'একা' আন্দালনে আন্দোলনকারীদের শপথ কী ছিল?

‘একা’ আন্দোলন শুরু হয় কেন? ‘একা’ আন্দালনে আন্দোলনকারীদের শপথ কী ছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় কেন? বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারী সমাজ কীভাবে যোগদান করেছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় কেন? বারদৌলি সত্যাগ্রহে নারী সমাজ কীভাবে যোগদান করেছিল?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিষয়সংক্ষেপ

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর