এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করো।
বিপুল সম্ভাবনা ও উদ্দীপনা জাগিয়ে শুরু হলেও নব্যবঙ্গীয়দের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তাঁদের ব্যর্থতার নেপথ্যে ছিল একাধিক কারণ –
ইয়ং বেঙ্গাল আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ –
- হিন্দুধর্ম ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধাচারন – উৎসাহের আতিশয্যে নব্যবঙ্গীয়রা হিন্দু ধর্ম ও ঐতিহ্যকে তীব্র ভাষায় আক্রমন করে বসেন।
- শহরকেন্দ্রিকতা – নব্যবঙ্গীয়দের আন্দোলন মূলত শহর কেন্দ্রিক এবং শিক্ষিত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়ায় এর ভিত্তি ছিল প্রথম থেকেই দুর্বল।
- গঠনমূলক কর্মসূচির অভাব – নব্যবঙ্গীয়রা প্রচলিত সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করলেও বিকল্প সমাজ গঠনের কথা প্রচার করে যাননি। গঠনমূলক কর্মসূচির অভাব তাদের ব্যর্থতাকে ভবিতব্য করে তুলেছিল।
- অন্ধ পাশ্চাত্যানুকরণ – দেশের সবকিছুকে হেয় জ্ঞান করে তারা পাশ্চাত্যের এক অন্ধ অনুকরণে মেতে উঠেছিলেন। তাদের মাথা আকাশে থাকলেও পা মাটি স্পর্শ করেনি। স্বভাবতই তাদের আন্দোলন সমাজের মুষ্টিমেয়কে প্রভাবিত করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠকে সামান্যতম আন্দোলিত পর্যন্ত করতে পারেনি।
মন্তব্য –
নব্যবঙ্গ আন্দোলন সমাজের মূল স্রোত থেকে ছিল বিচ্ছিন্ন। শুধুমাত্র পাশ্চাত্য ভাবধারার অন্ধ অনুকরণ করায় সমাজ বা জাতির জীবনে তাঁরা কোনো দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে যেতে পারেননি। ড. অনীল শীল তাই সমালোচনার সুরে বলেছেন – ‘এক প্রজন্মেই তাদের সব শেষ, তাদের কোনো পিতা এবং সন্তান-সন্ততি নেই।’
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন কী?
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি প্রগতিশীল আন্দোলন, যা হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে যুক্তিবাদ, মুক্তচিন্তা এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারার প্রসার ঘটানো।
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলি কী কী?
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলি হলো –
1. হিন্দুধর্ম ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধাচরণ – নব্যবঙ্গীয়রা হিন্দু ধর্ম ও ঐতিহ্যকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছিলেন, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিয়েছিল।
2. শহরকেন্দ্রিকতা – এই আন্দোলন মূলত শহরকেন্দ্রিক এবং শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, ফলে এর ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
3. গঠনমূলক কর্মসূচির অভাব – প্রচলিত সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করলেও তারা বিকল্প সমাজ গঠনের কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারেননি।
4. অন্ধ পাশ্চাত্যানুকরণ – তারা পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে মেতে উঠেছিলেন, যা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন কেন সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল?
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল কারণ তারা শুধুমাত্র পাশ্চাত্য ভাবধারার অন্ধ অনুকরণ করেছিলেন এবং দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে হেয় জ্ঞান করেছিলেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের সাথে তাদের সংযোগ গড়ে উঠেনি।
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কী ছিল?
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব খুবই সীমিত ছিল। তারা সমাজ বা জাতির জীবনে কোনো গভীর ও স্থায়ী প্রভাব রাখতে পারেননি। ড. অনীল শীলের মতে, এই আন্দোলন এক প্রজন্মেই শেষ হয়ে যায় এবং তাদের কোনো উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারেনি।
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের নেতৃত্বে কে ছিলেন?
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও, যিনি ছিলেন একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান শিক্ষক এবং চিন্তাবিদ। তিনি তার ছাত্রদের মধ্যে মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদের প্রসার ঘটান।
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন কেন শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল?
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কারণ এটি মূলত কলকাতার হিন্দু কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তারা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ছিলেন, যা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি।
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের সমালোচনা কী ছিল?
ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের সমালোচনা ছিল যে তারা হিন্দু ধর্ম ও ঐতিহ্যকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছিলেন এবং পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ করেছিলেন। এছাড়াও, তাদের গঠনমূলক কর্মসূচির অভাব ছিল, যা তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।