মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – বৃদ্ধি ও বিকাশ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

জীবনের প্রবাহমানতা হল জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন, মৃত্যু এবং পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি জীবের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য।

Table of Contents

জীবনের প্রবহমানতা – বৃদ্ধি ও বিকাশ

বৃদ্ধি কাকে বলে?

যে উপচিতি বিপাকক্রিয়ায় কোশ বিভাজনের মাধ্যমে জীবদেহের আকার, আয়তন ও শুষ্ক ওজন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে স্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে বেড়ে যায়, তাকে বৃদ্ধি বলে।

বিকাশ কাকে বলে?

জাইগোট বা ভ্রূণাণু থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রতিটি জীবের জীবনচক্রে বৃদ্ধি ও তৎ-পরবর্তী বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে সংঘটিত যাবতীয় ঘটনাকে একত্রে বিকাশ বলে।

মানব বিকাশ বলতে কী বোঝ?

সময়ের সঙ্গে মানুষের জৈবিক, মানসিক ও আবেগ-সংক্রান্ত পরিবর্তন হল মানব বিকাশ। এই বিকাশের ফলে মানুষ শৈশব থেকে পরিণত দশায় পৌঁছোয় ও শেষে বার্ধক্য লাভ করে।

মানব বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ?

একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মানবদেহের আকার, আয়তন, ওজন ও উচ্চতার স্বতঃস্ফূর্ত, স্থায়ী পরিবর্তনই হল মানব বৃদ্ধি।

ঋণাত্মক বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ?

উপচিতিমূলক বিপাক অপেক্ষা অপচিতিমূলক বিপাক ক্রিয়া বেশি হলে কোশের শুষ্ক ওজন হ্রাস পায়, একেই ঋণাত্মক বৃদ্ধি বলে। যেমন — বীজের অঙ্কুরোদ্‌গমের শুরুতে এবং বার্ধক্য বা জরার কালে এইপ্রকার বৃদ্ধি ঘটে।ঋণাত্মক বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ

ধনাত্মক বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ?

অপচিতিমূলক বিপাক অপেক্ষা উপচিতিমূলক বিপাক বেশি হলে কোশের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায়, একেই ধনাত্মক বৃদ্ধি বলে। যেমন — মুখ্য বৃদ্ধিকালে ধনাত্মক বৃদ্ধি ঘটে।

প্রকৃতি অনুযায়ী বৃদ্ধি কত প্রকার ও কী কী?

প্রকৃতি অনুযায়ী বৃদ্ধি প্রধানত তিন প্রকার। যথা — 1. অঙ্গজ বৃদ্ধি, 2. পুনরুৎপাদনমূলক বৃদ্ধি এবং 3. জনন-গত বৃদ্ধি।

কোশ বিভাজন দশা বলতে কী বোঝ?

যে দশায় শুধুমাত্র মাইটোসিস কোশ বিভাজনের মাধ্যমে কোশগুলির সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে জীবের বৃদ্ধি সম্পন্ন হয়, সেই দশাকে কোশ বিভাজন দশা বলে। ভ্রূণাণু থেকে পূর্ণাঙ্গ জীবদেহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এবং উদ্ভিদের মূল বা কাণ্ডের অগ্রভাগের ভাজক কলার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই দশা দেখা যায়।

কোশীয় আকার বৃদ্ধি দশা বলতে কী বোঝ?

বৃদ্ধির যে দশায় নতুন সৃষ্ট কোশগুলি জল শোষণ ও প্রোটোপ্লাজম সংশ্লেষের ফলে অপরিবর্তনীয়ভাবে আকারে বৃদ্ধি পায় ও ফলস্বরূপ জীবদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে, তাকে কোশীয় আকার বৃদ্ধি দশা বলে। প্রধানত কোশের জল শোষণের ফলে প্রোটোপ্লাজমের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেই কোশীয় আকার বৃদ্ধি পায়।

কোশীয় বিভেদন দশা বলতে কী বোঝ?

কোশসমূহের বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হলে বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য কোশগুলি বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হয়। ফলে ধীরে ধীরে কোশসমূহ থেকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত কোশ, কলা ও কলাতন্ত্র গঠিত হয়। বৃদ্ধির এই দশাকে কোশীয় বিভেদন দশা বলে।

অবিচ্ছিন্ন বৃদ্ধি কাকে বলে?

যে প্রকার বৃদ্ধিতে কোনো জীবের বৃদ্ধি শুরু হবার পরে সর্বাধিক আকার প্রাপ্তি পর্যন্ত না থেমে চলতে থাকে, তাকে অবিচ্ছিন্ন বৃদ্ধি বলে। অধিকাংশ জীবের বৃদ্ধি এই প্রকৃতির। যেমন — মানুষের বৃদ্ধি।

বিচ্ছিন্ন বৃদ্ধি কাকে বলে?

যে প্রকার বৃদ্ধিতে দ্রুত বৃদ্ধির একটি পর্যায়ের পরে জীবের বৃদ্ধি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় ও কিছুকাল পরে পুনরায় দ্রুত বৃদ্ধির একটি পর্যায় শুরু হয়, তাকে বিচ্ছিন্ন বৃদ্ধি বলে। সাধারণত, আর্থ্রোপোডা পর্বভুক্ত প্রাণীদের মধ্যে এইপ্রকার বৃদ্ধি দেখা যায়। যেমন — পতঙ্গের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি নির্মোচনের সময়ে একেবারে বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছুকাল পরে আবার শুরু হয়।

উদ্ভিদের অঙ্গজ বৃদ্ধি কীভাবে ঘটে?

প্রাথমিক ও গৌণ বৃদ্ধির দ্বারা উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গজ দেহের বৃদ্ধি ঘটে। ফলে উদ্ভিদের শাখাপ্রশাখা, পাতা ইত্যাদির সৃষ্টি হয়।

প্রাক্জন্মস্তর বলতে কী বোঝ?

গর্ভসঞ্চার থেকে শিশু জন্মাবার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সময়কালকে (প্রায় 10 মাস) প্রাজন্মস্তর বলে। এই সময়কালে শিশু মাতৃগর্ভে থাকে।

সদ্যজাত অবস্থা বলতে কী বোঝ?

শিশুর প্রসব থেকে প্রথম মাস পর্যন্ত সময়কালকে সদ্যজাত অবস্থা বলে। এইসময় শিশু সম্পূর্ণরূপে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
সদ্যজাত অবস্থা বলতে কী বোঝ

শৈশবকাল কাকে বলে?

জীবনের দ্বিতীয় মাস থেকে 10 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কাল হল শৈশবকাল। এইসময়ে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক,প্রাক্ষোবিক সব ধরনের বিকাশের হার বৃদ্ধি পায়, বিভিন্ন ধরনের চেষ্টীয় ক্রিয়াগুলি বিকশিত হয় কিন্তু সূক্ষ্ম অনুভূতির বিকাশ ধীরে হয়।

মানব বিকাশের ক্ষেত্রে পরিণত অবস্থা বলতে কী বোঝ?

19 বছর থেকে 60 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে সামগ্রিক- ভাবে পরিণত দশা বলা হয়। এইসময়ে দৈহিক বৃদ্ধি হ্রাস পায় ও ক্রমশ বন্ধ হয়, পক্ষান্তরে দায়িত্ববোধ অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

মানুষের বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলি কী কী?

পরিণত মানবদেহ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং তার মধ্যে বিভিন্ন অবনতিজনিত পরিবর্তন দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলি হল — 1. অস্থি ও অস্থিসন্ধি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। 2. দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। 3. স্মৃতি হ্রাস, অবসাদ, হীনমন্যতা, চুলের ধূসর বর্ণ প্রভৃতি সমস্যার শিকার হয়।

বালকের দেহে ও মনে বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনের জন্য দায়ী অন্তঃস্থ ফ্যাক্টরগুলি কী?

বয়ঃসন্ধির আগমনে হাইপোথ্যালামাস থেকে ক্ষরিত GnRH পিটুইটারি থেকে ক্ষরিতI CSH ও শুক্রাশয় থেকে ক্ষরিত টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রভৃতি অন্তঃস্থ ফ্যাক্টর বালকের দেহে এবং মনে পরিবর্তন আনে।

বালিকার দেহে ও মনে বয়ঃসন্ধিতে পরিবর্তনের জন্য দায়ী অন্তঃস্থ ফ্যাক্টরগুলি কী?

বয়ঃসন্ধির আগমনে বালিকার দেহের হাইপোথ্যালামাস থেকে ক্ষরিত GnRH, পিটুইটারি থেকে ক্ষরিত FSH, LH এবং ডিম্বাশয় থেকে ক্ষরিত ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোন প্রভৃতি অন্তঃস্থ ফ্যাক্টর-রূপে বালিকার দেহ ও মনে পরিবর্তন আনে।

বার্ধক্য কাকে বলে?

পরিণত জীবদেহে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ধীরে ধীরে ক্ষয় ও অবনতিজনিত যে পরিবর্তন ঘটে, তাকে বার্ধক্য বলে। সাধারণত 60 বছর ঊর্ধ্ব ব্যক্তিরা এই দশার অন্তর্ভুক্ত হন।

বৃদ্ধি ও বিকাশ হলো জীবের জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। বৃদ্ধি হলো শারীরিক আকার ও ওজন বৃদ্ধি, অন্যদিকে বিকাশ হলো শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন। বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য খাদ্য, জল, অক্সিজেন, তাপমাত্রা, আলো, খনিজ লবণ, জিন, হরমোন ও পরিবেশ প্রয়োজন।

Share via:

মন্তব্য করুন