আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘বৃদ্ধি ও বিকাশ‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

ধনাত্মক বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ?
অপচিতিমূলক বিপাক অপেক্ষা উপচিতিমূলক বিপাকের পরিমাণ বেশি হলে কোশের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাকে বলা হয় ধনাত্মক বৃদ্ধি। যেমন – মুখ্য বৃদ্ধিকালে জীবদেহে যে প্রকার বৃদ্ধি ঘটে তা ধনাত্মক বৃদ্ধি।
কোশীয় আকার বৃদ্ধি দশা বলতে কী বোঝ?
জীববৃদ্ধির দ্বিতীয় দশায় কোশ বিভাজনের পর কোশের প্রোটোপ্লাজমীয় আকার অপরিবর্তনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। অন্তঃকোশীয় ও বহিঃকোশীয় উপাদান সংশ্লেষ দ্বারা তা ঘটে থাকে। একেই কোশীয় আকার বৃদ্ধি দশা বলে।
কোশীয় বিভেদন দশা কাকে বলে?
জীব বৃদ্ধির তৃতীয় তথা সর্বশেষ যে দশায় পূর্ণ আয়তন কোশগুলি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনে বিশেষ বিশেষ কলাকোশে পরিবর্তিত হয় তাকে কোশীয় বিভেদন দশা বলে। যেমন – মানবদেহে স্নায়ুকোশ ও পেশিকোশ বিভেদন।
বৃদ্ধির দশা হিসেবে বিভেদন দশার তাৎপর্য কী?
কোশীয় বিভেদন দশায় বিভাজিত কোশগুলি তাদের কাজ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় ও পরিণত হয়ে ওঠে। এভাবে নানাপ্রকার কলা তথা কলাতন্ত্র তৈরি করে দেহ প্রয়োজনমতো সমস্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারে। যেমন – মানবদেহে বিভেদন দ্বারা স্নায়ুকোশ ও পেশিকোশের সৃষ্টি হয়।
বিকাশ কাকে বলে?
জাইগোট বা ভ্রুণাণু থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রতিটি জীবের জীবনচক্রে বৃদ্ধি ও তৎ-পরবর্তী বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে সংঘটিত যাবতীয় ঘটনাকে একত্রে বিকাশ বলে।
মানব বিকাশ বলতে কী বোঝ?
সময়ের সঙ্গে মানুষের জৈবিক, মানসিক ও আবেগ-সংক্রান্ত পরিবর্তন হল মানব বিকাশ। এই বিকাশের ফলে মানুষ শৈশব থেকে পরিণত দশায় পৌঁছোয় ও শেষে বার্ধক্য লাভ করে।
মানব বৃদ্ধি বলতে কী বোঝ?
একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মানবদেহের আকার, আয়তন, ওজন ও উচ্চতার স্বতঃস্ফূর্ত, স্থায়ী পরিবর্তনই হল মানব বৃদ্ধি।
প্রিন্যাটাল বা প্রাকজন্মস্তর বলতে কী বোঝ?
গর্ভসঞ্চার থেকে শিশু জন্মাবার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সময়কালকে (প্রায় 10 মাস) প্রাকজন্মস্তর বলে। এই সময়কালে শিশু মাতৃগর্ভে থাকে।
সদ্যোজাত অবস্থা বলতে কী বোঝ?
শিশুর প্রসব থেকে প্রথম মাস (0-28 দিন) পর্যন্ত সময়কালকে সদ্যোজাত অবস্থা বলে। এইসময় শিশু সম্পূর্ণরূপে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
সদ্যোজাতের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
সদ্যোজাতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- এই সময়ে মায়ের মুখ, প্রাথমিক বর্ণ, শব্দ, আলো প্রভৃতি চিনতে পারে।
- কান্না হল এদের একমাত্র মনের ভাবপ্রকাশের উপায়।
- জন্মের ঠিক পর দেহের ওজন সামান্য হ্রাস পেলেও তারপরে বৃদ্ধি দ্রুতগতিতে ঘটে।
শৈশবকাল কাকে বলে?
জীবনের দ্বিতীয় মাস থেকে 10 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কাল হল শৈশবকাল। এইসময়ে দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক সব ধরনের বিকাশের হার বৃদ্ধি পায়, বিভিন্ন ধরনের চেষ্টীয় ক্রিয়াগুলি বিকশিত হয় কিন্তু সূক্ষ্ম অনুভূতির বিকাশ ধীরে হয়।
শৈশবের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
শৈশবকালে বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- সদ্যোজাতর মাথার আকার দেহের সাপেক্ষে ছোটো হয়, তবে হাত-পা তুলনামূলক বেশি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- শিশুর বৃদ্ধি মাঝারি মাত্রায় ঘটে।
- চেষ্টীয় ক্রিয়াগুলি (যেমন – লেখা, দৌড়ানো) বিকশিত হয়।
- শিশুদের বুদ্ধি, স্মৃতি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
- ভয়, আনন্দ প্রভৃতি আবেগের বহিঃপ্রকাশ শুরু হয়। অন্যের জন্য চিন্তা করার মতো সূক্ষ্ম অনুভূতির বিকাশ ধীরে হয়।
জীবের বৃদ্ধির প্রথম দশা ও তৃতীয় দশার নাম উল্লেখ করে প্রতিটি দশার একটি করে বৈশিষ্ট্য লেখো।
প্রথম দশা হল সদ্যোজাত দশা, বৈশিষ্ট্য – হাসি ও কান্না হল মনের ভাব প্রকাশের উপায়।
তৃতীয় দশা হল বয়ঃসন্ধি দশা, বৈশিষ্ট্য – দেহের উন্নতি, বৃদ্ধি ও তীব্র মানসিক আবেগ সৃষ্টি হওয়া।
বয়ঃসন্ধিকালের তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
বয়ঃসন্ধিকালের তিনটি বৈশিষ্ট্য হল –
- এইসময়ে দৈহিক বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে।
- সাধারণত এই সময় থেকেই যৌন চেতনার উন্মেষ ঘটে ও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।
- মনোযোগ, চিন্তাশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও বুদ্ধির বিকাশ দ্রুত ঘটে।
মানব বিকাশের ক্ষেত্রে পরিণত অবস্থা বলতে কী বোঝ?
19 বছর থেকে 60 বছর বয়স পর্যন্ত সময়কালকে সামগ্রিকভাবে পরিণত দশা বলা হয়। এইসময়ে দৈহিক বৃদ্ধি হ্রাস পায় ও ক্রমশ বন্ধ হয়, পক্ষান্তরে দায়িত্ববোধ অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
বৃদ্ধি ও বিকাশের সম্পর্ক লেখো।
অথবা, বৃদ্ধি ছাড়া বিকাশ সম্ভব নয় – ব্যাখ্যা করো।
বৃদ্ধি ছাড়া বিকাশ সম্ভব নয়। বিকাশ হল একটি বৃহত্তর জীবন বৈশিষ্ট্য। সাধারণত কোনো জীবের পরিমাণগত অর্থাৎ দেহের শুষ্ক ওজনের পরিবর্তন ঘটার মাধ্যমে বৃদ্ধি সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিকাশে শুধুমাত্র জীবদেহের পরিমাণগতই নয়, গুণগত পরিবর্তনও হয়ে থাকে। বহুকোশী জীবে কোশীয় বিভেদন দশায় উৎপন্ন বিভিন্ন কলা ও কলাতন্ত্র জীবদেহের জটিলতা বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ ক্রমেই জীবের বিকাশ ঘটে জাইগোট থেকে জটিল পূর্ণাঙ্গ প্রাণী সৃষ্টি, বৃদ্ধি ছাড়া সম্ভব নয় এবং প্রাণীর বৃদ্ধি না হলে তার বিকাশও সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, বিকাশ বৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল, বৃদ্ধি ছাড়া কোনোভাবেই বিকাশ সম্ভব নয়।
পরিণত দশার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
পরিণত দশার বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- দৈহিক বৃদ্ধি বয়ঃসন্ধির তুলনায় হ্রাস পায়।
- মানুষের নিজের ও তার পরিবার সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ও দায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।
- জীবন সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
বার্ধক্য কাকে বলে?
পরিণত জীবদেহে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ধীরে ধীরে ক্ষয় ও অবনতিজনিত যে পরিবর্তন ঘটে, তাকে বার্ধক্য বলে। সাধারণত 60 বছর বয়সের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিরা এই দশার অন্তর্ভুক্ত হন।
মানুষের বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলি কী কী?
পরিণত মানবদেহ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং তার মধ্যে বিভিন্ন অবনতিজনিত পরিবর্তন দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলি হল –
- অস্থি ও অস্থিসন্ধি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়।
- স্মৃতি হ্রাস, অবসাদ, হীনমন্যতা, চুলের ধূসর বর্ণ প্রভৃতি সমস্যার শিকার হয়।
মানববিকাশের অন্তিম পরিণতি বা বার্ধক্য দশায় দৃষ্টিশক্তি ও অস্থি-সংক্রান্ত দুটি পরিবর্তন উল্লেখ করো।
বার্ধক্য দশায় –
- দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়, প্রেসবায়োপিয়ার লক্ষণ প্রকাশিত হয়।
- অস্থি ও অস্থিসন্ধি ক্ষয় পেয়ে যথাক্রমে অস্টিওপোরোসিস ও অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিস রোগ দেখা যায়।
বার্ধক্য দশায় সুস্থভাবে বাঁচার জন্য কী কী করা দরকার?
বার্ধক্য দশায় সুস্থভাবে বাঁচার জন্য দরকার –
- পরিমিত মাত্রায় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, কারণ এই বয়সে বিপাকহার কমে যায়।
- প্রতিদিন সহজ শরীরচর্চা।
- বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।
- পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা করা ও যতটা সম্ভব চিন্তামুক্ত ও চাপমুক্ত থাকা।
মানব বিকাশের বিভিন্ন দশাগুলি সঠিক ক্রমে লেখো।
সদ্যোজাত দশা → শৈশব দশা → বয়ঃসন্ধি দশা → পরিণত দশা → বার্ধক্য বা অন্তিম পরিণতি দশা।
উদ্ভিদ বৃদ্ধি ও প্রাণী বৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উদ্ভিদ বৃদ্ধি ও প্রাণী বৃদ্ধির মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | উদ্ভিদ বৃদ্ধি | প্রাণী বৃদ্ধি |
বৃদ্ধির সময়কাল | আজীবন বৃদ্ধি ঘটে। | নির্দিষ্ট সময়কাল অবধি বৃদ্ধি ঘটে। |
বৃদ্ধির স্থান | নির্দিষ্ট দেহাংশে বৃদ্ধি ঘটে থাকে। | সমগ্র দেহের নিয়ত বৃদ্ধি ঘটে। |
হরমোন | অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন। | গ্রোথ হরমোন, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন। |
বৃদ্ধির প্রকার | কোশের আকার বৃদ্ধির দ্বারা মূলত বৃদ্ধি ঘটে। | কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি দ্বারা মূলত বৃদ্ধি ঘটে। |
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘বৃদ্ধি ও বিকাশ‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন