এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – উপাদান ও উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
Contents Show

উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস –

উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে ছয়টি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা –

ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere) –

এটি বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন স্তর যেখানে বায়ুমণ্ডলের যাবতীয় পরিবর্তন দেখা যায়।

বিস্তার – এই স্তর নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে 18 কিমি, ক্রান্তীয় অঞ্চলে 12.5 কিমি এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় 8 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিশেষত্ব –

  • এই স্তরে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে 6.4° সে হারে উষ্ণতা হ্রাস পায়, একে স্বাভাবিক তাপহ্রাস হার (Normal Lapse Rate) বলে।
  • ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় বায়ুর উষ্ণতা কমে হয় -50° সে থেকে -65° সে।
  • এই স্তরে বায়বীয় উপাদানের মধ্যে অধিক মাত্রায় ধূলিকণা ও লবণকণা থাকে।
  • ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ বলা হয়। ট্রপোপজে উষ্ণতা কমেও না বাড়েও না, স্থির থাকে।
  • বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বজ্র, বিদ্যুৎ, ঝড়বৃষ্টি) এই স্তরে দেখা যায়, তাই একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলা হয়।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere) –

ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমা ট্রপোপজের ওপরের বায়ুমণ্ডলীয় স্তরটি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।

বিস্তার – ট্রপোপজের ওপর থেকে অর্থাৎ প্রায় 20 কিমি থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিশেষত্ব –

  • এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
  • স্তরটিতে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ধূলিকণা ছাড়া কোনো জলীয়বাষ্প না থাকায় কোনো প্রকার বায়বীয় গোলযোগ ঘটে না অর্থাৎ আবহাওয়া শান্ত থাকে তাই একে শান্তমণ্ডল বলা হয়।
  • এই স্তরে 20-50 কিমি উচ্চতায় ওজোন (O3) গ্যাসের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। যা ওজোনোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। এটি সূর্য থেকে আসা অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে জীবজগৎকে রক্ষা করে।
  • এই স্তরে বায়বীয় গোলযোগ না হওয়ায় জেটপ্লেনগুলি চলাচল করতে পারে।
  • এই স্তরের ঊর্ধ্বাংশে তাপমাত্রা বেড়ে হয় -4° সে।
  • স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশকে স্ট্র্যাটোপজ বলা হয়।

মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere) –

স্ট্র্যাটোপজের ওপরে বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তরটিকে মেসোস্ফিয়ার বলা হয়। গ্রিক শব্দ ‘Meso’ কথাটির অর্থ Middle অর্থাৎ মধ্যমভাগ।

বিস্তার – ট্রপোপজের ওপর থেকে প্রায় 80 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তরটি বিস্তৃত।

বিশেষত্ব –

  • উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই স্তরে উষ্ণতা অতি দ্রুত হারে কমতে থাকে।
  • মেসোস্ফিয়ারের বায়ুর চাপ খুবই কম।
  • মহাকাশ থেকে আগত মহাজাগতিক বস্তুকণা, উল্কাপিণ্ডসমূহ এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

আয়নোস্ফিয়ার (Ionosphere) –

মেসোপজের ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে।

বিস্তার – মেসোপজের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের 30 কিমি উচ্চতা থেকে 500 কিমি উচ্চতার মধ্যবর্তী অংশে এই স্তরটি অবস্থিত।

বিশেষত্ব –

  • এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • বায়ুমণ্ডলের সর্বাধিক উষ্ণতা এই স্তরে দেখা যায় তাই একে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়।
  • এই স্তরে বস্তুকণা আয়নিত অবস্থায় থাকে বলে বেতার তরঙ্গ এখান থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং বেতার সংযোগ ঘটায়। আয়নোস্ফিয়ারের 90-160 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অঞ্চলটি ‘কেনেলি-হেভিসাইড’ স্তর নামে পরিচিত।

এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere) –

আয়নোস্ফিয়ার বা থার্মোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরটিকে এক্সোস্ফিয়ার বলা হয়।

বিস্তার – এই স্তর থার্মোস্ফিয়ারের ওপরে অর্থাৎ 500-750 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিশেষত্ব –

  • উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলক কম হারে এই স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, প্রায় 650 কিমি উচ্চতায় উষ্ণতা বেড়ে হয় প্রায় 1240° সে।
  • এই স্তরে হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়।

ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere) –

এক্সোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর তথা শেষ সীমাকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলা হয়।

বিস্তার –

  • এই স্তরে সমস্ত বায়বীয় উপাদান আয়নিত অবস্থায় থাকে।
  • এই স্তরের আনুমানিক উষ্ণতা প্রায় 2000° সে।
  • এখানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব প্রায় নেই বললেই চলে।
  • এই স্তরে স্থায়ী তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যার প্রভাবে ইলেকট্রন ও মুক্ত আয়নগুলি সংঘবদ্ধ অবস্থায় থাকে।
  • এই স্তরের পর বায়ুমণ্ডল মহাশূন্যে লীন হয়।
উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস
উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে কয়টি স্তরে ভাগ করা হয়?

উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে ছয়টি স্তরে ভাগ করা হয় –
1. ট্রপোস্ফিয়ার।
2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার।
3. মেসোস্ফিয়ার।
4. আয়নোস্ফিয়ার (থার্মোস্ফিয়ার)।
5. এক্সোস্ফিয়ার।
6. ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।

বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে আবহাওয়া সংক্রান্ত সকল পরিবর্তন ঘটে?

ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুমণ্ডলের সকল আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিবর্তন (বৃষ্টি, ঝড়, বজ্রপাত ইত্যাদি) ঘটে।

ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে উষ্ণতা কীভাবে পরিবর্তিত হয়?

ট্রপোস্ফিয়ারে প্রতি 1000 মিটার (1 কিমি) উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে 6.4°C হারে উষ্ণতা কমে। একে স্বাভাবিক তাপহ্রাস হার (Normal Lapse Rate) বলে।

ট্রপোপজ ও স্ট্র্যাটোপজ কী?

1. ট্রপোপজ – ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী সীমান্ত স্তর। এখানে উষ্ণতা স্থির থাকে।
2. স্ট্র্যাটোপজ – স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী সীমান্ত স্তর।

ওজোন স্তর বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে অবস্থিত?

ওজোন স্তর (Ozonosphere) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে (20-50 কিমি উচ্চতায়) অবস্থিত। এটি সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি (UV Ray) শোষণ করে।

কোন স্তরে জেট বিমান চলাচল করে?

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ স্থির থাকায় জেট বিমান চলাচল করে।

মেসোস্ফিয়ারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?

1. উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে উষ্ণতা দ্রুত হ্রাস পায়।
2. উল্কাপিণ্ড এই স্তরে পুড়ে ছাই হয়।
3. বায়ুর চাপ অত্যন্ত কম।

আয়নোস্ফিয়ারকে থার্মোস্ফিয়ারও বলা হয় কেন?

আয়নোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এটি বায়ুমণ্ডলের সর্বাধিক উত্তপ্ত স্তর, তাই একে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়।

বেতার তরঙ্গ প্রতিফলনে কোন স্তর গুরুত্বপূর্ণ?

আয়নোস্ফিয়ার স্তর বেতার তরঙ্গকে প্রতিফলিত করে পৃথিবীতে ফেরত পাঠায়, যা দূরসঞ্চার (টেলিকমিউনিকেশন) এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

1. এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
2. এখানে আয়নিত কণাগুলি (ইলেকট্রন ও প্রোটন) তড়িৎচুম্বকীয় বলের প্রভাবে আবদ্ধ থাকে।
3. এটি সৌর বায়ু (Solar Wind) থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে।

বায়ুমণ্ডলের কোন স্তর মহাশূন্যের সাথে মিশে যায়?

এক্সোস্ফিয়ার স্তর ধীরে ধীরে মহাশূন্যের সাথে মিশে যায়।

কোন স্তরে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য থাকে?

এক্সোস্ফিয়ার স্তরে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য থাকে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – উপাদান ও উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন