বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পাঁচটি পদ্ধতি আলোচনা করো” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পাঁচটি পদ্ধতি আলোচনা করো” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পাঁচটি পদ্ধতি আলোচনা করো।
বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পাঁচটি পদ্ধতি আলোচনা করো।
Contents Show

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পাঁচটি পদ্ধতি আলোচনা করো।

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি –

বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়ে থাকে যথা –

বিকিরণ –

ক্ষুদ্র তরঙ্গযুক্ত সূর্যরশ্মি (প্রায় 3 লক্ষ কিমি/সে গতিবেগে) ভূপৃষ্ঠকে প্রত্যক্ষভাবে উত্তপ্ত করার পর ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর বৃহৎ তরঙ্গদের দ্বারা পরোক্ষভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই পদ্ধতিকে বিকিরণ পদ্ধতি বলে।

পরিবহণ –

সূর্যতাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ ও পরে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন নীচের বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয়। তারপর বায়ুর স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী এই তাপ উপরস্থ অপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুস্তরে পরিবাহিত হয়। এই ভাবে বায়ুস্তর থেকে বায়ুস্তরে তাপ পরিবাহিত হতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত উভয় বায়ুস্তরের তাপ সমান হয়। এই পদ্ধতিকে তাপ পরিবহণ পদ্ধতি বলে।

পরিচলন –

উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের তাপে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর সর্বপ্রথম সর্বাধিক উত্তপ্ত হয় এবং উষ্ণবায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। তখন ওই বায়ুশূন্য স্থান পূরণের জন্য আশেপাশের উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু ছুটে আসে এবং পুনরায় এই বায়ু উত্তপ্ত হয়। এইভাবে উপরের শীতল বায়ু নীচে আসে এবং নীচের উষ্ণবায়ু উপরে উঠে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। এই পদ্ধতিকে তাপ পরিচলন পদ্ধতি বলে।

অ্যাডভেকশন –

কোনো স্থানের উষ্ণবায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে গতিপথের অঞ্চল সমূহ উত্তপ্ত করে এবং অন্য স্থানের শীতল বায়ুকে উত্তপ্ত করে। একে অ্যাডভেকশন বলে।

প্রত্যক্ষ সৌরতাপ শোষণ –

সূর্যরশ্মি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠে আসার সময় কিছু পরিমাণ তাপ, বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদান যেমন – ধূলিকণা, জলীয়বাষ্প, CO2 প্রভৃতি দ্বারা সরাসরি শোষিত হয় এবং বায়ুমণ্ডলকে সামান্য উত্তপ্ত করে। এই পদ্ধতিকে প্রত্যক্ষ সৌরতাপ শোষণ বলে।

তেজস্ক্রিয় পদার্থের তাপ বিকিরণ –

ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, রেডিয়াম প্রভৃতি ভূ-অভ্যন্তরে তেজস্ক্রিয় পদার্থের তাপ বিকিরণের ফলে বায়ুমণ্ডল কিছুটা উত্তপ্ত হয়। এ ছাড়া –

  • ভূগর্ভস্থ তাপ।
  •  লীনতাপ।
  • মনুষ্যকর্তৃক সৃষ্ট তাপ প্রভৃতি কারণে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার প্রধান পদ্ধতিগুলো কী কী?

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার প্রধান পাঁচটি পদ্ধতি হলো —
1. বিকিরণ (Radiation)।
2. পরিবহণ (Conduction)।
3. পরিচলন (Convection)।
4. অ্যাডভেকশন (Advection)।
5. প্রত্যক্ষ সৌরতাপ শোষণ (Direct Solar Heat Absorption)।

বিকিরণ পদ্ধতিতে বায়ুমণ্ডল কীভাবে উত্তপ্ত হয়?

সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গের শক্তি ভূপৃষ্ঠে শোষিত হয় এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ দীর্ঘ তরঙ্গের তাপ বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে।

পরিবহণ ও পরিচলনের মধ্যে পার্থক্য কী?

1. পরিবহণ – তাপ অণু থেকে অণুতে স্থানান্তরিত হয় (বায়ুস্তরের মধ্যে)।
2. পরিচলন – উষ্ণ বায়ু উপরে উঠে যায় ও শীতল বায়ু নীচে নেমে আসে, ফলে বায়ুচক্রের মাধ্যমে তাপ বিতরণ হয়।

অ্যাডভেকশন বলতে কী বোঝায়?

কোনো স্থানের উষ্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়ে অন্য অঞ্চলের বায়ুকে উত্তপ্ত করলে তাকে অ্যাডভেকশন বলে (যেমন — গ্রীষ্মকালীন উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ)।

বায়ুমণ্ডল সরাসরি সৌরতাপ শোষণ করে কতটা উত্তপ্ত হয়?

বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প, CO₂, ধূলিকণা ইত্যাদি কিছু সৌরশক্তি শোষণ করে, তবে এটি তুলনামূলকভাবে কম (মাত্র ~19%)। বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ তাপ আসে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরণের মাধ্যমে।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ কীভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়ায়?

ভূ-অভ্যন্তরের ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত তাপ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে বায়ুমণ্ডলকে পরোক্ষভাবে উত্তপ্ত করে।

মনুষ্যসৃষ্ট তাপ কীভাবে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়ায়?

শিল্পকারখানা, যানবাহন, বন উজাড় ইত্যাদি কার্যক্রমে CO₂ ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ে, ফলে বায়ুমণ্ডল অধিক তাপ ধরে রাখে (গ্লোবাল ওয়ার্মিং)।

লীনতাপ কীভাবে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে?

বাষ্পীভবনের সময় শোষিত লীনতাপ বায়ুমণ্ডলে মুক্ত হলে (ঘনীভবন প্রক্রিয়ায়) তা তাপ সরবরাহ করে।

ভূগর্ভস্থ তাপের ভূমিকা কী?

ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা ও ভূ-তাপীয় শক্তি ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে, যা পরোক্ষভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপ বাড়ায়।

গ্রিনহাউস প্রভাব ও বায়ুমণ্ডলের উত্তপ্ত হওয়ার মধ্যে সম্পর্ক কী?

CO₂, মিথেন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাস সৌরতাপ আটকে রেখে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, যা গ্রিনহাউস প্রভাব নামে পরিচিত।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পাঁচটি পদ্ধতি আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পাঁচটি পদ্ধতি আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ