বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝো? বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ কী?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝো? বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝো? বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝো বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ কী
বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝো বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ কী
Contents Show

বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝো? বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ কী?

বৈপরীত্য উত্তাপ –

বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তর ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে 6.5°C/কিমি হারে উষ্ণতা হ্রাস পায়। তবে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে যদি উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় তাহলে তাকে বৈপরীত্য উত্তাপ বলে। বৈপরীত্য উত্তাপ তিন প্রকার। যথা –

  1. স্থিতিশীল বৈপরীত্য।
  2. গতিশীল বৈপরীত্য।
  3. বায়ু নিকাশ।

ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চলে বৈপরীত্য উত্তাপ সৃষ্টির আদর্শ অবস্থাসমূহ –

দীর্ঘ রাত –

রাত দীর্ঘ হলে আগত সূর্যরশ্মি থেকে বিকিরণের মাধ্যমে প্রত্যাগমনের পরিমাণ বেশি হয়। যেমন শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় এইরকম ঘটনা ঘটে।

বায়ুর প্রকৃতি –

অপেক্ষাকৃত শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হলে পৃথিবীর বিকিরিত উত্তাপ সামান্য পরিমাণ শোষিত হয়।

মেঘমুক্ত রাত –

মেঘমুক্ত রাতে পৃথিবী থেকে তাপ বিকিরণ দ্রুত হয়।

বায়ুর গতিবেগ –

বায়ুর গতিবেগ ধীর হলে ভূপৃষ্ঠ পরিবহণ ও বিকিরণ প্রণালীতে অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়।

ভূমির প্রকৃতি –

বরফাবৃত ভূমিভাগ সূর্যবিকিরণের দ্বারা কম উত্তপ্ত হয়। ফলে সংস্পর্শে আসা বায়ু শৈত্যপ্রবাহে দ্রুত শীতল হয়ে পড়ে। মরু অঞ্চলে গ্রীষ্ম ও শীতে উষ্ণতার বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়।

বৈপরীত্য উত্তাপ সৃষ্টির কারণ –

  • নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পর্বতের ঊর্ধ্বঢাল দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়, ফলে ঘন, ভারী, শীতল বায়ু ক্যাটাবেটিক বায়ুরূপে দ্রুত নেমে উপত্যকায় জমা হয়। তখন উপত্যকার নীচের উষ্ণ বায়ু ওপরে উঠে যায়। এর ফলে উপরের দিকে উষ্ণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং উষ্ণতার বৈপরীত্য (Inversion of Temperature) ঘটায়।
  • শীতকালে মহাদেশের ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন কোনো একটি অঞ্চল দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়। কিন্তু উপরের বায়ু অত দ্রুত শীতল হতে পারে না বেশি উষ্ণ থেকে যায়। এর ফলে বৈপরীত্য উষ্ণতা সৃষ্টি হয়।
  • আবার কখনো কখনো পরস্পর বিপরীতমুখী উষ্ণ ও শীতল বায়ু মুখোমুখি হলে শীতলবায়ুর ঢাল বরাবর উষ্ণ বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয় এবং সীমান্ত বরাবর বৈপরীত্য উষ্ণতার সৃষ্টি করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝায়?

বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে (ট্রপোস্ফিয়ারে) সাধারণত উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা কমে (প্রতি কিলোমিটারে 6.5° সে)। কিন্তু উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে উষ্ণতা বাড়লে তাকে বৈপরীত্য উত্তাপ বলে।

বৈপরীত্য উত্তাপ কত প্রকার ও কী কী?

বৈপরীত্য উত্তাপ তিন প্রকার –
1. স্থিতিশীল বৈপরীত্য (Radiation Inversion)।
2. গতিশীল বৈপরীত্য (Advectional Inversion)।
3. বায়ু নিকাশ (Frontal Inversion)।

বৈপরীত্য উত্তাপ সৃষ্টির প্রধান কারণ কী?

1. ভূপৃষ্ঠের দ্রুত তাপ বিকিরণ (দীর্ঘ রাত, মেঘমুক্ত আকাশ, শুষ্ক বায়ু)।
2. শীতল বায়ুর নিচে উষ্ণ বায়ুর প্রবাহ (যেমন উপত্যকায় ভারী শীতল বায়ু জমা হলে)।
3. বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ (উষ্ণ ও শীতল বায়ুর সংঘর্ষে উষ্ণ বায়ু উপরে উঠে গেলে)।

ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চলে বৈপরীত্য উত্তাপের জন্য আদর্শ অবস্থা কী?

1. দীর্ঘ রাত (শীতকালে বেশি দেখা যায়)।
2. শুষ্ক বায়ু (তাপ শোষণ কম হয়)।
3. মেঘমুক্ত আকাশ (তাপ দ্রুত বিকিরিত হয়)।
4. ধীর বায়ুপ্রবাহ (বায়ু স্থির থাকলে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত ঠান্ডা হয়)।
5. বরফাবৃত বা মরুভূমি অঞ্চল (তাপ কম শোষিত হয়)।

পর্বত অঞ্চলে বৈপরীত্য উত্তাপ কীভাবে সৃষ্টি হয়?

পর্বতের ঢালে দ্রুত তাপ বিকিরণের ফলে শীতল বায়ু নিচে নেমে উপত্যকায় জমা হয়। এতে উপত্যকার নিচের শীতল বায়ুর ওপরে উষ্ণ বায়ু অবস্থান করে, ফলে উষ্ণতার বৈপরীত্য ঘটে।

শীতকালে বৈপরীত্য উত্তাপ বেশি দেখা যায় কেন?

শীতকালে রাত দীর্ঘ হয়, বায়ু শুষ্ক থাকে এবং মেঘমুক্ত আকাশে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে। ফলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু শীতল হয়ে বৈপরীত্য উত্তাপ সৃষ্টি করে।

বৈপরীত্য উত্তাপের পরিবেশগত প্রভাব কী?

1. বায়ুদূষণ বৃদ্ধি (শীতল বায়ু নিচে আটকে থাকায় দূষক উপরে উঠতে পারে না)।
2. কুয়াশা সৃষ্টি (আর্দ্র বায়ু শীতল হয়ে ঘনীভূত হয়)।
3. কৃষির ক্ষতি (ঠান্ডা বায়ু জমে ফসল নষ্ট হতে পারে)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝো? বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ কী?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বৈপরীত্য উত্তাপ বলতে কী বোঝো? বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা