এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য লেখো। ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর মধ্যে পার্থক্য কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য লেখো। ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর মধ্যে পার্থক্য কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য লেখো।
ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য –
ঘূর্ণবাত হল একপ্রকার আকস্মিক বায়ু। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- ঘূর্ণবাতের সমগ্র এলাকায় বায়ুর চাপ কম থাকে বিশেষ করে কেন্দ্রে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রে এই চাপ 250-900 mb হয়ে থাকে।
- ঘূর্ণবাতের মাঝে একটি কেন্দ্র থাকে। সেখানে শান্ত অবস্থা বিরাজ করে একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলা হয়।
- ঘূর্ণবাতের বায়ু উষ্ণ ও ঊর্ধ্বগামী হয়।
- কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে বায়ুর চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
- ঘূর্ণবাতে কেন্দ্রমুখী বায়ুপ্রবাহ লক্ষ করা যায়।
- ঘূর্ণবাতের বায়ু উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ও দক্ষিণে গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে প্রবাহিত হয়।
- আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে ও ঝড়বৃষ্টি হয়।
প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য –
প্রতীপ ঘূর্ণবাত, ঘূর্ণবাতের বিপরীত অবস্থা। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে উচ্চচাপ।
- কেন্দ্র থেকে বায়ু বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়।
- উচ্চচাপ কেন্দ্রের বায়ু শীতল ও ভারী তাই ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন হয়ে প্রবাহিত হয়।
- আকাশ সাধারণত মেঘমুক্ত ও নির্মল থাকে।
- এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে বেঁকে প্রবাহিত হয়।

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর মধ্যে পার্থক্য কী?
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনা গুলির মধ্যে অন্যতম হল ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত। ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত একে অপরের বিপরীত অবস্থাকে সূচিত করে। দুটি অবস্থার কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একটি কে অপরটি থেকে পৃথক করে। ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য গুলি বিস্তারিত ভাবে নিচে আলোচনা করা হল –
বিষয় | ঘূর্ণবাত | প্রতীপ ঘূর্ণবাত |
সংজ্ঞা | নিম্নচাপ বিশিষ্ট ঝরকে ঘূর্ণবাত বা সাইক্লোন বলা হয়ে থাকে। | উচ্চচাপ বিশিষ্ট অঞ্চল থেকে বর্হিমুখী বায়ু প্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। |
বায়ুপ্রবাহ | চারদিক থেকে বায়ু ঘূর্ণবাত কেন্দ্রের দিকে ধেয়ে আসে অর্থাৎ বায়ু প্রবাহ কেন্দ্রমুখী হয়। | প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ু কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে যায় অর্থাৎ বায়ু প্রবাহ বর্হিমুখী। |
বায়ুর প্রকৃতি | ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রের বায়ু উষ্ণ ও ঊর্ধবগামী হয়। | প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে বায়ু ঠাণ্ডা ও নিম্নগামী হয়। |
চাপের উপস্থিতি | ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। | প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। |
মেঘ ও ঝড়বৃষ্টি | ঘূর্ণবাতের সময় আকাশ মেঘলা থাকে ও প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়। | প্রতীপ ঘূর্ণবাতের ক্ষেত্রে আকাশ নির্মল মেঘমুক্ত থাকে। ঝড়বৃষ্টি হয় না। |
স্থায়িত্ব | ঘূর্ণবাত ক্ষণস্থায়ী হয়। | প্রতীপ ঘূর্ণবাত দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। |
ধ্বংসাত্মক শক্তি | ঘূর্ণবাত খুব শক্তিশালী হয়, এর ফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। | প্রতীপ ঘূর্ণবাতের শক্তি কম হয় বলে, ক্ষয়ক্ষতি হয় না। |
গতিবেগ | ঘূর্ণবাত তীব্র গতিবেগ সম্পন্ন হয়, কখনো কখনো গতিবেগ ঘণ্টায় 300-350 কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। | প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ তীব্র হয় না। |
উৎপত্তি স্থল | ঘূর্ণবাত প্রধানত ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের উষ্ণ সমুদ্রে সৃষ্ট হয়। | প্রতীপ ঘূর্ণবাত সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ ও হিমমণ্ডলের শীতল স্থলভাগে সৃষ্টি হয়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ঘূর্ণবাত কী?
ঘূর্ণবাত হল একপ্রকার আকস্মিক ও শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ, যেখানে নিম্নচাপ কেন্দ্রীভূত থাকে এবং বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে থাকে।
ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে কী অবস্থা বিরাজ করে?
ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে একটি শান্ত অঞ্চল থাকে, যাকে “ঘূর্ণবাতের চক্ষু” বলা হয়। এখানে বাতাস প্রায় শান্ত থাকে এবং আকাশ পরিষ্কার দেখা যায়।
ঘূর্ণবাতে বায়ু কোন দিকে ঘোরে?
1. উত্তর গোলার্ধে – ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে (বামাবর্তে)।
2. দক্ষিণ গোলার্ধে – ঘড়ির কাঁটার দিকে (দক্ষিণাবর্তে)।
ঘূর্ণবাতের সময় আবহাওয়া কেমন হয়?
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়, প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে বায়ুর চাপ কত থাকে?
সাধারণত 250-900 মিলিবার (mb) পর্যন্ত হতে পারে।
প্রতীপ ঘূর্ণবাত কী?
এটি ঘূর্ণবাতের বিপরীত অবস্থা, যেখানে কেন্দ্রে উচ্চচাপ থাকে এবং বায়ু কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়।
প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বায়ুর প্রকৃতি কেমন?
বায়ু শীতল, ভারী এবং নিম্নমুখী প্রবাহযুক্ত হয়।
প্রতীপ ঘূর্ণবাতে আকাশের অবস্থা কেমন থাকে?
আকাশ সাধারণত পরিষ্কার ও মেঘমুক্ত থাকে।
প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ু কোন দিকে প্রবাহিত হয়?
1. উত্তর গোলার্ধে – দক্ষিণাবর্তে (ঘড়ির কাঁটার দিকে)।
2. দক্ষিণ গোলার্ধে – বামাবর্তে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে)।
উচ্চচাপ কেন্দ্রের বায়ু কেন শীতল হয়?
উচ্চচাপের কারণে বায়ু নিম্নমুখী হয় এবং সংকুচিত হয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় না, ফলে শীতল ও শুষ্ক থাকে।
ঘূর্ণবাতের চক্ষু কেন শান্ত থাকে?
কেন্দ্রে উর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহের ফলে নিম্নচাপের শক্তিশালী ঘূর্ণন বাইরে থাকে, তাই ভেতরের অংশে বাতাস শান্ত থাকে।
কোনটি বেশি বিপজ্জনক — ঘূর্ণবাত নাকি প্রতীপ ঘূর্ণবাত?
ঘূর্ণবাত বেশি বিপজ্জনক, কারণ এটি ধ্বংসাত্মক বায়ুপ্রবাহ, বন্যা ও ভূমিধসের কারণ হতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য লেখো। ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর মধ্যে পার্থক্য কী?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য লেখো। ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর মধ্যে পার্থক্য কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন