এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অশ্ব অক্ষাংশ – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “অশ্ব অক্ষাংশ – টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

অশ্ব অক্ষাংশ – টীকা লেখো।
অশ্ব অক্ষাংশের অবস্থান – উত্তর গোলার্ধে 25°-35° অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অংশকে অশ্ব অক্ষাংশ বলে।
অশ্ব অক্ষাংশের উৎপত্তি – নিরক্ষীয় অঞ্চলের উয় ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে ওপরে উঠে পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য উত্তর-দক্ষিণে ছড়িয়ে যায়। পরে এই বায়ু যত এগোয় তত তাপ বর্জন করে শীতল ও ভারী হয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে। ফলে বাতাসের নিম্নমুখী সঞ্চালন সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু কোরিওলিস বলের প্রভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে এই দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে। ফলে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয় ও বাতাসের নীচের দিকে প্রবাহ লক্ষ করা যায়। এখানে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে কোনো বায়ু প্রবাহিত হয় না এবং শান্তভাব বিরাজ করে। তাই কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়কে শান্তবলয়ও বলা হয়।
অশ্ব অক্ষাংশ নামকরণের কারণ – ষোড়শ শতকে পালতোলা বাণিজ্যতরীগুলি এই শান্তবলয়ে এসে গতিহীন হয়ে পড়ত। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে আসা ঘোড়া ভরতি জাহাজগুলির আমেরিকা পৌঁছোতে অনেক বেশি সময় লেগে যেত। নাবিকরা তখন পানীয় জল ও খাবারের সংকট মেটাতে ও জাহাজের ওজন কমাতে ঘোড়াগুলিকে সমুদ্রের জলে ফেলে দিত। এই কারণে উত্তর গোলার্ধের 25°-35° অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অংশকে অশ্ব অক্ষাংশ বলা হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অশ্ব অক্ষাংশ কী?
অশ্ব অক্ষাংশ হল উত্তর গোলার্ধে 25°-35° অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চল, যেখানে উচ্চচাপ বলয় ও শান্তবলয় অবস্থিত। এই অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ অত্যন্ত কম থাকে, ফলে সমুদ্রে প্রায়ই নিস্তব্ধ অবস্থা বিরাজ করে।
অশ্ব অক্ষাংশের নামকরণ কীভাবে হয়েছিল?
ষোড়শ শতকে স্প্যানিশ নাবিকরা আমেরিকায় ঘোড়া (অশ্ব) বোঝাই জাহাজ নিয়ে যাওয়ার সময় এই অঞ্চলে গতিহীন হয়ে পড়ত। পানির অভাব ও জাহাজের ওজন কমানোর জন্য তারা ঘোড়াগুলিকে সমুদ্রে ফেলে দিত। এই ঘটনার কারণে এই অক্ষাংশকে “অশ্ব অক্ষাংশ” নামে ডাকা হয়।
অশ্ব অক্ষাংশে উচ্চচাপ সৃষ্টির কারণ কী?
1. নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু উপরে উঠে শীতল হয়ে ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে।
2. কোরিওলিস বলের প্রভাবে সুমেরু ও কুমেরুর শীতল বায়ুও এই অঞ্চলে নেমে এসে উচ্চচাপ সৃষ্টি করে।
3. এখানে বায়ুর নিম্নমুখী প্রবাহ থাকে, ফলে ভূপৃষ্ঠে বায়ুপ্রবাহ কম হয় এবং শান্ত অবস্থা বিরাজ করে।
অশ্ব অক্ষাংশকে কেন “শান্তবলয়” বলা হয়?
এই অঞ্চলে বায়ুর উল্লম্ব প্রবাহ (নিম্নমুখী) বেশি থাকে, কিন্তু অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ খুবই কম। ফলে পালতোলা জাহাজগুলির গতি রুদ্ধ হয়ে যেত, তাই একে “শান্তবলয়” (Doldrums) বলা হয়।
অশ্ব অক্ষাংশের আবহাওয়া কেমন?
1. শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু।
2. মরুভূমি অঞ্চল (যেমন – সাহারা, কালাহারি) এই বলয়ে অবস্থিত।
3. বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়, কারণ বায়ু নিম্নমুখী হওয়ায় মেঘ সৃষ্টি হয় না।
অশ্ব অক্ষাংশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের কী সম্পর্ক?
1. প্রাচীনকালে পালতোলা জাহাজের যুগে এই অঞ্চল অতিক্রম করা কঠিন ছিল, কারণ বাতাসের অভাবে জাহাজ স্থির হয়ে যেত।
2. নাবিকদের ঘোড়া ফেলে দেওয়ার ঘটনা এই অঞ্চলের সাথে জড়িত, যা বাণিজ্যিক ইতিহাসের অংশ।
অশ্ব অক্ষাংশ ও কর্কটক্রান্তি/মকরক্রান্তির মধ্যে পার্থক্য কী?
1. কর্কটক্রান্তি (23.5° উত্তর) ও মকরক্রান্তি (23.5° দক্ষিণ) সূর্যের আপাত গতির সাথে সম্পর্কিত।
2. অশ্ব অক্ষাংশ (25°-35°) একটি বায়ুমণ্ডলীয় বলয়, যা উচ্চচাপ ও শান্তবলয় হিসেবে পরিচিত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অশ্ব অক্ষাংশ – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অশ্ব অক্ষাংশ – টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন