ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে? ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

Rohit Mondal

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে? ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে? ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে -
ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে –

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে?

ঘূর্ণবাত –

উষ্ণতা বৃদ্ধি বা অন্যান্য কারণে কোনো স্বল্প পরিসর স্থানে হঠাৎ বায়ুচাপ কমে গেলে সেই অঞ্চলের বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয় এবং চাপের সমতা রক্ষার জন্য পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু চক্রাকারে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে পর্যায়ক্রমে প্রবেশ করে এবং তা উষ্ণ ও হালকা হয়ে কুন্ডলী পাকিয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়। এরূপ নিম্নচাপবিশিষ্ট কেন্দ্রমুখী ঊর্ধ্বগামী প্রবল বায়ুপ্রবাহ কে ঘূর্ণবাত বলে। ইংরাজিতে CYCLONE শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ`KUKLOS’ থেকে যার অর্থ বৃত্তাকারে ঘোরা বা সাপের কুন্ডলীর মতো বেষ্টন করা। হেনরি পিডিংটন 1848 সালে CYCLONE শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন।

প্রতীপ ঘূর্ণবাত –

নাতিশীতোষ্ণ ও হিমমন্ডলে উচ্চচাপ কেন্দ্রকে ঘিরে কেন্দ্রবহির্মুখী ও অধোগামী ধীর গতি সম্পন্ন শীতল ও শুষ্ক বায়ুপ্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। অর্থাৎ ঘূর্ণবাতের বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। স্যার ফ্রান্সিস গল্টন 1861 সালে প্রথম ‘Anticyclone’ শব্দটি ব্যবহার করেন, যার অর্থ ঘূর্ণবাতের বিপরীত।

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য –

বিষয়ঘূর্ণবাতপ্রতীপ ঘূর্ণবাত
অবস্থাননিম্ন ও মধ্য অক্ষাংশের উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে সৃষ্টি হয়।মধ্য ও উচ্চ অক্ষাংশের নাতিশীতোষ্ণ ও হিমমণ্ডলে সৃষ্টি হয়।
বায়ুর চাপকেন্দ্রে বায়ুচাপ কম অর্থাৎ নিম্নচাপ ও কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে বায়ুচাপ বেশি অর্থাৎ উচ্চচাপ বিরাজ করে।এক্ষেত্রে কেন্দ্রে বায়ুচাপ বেশি অর্থাৎ উচ্চচাপ ও কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে বায়ুচাপ কম অর্থাৎ নিম্নচাপ বিরাজ করে।
বায়ুপ্রবাহের দিকউত্তর গোলার্ধে বামাবর্তে ও দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে বায়ু প্রবাহিত হয়।উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে বায়ু প্রবাহিত হয়।
বায়ুর প্রকৃতিএক্ষেত্রে বায়ু কেন্দ্রমুখী উন্মু ও ঊর্ধ্বগামী হয়।এক্ষেত্রে বায়ু কেন্দ্র বহির্মুখী, শীতল ও অধোগামী হয়।
বায়ুর গতিবেগমাঝারি থেকে তীব্র গতিসম্পন্ন (গড়ে 160 কিমি/ঘণ্টা)।ধীর গতিসম্পন্ন (গড়ে 30-50 কিমি/ ঘণ্টা)।
স্থায়িত্বঘূর্ণবাত স্বল্পস্থায়ী।প্রতীপ ঘূর্ণবাত দীর্ঘস্থায়ী।
আবহাওয়াঝটিকাসংকুল, গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাত, শীতকালে তুষারপাত, উষ্ণ ঋতুতে বজ্রঝঞ্ঝা দেখা যায়।শান্ত মেঘমুক্ত আকাশ, শীতকালে ঘন কুয়াশা ও তুহিন পড়ে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ঘূর্ণবাত কাকে বলে?

যখন কোনো অঞ্চলে বায়ুর চাপ হঠাৎ কমে যায়, তখন পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ঘুরতে ঘুরে প্রবেশ করে এবং ঊর্ধ্বগামী হয়। এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহকে ঘূর্ণবাত বলে।

ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য কী?

1. নিম্নচাপ কেন্দ্রযুক্ত।
2. বায়ু কেন্দ্রমুখী ও ঊর্ধ্বগামী হয়।
3. উত্তর গোলার্ধে বামাবর্তে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) ও দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে (ঘড়ির কাঁটার দিকে) ঘোরে।
4. ঝড়, বৃষ্টি বা তুষারপাত ঘটায়।

ঘূর্ণবাতের ইংরেজি নাম কী এবং এটি কে প্রথম ব্যবহার করেন?

ইংরেজিতে ঘূর্ণবাতকে Cyclone বলে। হেনরি পিডিংটন 1848 সালে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন।

প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে?

উচ্চচাপ কেন্দ্রকে ঘিরে শীতল ও শুষ্ক বায়ু কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়। এই ধরনের ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।

প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য কী?

1. উচ্চচাপ কেন্দ্রযুক্ত।
2. বায়ু কেন্দ্রবহির্মুখী ও অধোগামী হয়।
3. উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে (ঘড়ির কাঁটার দিকে) ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে) ঘোরে।
4. মেঘমুক্ত আকাশ ও শান্ত আবহাওয়া তৈরি করে।

Anticyclone শব্দটি কে প্রথম ব্যবহার করেন?

স্যার ফ্রান্সিস গল্টন 1861 সালে প্রথম Anticyclone শব্দটি ব্যবহার করেন।

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কোন অঞ্চলে বেশি দেখা যায়?

1. ঘূর্ণবাত – নিম্ন ও মধ্য অক্ষাংশের উষ্ণ অঞ্চলে (যেমন – বাংলাদেশ, ভারত)।
2. প্রতীপ ঘূর্ণবাত – নাতিশীতোষ্ণ ও হিমমণ্ডলীয় অঞ্চলে (যেমন – সাইবেরিয়া, কানাডা)।

ঘূর্ণবাতের গতি কত হতে পারে?

ঘূর্ণবাতের গতি সাধারণত 160 কিমি/ঘণ্টা বা তার বেশি হতে পারে, যেমন সাইক্লোন বা হারিকেনে।

প্রতীপ ঘূর্ণবাত কেন শীতকালে বেশি হয়?

শীতকালে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত ঠান্ডা হয়ে উচ্চচাপ সৃষ্টি করে, যা প্রতীপ ঘূর্ণবাতের জন্য অনুকূল।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে? ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে? ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

কোনো জলবায়ু অঞ্চল কোন্ গোলার্ধে অবস্থিত কীভাবে শনাক্ত করবে -

কোনো জলবায়ু অঞ্চল কোন্ গোলার্ধে অবস্থিত কীভাবে শনাক্ত করবে?

চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও -

চিত্রসহ প্রধান প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির পরিচয় দাও।

বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও -

বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ করে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।

About The Author

Rohit Mondal

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা – বিষয়সংক্ষেপ