আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার তৃতীয় পাঠের প্রথম বিভাগ, ‘আফ্রিকা,’ থেকে কিছু পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

নিম্নরেখ পদগুলির কারক ও অকারক সম্পর্ক এবং বিভক্তি ও অনুসর্গ নির্দেশ করো।
স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে।
উত্তর – স্রষ্টা – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে।
উত্তর – অধৈর্যে – অপাদানকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়।
উত্তর – বনস্পতির – সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি।
সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি/সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য।
উত্তর – অবকাশে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। রহস্য – কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি।
বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে/বিরূপের ছদ্মবেশে।
উত্তর – ভীষণকে – কর্মকারক, ‘কে’ বিভক্তি। ছদ্মবেশে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
কালো ঘোমটার নীচে/অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ।
উত্তর – ঘোমটার – সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি।
এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে।
উত্তর – ওরা – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।
উত্তর – গর্বে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। অরণ্যের চেয়ে – অপাদানকারক, ‘চেয়ে’ অনুসর্গ।
তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে/পঙ্কিল হলো ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে।
উত্তর – ক্রন্দনে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। অরণ্যপথে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। ধূলি – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে।
উত্তর – শিশুরা – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। মায়ের – সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি।
দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়/বীভৎস কাদার পিণ্ড।
উত্তর – জুতোর – সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি। পিণ্ড – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।
উত্তর – ইতিহাসে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা/সকালে সন্ধ্যায় দয়াময় দেবতার নামে।
উত্তর – মন্দিরে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। দেবতার – সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি।
কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল/সুন্দরের আরাধনা।
উত্তর – সংগীতে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। সুন্দরের – সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি।
যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল।
উত্তর – গহ্বর থেকে – অপাদানকারক, ‘থেকে’ অনুসর্গ। পশুরা – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল।
উত্তর – ধ্বনিতে – করণকারক, ‘তে’ বিভক্তি।
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে।
উত্তর – মানবীর – সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি। দ্বারে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
হিংস্র প্রলাপের মধ্যে/সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।
উত্তর – সভ্যতার সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি।
বাক্যগুলি থেকে সমাসবদ্ধ পদ বেছে নিয়ে তার ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করো।
চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত।
উত্তর – জলস্থল – আকাশের-জল, স্থল ও আকাশ (দ্বন্দ্ব) সেখানকার। দুর্বোধ – দুঃ (দুর) যে বোধ (উপসর্গ তৎপুরুষ)।
মন্ত্র জাগাচ্ছিল, তোমার চেতনাতীত মনে।
উত্তর – চেতনাতীত – চেতনার অতীত (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
বিদ্রুপ করছিলে ভীষণকে/বিরূপের ছদ্মবেশে।
উত্তর – বিরুপের – বি (বিশেষ) যে রূপ (উপসর্গ তৎপুরুষ) তার। ছদ্মবেশে – ছদ্ম যে বেশ (সাধারণ কর্মধারয়) তাতে।
আপনাকে উগ্র ক’রে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়/তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে।
উত্তর – দুন্দুভিনিনাদে – দুন্দুভি নির্গত নিনাদ (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়) তাতে।
হায় ছায়াবৃতা,/কালো ঘোমটার নীচে/অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ/উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।
উত্তর – ছায়াবৃতা – ছায়া দ্বারা আবৃতা (করণ তৎপুরুষ)। অপরিচিত – নয় পরিচিত (নঞ্ তৎপুরুষ)। মানবরূপ – মানবের রূপ (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে।
উত্তর – হাতকড়ি – হাত বাঁধার কড়ি (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)।
গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।
উত্তর- সূর্যহারা – সূর্যকে হারিয়েছে যে (উপপদ তৎপুরুষ)।
নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।
উত্তর – নির্লজ্জ – নেই লজ্জা যার (নঞ্ বহুব্রীহি)। অমানুষতা – মনুষ্যত্বের অভাব (অব্যয়ীভাব)।
তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে।
উত্তর – ভাষাহীন – ভাষা দ্বারা হীন (করণ তৎপুরুষ)। বাষ্পাকুল – বাষ্প দ্বারা আকুল (করণ তৎপুরুষ)। অরণ্যপথে – অরণ্যের পথে (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।
উত্তর – চিরচিহ্ন – চিরকাল ব্যাপিয়া চিহ্ন (ব্যাপ্তি তৎপুরুষ)।
অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল।
উত্তর – অশুভ – নয় শুভ (নঞ্ তৎপুরুষ)। অন্তিমকাল – অন্তিম যে কাল (সাধারণ কর্মধারয়)।
এসো যুগান্তের কবি।
উত্তর – যুগান্তের – অন্য যুগের (নিত্য সমাস)।
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে।
উত্তর – মানহারা – মানকে হারিয়েছে যে (উপপদ তৎপুরুষ)।
হিংস্র প্রলাপের মধ্যে/সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।
উত্তর – প্রলাপের – প্র (প্রকৃষ্ট) যে আলাপ (উপসর্গ তৎপুরুষ) তার। পুণ্যবাণী – পুণ্য সূচক বাণী (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)।
নির্দেশ অনুযায়ী বাক্যের রূপান্তর করো।
সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য, চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত। (জটিল বাক্যে)
উত্তর – যেমন সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য তেমনি চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত।
সভ্যের বর্বর লোভ/নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর – সভ্যের বর্বর লোভ জেগে উঠল এবং নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতাকে।
চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর – তোমার অপমানিত ইতিহাসে কি চিরচিহ্ন দিয়ে গেল না?
কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল/সুন্দরের আরাধনা। (আবেগসূচক বাক্যে)
উত্তর – আহা! কবির সংগীতে কেমন বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা!
এসো যুগান্তের কবি। (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর – যুগান্তের কবির আসা হোক।
নির্দেশ অনুযায়ী বাচ্য পরিবর্তন করো।
স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে/নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – নিজের প্রতি অসন্তোষে যখন স্রষ্টার দ্বারা নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করা হচ্ছিল।
সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি/সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – সেখানে নিভৃত অবকাশে তোমার দ্বারা সংগৃহীত হচ্ছিল দুর্গমের রহস্য।
প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু/মন্ত্র জাগাচ্ছিল, তোমার চেতনাতীত মনে। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – প্রকৃতি তার দৃষ্টি-অতীত জাদু দিয়ে মন্ত্র জাগাচ্ছিল তোমার চেতনাতীত মনে।
সভ্যের বর্বর লোভ/নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – সভ্যের বর্বর লোভের দ্বারা নগ্ন করা হল আপনার নির্লজ্জ অমানুষতা।
বীভৎস কাদার পিণ্ড/চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – বীভৎস কাদার পিণ্ড দ্বারা চিরচিহ্ন দিয়ে যাওয়া হল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।
শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – শিশুদের মায়ের কোলে খেলা হচ্ছিল।
কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল/সুন্দরের আরাধনা। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – কবির সংগীত বাজিয়ে তুলছিল সুন্দরের আরাধনা।
এসো যুগান্তের কবি। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – যুগান্তের কবির আসা হোক।
দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – ওই মানহারা মানবীর দ্বারে দাঁড়ানো হোক।
অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – অশুভ ধ্বনির দ্বারা ঘোষিত হল দিনের অন্তিমকাল।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার তৃতীয় পাঠের প্রথম বিভাগ, ‘আফ্রিকা’ থেকে কিছু পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই মাধ্যমিক পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়াও, নিচে শেয়ার বাটনটি ব্যবহার করে পোস্টটি আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করুন, যাদের প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন