আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার তৃতীয় পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ, “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” থেকে কিছু পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে।

নিম্নরেখ পদগুলির কারক ও অকারক সম্পর্ক এবং বিভক্তি ও অনুসর্গ নির্দেশ করো।
আমি যেখানে কাজ করি সেটা লেখালেখির আপিস।
উত্তর – আমি – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। আপিস – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
প্রতিটি বোতামে ছাপা রয়েছে একটি করে হরফ।
উত্তর – হরফ – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
লেখকের কারখানা।
উত্তর – লেখকের – সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি।
আমি গ্রামের ছেলে।
উত্তর – গ্রামের – সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি।
আমরা কলম তৈরি করতাম রোগা বাঁশের কঞ্চি কেটে।
উত্তর – কঞ্চি – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
বড়োরা শিখিয়ে দিয়েছিলেন, কলম শুধু সুঁচলো হলে চলবে না।
উত্তর – বড়োরা – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
গোরুকে অক্ষর খাওয়ানোও নাকি পাপ।
উত্তর – গোরুকে – কর্মকারক, ‘কে’ বিভক্তি।
বাড়ির রান্না হতো কাঠের উনুনে।
উত্তর – কাঠের – সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি। উনুনে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
একটা পাথরের বাটিতে রাখা জলে গুলে নিতে হতো।
উত্তর – বাটিতে – অধিকরণকারক, ‘তে’ বিভক্তি। জলে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
এখন স্কুলের ছেলেমেয়ের তহবিলেও হয়তো দেখা যায় রকমারি কলম।
উত্তর – ছেলেমেয়ের – সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি। তহবিলেও – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
খাগের কলম দেখা যায় একমাত্র সরস্বতী পুজোর সময়।
উত্তর – কলম – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
কলকাতার চৌরঙ্গির পথে গিজগিজ করছে ফেরিওয়ালা।
উত্তর – ফেরিওয়ালা – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
ছেলেবেলায় একজন দারোগাবাবুকে দেখেছিলাম যাঁর কলম ছিল পায়ের মোজায় গোঁজা।
উত্তর – দারোগাবাবুকে – কর্মকারক, ‘কে’ বিভক্তি। মোজায় – অধিকরণকারক, ‘য়’ বিভক্তি।
আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন কেনার কথা।
উত্তর – ফাউন্টেন – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
কলমকে বলা হয় তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর।
উত্তর – তলোয়ারের চেয়েও – অপাদানকারক, ‘চেয়ে’ অনুসর্গ।
ভাবতে ভালো লাগে আমাদের কালের অধিকাংশ লোকই এখনও কলমে লেখেন।
উত্তর – লোকই – কর্তৃকারক, শূন্য বিভক্তি। কলমে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
বাক্যগুলি থেকে সমাসবদ্ধ পদ বেছে নিয়ে তার ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করো।
লেখার পাত বলতে শৈশবে আমাদের ছিল কলাপাতা।
উত্তর – কলাপাতা – কলাগাছের পাতা (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)।
মাস্টারমশাই দেখে বুঝে আড়াআড়িভাবে একটা টানে তা ছিঁড়ে ফেরত দিতেন পড়ুয়াদের।
উত্তর – মাস্টারমশাই -যিনি মাস্টার তিনিই মশাই (সাধারণ কর্মধারয়)।
বাইরে ফেললে গোরু খেয়ে নিলে অমঙ্গল।
উত্তর – অমঙ্গল – নয় মঙ্গল (নঞ্ তৎপুরুষ)।
তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা/ছাগ দুগ্ধে করি মেলা।
উত্তর – ত্রিফলা – তিন ফলের সমাহার (সমাহার দ্বিগু)।
এত বছর পরে সেই কলম যখন হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম, তখন মনে কষ্ট হয় বইকী।
উত্তর – হাতছাড়া – হাত থেকে ছাড়া (অপাদান তৎপুরুষ)। উপক্রম – ক্রমের সদৃশ (প্রায়) (অব্যয়ীভাব)।
বনপ্রান্ত থেকে কুড়িয়ে নিতাম একটা হাড়-সেই আমার কলম।
উত্তর – বনপ্রান্ত – বনের প্রান্ত (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
এমনকী আমি যদি রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হতাম।
উত্তর – অধীশ্বর – অধীর (পৃথিবীর) ঈশ্বর (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
হয়তো গ্রামাঞ্চলেও আজ বাঁশের কঞ্চির কলম আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
উত্তর – গ্রামাঞ্চলে – গ্রামের অঞ্চল (সম্বন্ধ তৎপুরুষ) সেখানে।
পুরানো দিনের তৈলচিত্র কিংবা ফটোগ্রাফ ছাড়া গতি নেই।
উত্তর – তৈলচিত্র – তৈল নির্মিত চিত্র (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)।
একজন তৎপর ব্যবসায়ী সইসাবুদ সাঙ্গ করে চুক্তিপত্র পাকা করে চলে গেলেন।
উত্তর – সইসাবুদ – সই ও সাবুদ (দ্বন্দ্ব)। চুক্তিপত্র – চুক্তি বিষয়ক পত্র (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বেশ কয়েক বছর পরের ঘটনা।
উত্তর – মহাযুদ্ধের – মহা যে যুদ্ধ (সাধারণ কর্মধারয়), তার।
বিখ্যাত লেখক শৈলজানন্দ একবার আমাকে দেখিয়েছিলেন তাঁর ফাউন্টেন সংগ্রহ।
উত্তর – বিখ্যাত – বিশেষভাবে খ্যাত (উপসর্গ তৎপুরুষ)।
সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমতো ছোটোখাটো একটা অনুষ্ঠান।
উত্তর – লেখালেখি – লিখে লিখে যে কাজ (ব্যতিহার বহুব্রীহি)। ছোটোখাটো – ছোটো ও খাটো (দ্বন্দ্ব)।
একটা বিদেশি কাগজে ফাউন্টেনের বিজ্ঞাপনে দেখছিলাম ওঁদের তহবিলে নাকি রয়েছে সাতশো রকম নিব।
উত্তর – বিদেশি – নয় দেশি (নঞ্ তৎপুরুষ)। বিজ্ঞাপনে – বি (বিশেষ) রূপে জ্ঞাপন (উপসর্গ তৎপুরুষ) তাতে।
সাধারণ গৃহস্থ লিপিকরদের ডেকে পুথি নকল করাতেন।
উত্তর – গৃহস্থ – গৃহে থাকে যে (উপপদ তৎপুরুষ)। লিপিকর – লিপি করেন যিনি (উপপদ তৎপুরষ)।
নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো।
আমি যেখানে কাজ করি সেটা লেখালেখির আপিস। (সরল বাক্যে)
উত্তর – আমি লেখালেখির আপিসে কাজ করি।
কিন্তু আমি ছাড়া কারও হাতে কলম নেই। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর – কিন্তু একমাত্র আমার হাতেই কলম আছে।
প্রতিটি বোতামে ছাপা রয়েছে একটি করে হরফ। (জটিল বাক্যে)
উত্তর – যে বোতামগুলি আছে সেগুলিতে ছাপা রয়েছে একটি করে হরফ।
একদিন যদি কোনো কারণে কলম নিয়ে যেতে ভুলে যাই তবে বিপদ। (না-বাচক বাক্যে)
উত্তর – একদিন যদি কোনো কারণে কলম নিয়ে যেতে মনে না থাকে তবে বিপদ।
মুশকিল হতো কলমের মুখটি চিরে দেওয়ার সময়। (আবেগসূচক বাক্যে)
উত্তর – উঃ! কী যে মুশকিল হত কলমের মুখটি চিরে দেওয়ার সময়।
লেখার পাত বলতে শৈশবে আমাদের ছিল কলাপাতা। (না-বাচক বাক্যে)
উত্তর – লেখার পাত বলতে শৈশবে আমাদের কলাপাতা ছাড়া আর কিছু ছিল না।
মাস্টারমশাই দেখে বুঝে আড়াআড়িভাবে একটা টানে তা ছিঁড়ে ফেরত দিতেন পড়ুয়াদের। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর – মাস্টারমশাই দেখতেন এবং বুঝতেন ও তারপর আড়াআড়িভাবে একটা টানে তা ছিঁড়ে পড়ুয়াদের ফেরত দিতেন।
বাইরে ফেললে গোরু খেয়ে নিলে অমঙ্গল। (জটিল বাক্যে)
উত্তর – বাইরে ফেললে যদি গোরু খেয়ে নেয় তবে অমঙ্গল।
গোরুকে অক্ষর খাওয়ানোও নাকি পাপ। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর – গোরুকে অক্ষর খাওয়ানো পাপ নয় কি?
ভাবি, আচ্ছা, আমি যদি জিশু খ্রিস্টের আগে জন্মাতাম। (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর – আমি জিশুখ্রিস্টের আগে আমার জন্মাবার কথা ভাবি।
হয়তো গ্রামাঞ্চলেও আজ বাঁশের কঞ্চির কলম আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। (হ্যাঁ বাচক বাক্যে)
উত্তর – গ্রামাঞ্চলেও হয়তো আজ বাঁশের কঞ্চির কলমের সন্ধান পাওয়া অসম্ভব।
পণ্ডিত মশাইয়ের কলম খ্যাত ছিল কানে গুঁজে রাখার জন্য। (না-বাচক বাক্যে)
উত্তর – পণ্ডিত মশাইয়ের কলম কানে গুঁজে রাখার জন্য অখ্যাত ছিল না।
পণ্ডিতরা বলেন কলমের দুনিয়ায় যা সত্যিকারের বিপ্লব ঘটায় তা ফাউন্টেন পেন। (সরল বাক্যে)
উত্তর – পণ্ডিতরা বলেন কলমের দুনিয়ায় সত্যিকারের বিপ্লব ঘটায় ফাউন্টেন পেন।
আমরা শুধু জানি দেশে সবাই স্বাক্ষর না হলেও, কলম এখন সর্বজনীন। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর – আমরা শুধু জানি দেশে কিছু নিরক্ষর থাকলেও, কলম এখন সর্বজনীন।
শস্তার একটা পাইলট নিয়ে যাও। (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর – শস্তার (সস্তার) একটা পাইলট নিয়ে যেতে বলছি।
সে কলমের সোনার অঙ্গ, হিরের হৃদয়। (আবেগসূচক বাক্যে)
উত্তর – ওঃ! সে কলমের সোনার অঙ্গ, হিরের হৃদয়।
নির্দেশ অনুযায়ী বাচ্য পরিবর্তন করো।
আমি যেখানে কাজ করি সেটা লেখালেখির আপিস। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – আমার যেখানে কাজ করা হয় সেটা লেখালেখির আপিস।
আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – আমাদের নিজেদের দ্বারাই কালি তৈরি করা হত।
আমরা কলম তৈরি করতাম রোগা বাঁশের কঞ্চি কেটে। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – আমাদের দ্বারা কলম তৈরি করা হত রোগা বাঁশের কঞ্চি কেটে।
তুলে দিত আমার হাতে। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – তুলে দেওয়া হত আমার হাতে।
পকেটমাররাও এখন আর কলম নিয়ে হাতসাফাইয়ের খেলা দেখায় না। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – পকেটমারদের দ্বারাও এখন আর কলম নিয়ে হাতসাফাইয়ের খেলা দেখানো হয় না।
আবার তিনি ছুটলেন কালির সন্ধানে। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – আবার তাঁর ছোটা হল কালির সন্ধানে।
ব্যাস, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – ব্যাস, ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাওয়া হল।
গাঁয়ের ছেলে আমি অবশ্য ফাউন্টেন পেন হাতে তুলে নিয়েছি অনেক পরে। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – গাঁয়ের ছেলে হিসেবে আমার দ্বারা অবশ্য ফাউন্টেন পেন হাতে তুলে নেওয়া হয়েছে অনেক পরে।
অন্যরা প্রায় সবাই লিখছেন কলমে। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – অন্যদের প্রায় সবারই লেখা হচ্ছে কলমে।
অক্ষর কাটাকুটি করতে গিয়ে আনমনে রচিত হয়েছিল ছন্দবদ্ধ সাদা-কালো ছবি। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – অক্ষর কাটাকুটি করতে গিয়ে আনমনে রচনা করেছিলেন ছন্দবদ্ধ সাদা-কালো ছবি।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার তৃতীয় পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ, “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” -এর পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে পারে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার সর্বোত্তম চেষ্টা করব। এছাড়া, নিচে থাকা শেয়ার বাটনের মাধ্যমে এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন