আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা চতুর্থ পাঠের প্রথম বিভাগ, ‘বহুরূপী,’ থেকে কিছু পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

নিম্নরেখ পদগুলির কারক ও অকারক সম্পর্ক এবং বিভক্তি ও অনুসর্গ নির্দেশ করো।
হরিদার কাছে আমরাই গল্প করে বললাম, শুনেছেন, হরিদা, কী কাণ্ড হয়েছে।
উত্তর – হরিদার – সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি। আমরাই – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি (‘ই’ নির্দেশক)।
সাতদিন হলো এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন।
উত্তর – সাতদিন – অধিকরণকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। জগদীশবাবুর – সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি।
গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা।
উত্তর – গল্প – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। হরিদা – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
আমাদের চায়ের জন্য এক হাঁড়ি ফুটন্ত জল নামিয়ে দিয়েই হরিদা তাঁর ভাতের হাঁড়িটাকে উনানে চড়ালেন।
উত্তর – চায়ের জন্য – নিমিত্তকারক, ‘জন্য’ অনুসর্গ। হাঁড়িটাকে – কর্মকারক, ‘টা’ নির্দেশক, ‘কে’ বিভক্তি।
কাজ করতে হরিদার প্রাণের মধ্যেই যেন একটা বাধা আছে।
উত্তর – প্রাণের মধ্যেই – অধিকরণকারক, ‘মধ্যে’ অনুসর্গ।
তারপর একদিন হঠাৎ আবার এক সকালে কিংবা সন্ধ্যার বিচিত্র ছদ্মবেশে অপরূপ হয়ে পথে বের হয়ে পড়েন।
উত্তর – একদিন – অধিকরণকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। ছদ্মবেশে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
একটা উন্মাদ পাগল, তার মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছে।
উত্তর – মুখ থেকে – অপাদানকারক, ‘থেকে’ অনুসর্গ।
অ্যাঁ? ওটা কি একটা বহুরূপী?
উত্তর – বহুরূপী – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
বাসের যাত্রীরা কেউ হাসে, কেউ বা বেশ বিরক্ত হয়, কেউ আবার বেশ বিস্মিত।
উত্তর – বাসের – সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি। যাত্রীরা – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
এক রূপসি বাইজি প্রায় নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছে।
উত্তর – নাচতে নাচতে – করণকারক, ‘তে’ বিভক্তি।
নিম্নলিখিত বাক্যগুলিতে যে সমাসবদ্ধ পদ আছে তা বেছে নিয়ে তার ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করো।
সাতদিন হলো এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন।
উত্তর – সাতদিন – সাত দিনের সমাহার (দ্বিগু)। জগদীশবাবুর – জগদীশ নামক বাবু (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়) তার।
সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস।
উত্তর – দুর্লভ – নয় লভ্য যা (নঞ্ বহুবীহি)।
অ্যাঁ! ওটা কি একটা বহুরূপী?
উত্তর – বহুরূপী – বহু রূপ ধারণ করে যে (উপপদ তৎপুরুষ)।
কারও কারও মুগ্ধ চোখের মোহভঙ্গ হয়।
উত্তর – মোহভঙ্গ – মোহ থেকে ভঙ্গ (অপাদান তৎপুরুষ)।
দোকানদারও হেসে ফেলে আর একটা সিকি তুলে নিয়ে বাইজির হাতের ফুলসাজির উপর ফেলে দেয়।
উত্তর – ফুলসাজির – ফুলের নিমিত্ত সাজি (নিমিত্ত তৎপুরুষ) তার।
কেন আপনি একথা কেন বলছেন মহারাজ?
উত্তর – মহারাজ – মহান যে রাজ (সাধারণ কর্মধারয়)।
পরমাত্মা আপনার কল্যাণ করুণ।
উত্তর – পরমাত্মা – পরম যে আত্মা (সাধারণ কর্মধারয়)।
সিঁড়ির উপরে অচঞ্চল হয়ে একটা মিনিট দাঁড়িয়ে রইলেন বিরাগী।
উত্তর – অচঞ্চল – নয় চঞ্চল (নঞ্ তৎপুরুষ)।
অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।
উত্তর – অদৃষ্ট – নয় দৃষ্ট (নঞ্ তৎপুরুষ)।
নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো।
আমাকে বলবেই বা কে? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর – আমাকে বলার কেউ নেই।
সাতদিন হলো এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর – সাতদিন হল এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন এবং তিনি জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন।
সন্ন্যাসী কি এখনও আছেন? (অনুজ্ঞাবাচক বাক্যে)
উত্তর – সন্ন্যাসী এখনও আছেন কি না বলো।
থাকলে একবার গিয়ে পায়ের ধুলো নিতাম। (জটিল বাক্যে)
উত্তর – যদি থাকতেন তাহলে একবার গিয়ে পায়ের ধুলো নিতাম।
সন্ন্যাসী হাসলেন আর চলে গেলেন। (সরল বাক্যে)
উত্তর – সন্ন্যাসী হেসে চলে গেলেন।
শুধু ওই একা জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকে পায়ের ধুলো নিতে দেননি সন্ন্যাসী। (ইতিবাচক বাক্যে)
উত্তর – শুধু ওই একা জগদীশবাবুকেই পায়ের ধুলো নিতে দেন সন্ন্যাসী।
কেউ চিনতে পারে না। (ইতিবাচক বাক্যে)
উত্তর – সবারই অচেনা লাগে।
চেঁচিয়ে উঠছে যাত্রীরা, দুটো একটা পয়সা ফেলেও দিচ্ছে। (সরল বাক্যে)
উত্তর – যাত্রীরা চেঁচিয়ে উঠে দুটো একটা পয়সা ফেলে দিচ্ছে।
বাইজির ছদ্মবেশে সেদিন হরিদার রোজগার মন্দ হয়নি। (ইতিবাচক বাক্যে)
উত্তর – বাইজির ছদ্মবেশে সেদিন হরিদার রোজগার বেশ ভালোই হয়েছিল।
দোকানদারও হেসে ফেলে আর একটা সিকি তুলে নিয়ে বাইজির হাতের ফুলসাজির উপর ফেলে দেয়। (না-বাচক বাক্যে)
উত্তর – দোকানদারও হেসে ফেলে আর একটা সিকি তুলে নিয়ে বাইজির হাতের ফুলসাজির উপর ফেলে না দিয়ে পারেনি।
ভ্রমণ করে দেখবার তো কোনো দরকার হয় না। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর – ভ্রমণ করে দেখবার আর কোনো দরকার আছে কি?
বলতে বলতে সিঁড়ি থেকে নেমে গেলেন বিরাগী। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর – বিরাগী বললেন আর সিঁড়ি থেকে নেমে গেলেন।
একশো এক টাকার থলিটা সিঁড়ির উপরেই পড়ে রইল। (জটিল বাক্যে)
উত্তর – একশো এক টাকার যে. থলিটা ছিল সেটা সিঁড়ির উপরেই পড়ে রইল।
অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর – অদৃষ্ট কি কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে?
নির্দেশ অনুযায়ী বাচ্য পরিবর্তন করো।
সন্ন্যাসী কি এখনও আছেন? (ভাববাচ্যে)
উত্তর – সন্ন্যাসীর কি এখনও থাকা হয়েছে?
সন্ন্যাসী হাসলেন আর চলে গেলেন। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – সন্ন্যাসীর হাসা আর চলে যাওয়া হল।
একটু পরেই বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ ধমক দেয়। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – একটু পরেই বাসের ড্রাইভার কাশীনাথের দ্বারা ধমক দেওয়া হয়।
খুব চমৎকার পাগল সাজতে পেরেছে তো লোকটা। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – লোকটি খুব চমৎকার পাগল সেজেছে তো।
ঠিকই বলেছেন হরিদা। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – হরিদার দ্বারা ঠিকই বলা হয়েছে।
আমি বলছি তোমরা সেখানে থেকো। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – আমার কথামতো তোমাদের যেন সেখানে থাকা হয়।
সেদিকে ভুলেও একবার তাকালেন না বিরাগী। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – বিরাগীর দ্বারা সেদিকে ভুলেও একবার তাকানো হল না।
আপনার তীর্থ ভ্রমণের জন্য এই টাকা আমি দিলাম। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – আপনার তীর্থ ভ্রমণের জন্য এই টাকা আমার দ্বারা দেওয়া হল।
একটা বিড়ি ধরিয়ে নিয়ে হরিদা চুপ করে বসে আছেন। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – একটা বিড়ি ধরিয়ে নিয়ে হরিদার চুপ করে বসে থাকা হয়।
অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – অদৃষ্টের দ্বারা কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করা হবে না।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা চতুর্থ পাঠের প্রথম বিভাগ, ‘বহুরূপী’ থেকে কিছু পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলি পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের সহায়তা করেছে। যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা সমস্যা থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। এছাড়া, পোস্টটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যারা এই তথ্যের উপকার পেতে পারে। ধন্যবাদ!
মন্তব্য করুন