‘এল-নিনো’ এবং ‘লা-নিনার’ উৎপত্তির কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “’এল-নিনো’ এবং ‘লা-নিনার’ উৎপত্তির কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “’এল-নিনো’ এবং ‘লা-নিনার’ উৎপত্তির কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

'এল-নিনো' এবং 'লা-নিনার' উৎপত্তির কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।
‘এল-নিনো’ এবং ‘লা-নিনার’ উৎপত্তির কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।

‘এল-নিনো’ এবং ‘লা-নিনার’ উৎপত্তির কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।

‘এল-নিনো’ ও ‘লা-নিনা’ –

সমুদ্রস্রোত ও বায়ুপ্রবাহের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান তা বোঝা যায় এল-নিনো এবং লা-নিনা নামক দুটি অনিয়মিত স্রোতের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। স্প্যানিস শব্দ এল-নিনোর অর্থ ছোট্ট যিশু এবং লা-নিনার অর্থ ছোট্ট মেয়ে। নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের্ পেরু ও ইকুয়েডর উপকূল বরাবর এই দুই স্রোতের উৎপত্তি ঘটে।

সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বে দক্ষিণ আমেরিকার পেরু ও ইকুয়েডর উপকূলে দক্ষিণ দিক থেকে শীতল পেরুস্রোত আসে। কখনো-কখনো নিরক্ষীয় অঞ্চল (উত্তরদিক) থেকে উষ্ণ স্রোত ইকুয়েডর, পেরু হয়ে চিলি পর্যন্ত প্রসারিত হয়। একে এল-নিনো বলে। ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। আবার কখনো-কখনো তীব্র শীতল স্রোতের প্রভাবে পেরু ও ইকুয়েডর উপকূলের উষ্ণতা অত্যন্ত কমে যায়। একে লা-নিনা বলে। এরা পরস্পরের বিপরীত অবস্থা। এদের পর্যায়ক্রমে 2-7 বছর অন্তর আবির্ভাব ঘটে।

উৎপত্তির কারণ – সাধারণ অবস্থায় ইকুয়েডর-পেরু উপকূলে শীতল স্রোতের কারণে উচ্চচাপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে অস্ট্রেলিয়া-ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলে নিম্নচাপ বিরাজ করে। উচ্চচাপ অঞ্চলের বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে পশ্চিমে প্রবাহিত হয় এবং সেখানকার নিম্নচাপের প্রভাবে বায়ু উষ্ণ হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়। এই ঊর্ধ্বমুখী বায়ু বায়ুমণ্ডলের উপরিঅংশ দিয়ে পূর্বমুখী হয়ে ইকুয়েডর, পেরু অঞ্চলে নেমে আসে একে ‘ওয়াকার চক্র’ বলে। এল-নিনো এই বায়ুপ্রবাহকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করে। সমুদ্রস্রোতের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব অংশে নিম্নচাপ ও পশ্চিমে উচ্চচাপ অবস্থান করে। পেরু উপকূলে নিম্নচাপের বায়ু ঊর্ধ্বমুখী হয় এবং পশ্চিমে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু পশ্চিমের উচ্চচাপ অঞ্চলে নেমে আসে। নিম্নগামী এই বায়ু সমুদ্রের সমান্তরালে পূর্বে ইকুয়েডর ও পেরু অঞ্চলে পৌঁছোয়। একে El Nino Southern Oscillation (ENSO) বলে। এল-নিনোর বিপরীত বা ENSO -এর শীতল পর্যায়টি লা-নিনা নামে পরিচিত।

প্রভাব – প্রতি 4-7 বছরে প্রায় 2 বছর এল-নিনো স্থায়ী হয়। এল-নিনো বছরে ইকুয়েডর ও পেরু উপকূলে প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা সৃষ্টি করে এবং অস্ট্রেলিয়া-ইন্দোনেশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে অত্যল্প বৃষ্টি ও খরার সৃষ্টি করে। লা-নিনার প্রভাবে বছরে অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝা, বৃষ্টি এবং ইকুয়েডর-পেরু উপকূলীয় অঞ্চলে খরা দেখা যায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

এল-নিনো ও লা-নিনা কী?

এল-নিনো ও লা-নিনা হল প্রশান্ত মহাসাগরে ঘটে যাওয়া দুটি বিপরীত প্রকৃতির জলবায়ু ঘটনা।

1. এল-নিনো – নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাংশে (পেরু-ইকুয়েডর উপকূলে) সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া।
2. লা-নিনা – একই অঞ্চলে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া।

এল-নিনো ও লা-নিনার উৎপত্তির কারণ কী?

1. সাধারণ অবস্থায় – পেরু উপকূলে শীতল পেরু স্রোত প্রবাহিত হয়, ফলে সেখানে উচ্চচাপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে (অস্ট্রেলিয়া-ইন্দোনেশিয়া) নিম্নচাপ থাকে। বায়ুপ্রবাহ এই চাপের পার্থক্যের কারণে ওয়াকার চক্র তৈরি করে।
2. এল-নিনো – ওয়াকার চক্র দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয় এবং বায়ুপ্রবাহ বিপরীতমুখী হয় (ENSO – El Nino Southern Oscillation)।
3. লা-নিনা – ওয়াকার চক্র শক্তিশালী হয়, ফলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে শীতল স্রোত প্রবাহিত হয়।

এল-নিনো ও লা-নিনার প্রভাব কী?

এল-নিনোর প্রভাব –
1. পেরু, ইকুয়েডরে ভারী বৃষ্টি ও বন্যা।
2. অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় খরা ও দাবানল।
3. ভারতীয় মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়, ফলে ভারতে কম বৃষ্টিপাত।
4. বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি।

লা-নিনার প্রভাব –
1. অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ভারী বৃষ্টি ও বন্যা।
2. পেরু ও ইকুয়েডরে শুষ্ক আবহাওয়া।
3. ভারতীয় মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়, ফলে ভারতে বেশি বৃষ্টিপাত।
4. বিশ্বজুড়ে শীতল আবহাওয়া।

এল-নিনো ও লা-নিনা কত বছর পরপর ঘটে?

সাধারণত প্রতি 2-7 বছর পরপর এল-নিনো বা লা-নিনা ঘটে এবং এটি প্রায় 9-12 মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

ENSO কী?

ENSO (El Nino Southern Oscillation) হল এল-নিনো ও লা-নিনার সাথে সম্পর্কিত একটি জলবায়ু চক্র, যা প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রের তাপমাত্রা ও বায়ুচাপের পরিবর্তনকে নির্দেশ করে।

এল-নিনো ও লা-নিনার নামকরণ কীভাবে হয়েছে?

1. এল-নিনো (El Nino) – স্প্যানিশ ভাষায় এর অর্থ “ছোট্ট যিশু”, কারণ এটি সাধারণত ডিসেম্বর মাসে (ক্রিসমাসের সময়) দেখা যায়।
2. লা-নিনা (La Nina) – স্প্যানিশ ভাষায় এর অর্থ “ছোট্ট মেয়ে”, যা এল-নিনোর বিপরীত অবস্থা নির্দেশ করে।

এল-নিনো ও লা-নিনা বৈশ্বিক জলবায়ুকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

1. গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন করে।
2. মেরু অঞ্চলে বরফ গলন বা জমার হারকে প্রভাবিত করে।
3. সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খলে পরিবর্তন আনে (যেমন – পেরুতে মাছের সংখ্যা কমে যায় এল-নিনোতে)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “‘এল-নিনো’ এবং ‘লা-নিনার’ উৎপত্তির কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “‘এল-নিনো’ এবং ‘লা-নিনার’ উৎপত্তির কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কোনো প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে চ্যুতিকোণ(δ) = i1+i2−A

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা