এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জোয়ারভাটার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কী কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “জোয়ারভাটার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কী কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

জোয়ারভাটার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কী কী?
মানবজীবনে জোয়ারভাটার প্রভাব –
জোয়ারভাটা মানবজীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। এগুলি হল –
অনুকূল বা ইতিবাচক প্রভাব –
- জাহাজ চলাচল – জোয়ারের সময় নদীর জলের পরিমাণ ও উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে জাহাজ ও নৌকা চলাচলের সুবিধা হয়। জোয়ারের সময় জাহাজ নদী বন্দরে সহজেই আসতে পারে এবং ভাটার সময় বন্দর থেকে সমুদ্রে ফিরে যেতে পারে। উদাহরণ – জোয়ারের সময় কলকাতা বন্দরে জাহাজ আসে এবং ভাটার টানে ফিরে যায়।
- দূষণমুক্ত পরিবেশ – ভাটার টানে নদীর আবর্জনা সমুদ্রে চলে যায়। ফলে নদীর জল স্বচ্ছ থাকে এবং নদী তীরবর্তী অংশ দূষণমুক্ত হয়।
- নাব্যতা বৃদ্ধি – ভাটার টানে নদী মোহানা পলি মুক্ত হয় ফলে নদীর গভীরতা ও নাব্যতা বজায় থাকে। নদীখাত গভীর থাকায় নৌ চলাচলে সুবিধা হয়। যেমন – সুন্দরবনের খাঁড়িগুলি জোয়ারের সময় নৌচলাচল যোগ্য হয়।
- মৎস্য শিকার – জোয়ারের সময় সমুদ্রের মাছ নদীতে চলে আসে। ফলে মৎস্যজীবীদের সুবিধা হয়।
- বিদ্যুৎ উৎপাদন – জোয়ারভাটা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ভারতের কাম্বে, খাম্বাত উপসাগরে এবং সুন্দরবন অঞ্চলের দুর্গাদোয়ানী খাঁড়িতে জোয়ারভাটা বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
- বরফমুক্ততা – শীতপ্রধান অঞ্চলে জোয়ারের সময় সমুদ্রের লবণাক্ত জল নদীতে প্রবেশ করায় নদী মোহানা ও বন্দর বরফমুক্ত থাকে। অর্থাৎ শীতকালেও বন্দরগুলি সক্রিয় থাকে।
প্রতিকূল বা নেতিবাচক প্রভাব –
- নদীর জলে লবণতা বৃদ্ধি – জোয়ারের লবণাক্ত জলের দ্বারা নদীর মিষ্টিজল লবণাক্ত হয়ে পড়ে। ফলে এই জলসেচের জল পানের ও শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
- ক্ষয়ক্ষতি – জোয়ারের প্রবল জলস্রোতে কখনো-কখনো লঞ্চ বা নৌকাডুবি হয় তখন লঞ্চ বা নৌকার ক্ষতিসহ প্রাণহানি ঘটে। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে কৃষিজমি ও বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।
- পলিসঞ্চয় – অনেক সময় নদী মোহানার পলিরাশি জোয়ারের তীব্রতায় নদীর অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে সঞ্চিত হয়ে নদীর গভীরতা ও নাব্যতা হ্রাস পায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জোয়ারভাটা কী?
জোয়ারভাটা হলো সূর্য ও চন্দ্রের মহাকর্ষীয় টানের প্রভাবে সমুদ্র ও নদীর জলরাশির নিয়মিত উঠানামা। জোয়ারে জলস্তর বৃদ্ধি পায়, আর ভাটায় জলস্তর কমে যায়।
জোয়ারভাটার প্রধান সুবিধাগুলো কী কী?
1.জাহাজ চলাচলে সহায়তা – জোয়ারে নদীর জলস্তর বেড়ে যায়, ফলে বড় জাহাজ বন্দরে ঢুকতে পারে।
2.নদীর দূষণ কমায় – ভাটার টানে নদীর ময়লা-আবর্জনা সমুদ্রে চলে যায়।
3. মাছ ধরার সুবিধা – জোয়ারে সমুদ্রের মাছ নদীতে প্রবেশ করে, যা মৎস্যজীবীদের জন্য সহায়ক।
4. বিদ্যুৎ উৎপাদন – জোয়ারভাটার শক্তি কাজে লাগিয়ে টাইডাল পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়।
5. নদীর নাব্যতা বজায় রাখা – ভাটার টানে নদীখাতের পলি সরে যায়, ফলে নৌচলাচল সহজ হয়।
জোয়ারভাটার অসুবিধাগুলো কী?
1. নদীর জল লবণাক্ত হয় – জোয়ারের লবণাক্ত জল নদীর মিষ্টিজলকে দূষিত করে, যা পানীয় ও সেচের অনুপযোগী।
2. ক্ষয়ক্ষতি – প্রবল জোয়ারে নৌকাডুবি, বন্যা ও উপকূলীয় ক্ষয় হতে পারে।
3. পলি সঞ্চয় – জোয়ারের তীব্রতায় নদীতে পলি জমে নাব্যতা কমাতে পারে।
4. কৃষিজমির ক্ষতি – লবণাক্ত জল কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট করতে পারে।
জোয়ারভাটা কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাহায্য করে?
জোয়ারভাটার সময় সৃষ্ট জলস্রোতকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন চালানো হয়, যা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ভারতের গুজরাটের কাকরাপাড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে।
জোয়ারভাটা নৌপরিবহনে কীভাবে সাহায্য করে?
জোয়ারের সময় নদীর জলস্তর বাড়ে, ফলে বড় জাহাজ সহজেই নদী বা বন্দরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন, কলকাতা বন্দরে জোয়ারের সময় জাহাজ ঢোকে এবং ভাটার সময় বের হয়।
জোয়ারভাটা পরিবেশের জন্য ভালো না খারাপ?
জোয়ারভাটার ভালো ও খারাপ দুটো দিকই আছে।
1. ভালো দিক – দূষণ কমায়, মাছের উৎপাদন বাড়ায়, নৌপরিবহন সহজ করে।
2. খারাপ দিক – লবণাক্ততা বাড়ায়, ক্ষয়ক্ষতি ঘটায় এবং কৃষিজমির ক্ষতি করে।
কোন কোন দেশ জোয়ারভাটা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে?
দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, কানাডা ও ভারত (গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গে) জোয়ারভাটা শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
জোয়ারভাটা কৃষির জন্য ক্ষতিকর কেন?
জোয়ারের লবণাক্ত জল নদী বা খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে প্রবেশ করলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং ফসলের ক্ষতি হয়।
সুন্দরবনে জোয়ারভাটার কী প্রভাব পড়ে?
সুন্দরবনের খাঁড়িগুলো জোয়ারে পূর্ণ হয়, যা নৌকা ও জাহাজ চলাচলে সাহায্য করে। তবে মাঝে মাঝে প্রবল জোয়ারে বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতিও হয়।
ভবিষ্যতে জোয়ারভাটার ব্যবহার কীভাবে বাড়বে?
জোয়ারভাটা শক্তি একটি নবায়নযোগ্য শক্তি, তাই পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এর ব্যবহার বাড়ছে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও দক্ষভাবে টাইডাল এনার্জি কাজে লাগানো হবে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জোয়ারভাটার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কী কী?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “জোয়ারভাটার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো কী কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন