আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের চতুর্থ বিভাগ, ‘পথের দাবী’ থেকে কিছু ‘পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ, নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়শই আসতে দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য খুবই উপকারী হবে।

নিম্নরেখ পদগুলির কারক ও অকারক সম্পর্ক এবং বিভক্তি ও অনুসর্গ নির্দেশ করো।
জগদীশবাবু ইতিমধ্যেই তাহাদের টিনের তোরঙ্গ ও ছোটো-বড়ো পুটলি খুলিয়ে তাহাদের শুরু করিয়া দিয়াছেন।
উত্তর – তাহাদের – সম্বন্ধপদ, ‘দের’ বিভক্তি। তদারক – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল।
উত্তর – লোকটি – কর্তৃকারক, শূন্য বিভক্তি।
অপূর্ব মুগ্ধ হইয়া সেইদিকে চাহিয়া ছিল।
উত্তর – সেইদিকে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
কয়দিনের জাহাজের ধকলে সমস্তই নোংরা হইয়া উঠিয়াছে।
উত্তর – কয়দিনের – সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি। ধকলে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
রাত্রের মেল ট্রেনটার প্রতি একটু দৃষ্টি রেখো, সে যে বর্মায় এসেছে এখবর সত্য।
উত্তর – ট্রেনটার – কর্মকারক, প্রতি অনুসর্গ। বর্মায় – অধিকরণকারক, ‘য়’ বিভক্তি।
নেবুর তেলের গন্ধে ব্যাটা থানাসুদ্ধ লোকের মাথা ধরিয়ে দিলে।
উত্তর – গন্ধে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। লোকের – সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি।
রামদাস আর কোনো প্রশ্ন করিল না।
উত্তর – রামদাস – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। প্রশ্ন – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন।
উত্তর – বাবাই – কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি। চাকরি – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
আমার ভাই-বোনকে যারা এই সব সহস্র কোটি অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায়।
উত্তর – অত্যাচার থেকে – অপাদানকারক, ‘থেকে’ অনুসর্গ।
মনে হলে দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গে মিশে যাই।
উত্তর – ঘৃণায় – করণকারক, ‘য়’ বিভক্তি।
নানা কারণে রেঙ্গুনে তাহার আর একমুহূর্ত মন টিকিতে ছিল না।
উত্তর – রেঙ্গুনে – অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। মন – কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইলে সে পিরানের মধ্যে হইতে পৈতা বাহির করিয়া বিনা জলেই সায়ংসন্ধ্যা সমাপন করিল …।
উত্তর – জলে – করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
নিম্নলিখিত বাক্যগুলিতে যে সমাসবদ্ধ পদ আছে তা বেছে নিয়ে তার ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করো।
জগদীশবাবু ইতিমধ্যেই তাহাদের টিনের তোরঙ্গ …।
উত্তর – জগদীশবাবু – জগদীশ নামক বাবু (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)।
সেখানের জলহাওয়া সহ্য না হওয়ায় চাকরির উদ্দেশ্যে রেঙ্গুনে চলিয়া আসিয়াছে।
উত্তর – জলহাওয়া – জল ও হাওয়া (দ্বন্দ্ব)।
ভিতরের কী একটা দুরারোগ্য রোগে সমস্ত দেহটা যেন দ্রুতবেগে ক্ষয়ের দিকে ছুটিয়াছে।
উত্তর – দুরারোগ্য – আরোগ্যের অভাব (অব্যয়ীভাব)। দ্রুতবেগে – দ্রুত যে বেগ (সাধারণ কর্মধারয়) তাতে।
ইহারই কোন অতল তলে তাহার ক্ষীণ প্রাণশক্তিটুকু লুকোনো আছে।
উত্তর – অতল – নেই তল যার (নঞ্ বহুব্রীহি)। প্রাণশক্তি – প্রাণের শক্তি (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
অপূর্ব মুগ্ধ হইয়া সেইদিকে চাহিয়া ছিল।
উত্তর – অপূর্ব – নয় পূর্ব (নঞ্ তৎপুরষ)।
অপর্যাপ্ত তৈলনিষিক্ত, কঠিন, রুগ্ধ, কেশ হইতে নিদারুণ নেবুর তেলের গন্ধে ঘর ভরিয়া উঠিয়াছে।
উত্তর – অপর্যাপ্ত – নয় পর্যাপ্ত (নঞ্ তৎপুরুষ)। তৈলনিষিক্ত – তৈল দ্বারা নিষিক্ত (করণ তৎপুরুষ)।
… তলাটা মজবুত ও টিকসই করিতে আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো।
উত্তর – আগাগোড়া – আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত (অব্যয়ীভাব)।
ইহার আপাদমস্তক অপূর্ব বারবার নিরীক্ষণ করিয়া কহিল …।
উত্তর – আপাদমস্তক – পা হতে মাথা পর্যন্ত (অব্যয়ীভাব)।
কাকাবাবু এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন।
উত্তর – কাকাবাবু – যিনি কাকা তিনিই বাবু (সাধারণ কর্মধারয়)।
তোমার বাক্স-বিছানা তো খানাতল্লাশি হয়ে গেছে।
উত্তর – খানাতল্লাশি – খানা ও তল্লাশি (দ্বন্দ্ব)।
মাপ করিবার কাঠে একটা ফুটবল…।
উত্তর – ফুটবুল – ফুট মাপিবার রুল (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)।
মহাপাত্র মাথা নাড়িয়া অস্বীকার করিয়া বলিল …।
উত্তর – অস্বীকার – নয় স্বীকার (নঞ্ তৎপুরুষ)।
মিথ্যেবাদী কোথাকার।
উত্তর – মিথ্যেবাদী – মিথ্যে বলে যে (উপপদ তৎপুরষ)।
… সন্ধ্যাহ্নিক, স্নানাহার, পোশাক-পরা, অফিস যাওয়া প্রভৃতি নিত্য কাজগুলোয় বাধা পাইল না সত্য…..
উত্তর – সন্ধ্যাহ্নিক – সন্ধ্যাকালীন আহ্নিক (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)। স্নানাহার – স্নান ও আহার (দ্বন্দ্ব)।
… চিকিৎসাশাস্ত্রে অসাধারণ পারদর্শী বিলাতের ডাক্তার উপাধিধারী রাজশত্রু …
উত্তর – চিকিৎসাশাস্ত্রে – চিকিৎসা বিষয়ক শাস্ত্রে (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়), তাহাতে। অসাধারণ – নয় সাধারণ (নঞ্ তৎপুরুষ)। রাজশত্রু – রাজার শত্রু (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
যে কেউ জন্মভূমিকে তার স্বাধীন করবার চেষ্টা করেছে …।
উত্তর – জন্মভূমিকে – জন্মের ভূমি (তৎপুরুষ), তাকে। স্বাধীন – স্ব (নিজ)-এর অধীন (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
গিরীশ শশব্যস্তে একটা মস্ত নমস্কার করিয়া কহিল …।
উত্তর – শশব্যস্তে – শশকের ন্যায় ব্যস্ত (উপমান কর্মধারয়), তাতে।
নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো।
লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর – লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল নাকি?
বয়স ত্রিশ-বত্রিশের অধিক নয়, কিন্তু ভারী রোগা দেখাইল। (সরল বাক্যে)
উত্তর – বয়স ত্রিশ-বত্রিশের অধিক না হওয়া সত্ত্বেও ভারী রোগা দেখাইল।
এইটুকু কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপাইতে লাগিল। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর – সে এইটুকু কাশিল আর সেই পরিশ্রমেই হাঁপাইতে লাগিল।
কেবল আশ্চর্য সেই রোগা মুখের অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি! (বিস্ময়সূচক বাক্যে)
উত্তর – সত্যি! আশ্চর্য শুধু সেই রোগা মুখের অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি!
নিমাইবাবু হাসিয়া ঘাড় নাড়িলেন। কহিলেন, তোমার নাম কী হে? (প্রশ্ন পরিহার করো)
উত্তর – নিমাইবাবু হাসিয়া ঘাড় নাড়িয়া তার নাম জিজ্ঞাসা করিলেন।
এখন রেঙ্গুনেই থাকবে? (অনুজ্ঞাবাচক বাক্যে)
উত্তর – এখন রেঙ্গুনেই থাকবে কিনা বলো।
তারপর সকালে গেলাম পুলিশে খবর দিতে। (জটিল বাক্যে)
উত্তর – তারপর যখন সকাল হল তখন গেলাম পুলিশে খবর দিতে।
অথচ, গভর্নমেন্টের কত টাকাই না এরা বুনো হাঁসের পিছনে ছুটোছুটি করে অপব্যয় করলে। (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর – অথচ, গভর্নমেন্টের অনেক টাকা এরা বুনো হাঁসের পিছনে ছুটোছুটি করে অপব্যয় করলে।
আচ্ছা, এরা কি আপনাদের বাংলাদেশের পুলিশ? (প্রশ্ন পরিহার করো)
উত্তর – আচ্ছা, এরা আপনাদের বাংলাদেশের পুলিশ কি না জানতে চাইছি।
তেওয়ারি খবরদারির জন্য বাসাতেই রহিল। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর – তেওয়ারি বাসাতেই রহিল এবং তাও-বা খবরদারির জন্য।
নির্দেশ অনুযায়ী বাচ্য পরিবর্তন করো।
কেবল এই জন্য যেন সে আজও বাঁচিয়া আছে। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – কেবল এই জন্য যেন তার আজও বাঁচিয়া থাকা হইয়াছে।
দেখি তোমার ট্যাঁকে এবং পকেটে কী আছে? (ভাববাচ্যে)
উত্তর – তোমার ট্যাঁকে এবং পকেটে কী আছে দেখা হোক।
নিমাইবাবু কহিলেন, তুমি গাঁজা খাও? (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – নিমাইবাবুর দ্বারা জিজ্ঞাসিত হইল সে গাঁজা খায় কি না।
বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – বাবার দ্বারাই একদিন এঁর চাকরি করে দেওয়া হয়েছিল।
এসব কথা বলার দুঃখ আছে। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – এসব কথা বললে দুঃখ পাবেন।
সুমুখের ঘড়িতে তিনটা বাজিতে সে উঠিয়া দাঁড়াইল। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – সুমুখের ঘড়িতে তিনটা বাজিতে তার উঠিয়া দাঁড়ানো হইল।
আমার ইচ্ছা তুমি একবার সবগুলো দেখে আস। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর – আমার ইচ্ছা তোমার দ্বারা একবার সবগুলো দেখে আসা হোক।
সেদিন কেবল তামাশা দেখতেই গিয়েছিলাম। (ভাববাচ্যে)
উত্তর – সেদিন কেবল তামাশা দেখতেই যাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তোমার বাপু একটা ভুল হয়েছে। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – কিন্তু তুমি বাপু একটা ভুল করেছ।
সেই সুদূর দুর্নিরীক্ষ্য লোকেই তাহার সমস্ত মনশ্চক্ষু একেবারে উধাও হইয়া গিয়াছে। (কর্তৃবাচ্যে)
উত্তর – সেই সুদূর দুর্নিরীক্ষ্য লোকেই সে তার সমস্ত মনশ্চক্ষুকে একেবারে উধাও করিয়া দিয়াছে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবইয়ের পঞ্চম পাঠের চতুর্থ বিভাগ, ‘পথের দাবী’ থেকে ‘পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ‘ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ ধরনের প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায়ই আসতে দেখা যাই। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এছাড়া, পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন