এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গৃহস্থালির বর্জ্য অপেক্ষা শিল্পজাত বর্জ্য বেশি ক্ষতিকর – উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “গৃহস্থালির বর্জ্য অপেক্ষা শিল্পজাত বর্জ্য বেশি ক্ষতিকর – উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

‘গৃহস্থালির বর্জ্য অপেক্ষা শিল্পজাত বর্জ্য বেশি ক্ষতিকর’ – উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
গৃহস্থালির বর্জ্য অপেক্ষা শিল্পজাত বর্জ্য বেশি ক্ষতিকর কারণ –
মানুষের দৈনিক জীবনযাত্রায় ব্যবহারের অনুপযুক্ত পদার্থ যেমন – শাকসবজি-ফলের খোসা, মাছের কাঁটা, আঁশ, কাগজের টুকরো, কাপড়ের টুকরো, ডিমের খোসা, মাংসের ছাঁট, হাড়, প্লাস্টিকের টুকরো প্রভৃতিকে গৃহস্থালির বর্জ্যপদার্থ বলে। এগুলির বেশিরভাগ জৈব-ভঙ্গুর, তবে কয়েকটি জৈব-অভঙ্গুর প্রকৃতির হলেও এগুলি পরিবেশ বা জীবজগতের ক্ষতি করে না সুতরাং, গৃহস্থালির বর্জ্য বিষহীন ও পরিবেশমিত্র প্রকৃতির। গৃহস্থালি থেকে প্রাপ্ত জৈব-অভঙ্গুর বর্জ্য থেকে কৃষিজ সারও তৈরি করা হয়। কিন্তু শিল্পজাত বর্জ্যদ্রব্য পরিবেশ ও জীবজগতের ক্ষতি করে। এগুলি মূলত বিষাক্ত বর্জ্য। বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা থেকে গ্যাসীয় বা অগ্যাসীয় পদার্থসমূহ নির্গত হয়ে বাতাসে মিশে বাতাসকে দূষিত করে। শিল্পের প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার জৈব, অজৈব ও রাসায়নিক বর্জ্য পরিবেশকে দূষিত করছে।
নীচে কয়েকটি শিল্প এবং তা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থের নাম উল্লেখ করা হল –
শিল্প কারখানা | শিল্পবর্জ্য |
রাসায়নিক শিল্প। | অজৈব অ্যাসিড, ফেনল, অ্যামোনিয়া, জৈব অ্যাসিড। |
পেট্রো-রাসায়নিক। | হাইড্রোকার্বন। |
তৈল শোধনাগার। | হাইড্রোকার্বন, ফেনল, চর্বি, তেল, গ্রিজ। |
ফোটোগ্রাফি। | রুপো। |
ব্যাটারি উৎপাদন। | সিসা, অ্যাসিড। |
পরমাণু শক্তিকেন্দ্র। | ফ্লুওরাইড। |
রবার। | দস্তা। |
চর্মশিল্প। | ট্যানিক অ্যাসিড, ফেনল, ক্রোমিয়াম, সালফাইড। |
ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। | তেল, চর্বি, গ্রিজ। |
কাগজ। | মুক্ত ক্লোরিন। |
রং শিল্প। | ফেনল যৌগ, সিসা। |
সার উৎপাদন। | ফসফেট, ক্লোরাইড। |
গ্যাস, কোক উৎপাদন। | অ্যামোনিয়া, সায়ানাইড, ফেনল, সালফাইড। |
সুরা-মদ উৎপাদন। | অজৈব পদার্থ। |
নীচে কয়েকটি শিল্প বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাব উল্লেখ করা হল –
শিল্পজাত বর্জ্য | ক্ষতিকর প্রভাব |
কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস। | এটি রক্তকোশের হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন সংবহন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বায়ুতে অত্যল্প পরিমাণ উপস্থিত ও মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, বমিবমি ভাব সৃষ্টি করে। |
সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস। | এই গ্যাস শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। নাক ও গলার ব্যাধি, ফুসফুসের বিভিন্ন ব্যাধি, যেমন – ব্রংকাইটিস, হাঁপানি সৃষ্টি করে। অনেক সময় ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টি করে। |
নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ (গ্যাসীয়)। | ফুসফুসের তত্ত্বতে এবং শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে প্রদাহ দৃষ্টি করে। ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া এবং ফুসফুস সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাধি সৃষ্টি করে। |
অ্যামোনিয়া (গ্যাস)। | এটি শ্বাসনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। |
হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস। | এটি পরিপাকতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এর ফলে ডায়েরিয়া হয়। তা ছাড়া মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব ঘটায়। এই গ্যাসের প্রভাবে চোখ ও গলা জ্বালা করে। |
হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস। | এই গ্যাস স্নায়ুকোশকে আক্রমণ করে। এর প্রভাবে মাথা ধরে এবং চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়। |
ক্লোরিন গ্যাস। | এটি শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, শ্বাসকষ্ট ঘটায় এবং কনজাংটিভাইটিস সৃষ্টি করে। |
হাইড্রোকার্বন সমূহ (গ্যাসীয়)। | এই গ্যাস অধিক গাঢ়ত্বে উপস্থিত থাকলে শরীরে ক্যানসার কোশ গঠিত হয়। শ্লেষ্মাবর্ধক হিসেবে শ্বাসনালীকে রুদ্ধ করে তীব্র শ্বাসকষ্ট ঘটায়। ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। |
হাইড্রোজেন ফ্লুওরাইড। | এটি মারাত্মক ক্ষতিকর পদার্থ। এটি প্রাণীদেহে ফ্লুরোসিস (Flurosis) রোগ ঘটায়। |
ফসজিন বা কার্বনিল ক্লোরাইড। | এই গ্যাসটিও মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি শ্বাসনালীতে প্রদাহ ঘটিয়ে কাশি ও হাঁপানি সৃষ্টি করে এবং ফুসফুসে জল জমায়। সর্বোপরি ফুসফুসের মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি করে। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
গৃহস্থালির বর্জ্য ও শিল্পজাত বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য কী?
1. গৃহস্থালির বর্জ্য – জৈব-ভঙ্গুর পদার্থ যেমন – শাকসবজির খোসা, মাছের কাঁটা, কাগজ, ডিমের খোসা ইত্যাদি। এগুলি সাধারণত পরিবেশবান্ধব এবং পচে গিয়ে জৈবসারে পরিণত হয়।
2. শিল্পজাত বর্জ্য – রাসায়নিক দূষক যেমন – অ্যাসিড, ভারী ধাতু (সিসা, ক্রোমিয়াম), বিষাক্ত গ্যাস (সালফার ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড) ইত্যাদি। এগুলি পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শিল্পজাত বর্জ্য কীভাবে পরিবেশ দূষিত করে?
1. বায়ুদূষণ – কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস (CO, SO₂, NOx) বায়ুমণ্ডলে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের ক্যানসার ঘটায়।
2. জলদূষণ – শিল্পবর্জ্য নদী-নালায় মিশলে জল বিষাক্ত হয়, মাছ মারা যায় এবং পানীয় জলের উৎস নষ্ট হয়।
3. মৃত্তিকা দূষণ – ভারী ধাতু (সিসা, আর্সেনিক) মাটিতে জমে ফসলের ক্ষতি করে ও খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে।
গৃহস্থালির বর্জ্য কেন তুলনামূলক কম ক্ষতিকর?
1. অধিকাংশ গৃহস্থালি বর্জ্য জৈব-ভঙ্গুর, যা মাটির সাথে মিশে সার হিসেবে কাজ করে।
2. প্লাস্টিক, কাচের মতো অজৈব বর্জ্যও সাধারণত বিষাক্ত নয়, তবে পুনর্ব্যবহার না করলে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।
শিল্পজাত বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাবের কিছু উদাহরণ দিন।
1. সালফার ডাইঅক্সাইড (SO₂) – অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়, যা মাটি ও জলাশয়ের pH কমিয়ে দেয়।
2. সিসা (Pb) – স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে, শিশুদের মানসিক প্রতিবন্ধীতা ঘটাতে পারে।
3. প্লাস্টিক বর্জ্য – মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
শিল্পজাত বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?
1. শোধনাগার (ETP/STP) ব্যবহার করে বর্জ্য শোধন।
2. বর্জ্য পুনর্ব্যবহার (Recycling) যেমন – প্লাস্টিক, ধাতু পুনরায় ব্যবহার।
3. সরকারি নিয়ম (EPA Guidelines) মেনে শিল্পকারখানা পরিচালনা।
কোন শিল্প সবচেয়ে বেশি দূষণ সৃষ্টি করে?
তৈল শোধনাগার, রাসায়নিক শিল্প, ট্যানারি (চর্মশিল্প), কাগজের কল ইত্যাদি থেকে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত বর্জ্য নির্গত হয়।
গৃহস্থালির বর্জ্য কি একেবারেই নিরাপদ?
না, প্লাস্টিক ও ই-বর্জ্য (ব্যাটারি, ইলেকট্রনিক্স) গৃহস্থালি বর্জ্যের অংশ হলেও এগুলি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
শিল্পজাত বর্জ্য থেকে সৃষ্ট রোগের উদাহরণ দিন।
1. সিসা (Pb) – কিডনি রোগ, স্নায়বিক সমস্যা।
2. আর্সেনিক (As) – ত্বকের ক্যানসার।
3. মার্কারি (Hg) – মিনামাটা রোগ (স্নায়ুর ক্ষতি)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গৃহস্থালির বর্জ্য অপেক্ষা শিল্পজাত বর্জ্য বেশি ক্ষতিকর – উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “গৃহস্থালির বর্জ্য অপেক্ষা শিল্পজাত বর্জ্য বেশি ক্ষতিকর – উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন