আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্থ পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘খেয়া’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

‘খেয়া’ কবিতা কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত? এই কাব্যে কবিমনের পরিচয় দাও।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া’ কবিতাটি কবির ‘চৈতালি’ (1896 খ্রিস্টাব্দ) কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত।
কবি মন – দৈনন্দিন জীবনের স্থবিরতা ও দৈন্যতায় পীড়িত কবি রবীন্দ্রনাথ জীবনের তাৎপর্য খুঁজে পেলেন নিসর্গপ্রকৃতির সৌন্দর্য, মানবপ্রেম এবং অনন্ত জীবনতৃষ্ণার মধ্যে। সেই উপলব্ধির আন্তরিক প্রকাশ ঘটেছে ‘খেয়া’ কবিতাটির মধ্যে।
‘খেয়া’ কোন জাতীয় কবিতা? তার বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতাটি একটি চতুর্দশপদী কবিতা।
বৈশিষ্ট্য – ‘চৈতালি’র অন্তর্গত এ কবিতায় সনেটের মান্য শর্তানুসারে 14টি পঙক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটি চরণেও ব্যবহৃত হয়েছে চোদ্দোটি অক্ষর। সনেটের যেমন দুটি ভাগ থাকে, এখানেও তা স্পষ্ট। প্রথম আটটি পঙক্তি নিয়ে অষ্টক, আর পরের ছয়টি নিয়ে ষটক নির্মিত হয়েছে। কবিতার এই সীমিত পরিসরে কবি মানব ইতিহাসের স্বরূপ প্রকাশ করলেন নদীস্রোত-খেয়াতরি-যাত্রীদল-দুই গ্রামের জীবনচিত্রের মাধ্যমে।
খেয়া নৌকা কী? সেটি কাদের পারাপার করে?
নদী বা খালে নৌকা বা ডিঙি তথা জলযান পারানির বিনিময়ে যাত্রী পারাপার করে তাকে খেয়া নৌকা বলে।
যাদের পারাপার করে – ‘খেয়া’ কবিতায় চিত্রিত নদীর বিপরীত দুই তটে অবস্থিত গ্রাম দুটির মানুষগুলোকে এই খেয়া নৌকা এপার-ওপার করে। যাত্রীরা কেউ আপন ঘরে ফেরে, কেউ ঘর থেকে বাইরে যায় – এই পারাপার চলে নিরন্তর। বহির্জগতের কোনো অভিঘাতে কখনও ছেদ পড়েনি এই চলাচলের। একাকী নদীতটে বসে উদাস কবি রবীন্দ্রনাথ এই চিত্র অবলোকন করলেন।
যাত্রীদল কোথা থেকে কোথায় যায়?
‘খেয়া’ কবিতায় উল্লিখিত খেয়া নৌকাটি যাত্রী বোঝাই করে নদীর এ-কূল থেকে ও-কূলে ধাবিত হয়।
‘খেয়া’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন –
“খেয়া নৌকা পারাপার করে নদী স্রোতে,
কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।”
যাত্রীদল যেখান থেকে আসে – নিবিড় সম্পর্কে অন্বিত নদী তীরবর্তী দুটি গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী খেয়া নৌকা করে কোনো মানুষ ঘরে যায়, আবার কেউ ঘর থেকে বাইরে। যাত্রীদলের এই যাওয়া আসা অনন্ত মানবজীবন প্রবাহকে সচল রাখে।
‘কেহ যায় ঘরে’ – কবি এখানে কী বলতে চেয়েছেন?
নবীনে প্রবীণে ভিড় করা খেয়াতরির যাত্রীদলের এক অংশের কথা এখানে বলা হয়েছে।
কবি যা বলেছেন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘খেয়া’ কবিতায় ‘ঘরে ফেরা’কে গভীর তাৎপর্যে ব্যবহার করেছেন। এক অর্থে তারা খেয়াতরি করে আপন ঘরে ফেরে; আবার বিপুলা এই মানবসভ্যতায় তাদের শুভাগমনকেও কবি বোঝালেন ‘ঘরে ফেরা’ কথাটি উল্লেখের মাধ্যমে।
কবিতায় ‘ঘর’ কোন্ তাৎপর্য বহন করে?
তাৎপর্য – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘খেয়া’ কবিতায় খেয়া নৌকায় যাত্রীদের গমনাগমন প্রসঙ্গে ঘরের কথা এনেছেন। আলোচ্য কবিতায় উল্লিখিত নদী তীরবর্তী দুটি গ্রাম পরস্পর নিবিড় সম্পর্কে অন্বিত। খেয়া তরির যাত্রীদলের কেউ কেউ ঘর থেকে বেরিয়ে অন্যত্র ঠিকানা খোঁজে, আবার অন্য দল ‘আপন কুলায়’ ফেরে; ‘ঘর’ এখানে একইসঙ্গে জগৎসংসারকেও বোঝায়।
নদীর দুই তীরের গ্রাম দুটির সম্পর্ক কীরূপ?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতায় উল্লেখিত অচেনা-অখ্যাত গ্রাম দুটি নদীর দুই তটে চিরকালের সম্পর্কে বাঁধা।
গ্রাম দুটির সম্পর্ক – গ্রাম দুটির মাঝে সংযোগ তথা সম্বন্ধ রক্ষা করে চলেছে খেয়াতরি; একই কিরণ গায়ে মেখে তারা তপ্ত হয়, একইসঙ্গে নামে সন্ধ্যার আঁধার – নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা যুগ যুগ ধরে।
গ্রাম দুটি পরস্পরকে কীভাবে জানে?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতার অনামী অখ্যাত গ্রাম দুটি পরস্পরকে বহুদিন ধরে চেনে, জানে।
গ্রাম দুটি পরস্পরকে জানে – তীরে অবস্থিত গ্রাম দুটির ব্যবধান মধ্যবর্তী বহমান নদীটুকু। কিন্তু সেই ব্যবধান দূর করে দেয় খেয়া নৌকা – দুই গ্রামের মানুষের নিত্য যাতায়াতে এক মধুর সম্পর্কের চিরন্তন পরিচয় গড়ে ওঠে।
সন্ধ্যা-সকালের আনাগোনার মাধ্যমে কবি কী বুঝিয়েছেন?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘খেয়া’ কবিতায় নদীর দুই তীরে অবস্থিত শাশ্বত দুটি গ্রামের ঐক্যের বন্ধনকে স্পষ্ট করেছেন উদ্ধৃত পঙক্তিটিতে।
তাৎপর্য – গ্রাম দুটি দুই পারে অবস্থিত হলেও উভয়ের মধ্যে এক সুগভীর আত্মিক সম্বন্ধ রয়েছে – তারা যেন একে অপরের পরিপূরক। তাই একই সকাল-সন্ধ্যার কিরণসম্পাতে তারা স্নাত হয় – একই সুর, একই ধ্বনিতে অনুরণিত হয় তাদের হৃদয়বীণা।
পৃথিবীতে কবি কী কী ঘটতে দেখেছেন?
‘খেয়া’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু দ্বন্দ্ব, বহু সর্বনাশ ঘটতে দেখেছেন এই পৃথিবীতে।
যা দেখেছেন – বিষণ্ণ কবিমন দেখেছে মানুষ হিংসা-ঈর্ষা-লোভে প্রমত্ত হয়ে সোনার মুকুটের লোভে আত্মঘাতী মারণযজ্ঞে অবতীর্ণ হয়েছে বারবার। দুর্বিপাক নেমে এসেছে মানুষের জীবনে, সে সর্বস্বান্ত হয়ে সভ্যতার রক্তাক্ত গ্লানিময় অধ্যায় রচনা করেছে।
দ্বন্দ্বের ঘটনা কবি কোথায় দেখেছেন? তা কেন দেখা দেয়?
ইতিহাসচারী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইতিহাসের পাতায় লক্ষ করেছেন দ্বন্দ্ব-সর্বনাশের ঘটনাধারা।
কারণ – ‘খেয়া’ কবিতায় কবি বলেছেন লোভ-ঈর্ষা-ক্রোধে মত্ত হয়ে মানুষ বারবার ধ্বংসলীলায় মেতেছে। বিজয়ীর তলোয়ার ঝলসে উঠেছে আর রাজশক্তির মস্তকে শোভা পেয়েছে সোনার মুকুট। লোভে মত্ত হয়ে অসংযমী বিকারগ্রস্ত মানুষ পাশবিক উল্লাসে মেতে উঠেছে বারবার – সভ্যতাকে রক্তাক্ত করেছে, রক্তে আর্দ্র হয়েছে ইতিহাসের পাতা।
কী নিয়ে ইতিহাস গড়ে উঠেছে?
মানব ইতিহাসের নির্মাণ নিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘খেয়া’ কবিতায় বিমর্ষ হয়েছেন।
ইতিহাস গড়ে ওঠা – হিংসায় উন্মত্ত মানুষ রক্তাক্ত মারণযজ্ঞে অবতীর্ণ হয়ে একটার পর একটা ইতিহাসের ধূসর অধ্যায় রচনা করেছে। কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে রবীন্দ্রনাথ মানুষের অবিমৃশ্যকারিতাকে সমালোচনা করেছেন – কবি সেই অধোগামী মানসিকতায়, তাদের পাশবিকতায় কোনো ইতিবাচকতাকে খুঁজে পাননি।
রক্তধারা কীভাবে প্রবাহিত হয়? তার মধ্যে কবি কী দেখেছেন?
মানুষের ক্রোধ-হিংসা যখন জান্তব উল্লাসে ফেটে পড়ে, তখন তার রক্তপ্রবাহ ফেনিয়ে ওঠে, আর মানুষের পাশবিক চেহারা প্রকট হয়।
কবি যা দেখেছেন – ‘খেয়া’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখেছেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত শোণিতধারায় ধ্বংসাত্মক উন্মত্ততা বিরাজ করেছে যার প্রত্যক্ষ রূপ মেলে ইতিহাসের পাতায়। হিংসা-ক্রোধে অন্ধ হয়ে মানুষ পৈশাচিক মনোবৃত্তির দাসত্ব করেছে বারবার, সভ্যতার কীট রূপে নিজেকে প্রতিভাত করেছে – বিকৃত এইসব মানুষের দল মানবতার প্রকৃত যজ্ঞভূমিতে ব্রাত্য।
‘রক্তপ্রবাহ’ শব্দটি উল্লেখের তাৎপর্য কী?
রূঢ় রক্তাক্ত ঘটনাধারার প্রসঙ্গে ‘খেয়া’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ আলোচ্য শব্দবন্ধটি প্রয়োগ করেছেন।
তাৎপর্য – জৈবিক প্রবৃত্তির কদর্যরূপের প্রকাশ ঘটিয়ে রাজশক্তি যুগে যুগে লোভ-ঈর্ষা-ক্রোধে মেতে ওঠে – সেই রক্তপ্রবাহ ফেনিয়ে ওঠার মধ্যে সৃষ্টির-ধ্বংসের কালো ছায়া কবি লক্ষ করেছেন।
‘সোনার মুকুট’ বলতে কবি কী বলেছেন? তার পরিণতি কী হয়?
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর রাজশক্তির চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতীক হল ‘সোনার মুকুট’।
পরিণতি – ‘খেয়া’ কবিতায় এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন ভ্রাতৃঘাতী আত্মঘাতী যুদ্ধশেষে বিজয়ী রাজশক্তির মাথায় শোভা পায় দর্প-অহংকারের প্রতীক মহার্ঘ এই মুকুট। বিজয়ী শক্তির যাবতীয় দম্ভ ভীতিমিশ্রিত সমীহের ভাব জাগায় বিজিতের কাছে। কিন্তু সময় বড়ো নিষ্ঠুর। সেই সময়ান্তরে তাদের গৌরবগাথা অর্থহীন হয়ে পড়ে, গুরুত্ব হারায়। সেই রক্তাক্ত-উদ্যোগ সমন্বিত ইতিহাস সভ্যতার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না, মানবসভ্যতার সুবিশাল প্রেক্ষাপটে আক্ষরিক অর্থেই তা গুরুত্বহীন।
কোন জিনিস ‘ফুটে আর টুটে’? শব্দদুটির অর্থ কী?
‘ফুটে’ টুটে’ – ইতিহাসচারী কবি রবীন্দ্রনাথ দেখেছেন রাজশক্তি বারবার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বিজয়ী হয়ে ‘সোনার মুকুট’ পরেছে, তাদের দর্প আর অহংকারে বিনাশ ঘটেছে প্রতিপক্ষের। কিন্তু বিজয়ীর সেই গৌরব ক্ষণিকের, সময়ান্তরে তাকেই পরাজয়ের মালা পরতে হয়েছে।
শব্দদুটির অর্থ – ‘ফুটে’ অর্থাৎ শোভা পায় আর ‘টুটে’ শব্দের অর্থ খসে পড়ে। রাজশক্তির জয়পরাজয় কোনোটাই চিরস্থায়ী নয় বরং এরই মাঝে মানবের ইতিহাস রক্তস্নাত হয়েছে বারবার। ‘ফুটে আর টুটে’ শব্দজোড়াটির মাধ্যমে সেই অনিবার্যতার প্রকাশ ঘটেছে।
নতুন নতুন ‘তৃষ্ণা ক্ষুধা’ কীভাবে সভ্যতাকে বয়ে নিয়ে যায়?
সভ্যতার বিবর্তনের দীর্ঘ রূপরেখার প্রতি আলোকপাত করেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘খেয়া’ কবিতায়।
সভ্যতাকে যেভাবে বহন করে – কবি দেখেছেন বিচিত্র ধ্বংস-সৃষ্টি, উত্থানপতনের মধ্যে দিয়ে মানবের জীবনপ্রবাহ অনিবার্যতা লাভ করেছে। মানবজীবনের অতৃপ্তি, অপ্রাপ্তি থেকে যে ক্ষুধা-তৃষ্ণা এসেছে তা-ই মানুষকে সভ্যতার নব নব ক্ষেত্র রচনায় প্রবৃত্ত করেছে।
হলাহল, সুধা কী? কেন শব্দ দুটি উল্লিখিত হয়েছে?
‘হলাহল’, ‘সুধা’ – দেবাসুর কর্তৃক সমুদ্রমন্থনে উত্থিত বিষ তথা কালকূট হল ‘হলাহল’। আর সেই মহামন্থন শেষে প্রাপ্ত অমৃত যা পান করে দেবতারা অমরত্ব লাভ করলেন, তা-ই ‘সুধা’।
কারণ – মানুষের শুভ কর্মোদ্যোগে সভ্যতার ভাণ্ডটি যেমন ভরে ওঠে, তেমনই তার পাশবিক আচরণে চলে ধ্বংসলীলা। সর্বনাশের সে খেলা চলে আসছে যুগ থেকে যুগান্তরে। মানবের এ বিপরীতধর্মী কর্মকাণ্ডকে কবি পুরাণাশ্রয়ে গভীর ব্যঞ্জনায় প্রকাশ করলেন।
সভ্যতা কীসে ভরে উঠেছে?
সভ্যতার পাত্রখানি ভরে উঠেছে একইসঙ্গে হলাহল আর সুধায়।
সভ্যতার ভরে ওঠা – রবীন্দ্রনাথ ‘খেয়া’ কবিতায় দীর্ঘ প্রবাহপথে সভ্যতার উত্থানপতনকে স্পষ্ট করতে পরস্পর বিপরীতধর্মী আলোচ্য শব্দ দুটিকে ব্যবহার করেছেন। মানুষ তার চলার পথে যেমন মানবতাকে লাঞ্ছিত করেছে তেমনই তারই উদ্যোগে বারবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই মানবতার ভিত্তিভূমি।
সভ্যতার কালসমুদ্রে কী কী ঘটে?
কালসমুদ্রে যা ঘটে – সভ্যতার কালসমুদ্র থেকে সুধাও যেমন ওঠে, ওঠে হলাহলও। ‘খেয়া’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানবের বহু বিচিত্র কর্মমাঝে যেমন ধ্বংস আর পতনকে দেখেছেন, তেমনই দেখেছেন সৃজনযজ্ঞে নিমগ্ন থেকে মানুষ সভ্যতার ভিত্তিভূমি রচনা করেছে। সভ্যতার অন্তরাত্মাকে কাঁপিয়ে এই মানুষই কালকুটের উদগিরণ ঘটিয়েছে, কখনও বা অমৃত সুধারসে ভরিয়ে দিয়েছে জীবনভাণ্ড।
‘শুধু হেথা’ কবি কেন বলেছেন? সেখানে কী আছে?
‘খেয়া’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শুধু’ শব্দটির মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্করহিত কেবল নদীতটের জীবনকেই বুঝিয়েছেন।
সেখানে যা আছে – দূর নদীপারের গ্রাম দুখানি সকলের কাছে অচেনা, অজানা। এপারে-ওপারে থাকা এই দুটি গ্রাম কেবল নিজেদের চেনে, এই চেনা বহুকালের। তাদের মাঝে নদীবক্ষে ভাসমান খেয়া নৌকা সেই চিরকালের সম্বন্ধকে রক্ষা করে চলেছে কেবল সেই দুটি জনপদের মাঝখানে।
‘কেবা জানে নাম’ – কাদের কথা বলা হয়েছে?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতায় উল্লিখিত নদীস্রোতের দুই তীরে অবস্থিত নিরীহ সাধারণ দুটি গ্রামের কথা প্রশ্নে প্রদত্ত উদ্ধৃতিটিতে বলা হয়েছে।
যাদের কথা বলা হয়েছে – দুই তটের গ্রাম দুখানি পরস্পরকে বহু যুগ ধরে চেনে, জানে। তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক চিরকালের। বহির্জগৎ সম্পর্কে উদাসীন থেকে তারা মানবসভ্যতার চিরন্তন প্রবাহধারাকে বয়ে নিয়ে চলেছে কালের প্রবাহে।
গ্রাম দুটির নাম না জানার কারণ কী?
‘খেয়া’ কবিতায় উল্লিখিত অখ্যাত গ্রাম দুটির নাম জানে না বহির্বিশ্ব কিংবা তথাকথিত সভ্যতা।
গ্রাম দুটির নাম না জানার কারণ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখেছেন, নানা উত্থানপতনে সভ্যতা যখন এগিয়ে চলেছে, ভাঙ্গাগড়ার খেলা নিয়ে হয়েছে আন্দোলিত – সেই ঢেউ গ্রামে পৌঁছোয়নি। গ্রাম দুটি তাদের সাবেকি অস্তিত্ব নিয়ে সভ্যতার রথের চাকাকে অনিবার্য বহমানতা দান করেছে। সভ্যতা থেকে দূরবর্তী এমন অনেক গ্রামই ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীতে। তাদের নাম দিয়ে সীমায়িত করতে চাননি কবি।
পরস্পরের দিকে গ্রাম দুটি কীভাবে চেয়ে আছে?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতায় উল্লিখিত গ্রাম দুটি ‘দোঁহা পানে’ চেয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে, যুগ যুগ ধরে।
গ্রাম যেভাবে চেয়ে আছে – গ্রামদুটি এমনভাবে চেয়ে আছে যুগ যুগ ধরে যেন তাদের সম্পর্ক চিরকালের। বহির্জগৎ সম্পর্কে উদাসীন থেকে তারা নিবিড়ভাবে চেয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে – তাদের এই নীরব নিরুচ্চার উপস্থিতি কবিমনে একটা বিষণ্ণতার ভাব এনেছে।
‘এই খেয়া চিরদিন’ – কোন্ খেয়ার কথা বলা হয়েছে?
যে ‘খেয়া’র কথা বলা হয়েছে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘খেয়া’ নামক কবিতাতে যে তরিখানির উল্লেখ করেছেন, তা নদীবক্ষের দুই তীরের দুখানি গ্রামের মধ্যে চিরকাল যাতায়াত করে। কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে কবি খেয়া চলাচলের মধ্যে শাশ্বত জীবনপ্রবাহকে লক্ষ করলেন। বহির্বিশ্বের শত উন্মাদনা থেকে বহু যোজন দূরে খেয়াতরির এই চলাচলের মধ্যে কবি জীবনের চিরন্তনতাকে খুঁজে পেলেন।
কবি চিরদিন খেয়া চলাচলের কথা বলেছেন কেন?
‘খেয়া’ কবিতায় খেয়াতরির পারাপারের মাধ্যমে জীবনের চিরন্তন চলনকেই ইঙ্গিত করেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কারণ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন বৈরাগ্যবিমুখ জীবনপ্রীতিতে আচ্ছন্ন, তখন নদীতটে দেখলেন খেয়া নৌকায় যাত্রীদলের যাতায়াত। নদীর দুই তীরের দুই গ্রামের মিলনরেখা যেন সে নির্মাণ করেছে – যা মানুষের জীবনরেখারই নামান্তর।
কোন্ নদীর স্রোতের কথা বলা হয়েছে? তার চলন কীরূপ?
‘খেয়া’ কবিতায় বিচিত্র দুটি গ্রামের মাঝখান দিয়ে নিরন্তর বিরামহীন বয়ে চলা নদীটির স্রোতের কথা এখানে বলা হয়েছে।
নদীর চলন – জীবননদীর রূপকে ব্যবহৃত এই নদী বয়ে চলে চিরদিন, চিরকাল। তার বুকের ওপর দিয়ে পারাপার করে যাত্রীদল। সময় বদলায়, সভ্যতার পরিবর্তন হয়। কিন্তু ইতিহাসের উত্থানপতনে ভরা ঘটনাধারার প্রতি উদাসীন থেকে নদী এগিয়ে চলে অনিবার্য লক্ষ্যে।
নদীস্রোতের প্রসঙ্গ কোন ইঙ্গিত বহন করে?
সুগভীর ব্যঞ্জনায় ঋদ্ধ ‘খেয়া’ কবিতার এই নদীস্রোতের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ জীবনের শাশ্বত প্রবাহকে অবলোকন করলেন, নদীস্রোতের বহমানতায় উঠে এল মানবজীবনের চিরন্তন প্রবাহধারা।
যে ইঙ্গিত বহন করে – নদীবক্ষে বয়ে যাওয়া খেয়াতরি চিরন্তন মানবতার প্রবাহকে গতি দান করেছে। সেই ধারা বয়ে নিয়ে চলেছে নবীন, প্রবীণ যাত্রীদল – স্রোতে নৌকা ভাসিয়ে অব্যাহত রেখেছে তার শাশ্বত চলন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্থ পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘খেয়া’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন