এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান-জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

শ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির জীবন বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো। এই অধ্যায়ের থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Table of Contents

প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন

এন্ডোক্রিনোলজি বলতে কী বোঝ? এন্ডোক্রিন তন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র কাকে বলে?

এন্ডোক্রিনোলজি – অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, নিঃসৃত হরমোন ও তাদের কার্যপদ্ধতি জীববিদ্যার যে শাখায় আলোচিত হয় তাকে এন্ডোক্রিনোলজি বলে।
এন্ডোক্রিন তন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও তা থেকে নিঃসৃত হরমোন নিয়ে গঠিত যে তন্ত্র জীবদেহের রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে, তাকে এন্ডোক্রিন তন্ত্র বা অন্তঃক্ষরা তন্ত্র বলে।

মানুষের শরীরে অবস্থিত অনাল গ্রন্থিগুলির নাম লেখো।

মানুষের প্রধান অনাল গ্রন্থিগুলি হল — 1. পিটুইটারি, 2. পিনিয়াল বডি, 3. থাইরয়েড, 4. প্যারাথাইরয়েড, 5. থাইমাস, 6. অগ্ন্যাশয়, 7. অ্যাড্রেনাল, 8. শুক্রাশয় এবং9. ডিম্বাশয়

হরমোনকে রাসায়নিক দূত হিসেবে গণ্য করা হয় কেন?

হরমোনকে রাসায়নিক দূত হিসেবে গণ্য করা হয়, কারণ-
হরমোন রাসায়নিক প্রকৃতিতে তরল জৈবরাসায়নিক পদার্থ। প্রাণী হরমোন রাসায়নিক প্রকৃতিতে সাধারণত প্রোটিন (বা পলিপেপটাইড), গ্লাইকোপ্রোটিন অথবা স্টেরয়েড।
প্রাণী হরমোন দেহে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে স্বল্পমাত্রায় নিঃসৃত হয়ে রক্তের রক্তরসের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে দূতের মতো নির্দিষ্ট একটি বা একাধিক কার্যকারী অঙ্গে বা অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে। তার ফলে ওই অঙ্গ বা অঞ্চলে নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় ও বিপাকীয় ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

ট্রপিক হরমোন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব হরমোন কোনো একটি অনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়ে অপর অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা দেহের অপর কোনো কোশের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ট্রপিক হরমোন বলে। যেমন — ACTH হরমোন অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অংশকে উদ্দীপিত করে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

স্থানীয় হরমোন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব হরমোন কেবল উৎপত্তিস্থল বা তার কাছাকাছি অঞ্চলে কাজ করে তাদের স্থানীয় হরমোন বলে। যেমন- সিক্রেটিন, গ্যাস্ট্রিন হরমোনগুলি পাকস্থলীতে উৎপন্ন হয়ে সেখানেই কাজ করে।

অগ্ন্যাশয়কে মিশ্র গ্রন্থি বলা হয় কেন?

অগ্ন্যাশয় অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় প্রকার কোশসমষ্টি নিয়ে গঠিত বলে একে মিশ্র গ্রন্থি বলে। অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ থেকে বিভিন্ন হরমোন (যেমন — ইনসুলিন, গ্লুকাগন প্রভৃতি) এবং অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ থেকে বিভিন্ন উৎসেচক (যেমন — ট্রিপসিন, অ্যামাইলেজ, মলটেজ, লাইপেজ ইত্যাদি) নিঃসৃত হয়।

পিটুইটারিকে প্রভুগ্রন্থি বলা হয় কেন?

পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলি একদিকে যেমন দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে অন্যদিকে অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ ও কার্যকারিতাকেও সমানভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থি বা মাস্টার গ্ল্যান্ড (Mastergland) বলে। পিটুইটারি নিঃসৃত ACTH, TSH, GTH যথাক্রমে অ্যাড্রেনাল, থাইরয়েড এবং গোনাডের (শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়) ক্ষরণ ও কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান ও এর থেকে নিঃসৃত একটি হরমোনের নাম লেখো।

অবস্থান – থাইরয়েড গ্রন্থি গলদেশে ল্যারিংক্সের নীচে ট্র্যাকিয়ার দু-পাশে একটি করে মোট দুটি খণ্ডরূপে অবস্থান করে। এই খণ্ডক দুটি ইস্থমাস নামক যোজক দ্বারা যুক্ত থাকে।
নিঃসৃত হরমোন এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একটি হরমোনের নাম হল থাইরক্সিন
থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান ও এর থেকে নিঃসৃত একটি হরমোনের নাম লেখো।

প্রাণী হরমোনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখো।

প্রাণী হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল —
1. এগুলি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা কোশসমষ্টি থেকে ক্ষরিত হয়।
2. এগুলি সাধারণত প্রোটিন, পেপটাইড, গ্লাইকোপ্রোটিন বা স্টেরয়েডধর্মী।
3. এই হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয় ও লক্ষ্য অঙ্গ বা কার্যকারী অঙ্গে পৌঁছোয়।
4. প্রাণীদেহে হরমোন উৎপত্তিস্থল থেকে রাসায়নিক বার্তা লক্ষ্য অঙ্গে নিয়ে যায়, তাই একে রাসায়নিক বার্তাবাহক বলে।

একটি অ্যামিনোধর্মী ও আয়োডিনযুক্ত হরমোনের নাম এবং এর কাজ উল্লেখ করো।

নাম একটি অ্যামিনোধর্মী ও আয়োডিনযুক্ত হরমোন হল থাইরক্সিন
কাজ – থাইরক্সিন হরমোন BMR ও অন্যান্য বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

গলগণ্ড কী? এটি কয় প্রকার?

গলগণ্ড – থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটলে সেই অবস্থাকে গলগণ্ড বলে। সাধারণত এই ধরনের স্ফীতি ব্যাথা- বেদনাহীন হয়। থাইরক্সিনের কম ক্ষরণ এবং অধিক ক্ষরণ — উভয়ের ফলেই গলগণ্ড হতে পারে।
গলগণ্ডের প্রকারভেদ – গলগণ্ড সাধারণত দুই প্রকার — 1. সাধারণ গলগণ্ড বা সিম্পল গয়টার ও 2. বহিঃচক্ষু গলগণ্ড বা এক্সপথ্যালমিক গয়টার।

সাধারণ গলগণ্ডের উপসর্গগুলি লেখো।

সাধারণ গলগণ্ডের উপসর্গ বা লক্ষণগুলি হল —
1.থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে ফলে গ্রীবা অঞ্চল স্ফীত হয়ে যায়।
2. খাদ্য গলাধঃকরণে অসুবিধা হয়।
3. থাইরয়েড গ্রন্থি বড়ো হয়ে যাওয়ায় এই গ্রন্থির চাপে শ্বাসকার্যে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
সাধারণ গলগণ্ডের উপসর্গগুলি লেখো ।

সাধারণ গলগণ্ডের কারণগুলি লেখো।

সাধারণ গলগণ্ডের কারণগুলি হল —
1. থাইরক্সিন হরমোনের কম ক্ষরণের ফলে মানবদেহে এই রোগ হয়। থাইরক্সিনের মৌলিক উপাদান হল আয়োডিন। মানবদেহে আয়োডিনের অভাবে এই গলগণ্ড হয়। আয়োডিনের অভাবে থাইরয়েড
গ্রন্থির কোশগুলি প্রয়োজন মতো থাইরক্সিন সংশ্লেষ করতে পারে না। থাইরক্সিন সংশ্লেষের নিষ্ফল প্রচেষ্টায় কোশগুলি আকার-আয়তনে বৃদ্ধি পায়। তার ফলেই এই গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে।
2. জিনগত ত্রুটির ফলে T3 ও T4 ক্ষরণ কম হলে সাধারণ গলগণ্ড হতে পারে।

বহিঃচক্ষু গলগণ্ড রোগের কারণগুলি লেখো।

বহিঃচক্ষু গলগণ্ডের প্রধান কারণ হল থাইরক্সিনের অধিক ক্ষরণ। এক্ষেত্রে TSH-এর নিয়ন্ত্রণাধীনে থাইরয়েড গ্রন্থির কোশগুলি আকার-আয়তনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ফলে কোশগুলি থেকে থাইরক্সিন সংশ্লেষ ও ক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

থাইরয়েড গ্রন্থির স্বল্প ক্ষরণে ও অধিক ক্ষরণে কী রোগ হয়?

স্বল্প ক্ষরণ – থাইরয়েড গ্রন্থির স্বল্প ক্ষরণে শিশুদের ক্রেটিনিজম ও প্রাপ্তবয়স্কদের মিক্সিডিমা সাধারণ গলগণ্ড রোগ হয়।
অধিক ক্ষরণ – থাইরয়েড গ্রন্থির অধিক ক্ষরণে এক্সপথ্যালমিক গয়টার রোগ হয়।

হরমোন উৎপাদক গ্রন্থিকে অনাল গ্রন্থি বলে কেন?

হরমোন উৎপাদক গ্রন্থির নিজস্ব কোনো নালী থাকে না। এরা ক্ষরিত পদার্থকে (হরমোনকে) সরাসরি গ্রন্থির ভিতরের কলারসে বা রক্তপ্রবাহে মুক্ত করে। তাই হরমোন উৎপাদক গ্রন্থিকে অনাল গ্রন্থি বলে।

বামনত্ব ও অতিকায়ত্ব রোগ কখন হয়?

অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সোমাটোট্রপিক হরমোন (STH) বা গ্রোথ হরমোন (GH)-এর কম ক্ষরণের ফলে বামনত্ব বা ডোয়ারফিজম রোগ হয়। আবার, এই হরমোনের অধিক ক্ষরণে অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম রোগ দেখা যায়।

ইনসুলিন কোথা থেকে ক্ষরিত হয়? এর একটি কাজ উল্লেখ করো।

ক্ষরণ স্থান ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির আইলেটস্ অফল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর বিটা (β) কোশ থেকে ক্ষরিত হয়। কাজ কলাকোশে গ্লুকোজ বিশোষণের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখা ইনসুলিনের প্রধান কাজ।

ইনসুলিন ও গ্লুকাগন পরস্পর বিপরীত কাজ করে- যুক্তি দাও।

রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে ইনসুলিন তা হ্রাস করে। আবার, রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে গ্লুকাগন তার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এইভাবে এই দুই হরমোন পরস্পর বিপরীত কাজ করে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী দুটি হরমোন কী কী?এদের উৎস লেখো।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী দুটি হরমোন হল ইনসুলিন ও গ্লুকাগন।
ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের উৎস –
1. অগ্ন্যাশয়ের হরমোনের উৎস।
2. অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স-এর আলফা কোশ হল গ্লুকাগন হরমোনের উৎস।
 রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী দুটি হরমোন কী কী এদের উৎস লেখো।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া কাকে বলে?

হাইপোগ্লাইসেমিয়া – রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক (80– 120 mg শর্করা প্রতি 100 ml রক্ত)-এর চেয়ে অনেক কমে গেলে সেই অবস্থাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। এক্ষেত্রে 100 ml রক্তে শর্করার মাত্রা 70 mg-এর কম হয়।
হাইপারগ্লাইসেমিয়া – স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি 100 ml রক্তে শর্করার পরিমাণ 80mg 120mg। কোনো কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে গেলে সেই অবস্থাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে। এক্ষেত্রে প্রতি 100 ml রক্তে শর্করার মাত্রা 200mg-এর বেশি হলে তবে সেই অবস্থাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে।

অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করো।

1. মানুষ ও অন্যান্য উন্নত প্রাণীদেহে অবস্থিত অন্তঃক্ষরা |গ্রন্থি নালীবিহীন অর্থাৎ ক্ষরণ পদার্থ (secretory products)নির্গমনের জন্য কোনো নালী থাকে না।
2. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন ধরনের তরল জৈবরাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়, যেগুলিকে সাধারণভাবে হরমোন বলে।
3. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি রক্তজালক সমৃদ্ধ হয়। কারণ, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন,সংলগ্ন রক্তজালকের রক্তে মুক্ত হয় ও রক্তের রক্তরসের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে কার্যকরী অঙ্গে পৌঁছোয়।অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করো।

কোন্ হরমোনকে কী কারণে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে?

থাইরয়েড গ্রন্থিতে অবস্থিত ফলিকলের কোশসমূহ থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন টেট্রা আয়োডোথাইরোনিন (T4) ও ট্রাই- আয়োডোথাইরোনিন নামক হরমোনগুলিকে ক্যালোরিজেনিক হরমোন বলে। কারণ কলাকোশে BMR এবং কার্বোহাইড্রেটের জারণ ও শক্তির মুক্তি ত্বরান্বিত করে।

কোন্ হরমোনকে কী কারণে হাইপারগ্নাইসেমিয়া হরমোন বলা হয়?

গ্লুকাগন নামক একপ্রকার পলিপেপটাইড হরমোনকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া হরমোন বলা হয়। কারণ, এই হরমোনটি প্রধানত যকৃৎ কোশে সম্বিত গ্লাইকোজেনকে গ্লুকোজে ভেঙে দেয় তথা গ্লাইকোজেনোলাইসিস প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, তার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

টেস্টোস্টেরনকে অ্যান্ড্রোজেন বলা হয় কেন?

টেস্টোস্টেরন নামক যৌন স্টেরয়েড হরমোন পুরুষদেহে বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন গৌণ যৌন লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, শুক্রাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া (স্পার্মাটোজেনেসিস) ত্বরান্বিত করে ও পুরুষদের স্বাভাবিক যৌন আচরণ (male libido) নিয়ন্ত্রণ করে, তাই একে অ্যান্ড্রোজেন (গ্রিক শব্দ andro যার অর্থ masculine অর্থাৎ পুরুষোচিত) হিসেবে গণ্য করা হয়।

ডায়াবেটিস মেলিটাস কী?

ইনসুলিন হরমোনের অধ্যক্ষরণের ফলে কলাকোশে গ্লুকোজের শোষণ ও জারণ হ্রাস পায় এবং এর কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বৃদ্ধি পেলে দেহে যে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তাকে ডায়াবেটিস মেলিটাস বলে।

গ্লাইকোসুরিয়া কী?

মানুষের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বৃদ্ধি পেয়ে, প্রতি 100 ml রক্তে 180 mg এর বেশি হলে মূত্রের মাধ্যমে অধিকমাত্রায় গ্লুকোজ দেহের বাইরে নির্গত হয়। একে গ্লাইকোসুরিয়া বলে।

অগ্র ও পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন ও তাদের কার্যস্থল লেখো।

অগ্র পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন
1. ACTH – অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে।
2. TSH –থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে।
3. GTH – জননগ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে।
4. LTH – স্তনগ্রন্থির ওপর ক্রিয়া করে।
5. GH – অস্থি, তরুণাস্থি ও পেশির ওপর ক্রিয়া করে।
পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন – 1. ADH — বৃক্কের ওপর ক্রিয়া করে। 2. অক্সিটোসিন — জরায়ুর ওপর ক্রিয়া করে।
 অগ্র ও পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত হরমোন ও তাদের কার্যস্থল লেখো।

প্রাণীদেহে হরমোনের দুটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে লেখো।

1. পিটুইটারি নির্যাস প্রয়োগ করে মাছের প্রণোদিত প্রজনন ঘটানো হয়।
2. হাঁপানির সময়ে শ্বাসকষ্টের দ্রুত ও অস্থায়ী উপশমে অ্যাড্রেনালিন ব্যবহৃত হয়।

ADH-এর সম্পূর্ণ নাম, উৎস এবং কাজ উল্লেখ করো।

সম্পূর্ণ নাম – ADH-এর সম্পূর্ণ নাম অ্যান্টি-ডাইইউরেটিক হরমোন।
উৎস পশ্চাৎ পিটুইটারি।
কাজ – বৃক্কীয় নালিকার দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা অংশে জলের পুনঃশোষণ বাড়িয়ে মূত্রে জলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

ডায়াবেটিস মেলিটাস (মধুমেহ) ও ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (বহুমূত্র রোগ কী কারণে হয়?)

ডায়াবেটিস মেলিটাস – ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগ ইনসুলিনের কম ক্ষরণের ফলে হয়।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এই রোগ অ্যান্টি-ডাইইউরেটিক হরমোন (ADH)-এর কম ক্ষরণের ফলে হয়।

অ্যাক্রোমেগালি কী?

পরিণত বয়সে পিটুইটারি থেকে STH-এর অধিক ক্ষরণের ফলে মানুষের কপাল, নাক, চিবুক, নীচের চোয়াল, আঙুল ইত্যাদির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির দরুন মানুষকে গোরিলার মতো দেখায়। এইসব লক্ষণযুক্ত রোগকে অ্যাক্রোমেগ্যালি বলে।

অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কতগুলি অংশ এবং কী কী?

অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির দুটি অংশ। বাইরের অংশের নাম অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স এবং ভিতরের অংশের নাম অ্যাড্রেনাল মেডালা
অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কতগুলি অংশ এবং কী কী

অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিনের দুটি বিপরীত | ক্রিয়া উল্লেখ করো।

1. অ্যাড্রেনালিন হরমোন হৃৎপিণ্ড থেকে রক্তনির্গমন মাত্রা বা হার্দ-উৎপাদ বৃদ্ধি করে পক্ষান্তরে নর-অ্যাড্রেনালিন হরমোনটি হার্দ-উৎপাদ হ্রাস করে।
2. অ্যাড্রেনালিন হরমোন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ হ্রাস করে। পক্ষান্তরে নর-অ্যাড্রেনালিন ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।

অ্যাড্রেনালিন ও নর-অ্যাড্রেনালিনের দুটি একই প্রকার কার্য উল্লেখ করো।

1. উভয় হরমোনই সিস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
2. হৃৎপিণ্ড সংকোচনের বল উভয় হরমোনই বৃদ্ধি করে।

হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থির প্রভু বলা হয় কেন?

হাইপোথ্যালামাসে উৎপন্ন নিউরোহরমোনগুলি অগ্র পিটুইটারিতে এসে তার অন্তঃক্ষরা কোশের ক্ষরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। উল্লেখ্য যে পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভুগ্রন্থি বলা হয়। প্রভুগ্রন্থির ওপরে হাইপোথ্যালামাস ক্রিয়াশীল হয় বলে একে প্রভুগ্রন্থির প্রভু বলা হয়ে থাকে।

হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত দুটি হরমোনের নাম করো যারা অগ্র পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের কাজ লেখো।

কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন ও থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন হল হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত দুটি হরমোন যা অগ্র পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
কাজ – কর্টিকোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (CRH) অগ্র পিটুইটারি থেকে ACTH হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (TRH) অগ্র পিটুইটারি থেকে TSH হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

হাইপোথ্যালামাস নিঃসৃত দুটি হরমোনের নাম উল্লেখ করো যারা পশ্চাৎ পিটুইটারিতে জমা হয় ও নিঃসৃত হয়। হরমোন দুটির কাজ লেখো।

ADH ও অক্সিটোসিন হরমোন দুটি হাইপোথ্যালামাস থেকে ক্ষরিত হয় এবং পশ্চাৎ পিটুইটারিতে জমা হয়ে নিঃসৃত হয়।
কাজ –

1. ADH হরমোনটি নেফ্রনের দূরবর্তী সংবর্ত নালিকায় জলের পুনঃবিশোষণে সাহায্য করে।
2. অক্সিটোসিন হরমোনটি জরায়ুর অনৈচ্ছিক পেশির সংকোচন ঘটিয়ে প্রসবে সাহায্য করে।

নিউরোহরমোন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

মানব মস্তিষ্কে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস অংশের নিউরোসিক্রেটরি কোশ (নিউরোন) থেকে সংশ্লেষিত ও ক্ষরিত উপাদানকে নিউরোহরমোন বলে।
উদাহরণ – ADH, গ্রোথ হরমোন রিলিজিং হরমোন (GHRH)

ডিম্বাশয় বা ওভারিকে মিশ্র গ্রন্থি বলে কেন?

ডিম্বাশয় বা ওভারিকে মিশ্রগ্রন্থি বলে কারণ এই গ্রন্থি থেকে অ্যাসিড ফসফাটেজ নামক উৎসেচক (বহিঃক্ষরা ক্রিয়া) এবং ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন (অন্তঃক্ষরা ক্রিয়া) নিঃসৃত হয়। তাই একে মিশ্র গ্রন্থি বলে।
ডিম্বাশয় বা ওভারিকে মিশ্র গ্রন্থি বলে কেন

নর-অ্যাড্রেনালিন-এর কাজ লেখো।

নর-অ্যাড্রেনালিন-এর কাজগুলি হল —
1. হৃৎস্পন্দন হার সামান্য বৃদ্ধি করে।
2. রক্তচাপ বাড়ানো।
3. রক্তে শর্করা ও মুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিডের নিঃসরণ বৃদ্ধি করা।
4. দেহের রক্তবাহের পেশির সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করা।

পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলির নাম লেখো।

পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলির নাম হল —
1. অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন বা ACTH
2. সোমাটোট্রপিক হরমোন বা STH
3. থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন বা TSH
4. প্রোল্যাকটিন
5. গোনাডোট্রপিক হরমোন বা GTH
গোনাডোট্রপিক হরমোন আবার তিন প্রকার —
1. ইনটারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন বা ICSH
2. ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন বা FSH
3. লিউটিনাইজিং হরমোন বা LH

জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া। এটি জীবের বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রাণীদেহে সাড়া প্রদানের মাধ্যমে জীব তার পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। হরমোন হল বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা শরীরের বিভিন্ন অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের এই অধ্যায়টি শিক্ষার্থীদের জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ের ধারণা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে। এই জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে।

Share via:

মন্তব্য করুন