এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বনভূমির প্রভাব লেখো। ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের সমস্যাগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বনভূমির প্রভাব লেখো।
ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বনভূমির প্রভাব –
ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বনভূমির প্রভাব নিম্নরূপ –
- ভূমিক্ষয় রোধ – বনভূমির বৃক্ষগুলি শিকড়ের দ্বারা মৃত্তিকাকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে বলে ভূমিক্ষয় কম হয়।
- জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক – বৃষ্টিপাত সংঘটন ছাড়াও বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানগুলির ভারসাম্য বজায় রাখতে বনভূমি সাহায্য করে বলে বনভূমিকে প্রাকৃতিক ছাতা বলে।
- প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য – বনভূমি পশুপাখি ও জীবজন্তুর আবাসস্থল রূপে পরিচিত। অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের মধ্যে আনুপাতিক ভারসাম্য রক্ষা করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে।
- মরুভূমির প্রসারণ রোধ – মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতিপথে গাছপালা বা বনভূমি থাকলে বায়ুপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং মরুভূমির প্রসারণ রোধ হয়।
ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের সমস্যাগুলি লেখো।
ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বনভূমির প্রভাব –
ভারতের বনভূমি সংরক্ষণের উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলি হল নিম্নরূপ –
- দাবানল – অনেক ক্ষেত্রে অরণ্যের শুকনো ডালপালা ও গাছে গাছে ঘর্ষণ লেগে দাবানলের সৃষ্টি হয়। এর ফলে অসংখ্য বনভূমি ধ্বংস হয়। ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের অনেক অরণ্য এইভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
- সরকারের আর্থিক অক্ষমতা – নতুন বনভূমি গড়ে তুলে তাকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয় বলে ভারতের মতো অনুন্নত দেশের পক্ষে তা সম্ভব হয় না।
- কৃষিজমির সম্প্রসারণ – ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে বনভূমি ধ্বংস করে কৃষিজমি সম্প্রসারণ করতে হয়।
- শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ – কাগজশিল্প, রেশমশিল্প, কাষ্ঠশিল্প প্রভৃতি বহুলাংশে বনভূমির ওপর নির্ভরশীল। বনভূমি সংরক্ষণের নিয়মগুলি কঠোরভাবে অনুসরণ করলে ওই সমস্ত শিল্পের কাঁচামাল জোগানে বাধার সৃষ্টি হবে। তাই শিল্পের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গিয়ে বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
- পশুপালনে অসুবিধা – যে সমস্ত অঞ্চলে তৃণভূমির আয়তন কম সেখানে বাধ্য হয়েই বনভূমিতে পশুচারণ করতে হয়। গুজরাটে পশুপালনের উন্নতির জন্য গির সংরক্ষিত বনভূমিতে পশুচারণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বনভূমি কীভাবে ভূমিক্ষয় রোধ করে?
বনভূমির গাছপালার শিকড় মাটিকে শক্তভাবে ধরে রাখে, যা বৃষ্টিপাত ও বায়ুপ্রবাহের কারণে মাটির ক্ষয় রোধ করে।
বনভূমি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে কীভাবে সাহায্য করে?
বনভূমি কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়া, এটি বৃষ্টিপাতেও সাহায্য করে।
বনভূমি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় কী ভূমিকা পালন করে?
বনভূমি উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে এবং খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখে। এটি অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্যও রক্ষা করে।
বনভূমি মরুভূমির প্রসারণ রোধে কীভাবে সাহায্য করে?
বনভূমি বায়ুপ্রবাহকে বাধা দেয় এবং মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে, ফলে মরুভূমির বিস্তার কমে।
ভারতে বনভূমি হ্রাসের প্রধান কারণগুলি কী কী?
1. কৃষিজমি সম্প্রসারণ।
2. শিল্পায়ন ও নগরায়ণ।
3. অবৈধ গাছ কাটা।
4. দাবানল।
5. পশুচারণ।
বনভূমি সংরক্ষণের জন্য ভারত সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
1. বন সংরক্ষণ আইন (1980)।
2. সামাজিক বনায়ন প্রকল্প।
3. জাতীয় বন নীতি (1988)।
4. বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ।
বনভূমি ধ্বংসের ফলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
1. ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি।
2. জলবায়ু পরিবর্তন।
3. বন্য প্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস।
4. বায়ুদূষণ বৃদ্ধি।
সাধারণ মানুষ কীভাবে বনভূমি সংরক্ষণে সাহায্য করতে পারে?
1. বেশি করে গাছ লাগানো।
2. কাগজ, কাঠের অপচয় কমানো।
3. বনাঞ্চলে অগ্নিসংযোগ এড়ানো।
4. বন সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়ানো।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বনভূমির প্রভাব লেখো। ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের সমস্যাগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন