এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইক্ষু চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ইক্ষু চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, ভারতের ইক্ষুচাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
ইক্ষু চাষের অনুকূল অবস্থা –
ইক্ষু চাষের অনুকূল অবস্থাগুলিকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- প্রাকৃতিক পরিবেশ।
- অপ্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক পরিবেশ।
প্রাকৃতিক পরিবেশ –
- উষ্ণতা – ইক্ষু উষ্ণমণ্ডলের ফসল হওয়ায়, ইক্ষু চাষে গড় মাসিক 21° সেলসিয়াস থেকে 27° সেলসিয়াস উষ্ণতার প্রয়োজন হয়। বেশি উষ্ণতা যেমন ইক্ষু গাছের ক্ষতি করে, তেমনি 20° সেলসিয়াস -এর কম উষ্ণতা ইক্ষু গাছের পক্ষে ক্ষতিকারক।
- বৃষ্টিপাত – ইক্ষু উৎপাদনের জন্য বার্ষিক 125-200 সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। আবার বেশি বৃষ্টিপাতে ইক্ষুর রসের মিষ্টতা কমে যায়। সামুদ্রিক আবহাওয়াতে ইক্ষুর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- মৃত্তিকা – ইক্ষু চাষের জন্য চুন ও লবণমিশ্রিত উর্বর দোআঁশ মাটি আদর্শ। এই কারণে সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে ইক্ষুর চাষ ভালো হয়।
- ভূমির প্রকৃতি – সামান্য ঢালযুক্ত সমতলভূমিই ইক্ষু চাষের পক্ষে ভালো। কারণ ইক্ষু গাছের গোড়ায় জল জমলে তা ইক্ষু গাছের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়।
- তুহিন ও কুয়াশা – তুহিন ও কুয়াশা দুইই ইক্ষু চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। ভারত ক্রান্তীয় মন্ডলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানকার সমভূমি অঞ্চলে তুষারপাত হয় না। শীতের আগেই ফসল তোলা হয় বলে ইক্ষু চাষ কুয়াশার প্রকোপ থেকেও রক্ষা পায়।

অপ্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক পরিবেশ –
- শ্রমিক – ইক্ষু চারারোপণ, পরিচর্যা, ফসল কাটার জন্য পর্যাপ্ত সুলভশ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই কারণে ঘন বসতিপূর্ণ অঞ্চল ইক্ষু চাষের সহায়ক পরিবেশ।
- মূলধন – ইক্ষু চাষে অতি দ্রুত জমির উর্বরতা হ্রাস পায় বলে বারংবার সার প্রয়োগ করতে হয়। এ ছাড়া রোগ প্রতিরোধ ও প্রয়োজনে জলসেচেরও ব্যবস্থা করতে হয়। এই কারণে যথেষ্ট মূলধনের প্রয়োজন হয়।
- পরিবহণ – ইক্ষু উৎপাদক অঞ্চলে সুন্দর পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। কারণ ইক্ষু কাটার 24 ঘণ্টার মধ্যে তা থেকে রস নিষ্কাশন না করলে রসের পরিমাণ হ্রাস পায়। এই কারণেই ইক্ষু কলগুলি উৎপাদন ক্ষেত্রের নিকটেই গড়ে ওঠে।
- বাজার বা চাহিদা – ইক্ষু গুদামজাত করে রাখা যায় না, কাটার একদিন পর থেকেই এর রসের পরিমাণ কমতে থাকে। এই কারণে ইক্ষুর জন্য পর্যাপ্ত নির্ভরযোগ্য বাজার থাকা প্রয়োজন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ইক্ষু চাষের জন্য আদর্শ উষ্ণতা কত?
ইক্ষু চাষের জন্য গড় মাসিক উষ্ণতা 21°C থেকে 27°C প্রয়োজন। 20°C -এর নিচে উষ্ণতা ইক্ষুর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং অত্যধিক উষ্ণতাও ক্ষতিকর।
ইক্ষু চাষের জন্য কত বৃষ্টিপাত প্রয়োজন?
বার্ষিক 125-200 সেমি বৃষ্টিপাত ইক্ষু চাষের জন্য আদর্শ। তবে অতিবৃষ্টিতে রসের মিষ্টতা কমে যায়।
ইক্ষু চাষের জন্য কোন ধরনের মাটি উপযুক্ত?
চুন ও লবণ মিশ্রিত উর্বর দোআঁশ মাটি ইক্ষু চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। নদী অববাহিকা ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার মাটি ইক্ষু চাষের জন্য উপযোগী।
ইক্ষু চাষের জন্য ভূমির প্রকৃতি কেমন হওয়া উচিত?
সামান্য ঢালযুক্ত সমতল ভূমি ইক্ষু চাষের জন্য আদর্শ, কারণ সমতল ভূমিতে জল জমে গেলে ইক্ষু গাছের ক্ষতি হয়।
তুষারপাত ও কুয়াশা ইক্ষু চাষে কী প্রভাব ফেলে?
তুষারপাত ও ঘন কুয়াশা ইক্ষু চাষের জন্য ক্ষতিকর। তবে ভারতের ক্রান্তীয় অঞ্চলে তুষারপাত না হওয়ায় এখানে ইক্ষু চাষ ভালো হয়।
ইক্ষু চাষের জন্য কী ধরনের অর্থনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন?
1. শ্রমিক – পর্যাপ্ত সুলভ শ্রমিকের প্রয়োজন (চারা রোপণ, পরিচর্যা ও ফসল কাটার জন্য)।
2. মূলধন – নিয়মিত সার প্রয়োগ, সেচ ও রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন।
3. পরিবহণ – ইক্ষু কাটার 24 ঘণ্টার মধ্যে কারখানায় নিয়ে যেতে হয়, তাই উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা প্রয়োজন।
4. বাজার – ইক্ষু দ্রুত নষ্ট হয়, তাই নির্ভরযোগ্য বাজার প্রয়োজন।
ভারতে ইক্ষু চাষের প্রধান রাজ্যগুলি কী কী?
ভারতের প্রধান ইক্ষু উৎপাদক রাজ্যগুলি হলো —
1. উত্তরপ্রদেশ (সবচেয়ে বেশি উৎপাদন)।
2. মহারাষ্ট্র।
3. কর্ণাটক।
4. তামিলনাড়ু।
5. পশ্চিমবঙ্গ।
6. বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশ।
ইক্ষু থেকে চিনি উৎপাদনের জন্য কী ধরনের শিল্প প্রয়োজন?
ইক্ষু থেকে চিনি উৎপাদনের জন্য চিনি কল (Sugar Mill) প্রয়োজন, যা ইক্ষু উৎপাদন ক্ষেত্রের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়া দরকার।
ইক্ষু চাষে সেচের প্রয়োজন হয় কেন?
বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন থাকলে সেচের ব্যবস্থা প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে।
ইক্ষু চাষের জন্য কোন জলবায়ু অঞ্চল উপযুক্ত?
ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ু (উষ্ণ ও আর্দ্র) ইক্ষু চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইক্ষু চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন