এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলি আলোচনা করো।
অথবা, কৃষিজ ফসলের স্বল্প উৎপাদনশীলতার কারণ কী?
ভারতের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় কৃষি পদ্ধতি বর্তমানে প্রাচীন ও অনুন্নত। ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলি হল –
হেক্টর প্রতি শস্যের কম উৎপাদন –
ভারতীয় কৃষির একটি প্রধান সমস্যা হল হেক্টর প্রতি শস্যের উৎপাদন অনেক কম। এই অবস্থার জন্য যথাসময়ে পর্যাপ্ত জলের অভাব, জমির উর্বরতা শক্তির অভাব, সার ও উৎকৃষ্ট বীজের অভাব, কৃষিজমি বণ্টনের অব্যবস্থা প্রধানত দায়ী।
ক্ষুদ্র ও অখণ্ডিত কৃষি জোত –
ভারতে কৃষিজোতগুলির আয়তন ছোটো ও অখণ্ডিত হওয়ায় জনপ্রতি ও পরিবার পিছু জমির পরিমাণ অত্যন্ত কম, যথা – 0.42 ও 2.06 হেক্টর।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ –
মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনার ফলে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয় কৃষিকাজের যথেষ্ট ক্ষতি করে।
প্রাচীন পদ্ধতি –
ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রচলন সম্পূর্ণ রূপে বাস্তবায়িত হয়নি।
ভূমিক্ষয় –
যথেচ্ছভাবে বনভূমি ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গাছের অভাবে মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। ভূমিক্ষয়ের ফলে ভারতে প্রায় 1.2 কোটি হেক্টর জমি কৃষির অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সীমিত জলসেচ –
পৃথিবীর সর্বাধিক সেচসেবিত জমি ভারতে অবস্থিত হলেও পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ জমিতে জলসেচের সুযোগ সম্প্রসারিত হয়নি।
শিক্ষা প্রসার –
ভারতীয় কৃষকদের শিক্ষার অভাবের ফলে বর্তমান বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকার্য সম্বন্ধে অর্থাৎ কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, যথাযথ পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, কীটনাশক প্রদান প্রভৃতি বিষয়ে ধারণা না থাকার ফলে উৎপাদন ও চাষগত বিভিন্ন দিকে সমস্যা দেখা দেয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতীয় কৃষির প্রধান সমস্যাগুলি কী কী?
ভারতীয় কৃষির প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে —
1. হেক্টর প্রতি শস্যের কম উৎপাদন।
2. ক্ষুদ্র ও অখণ্ডিত কৃষিজমি।
3. প্রাকৃতিক দুর্যোগ (খরা, বন্যা, অনাবৃষ্টি)।
4. প্রাচীন কৃষি পদ্ধতি।
5. ভূমিক্ষয় ও মাটির উর্বরতা হ্রাস।
6. সীমিত জলসেচ সুবিধা।
7. কৃষকদের শিক্ষা ও প্রযুক্তির অভাব।
ভারতের কৃষিজ ফসলের স্বল্প উৎপাদনশীলতার কারণ কী?
স্বল্প উৎপাদনশীলতার কারণগুলি হল —
1. জলের অভাব – অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও সেচের অভাব।
2. মাটির অবনতি – রাসায়নিক সারের অত্যধিক ব্যবহার ও জৈব পদার্থের অভাব।
3. প্রাচীন পদ্ধতি – আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির অভাব।
4. ক্ষুদ্র জমি – জমির বিভাজনের ফলে যান্ত্রিকীকরণ কঠিন।
5. অপর্যাপ্ত ঋণ ও বাজার সুবিধা – কৃষকরা আধুনিক উপকরণ কিনতে অক্ষম।
ক্ষুদ্র ও অখণ্ডিত কৃষিজমি কীভাবে উৎপাদনশীলতা প্রভাবিত করে?
ক্ষুদ্র ও অখণ্ডিত কৃষিজমি উৎপাদনশীলতা নিম্নলিখিতভাবে প্রভাবিত করে –
1. ছোট জমিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা কঠিন হয়।
2. ফসলের বৈচিত্র্য কম থাকে।
3. উৎপাদন ব্যয় বেশি হয় এবং লাভ কম হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কীভাবে ভারতীয় কৃষিকে প্রভাবিত করে?
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভারতীয় কৃষিকে নিম্নলিখিতভাবে প্রভাবিত করে –
1. খরার ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যায় এবং মাটির আর্দ্রতা হারায়।
2. বন্যার ফলে ফসল নষ্ট হয় এবং মাটির উর্বরতা কমে।
3. অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির ফলে ফসলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
ভারতের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কম কেন?
ভারতের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কম হয় কারণ –
1. কৃষকদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা।
2. প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব।
3. গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের অভাব।
ভূমিক্ষয় কীভাবে কৃষিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে?
ভূমিক্ষয় কৃষিকে নিম্নলিখিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে –
1. মাটির উর্বর স্তর ধ্বংস হয়।
2. জমির জলধারণ ক্ষমতা কমে।
3. বন্যা ও মরুকরণের ঝুঁকি বাড়ে।
জলসেচের সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
জলসেচের সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায়গুলি হলো –
1. ড্রিপ ও স্প্রিংকলার সেচ পদ্ধতি চালু করা।
2. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ (রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং)।
3. নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন।
কৃষকদের শিক্ষার অভাব কীভাবে কৃষিকে প্রভাবিত করে?
কৃষকদের শিক্ষার অভাব কৃষিকে নিম্নলিখিতভাবে প্রভাবিত করে –
1. আধুনিক চাষ পদ্ধতি, সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞতা।
2. সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও ঋণ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।
3. বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা।
ভারতের কৃষির উন্নয়নের জন্য কী করা উচিত?
ভারতের কৃষির উন্নয়নের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি করা উচিত –
1. কৃষি যান্ত্রিকীকরণ – ট্র্যাক্টর, হার্ভেস্টার ব্যবহার বৃদ্ধি।
2. মৃত্তিকা ও জল সংরক্ষণ – জৈব কৃষি ও জলসেচ ব্যবস্থা উন্নত করা।
3. কৃষকদের প্রশিক্ষণ – আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া।
4. বাজার সুবিধা – MSP (ন্যূনতম সমর্থন মূল্য) নিশ্চিত করা।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন