এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে আখ চাষের সমস্যা ও সমাধানগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতে আখ চাষের সমস্যা ও সমাধানগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভারতে আখ চাষের সমস্যা ও সমাধান –
বিষয় | আখ চাষের সমস্যা | সমস্যার সমাধান/গৃহীত ব্যবস্থা |
উচ্চমানের আখের অভাব | ভারতে চাষ হওয়া উচ্চমানের আখের অভাব রয়েছে। আখগুলি থেকে প্রাপ্ত রসের পরিমাণ অনেক কম। | উচ্চমানের আখের উৎপাদনের জন্য Indian Central Sugarcane Committee গবেষণা চালাচ্ছে। |
হেক্টর প্রতি স্বল্প উৎপাদন | জাভা, কিউবা প্রভৃতি দেশের তুলনায় ভারতে হেক্টর প্রতি আখের উৎপাদন অনেক কম। প্রতি হেক্টরে মাত্র 58.99 টন আখ উৎপাদিত হয়। | আখের উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, জলসেচের প্রসার ও সার দেওয়া প্রভৃতি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। |
গুড়ের উৎপাদন বৃদ্ধি | গুড়ের উৎপাদন ব্যয় কম হয় বলে ভারতের দরিদ্র আখচাষিরা আখের রস থেকে গুড়ের উৎপাদন বেশি করে। | আখচাষিরা যাতে আখচাষে উৎসাহ পায় তার জন্য কারখানা স্থাপন, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য অর্থের জোগানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। |
পর্যাপ্ত সারের অভাব | নিরক্ষরতা ও পুঁজির অভাবের জন্য সারের সঠিক ব্যবহার ও উৎকৃষ্ট সারের ব্যবহার প্রায়শই হয় না। | আখ চাষিদের সারের ব্যবহারবিধি, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। |
অন্যান্য ফসল চাষে আগ্রহী | দক্ষিণ ভারতে হেক্টর প্রতি আখের উৎপাদন কম হওয়ায় চাষিরা আখ চাষে উৎসাহ দেখায় না। অন্যান্য ফসল চাষে আগ্রহ দেখায়। | দক্ষিণ ভারতের চাষিরা যাতে আখচাষে আগ্রহ দেখায় তার জন্য তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে জলসেচের প্রসার ঘটানো হচ্ছে। সমবায় প্রথায় আখ চাষ করা হচ্ছে। |
আখের বাণিজ্যে সীমাবদ্ধতা | আখের বাণিজ্য স্থানীয় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকায় চাষিরা আখ মালিকদের কাছে খুব অল্প দামে আখ বিক্রি করতে বাধ্য হয়। | আখের বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটানো ও সমবায় প্রথার মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে। |
আখের ছিবড়ের বিকল্প ব্যবহার | আখের ছিবড়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে চাষিরা ভালো দাম পায় না। | আখের ছিবড়াকে পুনর্ব্যহার যোগ্য করে Reuse করে বোর্ড হিসেবে ব্যবহার করলে ভালো দাম পাবে চাষিরা। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতে আখ চাষের প্রধান সমস্যাগুলি কী কী?
ভারতে আখ চাষের প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে —
1. উচ্চমানের আখের অভাব।
2. হেক্টর প্রতি কম উৎপাদন।
3. গুড়ের উৎপাদন বৃদ্ধি।
4. সারের সঠিক ব্যবহারের অভাব।
5. দক্ষিণ ভারতে অন্যান্য ফসল চাষে আগ্রহ।
6. আখের বাণিজ্যে সীমাবদ্ধতা।
7. আখের ছিবড়ের সঠিক ব্যবহারের অভাব।
ভারতে আখের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
আখের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে —
1. উচ্চ ফলনশীল আখের জাত উদ্ভাবন।
2. আধুনিক সেচ ও কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার।
3. চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
4. সমবায় প্রথার মাধ্যমে আখ চাষের প্রসার।
ভারতে আখের ছিবড়ের কী ব্যবহার করা যায়?
আখের ছিবড়ে সাধারণত জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে এটিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে বোর্ড, কাগজ বা বায়োফুয়েল তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা চাষিদের আয় বাড়াতে সাহায্য করবে।
দক্ষিণ ভারতে আখ চাষ কমে যাওয়ার কারণ কী?
দক্ষিণ ভারতে হেক্টর প্রতি আখের উৎপাদন কম হওয়ায় এবং অন্যান্য ফসল (যেমন — তামাক, তুলা) থেকে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।
আখের বাণিজ্যিক সমস্যা দূর করার উপায় কী?
আখের বাণিজ্যিক সমস্যা দূর করতে —
1. সমবায় প্রথার মাধ্যমে আখ বিক্রির ব্যবস্থা করা।
2. সরকারি ও বেসরকারি স্তরে আখের বাজার সম্প্রসারণ করা।
3. প্রক্রিয়াকরণ শিল্প (Sugar mills) বৃদ্ধি করা।
ভারতে গুড় উৎপাদন বেশি হয় কেন?
গুড় উৎপাদনের খরচ কম এবং স্থানীয় চাহিদা বেশি থাকায় দরিদ্র আখচাষিরা আখের রস থেকে গুড় তৈরি করে বেশি লাভের আশায়।
আখ চাষে সার ব্যবহারের সমস্যা কী?
অনেক চাষি অজ্ঞতা ও আর্থিক সমস্যার কারণে সঠিক পরিমাণে ও মানসম্পন্ন সার ব্যবহার করে না, ফলে উৎপাদন কম হয়।
আখ চাষের উন্নতির জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
সরকার —
1. উচ্চ ফলনশীল আখের জাত উদ্ভাবন করছে।
2. চাষিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
3. জলসেচের সুবিধা বাড়াচ্ছে।
4. সমবায় ভিত্তিতে আখ চাষ ও বিপণনে সহায়তা করছে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতে আখ চাষের সমস্যা ও সমাধানগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের কৃষি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন