এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দুর্গাপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

দুর্গাপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।
অথবা, পূর্ব-ভারতের একটি ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করো।
দুর্গাপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্রের অবস্থান –
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে ভারত সরকারের উদ্যোগে ও ব্রিটিশ ইস্কন কোম্পানির সহযোগিতায় 1959 খ্রিস্টাব্দে দামোদর নদের তীরে এই ইস্পাত কেন্দ্রটি (DSP) স্থাপিত হয়। 1962 খ্রিস্টাব্দে উৎপাদন শুরু হয়। এটি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানা। দুর্গাপুরে একটি সংকর ইস্পাত কারখানা (ASP) রয়েছে।
দুর্গাপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ –
- কাঁচামাল – দুর্গাপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ হল এই অঞ্চলে কাঁচামাল সহজে পাওয়া যায়।
- আকরিক লোহা – ওড়িশার বোলানি ও গুরুমহিষানি এবং ঝাড়খণ্ডের নোয়ামুন্ডি ও গুয়া অঞ্চল থেকে (প্রায় 327 কিমি দূরত্বে) আকরিক লোহা সহজে দুর্গাপুরে আনা যায়।
- কয়লা – দুর্গাপুরের মাত্র 40 কিমি দূরে রানিগঞ্জ ও 180 কিমি দূরের ঝরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা সহজেই পাওয়া যায়, যা ইস্পাত তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- অন্যান্য খনিজ পদার্থ – এই অঞ্চলে ওড়িশার বীরমিত্রপুর ও হাতিবাড়ি থেকে চুনাপাথর ও ডলোমাইট এবং বড়জামদা ও সুন্দরগড় অঞ্চল থেকে ম্যাঙ্গানিজ (প্রায় 327 কিমি দূরে) সরবরাহ করা হয়, যা ইস্পাত উৎপাদনে অপরিহার্য উপাদান।
- জলের যোগান – দামোদর নদ ও দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে শিল্পে ব্যবহারের উপযোগী স্বচ্ছ জলের সহজলভ্যতা রয়েছে।
- শক্তির উৎস – দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার (DVC) জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এই শিল্পকেন্দ্রে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
- শ্রমিকের প্রাপ্যতা – পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের জনবহুল অঞ্চলে সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক সহজে পাওয়া যায়, যা শিল্প পরিচালনার জন্য উপকারী।
- পরিবহণ ব্যবস্থা – ইস্টার্ন রেলওয়ে, দামোদর খালপথ এবং জাতীয় সড়ক NH-2-এর মাধ্যমে কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের সুব্যবস্থা রয়েছে।
- বন্দরের সুবিধা – কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সান্নিধ্যের কারণে আমদানি ও রপ্তানিতে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।
- বাজারের প্রাচুর্য – দুর্গাপুর ও আসানসোল শিল্প বলয়ের বিস্তৃত বাজার এই অঞ্চলে উৎপাদিত ইস্পাতের বিপণনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা (DSP) কোথায় অবস্থিত?
এটি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে দামোদর নদের তীরে অবস্থিত।
দুর্গাপুরে ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি কী?
দুর্গাপুরে ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি হলো –
1. কাঁচামালের সহজলভ্যতা – ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড থেকে লৌহ আকরিক, রানিগঞ্জ ও ঝরিয়া থেকে কয়লা।
2. জলের সুবিধা – দামোদর নদ ও দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল সরবরাহ।
3. শক্তির উৎস – DVC -এর জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
4. পরিবহণ সুবিধা – রেল, সড়ক (NH-2) ও নৌপথের সংযোগ।
5. শ্রমিকের প্রাপ্যতা – পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক।
6. বাজার – দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলে চাহিদা।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার জন্য কাঁচামাল কোথা থেকে আসে?
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার জন্য কাঁচামাল নিম্নলিখিত স্থানগুলি থেকে সরবরাহ করা হয় –
1. লৌহ আকরিক – ওড়িশার বোলানি, গুরুমহিষানি; ঝাড়খণ্ডের নোয়ামুন্ডি, গুয়া।
2. কয়লা – রানিগঞ্জ (40 কিমি) ও ঝরিয়া (180 কিমি)।
3. চুনাপাথর ও ম্যাঙ্গানিজ – ওড়িশার বীরমিত্রপুর, হাতিবাড়ি, বড়জামদা।
দুর্গাপুরে ইস্পাত শিল্পের জন্য জল সরবরাহ কীভাবে হয়?
দামোদর নদ ও দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে শিল্পের জন্য জল পাওয়া যায়।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহের উৎস কী?
দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC) -এর জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসে।
পরিবহণ সুবিধা কীভাবে এই শিল্পকে সাহায্য করে?
পরিবহণ সুবিধা দুর্গাপুর ইস্পাত শিল্পকে সাহায্য করে নিম্নলিখিতভাবে –
1. রেলপথ – ইস্টার্ন রেলওয়ের মাধ্যমে কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহণ।
2. সড়কপথ – NH-2 (গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড) সংযোগ।
3. নৌপথ – দামোদর খালপথ ব্যবহার।
4. বন্দর – কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি।
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
1959 সালে ভারত সরকার ও ব্রিটিশ ইস্কন কোম্পানির সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎপাদন শুরু হয় 1962 সালে।
দুর্গাপুরে সংকর ইস্পাত কারখানা (ASP) কী?
এটি একটি বিশেষায়িত ইস্পাত কারখানা যেখানে উচ্চমানের সংকর ইস্পাত তৈরি হয়।
দুর্গাপুর ইস্পাত শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কী?
এটি পূর্ব ভারতের শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য শিল্পের (যেমন – যন্ত্রপাতি, রেলইঞ্জিন) বিকাশে সাহায্য করে।
দুর্গাপুরের ইস্পাত শিল্পের সমস্যা কী?
দুর্গাপুরের ইস্পাত শিল্পের প্রধান সমস্যাগুলি হলো –
1. কাঁচামালের দূরত্বের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি।
2. পুরানো প্রযুক্তির ব্যবহার।
3. পরিবেশ দূষণ (বায়ু, জল)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দুর্গাপুরে লৌহ-ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন