পশ্চিমাঞ্চল বা মুম্বাই, আমেদাবাদ অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পশ্চিমাঞ্চল বা মুম্বাই, আমেদাবাদ অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমাঞ্চল বা মুম্বাই, আমেদাবাদ অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ
পশ্চিমাঞ্চল বা মুম্বাই, আমেদাবাদ অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ
Contents Show

পশ্চিমাঞ্চল বা মুম্বাই, আমেদাবাদ অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি আলোচনা করো।

অথবা, পশ্চিম ভারতে কার্পাসবয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ কী কী?

ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে ভারতীয় বয়ন শিল্পকে 5টি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা –

  1. পশ্চিমাঞ্চল।
  2. মধ্যাঞ্চল।
  3. দক্ষিণাঞ্চল।
  4. উত্তরাঞ্চল।
  5. পূর্বাঞ্চল।

পশ্চিমাঞ্চল অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনে

পশ্চিম ভারতের গুজরাট ও মহারাষ্ট্র রাজ্য ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ কার্পাস বস্ত্র উৎপাদক অঞ্চল। এখানকার প্রধান শিল্পকেন্দ্রগুলি হল –

রাজ্যমিলের সংখ্যাবস্ত্রবয়ন শিল্পকেন্দ্র
মহারাষ্ট্র122মুম্বাই, নাগপুর, কোলাপুর, পুনে, নাসিক, সাতারা, আকোলা, জলগাঁও, হুবলি।
গুজরাট118আমেদাবাদ, সুরাট, ব্রোচ, পোরবন্দর, রাজকোট, ভারুচ, কালোল, ভাদোদরা।

পশ্চিমাঞ্চল অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনে গড়ে ওঠার কারণ –

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি হল –

  1. কাঁচামালের প্রাচুর্য – স্থানীয় রেগুর বা কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তুলা উৎপন্ন হয়, যা কার্পাস শিল্পের জন্য অপরিহার্য কাঁচামাল। ফলে এই শিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সহজেই স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। এছাড়াও মুম্বাই বন্দরের মাধ্যমে মিশর ও সুদান থেকে দীর্ঘ আঁশযুক্ত উৎকৃষ্ট তুলা আমদানি করা হয়, যা শিল্পের মান উন্নয়নে সহায়তা করে।
  2. আর্দ্র জলবায়ু – এই অঞ্চলগুলি আরবসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। এই ধরনের আর্দ্র জলবায়ু সুতো কাটা ও বস্ত্র বয়নের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, কারণ এতে সুতো সহজে ছেঁড়ে না এবং উৎপাদন ব্যাহত হয় না।
  3. বিদ্যুৎ শক্তির প্রাচুর্য – শিল্পচালনার জন্য বিদ্যুৎ শক্তির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।
    • জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি – ভীরা, ভীবপুরী, নীলাসুলা, লোনাভালা, খোপালি ও উকাই।
    • তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি – ট্রম্বে, নাসিক, ভুসওয়াল, আমেদাবাদ ও ধুবারন (গ্যাসভিত্তিক)।
    • পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি – তারাপুর ও কাকরাপাড়া থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, যা শিল্পচালনায় সহায়ক।
  4. জলের সহজলভ্যতা – সবরমতী, মাহি, নর্মদা ও তাপ্তী নদী এবং ভূগর্ভস্থ জল ও শিল্পের নিজস্ব জলাশয় থেকে সংগৃহীত জল রং ও ব্লিচ করার মতো কার্পাস শিল্পের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য জলের চাহিদা পূরণ করে।
  5. বন্দরের নৈকট্য – মুম্বাই, নবসেবা, ওখা, কান্ডালা ও সুরাট বন্দর শিল্পের কাঁচামাল (যেমন দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা), রাসায়নিক দ্রব্য ও যন্ত্রপাতি আমদানির পাশাপাশি প্রস্তুত কার্পাস বস্ত্র রপ্তানির বিশেষ সুবিধা প্রদান করে।
  6. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা – পশ্চিম, মধ্য ও কোঙ্কণ রেলপথ এবং জাতীয় সড়ক যেমন NH-3, 4, 6, 8, 9, 15 ও 17 দ্বারা কাঁচামাল উৎপাদক অঞ্চল ও ভারতের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারের সঙ্গে এই অঞ্চল যুক্ত। ফলে কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদিত বস্ত্র পরিবহনে কোনো অসুবিধা হয় না।
  7. শ্রমিকের প্রাপ্যতা – কোঙ্কণ, শোলাপুর, আমেদাবাদ ও মুম্বাইয়ের মতো জনবহুল অঞ্চলে দক্ষ ও সুলভ শ্রমিক সহজেই পাওয়া যায়, যা শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  8. মূলধনের সহজলভ্যতা – ভারতের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় পারসি, ভাটিয়া, গুজরাটি ও মাড়োয়ারি শিল্পপতি গোষ্ঠীর বিনিয়োগ এই শিল্পে প্রচুর মূলধন জোগায়।
  9. ইঞ্জিনিয়ারিং ও রাসায়নিক দ্রব্যের সহজলভ্যতা – কার্পাস শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যগুলি সহজে পাওয়া যায়, যা উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে।
  10. শিল্পস্থাপনের উপযুক্ত পরিকাঠামো – এই অঞ্চলে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো যেমন জল, বিদ্যুৎ, পরিবহণ ও জনবল সহজলভ্য হওয়ায় শিল্প গড়ে ওঠা সহজ হয়েছে।
  11. বৃহৎ বাজারের উপস্থিতি – ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজার পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের বিকাশ ও কেন্দ্রীভবনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রধান কারণ কী?

পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রধান কারণগুলি হলো –
1. কাঁচামালের সহজলভ্যতা (স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন তুলা ও আমদানিকৃত দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা)।
2. আর্দ্র জলবায়ু, যা সুতা কাটা ও বয়নের জন্য উপযোগী।
3. বিদ্যুৎ ও জলের পর্যাপ্ত সরবরাহ (জলবিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ ও নদী থেকে প্রাপ্ত জল)।
4. বন্দর ও পরিবহণ সুবিধা (মুম্বাই, সুরাট বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি)।
5. শ্রমিক ও মূলধনের প্রাচুর্য।

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের বিকাশে জলবায়ুর ভূমিকা কী?

আরব সাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় এই অঞ্চলে আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে, যা কার্পাস বয়ন শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্দ্র বাতাসে সুতা শুকিয়ে যায় না এবং সহজে ছিঁড়ে না, ফলে বয়ন প্রক্রিয়া সহজ হয়।

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ কীভাবে সরবরাহ করা হয়?

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন উৎস থেকে –
1. জলবিদ্যুৎ – ভীরা, খোপালি, উকাই বাঁধ।
2. তাপবিদ্যুৎ – ট্রম্বে, নাসিক, ভুসওয়াল, আমেদাবাদ।
3. পারমাণবিক বিদ্যুৎ – তারাপুর ও কাকরাপাড়া।

মুম্বাই ও আমেদাবাদ অঞ্চলে বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার জন্য কোন কাঁচামাল গুরুত্বপূর্ণ?

মুম্বাই ও আমেদাবাদ অঞ্চলে বয়ন শিল্প গড়ে ওঠার জন্য প্রধান কাঁচামাল হলো –
1. স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন তুলা (গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে চাষ হয়)।
2. মিশর ও সুদান থেকে আমদানিকৃত দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা (মুম্বাই বন্দর দিয়ে আমদানি হয়)।

পশ্চিম ভারতে বয়ন শিল্পের বিকাশে বন্দরগুলির ভূমিকা কী?

পশ্চিম ভারতে বয়ন শিল্পের বিকাশে বন্দরগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ –
1. মুম্বাই, কান্ডালা, সুরাট বন্দর দিয়ে বিদেশ থেকে কাঁচামাল (তুলা, রাসায়নিক) আমদানি করা হয়।
2. উৎপাদিত বস্ত্র বিদেশে রপ্তানি করা হয়, বিশেষত ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে।

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের জন্য মূলধনের উৎস কী?

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের জন্য মূলধন আসে প্রধানত –
1. বেসরকারি শিল্পগোষ্ঠী (টাটা, বিড়লা, আম্বানি, আদানি)।
2. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (SBI, ICICI, স্থানীয় কো-অপারেটিভ ব্যাংক)।

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের বিকাশে পরিবহণ ব্যবস্থার ভূমিকা কী?

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের বিকাশে পরিবহণ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ –
1. রেলপথ – পশ্চিম রেলওয়ে, মধ্য রেলওয়ে, NH-8, NH-48 দ্বারা যুক্ত।
2. সড়কপথ – মুম্বাই-আমেদাবাদ হাইওয়ে, সুরাট-দিল্লি করিডোর।

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রগুলি কী কী?

পশ্চিম ভারতে কার্পাস শিল্পের প্রধান কেন্দ্রগুলি হলো –
1. মহারাষ্ট্র – মুম্বাই, পুনে, নাগপুর, শোলাপুর।
2. গুজরাট – আমেদাবাদ, সুরাট, রাজকোট, ভাদোদরা।

পূর্ব বা উত্তর ভারতে কার্পাস শিল্প কম বিকাশ লাভ করার কারণ কী?

পূর্ব বা উত্তর ভারতে কার্পাস শিল্প কম বিকাশ লাভ করে কারণ –
1. জলবায়ু শুষ্ক, যা বয়ন শিল্পের জন্য উপযুক্ত নয়।
2. বিদ্যুৎ ও পরিবহণ সুবিধার অভাব।
3. কাঁচামালের কম সরবরাহ (তুলা চাষ কম)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পশ্চিমাঞ্চল বা মুম্বাই, আমেদাবাদ অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও।

বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও।

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য করো।

সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik English Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রবন্ধ রচনা

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রতিবেদন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সংলাপ