পশ্চিমাঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন হয়েছে কেন?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পশ্চিমাঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন হয়েছে কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমাঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন হয়েছে কেন
পশ্চিমাঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন হয়েছে কেন
Contents Show

পশ্চিমাঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন হয়েছে কেন?

পশ্চিমাঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবনের কারণ –

ভারতে বস্ত্রশিল্পের উন্নতির প্রথম দিকে (1850-1951) মুম্বাই ও আহমেদাবাদকে কেন্দ্র করে কার্পাস বস্ত্রশিল্পের কেন্দ্রীভবন ঘটে। 1950 খ্রিস্টাব্দের পর দেশের অভ্যন্তরভাগের বাজারকে ভিত্তি করে পূর্ব, দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের দিকে বিকেন্দ্রীভবন ঘটে। এর কারণগুলি হল –

  1. পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি – 1950 খ্রিস্টাব্দের পর রেলপথ ও সড়কপথ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটে। পশ্চিমাঞ্চল থেকে তুলো আনা এবং দেশের বিভিন্ন বাজারে বস্ত্র পাঠানোর সুবিধা হয়।
  2. জলবিদ্যুতের উন্নতি – ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ (মেতুর, পাইকারা, রিহান্দ) কেন্দ্র গড়ে ওঠায় সস্তায় এই শিল্প বিকাশ লাভ করে।
  3. পশ্চিমাঞ্চলে জমি ও দাম বৃদ্ধি – পশ্চিমাঞ্চলের জমির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্পপতিরা ভারতের অন্যত্র শিল্পস্থাপনে আগ্রহী হয়।
  4. বাজার সম্প্রসারণ – স্বদেশি আন্দোলন স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে জনবিস্ফোরণের কারণে ভারতে বস্ত্রশিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারিত হয়।
  5. তুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি – পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, অন্যান্য রাজ্যে জলসেচের প্রসারের ফলে তুলোর উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এই সকল সম্মিলিত কারণে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্পের বিকেন্দ্রীভবন ঘটে।
কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্প
কার্পাস বস্ত্রবয়ন শিল্প

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন বলতে কী বোঝায়?

বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন বলতে মূল শিল্পকেন্দ্র (মুম্বাই, আহমেদাবাদ) থেকে শিল্পের ছড়িয়ে পড়াকে বোঝায়, যেখানে নতুন অঞ্চলে (পূর্ব, দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তর ভারত) বস্ত্রশিল্প গড়ে ওঠে।

পশ্চিমাঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবনের প্রধান কারণ কী?

পশ্চিমাঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবনের প্রধান কারণগুলি হলো —
1. পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি।
2. জলবিদ্যুতের প্রসার।
3. পশ্চিমাঞ্চলে জমির দাম বৃদ্ধি।
4. বাজারের সম্প্রসারণ।
5. অন্যান্য রাজ্যে তুলো উৎপাদন বৃদ্ধি।

পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি কীভাবে বিকেন্দ্রীভবনে সাহায্য করে?

রেল ও সড়কপথের উন্নতির ফলে পশ্চিমাঞ্চল থেকে তুলো আনা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বস্ত্র পাঠানো সহজ হয়, ফলে নতুন অঞ্চলে শিল্প স্থাপন সম্ভব হয়। এভাবে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি বিকেন্দ্রীভবনে সাহায্য করে

জলবিদ্যুৎ কীভাবে বস্ত্রশিল্পের বিকাশে সাহায্য করে?

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র (যেমন — মেতুর, পাইকারা, রিহান্দ) গড়ে ওঠায় সুলভে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়, যা শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমাঞ্চলে জমির দাম বৃদ্ধি কীভাবে শিল্প স্থানান্তরে প্রভাব ফেলে?

মুম্বাই ও আহমেদাবাদের জমির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্পপতিরা সস্তায় জমি ও শ্রমিক পাওয়া যায় এমন অঞ্চলে (তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ) শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হন।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বস্ত্রশিল্পের বাজার কীভাবে সম্প্রসারিত হয়?

স্বদেশি আন্দোলন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দেশজুড়ে বস্ত্রের চাহিদা বাড়ে, ফলে নতুন বাজার সৃষ্টি হয় এবং শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটে।

তুলো উৎপাদন বৃদ্ধি কীভাবে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবনে ভূমিকা রাখে?

পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে সেচ সুবিধার প্রসার ঘটলে তুলো উৎপাদন বাড়ে, ফলে কাঁচামালের সহজলভ্যতার জন্য এই অঞ্চলগুলিতে বস্ত্রশিল্প গড়ে ওঠে।

বর্তমানে ভারতের কোন অঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে?

বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ু (কোয়েম্বাটুর), পশ্চিমবঙ্গ (হাওড়া), উত্তরপ্রদেশ (কানপুর), পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় বস্ত্রশিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে।

বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবনের অর্থনৈতিক প্রভাব কী?

বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবনের অর্থনৈতিক হলো —
1. আঞ্চলিক উন্নয়ন ঘটে।
2. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।
3. শিল্পের উপর পশ্চিমাঞ্চলের একচেটিয়া আধিপত্য কমে।

বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন কি ভারতের জন্য ইতিবাচক?

হ্যাঁ, বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন ভারতের জন্য ইতিবাচক কারণ এটি আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষা করে, শিল্পের প্রতিযোগিতা বাড়ায় এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “পশ্চিমাঞ্চলে বস্ত্রশিল্পের বিকেন্দ্রীভবন হয়েছে কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও।

বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও।

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য করো।

সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তড়িদবিশ্লেষণের ব্যবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।

অ্যানোড মাড কী? এর একটি অর্থনৈতিক গুরুত্ব লেখো।

কপার বিশুদ্ধ করতে তড়িৎবিশ্লেষণ পদ্ধতির প্রয়োগ ব্যাখ্যা করো।

তড়িৎ বিশ্লেষণের মূলনীতিটি লেখো।

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।