বইমেলা – প্রবন্ধ রচনা

Rohit

বইমেলা সম্পর্কে প্রবন্ধ লেখো।

ভূমিকা –

শিক্ষিত মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম রসদ হলো বই। বই হল আয়নার মতো, যাতে আমাদের মনের প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে। বই এর মত অন্তরঙ্গ সহচর পৃথিবীতে আর কিছু নেই। আমাদের নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলিকে বই ভরিয়ে তোলে আর মানুষের ধূসর নিরানন্দ জীবনে প্রাণের প্রবাহ নামিয়ে আনে উৎসব। উৎসব আয়োজনের সে পথ ধরেই এদেশে মেলা তার বিস্তৃত পরিসর দখল করে আছে। মেলা এদেশের সাংস্কৃতিক জীবনের অন্যতম অঙ্গ। আর মেলার জগতে মিলনপিয়াসী সভ্যতার কনিষ্ঠ সন্তান ‘বইমেলা’। এখানে ঘটে সভ্যতার প্রাণের চিহ্ন বিভিন্ন বইয়ের সমাহার, যেখানে দেশি-বিদেশী কোনো বই-ই বাদ যায়না, তাই কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয় –

“হেথায় মিশেছে দিশি দিশি হতে, বিপুল জ্ঞানের ধারা,
শত মনীষীর চিন্তার বানী, আনন্দে আকুল পারা।”

বইমেলা –

‘মেলা’ শব্দের ব্যাকরণগত উৎস ‘মিল’ ধাতু। মেলার অর্থ মিলন বা মিলিত হওয়া ‘বইমেলা’ সেই মিলন প্রসঙ্গের ইঙ্গিত বাহক। তাই বছরের কোনো একসময়ে একটি নির্দিষ্ট উপলক্ষে কোনো স্থানে বই এর স্টল সাজিয়ে কিছু দিনের জন্য বই প্রদর্শন এবং বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাকে বই মেলা বা পুস্তকমেলা বা গ্রন্থমেলা বলা হয়। পৃথিবীর সকল দেশেই এমন বইমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। ভারতবর্ষ, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বই মেলা, বাংলাদেশের একুশে বইমেলা অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি মেলা।

বইমেলার ইতিহাস –

বইমেলা বর্তমানে আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও এর জন্ম হয়ছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে। এয়োদশ শতকের প্রথমদিকে স্টুরব্রিজের মেলা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলার বইয়ের অংশের নাম ছিল ‘বুক সেলার্স রো’, ম্যাথু কেরীর উদ্যোগে 1802 সালে সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে পূর্নাঙ্গ বইমেলার আয়োজন করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বইমেলার পর্যায়ক্রমিক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। 1949 সালে ফ্রাঙ্কফুটে বইমেলার সূচনা হয়। এরপর ধীরে ধীরে বইমেলা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বইমেলা হয়ে উঠেছে অন্যতম আধুনিক সাংস্কৃতিক উপকরণ এটি বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি বিকাশের অন্যতম ক্ষেত্র।

বইমেলার তাৎপর্য বা উদ্দেশ্য –

বই জ্ঞানের প্রতীক, আনন্দের প্রতীক। খ্যাতি, মান, সম্মান, অর্থ, শক্তি সবকিছুরই ক্ষয় আছে কিন্তু বই মানুষের জ্ঞানের তপস্যা, আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করে তাকে অক্ষয় অমর করে রাখে। বই জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়। দেশে সুনাগরিক গড়ে তোলার সবচেয়ে উত্তম উপায় হল সুলিখিত, সৃষ্টিশীল ও মননশীল বই, আর এ সকল বই এর সমাহার হল বইমেলা। বইমেলা হল জ্ঞানের ভান্ডার জাতিকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বইমেলার ভূমিকা অপরিসীম। বইমেলার মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সংস্কৃতি ও সাহিত্য সম্পর্কে ধারনা সৃষ্টি করা। দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসার ও সমৃদ্ধিতে বইমেলার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বইমেলা পাঠককে শুধু বই পড়া নয়; বই কেনার প্রতিও আগ্রহী করে তোলে।

মিলনমেলা –

বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা, লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের মিলন মেলা। সারা দেশ থেকে আসা লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিবান মানুষ সহ সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বইমেলা প্রাঙ্গন। মেলার সুন্দর পরিবেশ সাথে বর্ণোজ্জ্বল থরে থরে সাজানো নতুন পাতার গন্ধে মোড়ানো নতুন নতুন বই, বই প্রেমিকদের বিমোহিত করে শুধু তাই নয় লেখক-পাঠক-প্রকাশকগণ ও পরস্পর ভাব বিনিময়ের সুযোগ পান। তারা বছরের এই সময়টির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন নিজের সৃষ্টিশীলতাকে সবার কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য। তাই ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন – ” When we buy a book we buy pleasure” অনন্ত বিশ্বে জ্ঞান ও ভাবের অপূর্ব সমন্বয় হল বইমেলা।

আনন্দমুখর পরিবেশ –

কর্মব্যস্ততার চাপে অনেক, অভিভাবকগন নিজের ছেলেমেয়ে দের জন্য পছন্দের বই, প্রিয় লেখকের বই কিনতে পারেন না কিন্তু বইমেলার আয়োজনে তারাও ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে আসেন মেলায়। তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন স্টল ঘুরে ফিরে হাতে বই নিয়ে দেখে কিনতে পারেন। ছোটোরা বিভিন্ন অচেনা অজানা বই সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারনা পায়। বইমেলায় কেনাকাটার উপরে বিভিন্ন মূল্য ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকে ফলে সামর্থ্যের মধ্যে ক্রেতারা অল্প পরিশ্রমে অল্প সময় ব্যয় করে নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী সব স্তরের মানুষেরা বই সংগ্রহ করে আনন্দ লাভ করতে পারে। বই কেনার সাথে সাথে বেড়ানোর আনন্দও উপভোগ করা যায়। পরিবার, পরিজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বিশিষ্ট জ্ঞানী-গুণীদের সান্নিধ্য লাভও কম আনন্দের নয়। বইমেলার প্রতিদিনের আয়োজিত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাও বইমেলার পরিবেশকে আনন্দমুখর করে তোলে।

উপসংহার –

বইমেলা মানুষের চিন্তার পরিমাপক। এর মাধ্যমে মানুষের রুচি ও আদর্শের উন্নতি ঘটে। তাই বইমেলার উন্নয়নে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। কেননা বই মানুষকে দেয় জ্ঞান, জ্ঞান মানুষকে করে মহীয়ান আর মহীয়ান মানুষই জাতিকে করে উন্নত। তাই শিক্ষা সংস্কৃতির প্রসারে বইমেলার অবদানকে আমাদের স্বাগত জানাতে হবে। কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও প্রকাশকদের উৎসাহে দুটি বইমেলা প্রতি বছর আয়োজিত হয়ে থাকে এবং বাংলাদেশে একুশে বইমেলা, ঢাকা বইমেলা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত বইমেলাগুলি অত্যন্ত গর্বের সাথে সমাজের ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি বহন করে চলেছে।

Please Share This Article

Related Posts

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা।

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় – প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান - প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান – প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rohit

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ভারতের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকেন্দ্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতির কারণ

ভারতের মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পের অবস্থান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

বর্তমান ভারতে মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পের অধিক উন্নতির কারণ

পশ্চিম ভারতে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের অধিক উন্নতির কারণ