অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – আলাপ – পূর্ণেন্দু পত্রী

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের আলাপ অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে আলাপ অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় আলাপ অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই আলাপ অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

পালাম বিমানবন্দরের ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন পরিবেশে, নির্ধারিত সময়ে প্লেন না ছাড়ার বিরক্তিতে লেখক কফি কর্নারের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানে দুই বিখ্যাত ব্যক্তিকে কফি কাপ নিয়ে আলোচনা করতে দেখেন। একজন ছিলেন প্রখ্যাত সেতারবাদক বিলায়েৎ খাঁ, অন্যজন বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক সত্যজিৎ রায়।

সত্যজিৎ রায় বাজনার বিষয়ে জানতে চাইলে, বিলায়েৎ খাঁ বিদেশে বাজানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। জার্মানি ও ফ্রান্সের শ্রোতাদের কাছে তাঁর প্রচুর সমাদর ছিল, তবুও তাল, বোল, মীড়ের জটিলতাকে পুরোপুরি বুঝতে পারেননি অনেকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এই বিষয়ে সচেতন ছিল না।

এই প্রসঙ্গে, এক দিল্লিপ্রবাসী বাঙালি জানতে চান কেন তিনি দিল্লিতে বাজান। বিলায়েৎ খাঁ উত্তরে বলেন, তিনি দিল্লি অপেক্ষা কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে বেশি আনন্দ পান। মোরাদাবাদের এক বিখ্যাত তবলাবাদক যখন কলকাতা সম্পর্কে বিদ্রূপ করতে যান, তখন খাঁ সাহেব তাকে টেনে এনে স্টেজে বসিয়ে দেন। এরপর জ্ঞান ঘোষের বাজনা শুনে তবলা শিল্পী লজ্জিত হন।

এই ঘটনাটি পালাম বিমানবন্দরে বিলায়েৎ খাঁ ও সত্যজিৎ রায়ের আন্তরিক আলাপচারিতা এবং তাদের সংস্কৃতি ও শিল্পের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাকে তুলে ধরে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – আলাপ

আলাপ অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ছোটোগল্পকার, সমালোচক পূর্ণেন্দু পত্রী ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি হাওড়ার নাকোলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বিশিষ্ট গল্প সংকলন ‘স্তালিনের রাত’, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’ প্রশংসার দাবি রাখে। মজাদার ছোটোগল্প রচয়িতা হিসেবে তিনি সমাদৃত। তাঁর বিশিষ্ট চারখানি কাব্য হল – ‘একমুঠো রোদ’, ‘শব্দের বিছানা’, ‘তুমি এলে সূর্যোদয় হয়’, ‘কথোপকথন’ (৫ খণ্ড)। চলচ্চিত্র পরিচালক মানুষটির যেসব পরিচালনা কৃতিত্বের পরিচয়বাহী, সেগুলো হল – ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘ছোটো বকুলপুরের যাত্রী’, ‘মালঞ্চ’, ‘পথচিত্র’, ‘ছেঁড়া তমসুক’, ‘স্ত্রীর পত্র’ ইত্যাদি।

আলাপ অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

পালাম বিমানবন্দরের বাইরে ঘোর কুয়াশায় আচ্ছন্ন। প্রকৃতির বিরোধিতায় নির্দিষ্ট সময়ে প্লেন ছাড়ছে না। কফি কর্নারের দিকে এগিয়ে লেখক দেখেন দুজন বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তি কফি কাপ নিয়ে আলাপ করছেন।

এঁদের দুজন ছিলেন প্রখ্যাত সেতারবাদক বিলায়েৎ খাঁ এবং অন্যজন বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায় জানতে চাইলেন বাজনার বিষয়ে কিন্তু বিলায়েৎ খাঁ বিদেশে বাজানোর অভিজ্ঞতার কথা জানান। প্রসঙ্গক্রমে জার্মানি, ফ্রান্সের শ্রোতাদের কাছে তাঁর যে কত সমাদর এবং বিদেশিরা যে তাল, বোল, মীড়ের কাজ যথেষ্ট বোঝেন-তা জানতে চেয়েছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এ. ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন। বিমানবন্দরে এক দিল্লিপ্রবাসী বাঙালি জানতে চান – তিনি দিল্লিতে বাজান কেন। তার উত্তরে বিলায়েৎ খাঁ দিল্লি অপেক্ষা কলকাতায় অনুষ্ঠান করায় আরও পরিতৃপ্তির কথা জানান। মোরাদাবাদের এক নামজাদা তবলাবাদক কলকাতা সম্পর্কে বিদ্রূপ করলে খাঁ সাহেব জানবাবুকে টেনে এনে স্টেজে বসিয়ে দেন। এরপর জ্ঞান ঘোষের বাজনা শুনে তবলা শিল্পী ভীষণ লজ্জা পান।

আলাপ অধ্যায়ের নামকরণ

একে অন্যের সঙ্গে কথাবার্তা বলাই আলাপ। আবার একজন বা অনেকজন অপরিচিত ব্যক্তির মধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠার যে প্রয়াস বা আয়োজন তাকে আলাপ বলে।

এক শীতের সকালে গাঢ় কুয়াশায় প্রকৃতি যখন আচ্ছন্ন তখন লেখক দেখেছিলেন জগদবিখ্যাত সেতারি ওস্তাদ বিলায়েৎ খাঁ এবং চলচ্চিত্র পরিচালক ও লেখক সত্যজিৎ রায় কফি কর্নারে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছেন। উভয়ের আলোচনার বিষয় হল গানবাজনা। প্রসঙ্গক্রমে বিলায়েৎ খাঁ গানবাজনার বিস্তৃতি, জার্মানি ও ফ্রান্সে সেতার বাজানোর অভিজ্ঞতা এবং বিদেশিরা কতটা সমঝদার-তার প্রকাশ আছে বক্তব্যে। দুই বিখ্যাত মানুষের কথোপকথন তথা আলাপের মধ্য দিয়ে লেখক উভয়ের ভাবনা, কলকাতার প্রতি বিলায়েৎ খাঁর প্রীতি ইত্যাদি উপভোগ করেছেন। এহেন ভাবনায় লেখক দুজন মহান মানুষের কথাবার্তার ধরন তুলে ধরে উভয়ের আলাপচারিতার সার্থক পরিচয় দিয়েছেন।

আলাপ অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

উদ্বিগ্ন – উদবেগের সঙ্গে। পালাম বিমানবন্দর – দিল্লির একটি বিশিষ্ট আন্তর্জতিক বিমানবন্দর। নির্ধারিত – নির্দিষ্ট হয়ে আছে যা। নির্ভর – আস্থা। সিকিউরিটি – পাহারাদার। পেয়ালা – চায়ের পাত্র; চায়ের কাপ। আলাপরত – আলাপ করেছেন এমন। লোকেশন – অঞ্চল। কথোপকথন – কথাবার্তা। চকচকে – উজ্জ্বল। মীড় – সংগীতের সুর সমন্বয়। সচেতন – চেতনাপূর্ণ। ইমপ্রোফাইজ – তাৎক্ষণিক সংগীত; আগে প্রস্তুতি ছাড়া উপস্থিত মতো। ফোক টিউন – লোকসংগীত। প্রবাসী – বিদেশে বাস করেন যিনি। প্রশস্ত – চওড়া। বিদ্রূপ – ব্যঙ্গ। সমঝদার – বোদ্ধা; বোঝেন এমন। গণ্ডগোল – সমস্যা, ঝামেলা। আর্টিস্ট – শিল্পী। ঘরোয়া – ঘরের মধ্যে অনুষ্ঠিত যা। তালিম – আদবকায়দা; ব্যাবহারিক জ্ঞান; শিক্ষা। বদ অভ্যাস – খারাপ অভ্যাস। গ্রিনরুমে – সাজঘরে। হিড়হিড় – টানতে টানতে। ধূসর – ঈষৎ পাণ্ডুবর্ণ; ছাইরঙের। বিলম্ব – দেরি। অপেক্ষমান – অপেক্ষা করছে এমন।

এই ছোট্ট আলাপচারিতা সত্যজিৎ রায় এবং ওস্তাদ বিলায়েত্ খাঁ-র শিল্পের প্রতি নিষ্ঠা এবং তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটায়। তাদের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, শিল্পের কোন সীমানা নেই, শিল্পীরা বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে মিশে নতুন নতুন সৃষ্টির জন্ম দিতে পারেন।

পালাম বিমানবন্দরের ঘোর কুয়াশার আড়ালে, বিখ্যাত সেতারবাদক বিলায়েৎ খাঁ ও চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের আলাপচারিতা শুধুমাত্র দুটি বিখ্যাত ব্যক্তির আড্ডা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাদের আলোচনায় ফুটে উঠেছিল শিল্প, সংস্কৃতি, এবং ভারতীয় সংগীতের প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধা।

বিদেশে বাজানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সময় বিলায়েৎ খাঁ স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন যে, তাল, বোল, মীড়ের জটিলতাকে পুরোপুরি বুঝতে পারেন না অনেক বিদেশী শ্রোতা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এই বিষয়ে সচেতন ছিল না। এই প্রসঙ্গে, দিল্লির এক বাঙালির প্রশ্নের উত্তরে বিলায়েৎ খাঁ স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে, তিনি দিল্লি অপেক্ষা কলকাতায় বাজাতে বেশি আনন্দ পান। কলকাতার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেছিলেন যখন মোরাদাবাদের এক তবলাবাদক, তখন খাঁ সাহেব তাকে টেনে এনে স্টেজে বসিয়ে দিয়ে জ্ঞান ঘোষের বাজনা শুনিয়ে লজ্জা দিয়েছিলেন।

এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, বিলায়েৎ খাঁ ও সত্যজিৎ রায় কেবল তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রেই বিখ্যাত ছিলেন না, বরং ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিও তাদের ছিল গভীর শ্রদ্ধাবোধ। তাদের এই আন্তরিক আলাপচারিতা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।

Share via:

মন্তব্য করুন