এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – পল্লীসমাজ – বিষয়সংক্ষেপ

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্দশ অধ্যায়পল্লীসমাজ’ নিয়ে আলোচনা করবো। এই অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকে প্রশ্নোত্তর পরীক্ষায় প্রায়শই আসে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – পল্লীসমাজ

পল্লীসমাজ অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

হুগলি জেলার দেবানন্দপুরে ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মোতিলাল চট্টোপাধ্যায়, মাতা ভুবনমোহিনী দেবী। শরৎচন্দ্রের ছেলেবেলা ভাগলপুরে তাঁর মাতুলালয়ে কাটে। এখান থেকেই তিনি এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যদিও তিনি মহাবিদ্যালয়ও যান তবু তাঁর লেখাপড়া তিনি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। ২৭ বছর বয়সে কর্মসূত্রে তিনি বার্মা যান এবং ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকে ফিরে এসে কলকাতার নিকটবর্তী হাওড়া জেলার বাজি শিবপুরে থাকেন। দশ বছর পরে তিনি রূপনারায়ণ নদীর তীরবর্তী নিজ বাসভূমি সামতাবেড় গ্রামে আসেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি কলকাতায় একটি গৃহ নির্মাণ করেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে আছে – ‘বড়দিদি’, ‘শ্রীকান্ত’, ‘দেবদাস’, ‘পল্লীসমাজ’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘পরিণীতা’, ‘চরিত্রহীন’, ‘গৃহদাহ’, ‘পথের দাবী’, ‘শেষ প্রশ্ন’, ‘বিপ্রদাস’ ইত্যাদি।

পল্লীসমাজ অধ্যায়ের উৎস

পল্লীসমাজ উপন্যাসের একাদশ পরিচ্ছেদ থেকে এই গল্পাংশ গ্রহণ করা হয়েছে।

পল্লীসমাজ অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

রমেশ চণ্ডীমণ্ডপে গোপাল সরকারের সঙ্গে বসে জমিদারির হিসেব দেখছিল। সেই সময় গ্রামের কৃষকেরা এসে তার কাছে কেঁদে পড়ে তাদের একশো বিঘার মাঠ উদ্ধার করার জন্য। মাঠের দক্ষিণ ধারের বাঁধটি ছিল ঘোষাল ও মুখুয্যেদের। সেই বাঁধ খুলে দিয়ে মাঠের ধান রক্ষা করা সম্ভব, কিন্তু বছরে দুশো টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে জমিদার বেণীবাবু কড়া পাহারায় সেই বাঁধ আটকে রেখেছেন। কৃষকদের দুর্দশা দূর করার জন্য রমেশ বেণীবাবুর কাছে ছুটে যায় জলার বাঁধ কেটে দেওয়ার আর্জি নিয়ে। কিন্তু জমিদারবাবু তার লোকসান করে বাঁধ কেটে দিতে একেবারেই রাজি হন না। বরং উলটে তিনি রমেশকে অপমান করতে থাকেন। অগত্যা রমেশ ছুটে যায় রমার কাছে। রমাও যেহেতু এই জমির অংশীদার তাই তার অনুমতি মিললে বাঁধ কাটা সম্ভব হতে পারে বলে রমেশের মনে হয়। কিন্তু রমার কাছ থেকেও সে অনুমতি আদায় করতে সমর্থ হয় না। তখন সে নিজেই জোর করে বাঁধ কাটিয়ে দেবে বলে স্থির করে এবং রমার কাছ থেকে বিদায় নেয়।

রাত্রি এগারোটার সময়ে চণ্ডীমণ্ডপের বারান্দার খুঁটিতে ঠেস দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় প্রৌঢ় মুসলমান আকবরকে। তার মুখের উপর রক্ত জমাট বেঁধে গেছে এবং গায়ের কাপড়ও রক্তে লাল। জমিদার বেণীবাবু তাকে থানায় গিয়ে রমেশের নামে অভিযোগ জানাতে বললে আকবর কিছুতেই তাতে রাজি হয় না। উপরন্তু সে ছোটোবাবু অর্থাৎ রমেশের বীরত্বের প্রশংসা করতে থাকে। সে বর্ণনা করে, কীভাবে রমেশ বাঁধ কেটে গাঁয়ের মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। বেণী তাকে বেইমান বললে আকবর দৃপ্ত কণ্ঠে তার প্রতিবাদ জানায়। রমাও আকবরকে অনুরোধ করে রমেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর জন্য, কিন্তু আকবর তার সিদ্ধান্ত বদল করে না। ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে আকবর বাড়ির পথে এগোয়। বেণী রাগে অন্ধ হয়ে কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। কিন্তু রমেশের বীরত্বের কাহিনি মনে করে রমার চোখ জলে ভরে যায়।

পল্লীসমাজ অধ্যায়ের নামকরণ

দরদি কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তৎকালীন সামাজিক জটিলতা, জাতিভেদ প্রথায় অত্যন্ত পীড়িত হয়েছিলেন। তারই প্রতিচ্ছবি পল্লিবাংলার প্রেক্ষাপটে ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসে প্রকাশিত হয়েছে। তারিণী ঘোষাল এবং যদু মুখুয্যের বিবাদ দীর্ঘদিনের। তারিণী ঘোষালের মৃত্যুর পর তার পুত্র রুরকি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পাঠরত। রমেশ কুঁয়াপুরে ফিরে পিতৃশ্রাদ্ধ সম্পন্ন করতে গিয়ে সামাজিক দলাদলির নগ্ন চিত্রটি উপলব্ধি করতে পারে। বড়ো কর্তার পুত্র বেণী ঘোষাল এবং কয়েকজন সমাজপতি তার এই পিতৃশ্রাদ্ধ সুষ্ঠুভাবে যাতে সম্পন্ন না হয় সেজন্য ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে। এই ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়ে রমেশের বাল্যসখী যদু মুখুয্যের বিধবা কন্যা রমা। রমেশের মানসিক উদারতার কথা বেণী ঘোষালের মা বিশ্বেশ্বরী জানতেন। তিনি রমেশকে দুর্বল, অসহায় গ্রামবাসীর পাশে থাকার অনুরোধ জানান। রমেশ, বেণী ঘোষাল, ধর্মদাস, ভৈরব আচার্য, গোবিন্দ, মাসি, আকবর এদের মধ্য দিয়ে গ্রাম্য জীবনের ঘৃণ্য রাজনীতি, উচ্চবিত্তের শোষণ, নিম্নবিত্তের অসহায়তাকে শরৎচন্দ্র তুলে ধরেছেন। এইসব চরিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি প্রাণোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সমস্ত দিক বিচারে ‘পল্লীসমাজ’ নামটি যথার্থ হয়েছে বলেই মনে হয়।

পল্লীসমাজ অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

অবিশ্রান্ত – অবিরাম। অপরাহ্ণ – বিকাল। ধরন – বন্ধ। অকস্মাৎ – হঠাৎ। এ যাত্রা – এবারের মতন। অবাক – আশ্চর্য। ব্যাপার – বিষয়। ভরসা – আশ্রয়স্থল। সমস্ত – সব। প্রকাণ্ড – বিরাট বড়ো। জল-নিকাশ – জল বার করা। হত্যা – অনড় অবস্থান। কৃষক – চাষি। দ্রুতপদে – তাড়াতাড়ি। প্রস্থান – স্থান পরিত্যাগ। সন্ধ্যা – সাঁঝ। ঠেস – হেলান। তামাক – এক ধরনের নেশার দ্রব্য। ক্রুদ্ধভাবে – রাগত চিত্তে। হেজে – পচে। হুকুম – নির্দেশ। খবর – সংবাদ। লোকসান – ক্ষতি। খুড়ো – কাকা। জমিদারি – জমিদারের ভূসম্পত্তি। এতক্ষণ – এই পর্যন্ত। মড়াকান্না – মৃত ব্যক্তির আত্মীয়পরিজনের ক্রন্দন। সদর – প্রধান প্রবেশদ্বার। নাগরাজুতো – বিশেষ ধরনের পাদুকা। রসিকতা – কৌতুক। তথাপি – তাসত্ত্বেও। সংবরণ – সংযত। বিনীত – নম্র। কোপালে – কোদাল দিয়ে মাটি কাটা। উচ্ছিষ্ট – যা ফেলে দেওয়া হয়েছে এমন। কর্জ – ধার। ক্রোধে – রাগে। উত্তপ্ত – গরম। অমতে – বিনা অনুমতিতে। ভিন্ন – আলাদা। কৌতূহল – আগ্রহ। প্রবৃত্তি – ইচ্ছা। নিরুত্তরে – বিনা জবাবে। প্রাঙ্গণ – উঠোন। সন্ধ্যাপ্রদীপ – সান্ধ্যদীপ। বিস্ময় – অবাক। সুমুখে – সামনে। নমস্কার – প্রণাম। উৎকণ্ঠা – ভয়। স্মরণ – মনে রাখা। নিঃশব্দে – চুপ করে। বিস্ময় – আশ্চর্য। বন্দোবস্ত – ব্যবস্থা। অনুমতি – মত; সায়। মৃদুকণ্ঠে – হালকা সুরে। বিস্ময়ে – অবাক হয়ে। হতবুদ্ধি – বুদ্ধিহীন। প্রত্যাখ্যান – ফিরিয়ে দেওয়া। একলা – একাকী। সমস্ত – সব। তদবস্থায় – সেই পরিস্থিতিতে। সাঙ্গ – শেষ। মিনতি – আবেদন। অন্নকষ্ট – খাদ্যাভাব। খাঁটি – আসল। যথার্থ – সঠিক। প্রকাশ – পরিস্ফুট। অসহ্য – সহন করা যায় না এমন; অসহনীয়। বিস্ফারিত – চোখ বড়ো করে। ব্যাকুল – উৎকণ্ঠিত। জুলুম – জোর করে আদায় করা। বিহ্বল – হতভম্ব। হতবুদ্ধি – বুদ্ধিহীন; নির্বোধ। বিবাদ – ঝগড়া। পাণ্ডুর – পাংশুটে। মনস্তত্ত্ব – মন সম্পর্কীয় বিদ্যা। প্রবৃত্তি – ইচ্ছা। কলহ – ঝগড়া। অভিরুচি – ইচ্ছা। সম্ভাব – সুসম্পর্ক। অগোচর – ইন্দ্রিয়ের অতীত। বাগবিতণ্ডা – কথা কাটাকাটি। চণ্ডীমণ্ডপ – সাধারণত সেখানে দুর্গাপুজোয় প্রতিমার পুজো হয়; পাকা স্থায়ী মঞ্চ। রেহাই – মুক্তি। ত্রয়োদশী – তেরোতম দিন। অস্বচ্ছ – মলিন। জ্যোৎস্না – চাঁদের আলো। প্রৌঢ় – মধ্যবয়স্ক। অনুনয় – অনুরোধ। রাঙা – লাল। ক্রুদ্ধ – রুষ্ট; রাগান্বিত। মোরে – আমাকে। জখম – আহত। ওষ্ঠপ্রান্তে – ঠোঁটের কোণে। ঈষৎ – মৃদু। পয়লা – প্রথম। অনাহত – আহত হয়নি এমন। সায় – মত। অনতিদূরে – কিছু দূরে; খুব দূরে নয়। সাবেক – পুরোনো দিনের। হস্তগত – করায়ত্ত। চাহিয়া – দেখে। আটক – আটকে। মোরা – আমরা। তেনার – তাঁর। জ্বলতি – জ্বলতে। কইলেন – বললেন। কেটতেই – কাটতেই। সমঝে – বুঝে; ভেবে। বরবাদ – নষ্ট। মুই – আমি। আপনার – নিজের। আল্লার কিরে – আল্লার নামে দিব্য বা শপথ গ্রহণ। কিরে – দিব্যি। বেইমান – যার কৃতজ্ঞতা বোধ নেই। সেলাম – মুসলমানি কায়দায় অভিবাদন। নারলাম – পারলাম না। মোছলমান – মুসলমান। ছ্যালে – ছেলে। জানতি – জানতে পারতে। মোরা – আমরা। উপক্রম – চেষ্টা। স্তব্ধতা – চুপ থাকা। পাষাণ – প্রস্তর। সারা রাত্রি – সমস্ত রাত। তারকেশ্বর – এখানে মহাদেবের মন্দির আছে। নিরন্তর – সবসময়।

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্দশ অধ্যায়পল্লীসমাজ’-এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সাহায্য প্রয়োজন হয়, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না। এছাড়াও, আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারা উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন