অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – পল্লীসমাজ – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Sourav Das

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের চতুর্দশ অধ্যায়পল্লীসমাজ’ এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই পরীক্ষায় আসে এবং ভালো প্রস্তুতির জন্য সহায়ক।

পল্লীসমাজ – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল কেন?

কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল কারণ অবিরাম বৃষ্টিতে তাদের চাষের খেত জলমগ্ন হয়ে গেছে। ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেলে সারাবছর তাদের খাদ্য সংস্থান করা কঠিন হবে। অনাহারে তাদের মৃত্যু অবধারিত।

রমেশ বেণীর কাছে জল বার করে দেবার হুকুম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল কেন?

বেণী রমেশের জ্যাঠার ছেলে। তার চাষিদের জমিসংলগ্ন জলাশয় আছে। সেটি বাঁধ দেওয়া আছে। অবিরাম বর্ষণে চাষিদের জমি জলমগ্ন হয়ে ফসল পচে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তাই জল বের করে দেওয়ার জন্য বাঁধ কেটে জল বের করা একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। এই কারণেই বেণী ঘোষালের কাছে গ্রামবাসীদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে রমেশ এই প্রস্তাব করে।

বেণী জল বার করতে চায়নি কেন?

চাষিদের জমির পাশেই বেণী ঘোষালের একটা জলা আছে। বাঁধ দিয়ে ঘোষাল ও মুখুয্যেরা মাছ রক্ষা করে, এই অবস্থায় বাঁধ কেটে দিলে চাষিরা উপকৃত হলেও দু-তিনশো টাকার মাছ নষ্ট হবে। সেই ক্ষতি স্বীকার করতে বেণী ঘোষাল নারাজ ছিল। তাই সে বাঁধ কেটে জল বার করতে দিতে চায়নি।

ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখমুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল, – রমেশের এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?

অসহায় দুর্বল গ্রামবাসীরা তাদের ফসল রক্ষার জন্য যখন রমেশের দ্বারস্থ হয়, তখনই সে সাহায্যের জন্য বেণী ঘোষালের কাছে ছুটে যায়। জ্যেষ্ঠ বেণী চাষিদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি প্রদর্শন করেনি। উপরন্তু এই অবস্থায় তিনশো টাকা মাছের ক্ষতি স্বীকার করে বাঁধ কাটতে দিতে সে রাজি নয়, তাও সরাসরি জানিয়ে দেয়। নিরীহ গ্রামবাসীরা তার দৃষ্টিতে ছোটোলোক ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা কীভাবে ধারদেনা করে চালাবে তাতে সে বিন্দুমাত্র ভাবিত নয়। বেণীর এইরুপ মানসিকতায় রমেশ ঘৃণায়-লজ্জায় প্রস্থান করে।

রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল। – রমেশের বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?

রমেশ যদু মুখুয্যের বিধবা কন্যা বাল্য সখী রমার শরণাপন্ন হয়, এই দুর্যোগের হাত থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য। কারণ বাঁধ ঘোষাল ও মুখুয্যের উভয়ের। রমেশের কথা শুনে রমা জানায় বেণী ঘোষালের এ বিষয়ে মত নেই। রমেশ জানায় সেই বছর গ্রামবাসীদের স্বার্থে কিছু ক্ষতি স্বীকার করতেই হবে। প্রথমে রমা নীরব থাকলেও পরে জানায় ওই ক্ষতি মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তার এই উত্তরে রমেশ হতবাক হয়ে যায়, কারণ এই উত্তর তার প্রত্যাশিত ছিল না।

রমা রমেশের অনুরোধে রাজি হয়নি কেন?

রমা রমেশের অনুরোধ রাখতে রাজি হয়নি, কারণ সে মনে করে এ জমিদারি তার নামে থাকলেও মূলত পিতা যদু মুখুয্যে নাবালক সন্তান যতীনকেই তা দিয়ে গেছেন। রমাকে অভিভাবকত্বে ও দক্ষতায় যা রক্ষা করতে হবে। তাই পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের জমিদারি বুদ্ধিতে ক্ষতি স্বীকার করলে তাদের প্রভূত লোকসান হবে বলে তার ধারণা। এ ছাড়া বাঁধ ঘোষালদেরও, তাই এক্ষেত্রে বেণীরও মত নেই। তাই নিজের ইচ্ছা খাটিয়ে সে এ কাজ করতে পারে না।

মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে – কে, কার সম্পর্কে এ কথা বলেছিল? সে কেন এ কথা বলেছিল?

তারিণী ঘোষালের ছেলে রমেশ যদু মুখুয্যের বিধবা কন্যা বাল্যসখী রমার উদ্দেশে এ কথা বলেছিল।

রমা দুঃস্থ, অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি না জানিয়ে নিজের জমিদারির লাভলোকসান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে রমেশের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সরাসরি জানিয়ে দেয় বাঁধ কাটার নির্দেশ দিতে সে পারবে না। প্রাণের চেয়ে অর্থের মূল্য রমার কাছে বড়ো বলে মনে হয় রমেশের। মানুষ তার মানবিকতায় শ্রেষ্ঠ; মানমর্যাদা, জাতধর্মে নয় – এই কথাটি যেন রমেশ তার বাল্যসখী রমাকে বোঝাতে চেয়েছিল।

রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল্ করিয়া চাহিয়া রহিল – রমার এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?

রমেশ বাল্যসখী রমাকে গ্রামবাসীদের দুরবস্থার কথা বলেও বাঁধ কাটার অনুমতি পায়নি। রমা সম্পর্কে রমেশের অন্য ধারণা ছিল। কিন্তু যখন রমা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, তার পক্ষে ক্ষতি স্বীকার করা সম্ভব নয় এবং দরদি হলে রমেশ যেন ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়-এই কড়া কথা রমেশের কাছে একেবারেই অনভিপ্রেত ছিল। তার স্থান রমেশের দৃষ্টিতে অনেক উচ্চে ছিল। নিজেকে সংযত করতে না পেরে সে জানিয়েছিল রমাকে শুধু নিষ্ঠুরই বলা যায় না, সে অত্যন্ত নীচ এবং ছোটো মনের অধিকারিণী। এই কথা শুনে রমা অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে এবং বিস্ফারিত অশ্রুসজল চোখে রমেশের দিকে চেয়ে থাকে।

রমা আকবরকে ডেকে এনেছিল কেন?

রমার কাছ থেকেও রমেশ সহযোগিতা না পেয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে যায় গরিব গ্রামবাসীর স্বার্থ সে লঙ্ঘিত হতে দেবে না। তাদের বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। রমেশের এই মন্তব্যেই রমা বুঝেছিল একটা বিরাট অনর্থ ঘটতে চলেছে। তাই সে পাঁচ গ্রামের সর্দার, খ্যাতনামা লাঠিয়াল আকবরকে বাঁধরক্ষার জন্য ডেকে এনেছিল।

মোরা নালিশ করতি পারব না। – কে এ কথা বলেছে? সে নালিশ করতে পারবে না কেন?

পাঁচ গ্রামের সর্দার লাঠিয়াল আকবর এ কথা বলেছিল।

বাঁধরক্ষার জন্য রমা লাঠিয়াল আকবরকে ডেকে পাঠিয়ে রমেশের দলবলকে শায়েস্তা করার হুকুম দেয়, কিন্তু আকবর দেখে ছোটোবাবু নিজেই লাঠি হাতে বাঁধ কাটার কাজে তদারকি করছে। গ্রামবাসীদের একশো বিঘা জমি বাঁচাতেই তার এই প্রচেষ্টা। আকবর নিজে গ্রামের বাসিন্দা হয়ে গ্রামবাসীর বিরোধিতা করতে পারে না। হুকুম মানতে গিয়ে রমেশের লাঠির আঘাতে সে আহত হয়ে ফিরে আসে। বেণী ঘোষাল তাকে ও তার ছেলেদের রমেশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে বললে সে রাজি হয় না। গ্রামবাসীদের স্বার্থে ছোটোবাবু রমেশ যে কাজ করেছে তার জন্য সে নিজেও তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে, তার কথাতেই তা প্রকাশ পেয়েছে। তাই বিনা কারণে সে তার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারবে না।

কেন এত লোকসান করতে যাব সে তো আমি বুঝতে পারিনে! – কীসের লোকসানের কথা বলা হয়েছে?

বাঁধ কেটে দিলে চাষিরা উপকৃত হলেও বেণী ঘোষালের দু-তিনশো টাকার মাছ পার্শ্ববর্তী জলাশয় থেকে বেরিয়ে যাবে। তাই কোনোভাবেই এ ক্ষতি স্বীকারে সে নারাজ। এই লোকসানের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

খুড়োর মতামতের জন্য রমেশের কৌতূহল ছিল না। – খুড়ো কে? কেন তার মতামতের জন্য রমেশের কৌতূহল ছিল না?

খুড়ো বলতে এখানে হালদারমশায়ের কথা বলা হয়েছে।

রমেশের খুড়োর মতামতের ব্যাপারে কোনো কৌতূহল ছিল না, কারণ তোষামোদকারী হালদারমশাই সর্বক্ষেত্রেই বেণী ঘোষালের কথায় সহমত পোষণ করেন।

সে কিছুতেই এরূপ উত্তর আশা করে নাই — কে, কী উত্তর আশা করেনি?

রমেশ যদু মুখুয্যের কন্যা বাল্যসখী রমার কাছ থেকে এমন নেতিবাচক উত্তর আশা করেনি। রমাও জানিয়েছিল যে, মাছ বেরিয়ে গেলে যে ক্ষতি হবে, তা সে মেনে নিতে পারবে না। এই উত্তর রমেশ আশা করেনি।

রমেশ আর শুনিবার জন্য অপেক্ষা করিল না, দ্রুত পদে প্রস্থান করিল। – রমেশ কেন প্রস্থান করল?

রমেশের কাছে গ্রামের চাষিরা এসে অভিযোগ জানিয়েছিল যে গ্রামের ভরসা একশো বিঘার মাঠ ডুবে গেছে, জল বার করে না দিলে সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যাবে। গ্রামের একটা ঘরও সারাবছর খেতে পাবে না। অথচ জমিদার বেণীবাবু বাঁধের গায়ের জলা থেকে বছরে দুশো টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে তাকে আটকে রেখেছে। সকাল থেকে চাষিরা তার কাছে কেঁদে কেঁদে মিনতি জানালেও তিনি সেটা কিছুতেই খুলে দিতে রাজি হননি। এ কথা শুনে রমেশ বেণীবাবুর কাছ থেকে অনুমতি আদায়ের জন্য দ্রুত পদে প্রস্থান করল।

বাড়ি ফিরিয়া সারারাত্রি তাহার ঘুম হইল না, — কার, কেন বাড়ি ফিরে সারারাত্রি ঘুম হল না?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পল্লীসমাজ’ গদ্যাংশ থেকে প্রশ্নে প্রদত্ত অংশটি নেওয়া হয়েছে। উক্ত গদ্যাংশে রমার বাড়ি ফিরে সারারাত্রি ঘুম হল না। কারণ সারারাত অনবরত তার চোখের সামনে ভাসতে লাগল তারকেশ্বরে রমেশকে সামনে বসিয়ে খাওয়ানোর দৃশ্য।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্দশ অধ্যায়পল্লীসমাজ’-এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার বন্ধুদের সঙ্গেও এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Job Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Sourav Das

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বাংলায় শিশুশিক্ষার প্রসারে মুদ্রণ শিল্পের ভূমিকা সম্পর্কে কী জানো?

বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার বিকাশে ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল?

ছাপাবই -এর সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উইলিয়াম কেরির কীরূপ অবদান ছিল?