এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “X-রশ্মি কাকে বলে? X-রশ্মির ব্যবহারগুলি লেখো। X-রশ্মি শনাক্তকরণের দুটি পদ্ধতি লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “X-রশ্মি কাকে বলে? X-রশ্মির ব্যবহারগুলি লেখো। X-রশ্মি শনাক্তকরণের দুটি পদ্ধতি লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

X-রশ্মি কাকে বলে? X-রশ্মির ব্যবহারগুলি লেখো।
একটি উচ্চ গতিবেগসম্পন্ন ইলেকট্রন কণা 103V থেকে 106V বিভবপ্রভেদ দ্বারা ত্বরান্বিত হয়ে কোনো কঠিন প্রতিবন্ধকে (ধাতু) বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন ওই ধাতু থেকে এক ধরনের অদৃশ্য রশ্মি বের হয়, তাকে X-রশ্মি বলে।
X-রশ্মির ব্যবহারগুলি হল –
- দেহের অভ্যন্তরে হাড় কিংবা কিডনিতে পাথর থাকলে X-রশ্মির সাহায্যে রেডিয়োগ্রাফি করে বোঝা যায়।
- ক্যানসার আক্রান্ত কোশের চিকিৎসায় X-রশ্মি ব্যবহার করা হয়।
- পরীক্ষাগারে বিভিন্ন কেলাসের গঠন বিশ্লেষণে X রশ্মির ব্যবহার করা হয়।
- ধাতুবিদ্যায় কোনো ঢালাই -এর মধ্যে ত্রুটি নির্ণয়ে X-রশ্মি ব্যবহৃত হয়।
X-রশ্মি শনাক্তকরণের দুটি পদ্ধতি লেখো।
X-রশ্মি শনাক্তকরণের দুটি হল –
- ফোটোগ্রাফিক প্লেটকে কালো করে।
- কোনো বিশেষ ধরনের পদার্থে প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
X-রশ্মি কে আবিষ্কার করেছিলেন?
X-রশ্মি আবিষ্কার করেছিলেন জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ভিলহেল্ম কনরাড রন্টজেন 1895 সালে। তাঁর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তিনি 1901 সালে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
X-রশ্মির প্রকৃতি কী? এটি কি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ নাকি কণা?
X-রশ্মি হল একটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic Wave), আলো বা রেডিও তরঙ্গের মতোই। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অত্যন্ত ক্ষুদ্র (প্রায় 0.01 nm থেকে 10 nm), যা দৃশ্যমান আলোর তুলনায় অনেক ছোট।
X-রশ্মি সৃষ্টির জন্য কী কী শর্ত প্রয়োজন?
X-রশ্মি সৃষ্টির জন্য তিনটি প্রধান শর্ত প্রয়োজন —
1. ইলেকট্রন উৎস – ক্যাথোড থেকে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইলেকট্রন নির্গত হয়।
2. উচ্চ বিভবপ্রভেদ – ইলেকট্রনগুলিকে প্রায় 103 V থেকে 106 V (1 kV থেকে 1 MV) বিভবপ্রভেদে ত্বরান্বিত করতে হয়।
3. কঠিন ধাতব লক্ষ্য (Target) – এই ত্বরান্বিত ইলেকট্রনগুলিকে একটি কঠিন প্রতিবন্ধক (যেমন – টাংস্টেন, মলিবডেনাম ইত্যাদি) ধাতুতে আঘাত করতে হয়।
X-রশ্মি কীভাবে তৈরি হয়?
X-রশ্মি মূলত দুটি প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় –
1. ব্রেমসস্ট্রাহলং (Bremsstrahlung) – উচ্চগতিসম্পন্ন ইলেকট্রন ধাতব পরমাণুর নিউক্লিয়াসের শক্তিশালী কুলম্ব ক্ষেত্র দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত ও বাঁকানো হলে তাদের হারানো শক্তি X-রশ্মি ফোটন হিসেবে নির্গত হয়।
2. বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রশ্মি (Characteristic Radiation) – ত্বরান্বিত ইলেকট্রন ধাতব পরমাণুর অন্তঃকক্ষপথের (যেমন K-শেল) ইলেকট্রনকে উৎক্ষিপ্ত করলে, বাইরের স্তরের একটি ইলেকট্রন সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে গিয়ে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের X-রশ্মি ফোটন নির্গত করে।
X-রশ্মির বৈশিষ্ট্য লেখো।
X-রশ্মির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো—
1. এটি অত্যন্ত উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ।
2. এটি অদৃশ্য এবং সরলরেখায় গমন করে।
3. এটি গ্যাসকে আয়নিত করতে সক্ষম।
4. এটি ফটোগ্রাফিক প্লেটে প্রভাব ফেলে।
5. এটি কিছু পদার্থে প্রতিপ্রভা (Fluorescence) সৃষ্টি করে।
6. এটি পদার্থ ভেদ করতে সক্ষম (ভেদ করার ক্ষমতা পদার্থের ঘনত্ব ও পারমাণবিক সংখ্যার উপর নির্ভরশীল)।
7. এটি জীবকোষের উপর প্রভাব ফেলে—যা চিকিৎসায় উপকারী হলেও অতিরিক্ত মাত্রায় ক্ষতিকর হতে পারে।
X-রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব কী কী?
X-রশ্মি একটি আয়নিত বিকিরণ (ionizing radiation), তাই এর অতিরিক্ত সংস্পর্শ ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন —
1. জীবকোষের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করতে পারে।
2. রেডিয়েশন সিকনেস (বমি, ক্লান্তি), চর্মরোগ, এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
3. গর্ভস্থ শিশুর উপর এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এই কারণে, X-রশ্মি ব্যবহারের সময় সীসার এপ্রন পরিধান এবং যথাযথ রেডিয়েশন সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
X-রশ্মি এবং γ-রশ্মির মধ্যে পার্থক্য কী?
X-রশ্মি ও γ-রশ্মি উভয়ই তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ এবং এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক সময় ওভারল্যাপ করে। তবে প্রধান পার্থক্য হলো —
1. X-রশ্মি উৎপন্ন হয় পারমাণবিক ইলেকট্রনের স্থানান্তরের ফলে (ব্রেকিং রেডিয়েশন বা চরিত্রগত রেডিয়েশন)।
2. γ-রশ্মি উৎপন্ন হয় তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে (উত্তেজিত অবস্থা থেকে স্থিতিশীল অবস্থায় আসার সময়)।
X-রশ্মির মাধ্যমে হাড়ের ছবি তোলা সম্ভব হয় কেন?
হাড় দেহের অন্যান্য টিস্যু (যেমন মাংসপেশী, চর্বি) অপেক্ষা অনেক বেশি ঘন এবং এতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মতো উচ্চ পারমাণবিক সংখ্যার উপাদান থাকে। ফলে, হাড় নরম টিস্যুর তুলনায় অনেক বেশি X-রশ্মি শোষণ করে। এই ভিন্নমাত্রার শোষণের ভিত্তিতেই ফটোগ্রাফিক প্লেট বা ডিটেক্টরে কনট্রাস্টযুক্ত ছবি (রেডিওগ্রাফ) তৈরি হয়, যেখানে হাড় সাদা রঙে স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “X-রশ্মি কাকে বলে? X-রশ্মির ব্যবহারগুলি লেখো। X-রশ্মি শনাক্তকরণের দুটি পদ্ধতি লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “X-রশ্মি কাকে বলে? X-রশ্মির ব্যবহারগুলি লেখো। X-রশ্মি শনাক্তকরণের দুটি পদ্ধতি লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন