তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য লেখো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য লেখো।

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য লেখো।

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য –

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনরাসায়নিক পরিবর্তন
তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন একটি স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা। এটি চাপ, তাপমাত্রা, আলো, তড়িৎ বা অন্য কোনো বাহ্যিক কারণে প্রভাবিত হয় না।রাসায়নিক বিক্রিয়া চাপ, উষ্ণতা ও অনুঘটক প্রভৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়।
তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন সর্বদা তাপমোচী বিক্রিয়া।রাসায়নিক পরিবর্তন তাপমোচী বা তাপশোষী হতে পারে।
এই পরিবর্তনে যে শক্তি নির্গত হয় তা সাধারণ রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে উদ্ভূত তাপের থেকে কয়েক লক্ষ গুণ বেশি।রাসায়নিক পরিবর্তনে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ অনেক কম।
তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনে নতুন মৌলান্তর হয়।রাসায়নিক পরিবর্তনে মৌলান্তর হয় না।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে মৌলিক পার্থক্য কী?

সবচেয়ে মৌলিক পার্থক্য হলো পরমাণুর নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন।
1. তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনে একটি মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে বা পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি নতুন মৌলের পরমাণু সৃষ্টি হয় (মৌলান্তর ঘটে)।
2. রাসায়নিক পরিবর্তনে শুধুমাত্র পরমাণুগুলোর মধ্যে ইলেকট্রনের বিনিময় বা শেয়ারিং হয় (বন্ধন গঠন বা ভাঙ্গন); নিউক্লিয়াসে কোনো পরিবর্তন ঘটে না, তাই নতুন মৌল সৃষ্টি হয় না।

কোন পরিবর্তনটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ – তেজস্ক্রিয় না রাসায়নিক?

রাসায়নিক পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। তাপমাত্রা, চাপ, ঘনত্ব বা অনুঘটকের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বা দিক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অন্যদিকে, তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া; এটিকে বাহ্যিক কোনো উপায়ে (তাপ, চাপ ইত্যাদি দিয়ে) নিয়ন্ত্রণ, ত্বরান্বিত বা বন্ধ করা যায় না।

কোন প্রক্রিয়ায় বেশি শক্তি নির্গত হয় এবং কেন?

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনে অনেক বেশি শক্তি (সাধারণত কয়েক লক্ষ গুণ বেশি) নির্গত হয়। এর কারণ নিউক্লিয়াসের ভর শক্তিতে রূপান্তর (আইনস্টাইনের সূত্র E = mc² অনুযায়ী)। নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ায় এর সামান্য পরিবর্তনও বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে। রাসায়নিক পরিবর্তনে শুধুমাত্র ইলেকট্রনীয় কক্ষপথের শক্তি নির্গত বা শোষিত হয়, যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম।

রাসায়নিক পরিবর্তনে মৌলান্তর হয় না, এটা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়?

একটি সাধারণ রাসায়নিক বিক্রিয়া (যেমন – লোহার উপর জং ধরা, কাঠ পোড়ানো, খাবার হজম হওয়া) শুরুর আগে ও শেষে উপাদানগুলোর পরমাণবিক সংখ্যা (Atomic Number) একই থাকে। বিক্রিয়ায় শুধু অণু, পরমাণু বা আয়নগুলোর পুনর্বিন্যাস ঘটে।
উদাহরণ – লোহা (Fe) অক্সিজেন (O) -এর সাথে বিক্রিয়া করে ফেরিক অক্সাইড (Fe₂O₃) তৈরি করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত উপস্থিত মৌল থাকে লোহা এবং অক্সিজেনই।

তেজস্ক্রিয়তা কি থামানো বা বিপরীত করা সম্ভব?

না, সাধারণত সম্ভব নয়। তেজস্ক্রিয় ক্ষয় একটি একমুখী এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া। একে বাহ্যিকভাবে থামানো যায় না বা এর দিক বিপরীত করা যায় না। একটি নির্দিষ্ট মৌল তার অর্ধায়ুর (Half-life) মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে ক্ষয় হতে থাকবে। রাসায়নিক বিক্রিয়া অনেকক্ষেত্রেই বিপরীতধর্মী (Reversible) হয়।

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনের উদাহরণ দাও।

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনের উদাহরণ হল –
1. ইউরেনিয়াম-238 ক্ষয় হয়ে থোরিয়াম-138 -এ পরিণত হওয়া।
2. কার্বন-14 ক্ষয় হয়ে নাইট্রোজেন-14 -এ পরিণত হওয়া।
3. রেডন গ্যাসের ক্ষয়।
4. নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা পারমাণবিক বোমায় শক্তি উৎপাদন।

রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ দাও।

রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ হল –
1. লোহার উপর জং ধরা।
2. কাগজ বা কাঠ পোড়ানো।
3. খাবার রান্না করা।
4. দুধ থেকে দই হওয়া।
5. এসিড-ক্ষারকের নিরপেক্ষকরণ বিক্রিয়া।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য লেখো।।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শুষ্ক করতে গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে গাঢ় HNO₃ ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় না কেন?