অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – জেলখানার চিঠি – বিষয়সংক্ষেপ

Gopi

আজকের আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চবিংশ অধ্যায়জেলখানার চিঠি’ – এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – জেলখানার চিঠি – বিষয়সংক্ষেপ
অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – জেলখানার চিঠি – বিষয়সংক্ষেপ

জেলখানার চিঠি অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

বাংলা তথা ভারতের বুকে ঊনবিংশ শতকে যেসব মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছিল সুভাষচন্দ্র বসু তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অতি জনপ্রিয় নেতা ছিলেন তিনি। তাই ভারত তথা বিশ্বের কাছে তাঁর পরিচিতি গড়ে ওঠে ‘নেতাজি’রূপে। মেধা, ব্যক্তিত্ব, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের এক দুর্লভ সমন্বয়ে তিনি মানুষের মনে সূর্যের মতো দেদীপ্যমান চরিত্র হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠ হয়েছিলেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি কটকে তাঁর জন্ম। পিতা জানকীনাথের আদি নিবাস ছিল ২৪ পরগনার কোদালিয়া গ্রামে। কটকের র‍্যাভেনস কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা, কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক (বিএ) এবং ইংল্যান্ড থেকে আইসিএস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। তবে ইতিপূর্বে ভারতবিদ্বেষী ইংরেজ অধ্যাপক ওটেন সাহেবকে প্রহারের অভিযোগে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হন। কৃতিত্বের সঙ্গে আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদবুদ্ধ হয়ে তিনি সরকারি চাকরির মোহ ত্যাগ করেন এবং প্রথমদিকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে রাজনৈতিক গুরু মেনে অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দেশের কাজে যোগ দেন। জাতীয় কংগ্রেসের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেন এবং ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। প্রবল ইংরেজবিদ্বেষী ক্রিয়াকলাপ ও চরমপন্থা অবলম্বনের জন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইংরেজ সরকার তাঁকে অন্তরিন করে রাখাকালীন, ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতমুক্তির প্রবল পিপাসা নিয়ে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে কাবুল হয়ে রাশিয়ায় পৌঁছোন। পরে রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর দায়িত্বভার গ্রহণ করে তাকে বিশাল সেনাবাহিনীতে পরিণত করেন। তিনি রাজনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যে বেশ কিছু মূল্যবান লেখালেখি করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম সেরা দুটি হল – ‘তরুণের স্বপ্ন’, ‘An Indian Pilgrim’। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে সংবাদ প্রচারিত হয়।

জেলখানার চিঠি অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ

অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে দেশোদ্ধার প্রচেষ্টার অপরাধে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছিল। অর্থাৎ তিনি ছিলেন রাজনৈতিক বন্দি বা রাজবন্দি। তাই সাধারণ বন্দি না হলেও কারাবাসকালে তাঁকে সাধারণ বন্দিদের সংস্পর্শ পেতে হয়েছিল। তিনি লাভ করেছিলেন অনন্য অভিজ্ঞতা। ইংরেজের কারাগারে সাধারণ বন্দিদের দুঃখদুর্দশা, তাদের মানসিক অবস্থা-অবস্থান্তর, তাঁর নিজের মানসিক অবস্থা, কারা পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্পর্কে গভীর ভাবনাচিন্তা ইত্যাদি বিষয় ধরা পড়েছে তাঁর এই পত্রখানিতে। নেতাজি যে কত বড়ো চিন্তাবিদ এ চিঠি তার প্রমাণ। কারণ কারাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বা রাজনৈতিক মানুষজন যা কল্পনা করতে পারেন না, জেলে বসে গভীর ভাবনা দ্বারা উপলব্ধি করে তা তিনি বন্ধুকে জানাচ্ছেন। কারাভ্যন্তরে যারা থাকে তাদের প্রতি এক অকৃত্রিম মমত্ববোধ বা বিরামহীন সহানুভূতি তিনি অনুভব করেছেন। তাই অনায়াসে এবং আন্তরিকভাবে তিনি বন্ধুকে বলেন – ‘এতদিন জেলে বাস করার পর কারা-শাসনের একটা আমূল সংস্কারের একান্ত প্রয়োজনের দিকে আমার চোখ খুলে গেছে এবং ভবিষ্যতে কারা-সংস্কার আমার একটা কর্তব্য হবে।’ এমন অকৃত্রিম ভাবনা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পক্ষেই সম্ভব। যে স্বাধীন-সার্বভৌম ভারতের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, সেখানে বন্দি-অপরাধী মানুষদের প্রতিও যে সামান্য বঞ্চনা বাঞ্ছিত নয় তাঁর কল্পনায়, এ চিঠিটি পাঠ করলেই তা বোঝা যায়।

জেলখানার চিঠি অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জেলে বন্দি থাকাকালীন ‘জেলখানার চিঠি’ বন্ধু দিলীপ রায়কে লেখা। ইতিপূর্বে বন্ধুর পাঠানো চিঠি তাঁকে আনন্দ দিয়েছিল, হৃদয়কে কোমলভাবে স্পর্শ করে তাঁর চিন্তা ও অনুভূতিকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তবে তাঁর এই জবাবি চিঠি যে censor-এর কোপে পড়ে অন্তরের গভীরতম প্রবাহগুলিকে দিনের উন্মুক্ত আলোয় আসতে নাও দিতে পারে এ আশঙ্কা তাঁর ছিল। তাই তিনি মনে করেছেন – বন্দিত্বের কালে তাঁর ভাবনাচিন্তা ও অনুভব হয়তো ভবিষ্যতে অকথিতই থেকে যাবে।

বন্ধু যে বন্ধুর বন্দিত্বে ব্যথাহত এ মনে করে সুভাষ তাঁকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দেখতে চেয়েছেন। তিনি মনে করেছেন জেলখানার সমস্ত আবহাওয়ায় মানুষ যেন বিকৃত অমানুষিকতাই লাভ করে, যা সব জেল সম্পর্কেই সত্য। কারাবাসকালে বন্দিদের নৈতিক উন্নতির বদলে মানসিকতার হীনতা বাড়ে। ব্রিটিশ-প্রণালীর ভারতীয় কারাশাসন খারাপ আদর্শের অনুসরণ বলে তাঁর মনে হয়েছে। সুতরাং বন্দিদের প্রতি সহানুভূতি তিনি আশা করেছেন। বিবেচনা করতে হবে অপরাধীদের প্রবৃত্তিগুলি মানসিক ব্যাধি। সেই প্রেক্ষিতে প্রতিষেধমূলক দণ্ডবিধিকে সংস্কারমূলক নতুন দণ্ডবিধির পথে প্রবাহিত করতে হবে। সুভাষচন্দ্র নিজে কারাবাসী বলে অন্যান্য বন্দিদের সহানুভূতির চোখে দেখেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর মনে হয়েছে – এ দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকগণ যদি এভাবে কারাভিজ্ঞ হতেন তবে শিল্প-সাহিত্যের রূপই বদলে যেত। যেমন – কাজী নজরুলের কারাবাসের অভিজ্ঞতা তাঁর কাব্যকবিতাকে সমৃদ্ধ করেছিল। তাঁর এও মনে হয়েছে – অগ্নিযুগের প্রেক্ষাপটে আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তরে যেভাবে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করেছে, সেভাবে যদি তা জীবনের সব মুহূর্তে ছড়িয়ে যায়, তাহলে কোনো দুঃখকষ্ট আর যন্ত্রণা থাকবে না।

লেখকের মনে এমন দার্শনিক ভাব জাগ্রত হয়েছে বলে তিনি অন্তরে সহনশীলতার শক্তি লাভ করেছেন। মনে হয়েছে-মানুষ যদি তার অন্তরে ভেবে দেখার যথেষ্ট বিষয় খুঁজে পায়, তাহলে বন্দিত্বে তার কষ্ট থাকে না। কিন্তু কষ্ট তো শুধু আধ্যাত্মিক নয়, তা দৈহিকও। তাই দেহকেও সুস্থ থাকতে হবে। লোকমান্য তিলক কারাবাসকালে গীতার ব্যাখ্যা লেখেন, সেসময় মনের দিক থেকে তিনি সুখী ছিলেন। জেলের বিরামহীন নির্জনতায় মানুষ জীবনের চরম সমস্যাগুলি তলিয়ে দেখার সুযোগ পায়। তবে মেয়াদ যদি দীর্ঘ হয় তাতে ব্যক্তির অজ্ঞাতসারে অকালবার্ধক্য এসে চেপে ধরতে পারে। এর জন্য বেশ কিছু অভাববোধই দায়ী। মানুষের এমন কিছু অভাব আছে যা সে নিজে পূর্ণ করে নিতে পারে, কিন্তু আরও কিছু অভাব বাইরের বিষয় দিয়ে পূর্ণ করে নিতে হয়। বন্দিদের অকালবার্ধক্যে এই বাইরের বিষয়ের বঞ্চনাও একটা কারণ। স্বভাবতই লেখকের মনে হয়েছে – যতদিন না জেলের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ও সামাজিক বিধিব্যবস্থার বন্দোবস্ত হচ্ছে, ততদিন জেলবন্দিদের নৈতিক উন্নতি কখনোই সম্ভব নয়।

অন্যদিকে ভাবলে দেখা যায়, প্রিয়জনের সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা জেলের মধ্যেও মানুষকে অনেকটা সুখ দিতে পারে। এর একটা প্রধান কারণ হল, রাজনৈতিক বন্দি অপরাধী নয়, মুক্তি পেলে সমাজ তাকে সাদরে বরণ করবে, কিন্তু সাধারণ অপরাধীর ক্ষেত্রে প্রিয়জন ছাড়া কোনো কদর নেই মুক্তির পরে। এ জন্য সে সমাজে মুখ দেখাতে লজ্জা পায়।

জেলের কষ্ট যতটা না দৈহিক তার থেকে অনেক বেশি মানসিক। মানুষের চোখের জল প্রতিদিন সমস্ত পৃথিবীর মাটিকে একেবারে তলা পর্যন্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে, বন্ধুর এ বক্তব্য লেখকের মনকে গভীর বিষণ্ণ করে তুলেছে। তবে এ চোখের জল সবটাই দুঃখের নয়, এর মধ্যে করুণা ও প্রেমবিন্দু আছে। সমৃদ্ধ ও প্রশস্ত আনন্দস্রোতে পৌঁছোনোর সুযোগ থাকলে কেউই বোধহয় দুঃখকষ্টের ছোটো ছোটো ঢেউ পার হতে গররাজি হত না। বরং দুঃখযন্ত্রণা উন্নত কর্ম ও উচ্চ সফলতায় অনুপ্রেরণা দান করে বলে তিনি মনে করেন। কারণ বিনা দুঃখকষ্টে যা লাভ হয় তার কোনো মূল্য নেই।

জেলখানার চিঠি অধ্যায়ের নামকরণ

পত্ররচনাও যে উন্নততম সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে, বিশ্বসাহিত্য থেকে এর নানা নজির সংগ্রহ করা যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছিন্নপত্র’ পত্রসাহিত্যেরই এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। মান্দালয় জেলে বন্দি থাকাকালে বন্ধু দিলীপ রায়ের সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পত্রবিনিময় হয়। ভাষা ইংরেজি ‘জেলখানার চিঠি’ নামাঙ্কনে এই চিঠিটি বাংলায় অনূদিত। এই নামকরণ কতটা যুক্তিসংগত বা এর যথার্থতা কতটা সার্থক তা বিচার করে দেখা যেতে পারে।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জেলে অবস্থানকালে এই পত্রটি রচিত হয়। স্বভাবতই একজন রাজবন্দি হিসেবে এই পত্রে তাঁর নিজের তৎকালের মানসিকতা, অনুভূতি, সাধারণ অপরাধীদের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ও মমত্ববোধ চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। কারাবাসের অভিজ্ঞতায় তিনি কীভাবে কারাসংস্কারের প্রসঙ্গ তুলে নিজের ভাবনাচিন্তাকে প্রয়োগ করা যায়, তা-ও এ চিঠিতে তাঁর বন্ধুকে জানাচ্ছেন। বন্ধুর কাছ থেকে প্রীতি-উপহার হিসেবে পাওয়া বইয়ের প্রাপ্তি স্বীকার করে জানাচ্ছেন, সেগুলো হয়তো ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। কারণ তাদের পাঠকসংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে তাঁর প্রেরিত পত্রের censor-এর বাধা অতিক্রম করা প্রসঙ্গে আশঙ্কার প্রসঙ্গও এসেছে। দেখা যাচ্ছে – সমগ্র পত্রে বারবার জেল, জেলযাপন এবং জেলসংক্রান্ত নানা প্রসঙ্গই প্রবল হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া এই চিঠির রচনাস্থান যে জেলখানা-এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। রচনাটিও পত্রাকারে প্রেরিত।

অতএব পত্রের নির্দিষ্ট পরিকাঠামো রচিত, জেলখানা থেকে লিখিত ও প্রেরিত এবং রচনায় জেলপ্রসঙ্গের বহুমাত্রিক অবতারণার বিষয়টি মাথায় রেখেই এক্ষেত্রে নামকরণ করা হয়েছে বলে বোঝা যায়। সুতরাং এই নামকরণটি নিঃসন্দেহে সার্থক ও যথাযথ।

জেলখানার চিঠি অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

জেলখানা – জেল; কারাগার; ফাটক; কয়েদখানা; যেখানে বিভিন্ন প্রকার অপরাধীদের বন্দি করে রাখা হয়। আশঙ্কা – অনিষ্টের সম্ভাবনা থেকে ভয়। Double Distillation – দ্বিপাতনীকরণ। হৃদয়তন্ত্রীকে – মনকে; চিত্তকে; অন্তঃকরণকে। অনুভূতি – উপলব্ধি; অনুভব। অনুপ্রাণিত – অনুপ্রেরণা পেয়েছে এমন। Censor – সরকারি আধিকারিকের অনুমোদন-প্রক্রিয়া। উন্মুক্ত – খোলা; বাধাবন্ধন নেই এমন। প্রাচীর – পাঁচিল। লৌহদ্বার – লোহা দ্বারা নির্মিত দরজা। অন্তরালে – আড়ালে; দৃষ্টির বাইরে; এখানে জেলের ভিতর। অকথিত – যা বলা সম্ভব হয়নি এমন। আধ্যাত্মিক – ব্রহ্ম বিষয়ক; আধ্যাত্ম বা আত্মা সম্বন্ধীয়। ভণ্ডামি – ভান; কপটতা; প্রতারণা। নৈতিক উন্নতি – নীতিগত উৎকর্ষতা লাভ। হীন – নীচ; অধম। আমূল সংস্কার – সার্বিক অবস্থা পরিবর্তন। কারা-সংস্কার – জেলের অভ্যন্তরীণ উন্নতি বা উন্নয়ন বা ইতিবাচক অবস্থা পরিবর্তন। ব্রিটিশ-প্রণালী – ইংরেজ প্রবর্তিত পদ্ধতি। অনুসরণ – অনুগমন; অনুবর্তন; পিছনে পিছনে যাওয়া। প্রবৃত্তি – অভিরুচি; প্রবণতা; ঝোঁক। মানসিক ব্যাধি – মনের রোগ; মানসিক রোগ। প্রতিষেধকমূলক দণ্ডবিধি – পরিবর্তন সাধন করে এমন শাস্তিবিধি। অপরাধ যারা করে এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যায়, তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য বা নৈতিক উন্নতিসাধনের জন্য দণ্ডবিধি বা শাস্তিপ্রদান। অত্যাধুনিক বিচারব্যবস্থায় এই বিধির প্রয়োগ দেখা যায়। কারাশাসন-বিধি – কারাভ্যন্তরে প্রশাসনিক ব্যবস্থা বা নিয়মাবলি। আর্টিস্ট – শিল্পী, শিল্পকর্ম করে এমন। কাজী নজরুল ইসলাম – ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতৃদত্ত নাম হল দুখু মিঞা। অল্পবয়সে পিতৃবিয়োগের জন্য নিদারুণ দারিদ্র্যের মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেন। নানা কবিতা, সাময়িক পত্রিকা লিখে তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধ ঘোষণা করলে এবং এই বিরুদ্ধাচরণের জন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়। প্রচুর কাব্যগ্রন্থ, গান এবং অন্যান্য গদ্য রচনাও তিনি করেছেন। ভারতবাসীকে জাগ্রত করার জন্য ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’-এর মতো কবিতা লিখেছেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট তিনি চিরবিদায় গ্রহণ করেন। মহত্তর – অধিকতর মহৎ। দ্বন্দ্ব – সংঘাত; বিবাদ। সঞ্চার – সংক্রমণ; এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন। লোকমান্য তিলক – (১৮৫৬-১৯২০) মহারাষ্ট্রে যে সর্বাত্মক স্বাধীনতা আন্দোলন সংঘটিত হয়, ফাড়কের সেই বিপ্লববাদকে নেতৃত্ব দেন বাল গঙ্গাধর তিলক। তিনি ছিলেন সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের প্রতি আস্থাবান। ‘মারাঠা’ ও ‘কেশরী’ পত্রিকার মাধ্যমে তিনি এই বিপ্লববাদ প্রচার করেন। ‘গণপতি’ ও ‘শিবাজি’ উৎসবের মাধ্যমে তিনি মানুষের মনে সংগ্রামীচেতনা জাগরিত করেন। তাঁর সদন্ত ঘোষণা ছিল – “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা অর্জন করবই।” রাজদ্রোহের অভিযোগে ইংরেজ সরকার তাঁকে ছ-বছরের জন্য নির্বাসনদণ্ড দেয়। মান্দালয় জেল – ইংরেজ উপনিবেশের এক কুখ্যাত জেল। এর অবস্থান বার্মায়, অধুনা মায়ানমারে। বার্মা মুলুক যখন ভারতেশ্বরী ভিক্টোরিয়ার উপনিবেশের অন্তর্গত তখন রাজবন্দিদের এখানে স্থানান্তরিত করে নির্বাসনদণ্ড দেওয়া হত। লোকমান্য তিলক এবং সুভাষচন্দ্র উভয়েই এই অকারণ সাজায় এখানে ছিলেন। নির্জনতা – জনহীনতা; নিভৃত। মেয়াদ – ধার্য সময় বা কাল; কারাদণ্ডের নির্ধারিত সময়। Martyrdom – শহিদত্ব, শহিদের অবস্থা-মৃত্যু বা যন্ত্রণা। মহত্ত্ব – মহৎ ভাব; মহতের ভাব। পরিচায়ক – জ্ঞাপক; সূচক; পরিচয়দানকারী। Humour – কৌতুক রসবোধ; মানসিক অবস্থা বা মেজাজ; মেজাজের সঙ্গে তাল রেখে চলা। Proportion – যথাযথ সম্বন্ধ বা সংগতি। Martyr – শহিদ। স্পর্ধা – অহংকারপূর্ণ দুঃসাহস। স্থৈর্য – স্থিরতা। আত্মম্ভরিতা – আত্মসর্বস্বতা; অহংকার বা দন্ত। অজ্ঞাতসারে – অজ্ঞাতে; গোপনে বা অগোচরে থেকে যাওয়া। অকালবার্ধক্য – অকালে বৃদ্ধত্ব লাভ; সময়ের আগে বুড়ো হয়ে যাওয়া। কারাবাসের মেয়াদ দীর্ঘ হলে ব্যক্তির জীবনে অকালেই বার্ধক্য নেমে আসে বলে লেখক মনে করেন। ব্যায়াম – দেহচর্চা; দেহের উন্নতিবিধানের জন্য কসরত। অধীনতার শৃঙ্খলভার – পরাধীনতার বা পরের অধীনে থাকার আড়ষ্টতা বা অবমাননা। ইউরোপীয় বন্দিদের – নানা কারণে ইউরোপীয় ব্যক্তিবর্গের যারা বন্দি তাদের। সাপ্তাহিক বন্দোবস্ত – সাতদিনে একবার ঘটানো হয় এমন ব্যবস্থা। পিকনিক – চড়ুইভাতি; বনভোজন। বিশ্রান্তালাপ – স্বচ্ছন্দে নিভৃত আলাপ-আলোচনা। বাহ্য – বাহির। সংগীতচর্চা – গীত (গান)-বাদ্যের চর্চা। সাধারণ বক্তৃতা – কোনো বিষয় সম্পর্কে সাধারণ্যে আলোচনা বা কিছু বলা। সরস – প্রীতিপদ। সমৃদ্ধ – সম্যক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত; সম্পদশালী। সচরাচর – সাধারণত; প্রায়শ। রাজনৈতিক অপরাধী – রাজনৈতিক কারণে বন্দিত্বপ্রাপ্ত মানুষজন। অদৃষ্ট – ভাগ্য; নিয়তি। সাধারণ অপরাধী – ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত মানুষজন; বা বিচারাধীন বন্দি। Yard – জেলের বিশেষ কক্ষ; যেখানে বন্দিদের রাখার বন্দোবস্ত হয়। সংবাদ – খবর। অসন্তোষজনক – অপ্রীতিজনক; অতৃপ্তিকর। উদ্যম – উৎসাহ; উদ্যোগ। সামর্থ্য – ক্ষমতা; যোগ্যতা। উৎপীড়ন – পীড়ন; নিগ্রহ; অত্যাচার। পার্থিব অস্তিত্ব – পৃথিবীতে বিদ্যমানতা; পৃথিবীতে থাকার অবস্থা; জাগতিক অবস্থা। আনন্দধাম – যে গৃহে, বাড়িতে, ঘরে সদাই আনন্দ বিরাজ করে। লীন – মিলিত, লুপ্ত। স্বপ্নাবিষ্ট আত্মাকে – স্বপ্নের ঘোরে আচ্ছন্ন আত্মসত্তা বা স্বরুপকে। পারিপার্শ্বিক – চারদিকস্থ; পার্শ্ববর্তী। নিরানন্দময় – আনন্দহীন অব্যবস্থা। বিষণ্ণ – বিষাদযুক্ত; দুঃখিত। নিরুৎসাহ – উৎসাহ, উদ্যম নেই এমন; হতাশ।


আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের পঞ্চবিংশ অধ্যায়জেলখানার চিঠি’-এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায়শই এটি পরীক্ষায় আসে। আশা করি, নিবন্ধটি আপনার পড়াশোনায় সহায়ক হবে। আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হলে, নির্দ্বিধায় টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া, পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে তাদেরও উপকৃত হতে সাহায্য করুন। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?