অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের গড়াই নদীর তীরে অধ্যায়ের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে গড়াই নদীর তীরে অধ্যায়ের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় গড়াই নদীর তীরে অধ্যায়ের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই গড়াই নদীর তীরে অধ্যায়ের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।
জসীমউদ্দীনের ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় প্রকৃতিপ্রেমের এক অপূর্ব বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত একটি ছোট্ট কুঁড়েঘর, যাকে প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্যে ঢেকে রেখেছে।
কুঁড়েঘরটি যেন প্রকৃতির মায়াজালে আবদ্ধ, ফুল-লতা-পাতায় পরিবেষ্টিত। উঠোনের কোণে ফুটে থাকা বুনো ফুল যেন তাদের হাসিমাখা মুখের মাধ্যমে শান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাচানে ঝুলে থাকা সিমলতা, লাউ, কুমড়োর লতা আর তার উপর ফুটে থাকা রঙিন ফুল যেন কুঁড়েঘরটিকে সাজিয়ে তুলেছে। নীচে লাল নটেশাক যেন রঙের ঝলকানি ছড়িয়ে দিচ্ছে, আর তার উপরে কুঁড়েঘরের বধূর লাল শাড়ির মতো রঙের ঢেউ।
এই রূপের সমুদ্রে মাঝে মাঝে জলচর পাখিরা তাদের সন্তানদের নিয়ে বিচরণ করে। তারা যেন এঁদো ডোবা থেকে উঠে এসে এই জলসমুদ্রে মেতে ওঠে গানে আর কথায়। গাছে গাছে গান গায় বনের পাখিরা, তারা কুঁড়েঘরটিকে তাদের মুক্ত বনেরই অংশ মনে করে। তাই তাদের মধ্যে মানুষের প্রতি কোন ভয় নেই।
এই মনোরম পরিবেশে কুঁড়েঘরের মানুষের মটরশুঁটি, জিরা, ধনে, লঙ্কা-মরিচ শুকিয়ে থাকে উঠোনে। মনে হয় যেন প্রকৃতির এই সবুজের মাঝে এগুলো দিয়ে কেউ আঙিনায় আলপনা এঁকে দিয়েছে। কবির মনে হয়, এই সবকিছুর মধ্য দিয়েই ফুটে উঠছে কুঁড়েঘরের এক অপূর্ব সুখচিত্র। এই কুঁড়েঘরের মানুষের জীবনের সমস্ত আনন্দ-উল্লাস যেন প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের সাথে মিশে গেছে।
এই সুন্দর দৃশ্য দেখে সুদূর আকাশের মেঘেরাও যেন কুঁড়েঘরটিকে ভালোবেসে তার উপরে অবস্থান করে নিজেদের রঙিন আভায় আরও রঙিন করে তোলে।
সব মিলিয়ে ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় কবি গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত একটি কুঁড়েঘরকে কেন্দ্র করে পল্লিপ্রকৃতির এক অসাধারণ রূপসৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন।
গড়াই নদীর তীরে – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
কবি জসীমউদ্দীন কোন্ অভিধায় অভিহিত?
কবি জসীমউদ্দীন ‘পল্লিকবি’ অভিধায় অভিহিত।
তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
কবি জসীমউদ্দীন রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল – ‘নক্সীকাঁথার মাঠ’ ও ‘রাখালী’।
কবিতায় বর্ণিত নদীটির নাম কী?
কবিতায় বর্ণিত নদীটির নাম হল গড়াই নদী।
মাচানের পরে কী আছে?
মাচানের উপর আছে সিমলতা আর লাউ-কুমড়োর ঝাড়।
মানুষের বসত করার কথা এখানে কারা বোঝেনি?
মানুষের বসত করার কথা এখানে গাছের শাখায় গানে মত্ত থাকা বনের পাখিরা বোঝেনি।
উঠানেতে কী কী শুকোচ্ছে?
উঠোনে মটর ডাল, মশুর ডাল, কালো জিরা, ধনে, লংকা ও মরিচ রোদে শুকোচ্ছে।
বাড়িটিকে ভালোবেসে কারা বেড়াতে এলে কিছুক্ষণ থেমে রয়?
বাড়িটিকে ভালোবেসে সন্ধ্যা ও সকালের রঙিন মেঘেরা বেড়াতে এলে আকাশে কিছুক্ষণ থেমে রয়।
কুটিরখানিরে লতাপাতা ফুল _ রয়েছে ঘিরে। (পাতায়/মায়ায়/শাখায়)
মায়ায়।
মাচানের পরে _ আর লাউ-কুমড়ার ঝাড়। (সিম-লতা/ঝাউ-লতা/বুনো-লতা)
সিম-লতা।
_ নটে শাক মেলিছে রঙের ঢেউ। (বড়ো/কচি/লাল)
লাল।
মটরের ডাল, ডাল, _ কালিজিরা আর ধনে। (মুগের/মসুরের/ছোলার)
মসুরের।
_ সকালের রঙিন মেঘেরা এখানে বেড়াতে এসে। (সাঁঝ/রোজ/আজ)
সাঁঝ।
উঠানের কোণে বুনো _ হেসে হয় কুটি কুটি।
ফুলগুলি।
_ মেয়েরা বেড়াইতে আসে গানে গানে কথা কয়ে।
ডাহুক।
গাছের শাখায় বনের পাখিরা _ গান ধরে।
নির্ভয়ে।
জিরা ও ধনের রঙের পাশেতে _ আঁকা যার।
আলপনা।
_ যেন থামিয়া রয়েছে এ বাড়িরে ভালোবেসে।
কিছুখন।
কুটিরটিকে কে, কীভাবে ঘিরে রয়েছে?
কুটিরটিকে প্রকৃতির লতাপাতা, ফুল যেন মায়ায় ঘিরে রয়েছে।
লাল শাড়ি কে রোদে দিয়ে যায়?
লাল শাড়ি গড়াই নদীর তীরের কুটিরের কোনো বধূ রোদে দিয়ে যায়।
ডাহুক মেয়েরা কোথা থেকে কুটিরে বেড়াতে আসে?
ডাহুক মেয়েরা পল্লির এঁদো ডোবা থেকে কুটিরে বেড়াতে আসে।
জসীমউদ্দীনের কোন্ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে? তাঁর অপর একটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
জসীমউদ্দীনের ‘সোজনবাদিয়ার ঘাট’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
কবির অপর একটি কাব্যগ্রন্থের নাম হল ‘বালুচর’।
উঠানের কোণে বুনো ফুলগুলি কী করে?
উঠানের কোণে বুনো ফুলগুলি সকাল-সন্ধ্যায় ফুটে যেন মনের আনন্দে হেসে কুটি কুটি হয়।
বনের পাখিরা কোথায়, কীভাবে গান ধরে?
বনের পাখিরা গড়াই নদীর তীরের কুটিরের গাছের শাখায় নির্ভয়ে গান ধরে।
উঠোনে কী দিয়ে আলপনা আঁকা হয়?
পল্লিকবি জসীমউদ্দিনের লেখা ‘গড়াই নদীর তীরে’ নামক কবিতাটি গড়াই নদীর তীরের কুটিরটির উঠোনে শুকোতে দেওয়া হয়েছে লংকা, মশুর-মটর ডাল আর জিরা ও ধনে – এগুলিকে দেখে মনে হয় এর রং দিয়ে যেন আলপনা আঁকা হয়।
জসীমউদ্দীনের “গড়াই নদীর তীরে” কবিতাটি পল্লিপ্রকৃতির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসার এক অপূর্ব নিদর্শন। গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরকে কেন্দ্র করে কবি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির এক মনোমুগ্ধকর চিত্র তুলে ধরেছেন।
কবিতায় কুঁড়েঘরটিকে প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা একটি শিশুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। ফুল-লতা-পাতায় ঘেরা এই কুঁড়েঘর যেন প্রকৃতির স্নেহে আপ্লুত। উঠোনের কোণে ফুটে থাকা বুনো ফুল, মাচানে জড়িয়ে থাকা সিমলতা ও লাউ-কুমড়োর লতা, নীচে লাল নটেশাক – সব মিলিয়ে এক অপূর্ব রঙের সমারোহ। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে জলচর পাখিরা তাদের সন্তানদের সাথে বিচরণ করে, গাছে গাছে কোকিল ও বুলবুলির কলতান গানে মুখরিত করে তোলে পরিবেশ।
কুঁড়েঘরের আঙিনায় শুকিয়ে থাকা মটরশুঁটি, জিরা, ধনে, লঙ্কা ও মরিচ যেন প্রকৃতির তুলির আঁচড়ে আঁকা এক অপূর্ব আলপনা। এই সুন্দর পরিবেশে কুঁড়েঘরের মানুষের জীবনের আনন্দ-উল্লাস ফুটে ওঠে। সুদূর আকাশের মেঘরাও যেন এই কুঁড়েঘরকে ভালোবেসে এসে রঙিন ছায়া ছড়িয়ে আরও মনোরম করে তোলে।
পরিশেষে বলা যায়, ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় জসীমউদ্দীন পল্লিপ্রকৃতির প্রতি তার অসীম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতার ভাষা সরল, ছন্দ মধুর এবং বর্ণনা চিত্রাত্মক, যা পাঠকের মনে প্রকৃতির প্রতি এক অপূর্ব ভালোবাসা জাগ্রত করে।