এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ কাকে বলে? উদাহরণ দাও। তড়িৎবিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ – যেসব পদার্থ গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম এবং তড়িৎ পরিবহণের ফলে যাদের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে ও নতুন পদার্থ সৃষ্টি হয়, সেইসব পদার্থকে তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন – খাদ্য লবণ, কস্টিক সোডা, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড ইত্যাদি তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ।
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ – যেসব পদার্থ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণে অক্ষম, সেইসব পদার্থকে তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন – চিনি, গ্লুকোজ, পেট্রোল, বেঞ্জিন, বিশুদ্ধ জল ইত্যাদি তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ।
তড়িৎবিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
তড়িৎবিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে পার্থক্য –
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ | তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ |
এগুলি সাধারণত আয়নীয় যৌগ হয়। তবে কিছু সমযোজী যৌগ জলীয় দ্রবণে বা গলিত অবস্থায় তড়িৎবিশ্লেষ্যরূপে আচরণ করে। | এগুলি সাধারণত সমযোজী যৌগ। |
এই পদার্থগুলি গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে বিয়োজিত হয়। | এই পদার্থগুলি গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে বিয়োজিত হয় না। |
এগুলি ধ্রুবীয় দ্রাবকে (যেমন – জল) দ্রাব্য। | এগুলি ধ্রুবীয় দ্রাবকে অদ্রাব্য, কিন্তু কিছু তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ যেমন – চিনি, গ্লুকোজ ইত্যাদি জলে দ্রাব্য। |
এগুলি তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম। | এগুলি তড়িৎ পরিবহণে অক্ষম। |
তড়িৎ পরিবহণের ফলে তড়িৎবিশ্লেষ্যগুলি রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে। | এগুলি তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না, তাই রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্টও হয় না এবং নতুন পদার্থও উৎপন্ন হয় না। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ বলতে কী বোঝায়?
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ হলো এমন পদার্থ, যা গলিত অবস্থায় বা দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়ে তড়িৎ পরিবহন করতে পারে এবং তড়িৎপ্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিশ্লেষণ ঘটে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ – লবণ (NaCl), সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄)।
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ কাকে বলে?
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ হলো এমন পদার্থ, যা গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না এবং তড়িৎপ্রবাহ প্রয়োগ করলে কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না।
উদাহরণ – চিনি, গ্লুকোজ, পেট্রোল।
তড়িৎবিশ্লেষ্যের উদাহরণ দাও।
তড়িৎবিশ্লেষ্যের উদাহরণ হল –
1. অম্ল – HCl, H₂SO₄, HNO₃
2. ক্ষার – NaOH, KOH
3. লবণ – NaCl, CuSO₄, KNO₃
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্যের উদাহরণ দাও।
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্যের উদাহরণ হল – চিনি (সুক্রোজ), গ্লুকোজ, ইউরিয়া, অ্যালকোহল (ইথানল), পেট্রোল/বেঞ্জিন, বিশুদ্ধ জল (খুব দুর্বল তড়িৎবিশ্লেষ্য, তবে ব্যবহারিকভাবে অবিশ্লেষ্য ধরা হয়)
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ কীভাবে তড়িৎ পরিবহন করে?
তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিভক্ত হয় (যেমন – NaCl → Na⁺ + Cl⁻)। এই মুক্ত আয়নগুলো তড়িৎ পরিবহন করে।
বিশুদ্ধ জল কি তড়িৎ পরিবহন করে?
না, বিশুদ্ধ জল তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ, কারণ এতে মুক্ত আয়নের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। তবে লবণ, অ্যাসিড বা ক্ষার মিশ্রিত করলে তা তড়িৎ পরিবহন করতে সক্ষম হয়।
তড়িৎবিশ্লেষণ কী?
তড়িৎবিশ্লেষণ হলো একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যেখানে তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে তা বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয়।
উদাহরণ – জলের তড়িৎবিশ্লেষণে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস তৈরি হয়।
দুর্বল ও প্রাবল্য তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্যে পার্থক্য কী?
দুর্বল ও প্রাবল্য তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্যে পার্থক্য হল –
1. প্রাবল্য তড়িৎবিশ্লেষ্য – দ্রাবকে সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয় (যেমন – HCl, NaCl)।
2. দুর্বল তড়িৎবিশ্লেষ্য – দ্রাবকে আংশিকভাবে আয়নিত হয় (যেমন – CH₃COOH, NH₄OH)।
চিনির দ্রবণে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে কী হয়?
চিনির দ্রবণ তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য হওয়ায় তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না এবং তড়িৎ পরিবহনও হয় না।
তড়িৎবিশ্লেষ্যের ব্যবহার উল্লেখ করো।
তড়িৎবিশ্লেষ্যের ব্যবহার হল –
1. ধাতু নিষ্কাশনে (যেমন – অ্যালুমিনিয়াম),
2. তড়িৎলেপনে (Electroplating),
3. যানবাহনের ব্যাটারি (লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি),
4. রাসায়নিক যৌগ প্রস্তুতিতে (যেমন – ক্লোরিন গ্যাস উৎপাদন)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থ ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ কাকে বলে? উদাহরণ দাও। তড়িৎবিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন