আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের একত্রিংশ অধ্যায় ‘ভালোবাসা কি বৃথা যায়’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব। এই বিষয়সংক্ষেপটি অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকে প্রশ্নোত্তর প্রায়শই পরীক্ষায় আসে।
ভালোবাসা কি বৃথা যায়? অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মজিলপুরে ৩১ জানুয়ারি, ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে শিবনাথ শাস্ত্রীর জন্ম। তিনি সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল ও সংস্কৃত কলেজে শিক্ষার্জন করেন। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাশ করে ‘শাস্ত্রী’ উপাধি লাভ করেন। সমাজসংস্কার আন্দোলন ও ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সংযোগ গড়ে ওঠে। সেকালের বিখ্যাত ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ভবানিপুরের সাউথ সাবার্বণ স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদ অলংকৃত করেন তিনি। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে হেয়ার স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষক পদে যোগ দেন। তবুও সরকারি কাজে নিরুৎসাহ এবং ব্রাহ্মসমাজের কাজে আত্মনিয়োগের কারণে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করেন। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে শিবনাথ শাস্ত্রী ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন। কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ‘Indian Reforms Association’-এ তিনি যোগ দিয়েছিলেন। ব্রাহ্মসমাজের পক্ষ থেকে ‘সখা’ নামক এক কিশোর পত্রিকা তিনি প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘যুগান্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল – ‘বঙ্গসাহিত্য’, ‘দূর্বা’, ‘সাঁওতালি উপকথা’, ‘বীরভূমের ইতিবৃত্ত’ ইত্যাদি। বাল্যবিবাহের বিরোধিতা, বিধবাবিবাহের পক্ষে জোরালো মত দান, কুসংস্কারের বিরোধিতা, অর্থহীন আচার-আচরণের প্রতি বিরাগ শিবনাথের জীবনের অনন্য কতকগুলি দিক। ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
ভালোবাসা কি বৃথা যায়? অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ
ভালোবাসা কি বৃথা যায়? নামক গদ্যাংশের লেখক শিবনাথ শাস্ত্রী পরাধীন ইংরেজ পদদলিত ভারতবর্ষে দুই বিখ্যাত ইংরেজ মহাত্মার পরিচয় বিধৃত করেছেন। এদের মধ্যে একজন হলেন ডেভিড হেয়ার এবং অপরজন ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন (বেথুন)। এই গদ্যাংশে তিনি বলেছেন যে, মানুষ যদি মানুষকে অকুণ্ঠচিত্তে ভালোবেসে থাকে, তবে সে ভালোবাসা কখনোই বৃথা যায় না। তাদের ভালোবাসার প্রতিদানে মানুষ তাদের জন্য প্রাণও বিসর্জন দিতে পারে।
ডেভিড হেয়ার স্কটল্যান্ড থেকে এদেশে এসেছিলেন। ঘড়িওলার কাজ করার জন্য। পরম বন্ধু রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গে হেয়ার সাহেব প্রতিনিয়ত এদেশের ছেলেদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার উপায় বিষয়ে আলোচনা করতেন। ক্রমে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে উভয়ের উদ্যোগে এবং তৎকালীন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার হাইড ইস্টের সহায়তায় এদেশের ছেলেদের ইংরেজি শিক্ষার উদ্দেশ্যে হিন্দু স্কুল খোলা হল। কলকাতার অন্যান্য স্থানেও তিনি স্কুল খুলেছিলেন, সভাস্থাপনের মধ্য দিয়ে তিনি স্কুলপাঠ্য পুস্তকও প্রকাশ করতে লাগলেন। বিদ্যালয়ের ছোটো ছোটো ছেলেদের তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন। এককথায় বলা যায় যে, হেয়ার ছিলেন বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার জনক। হেয়ারের মৃত্যুর দিনে সমগ্র জনসমাজ কান্নায় ভেঙে পড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে হেয়ারের কবরস্থলে এসে উপস্থিত হয় হাজার হাজার নরনারী। পিতৃবিয়োগের ন্যায় অনেকে অশৌচও পালন করে।
অপর এক বিখ্যাত ইংরেজ মহাপুরুষ ছিলেন ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন। ইনি বেথুন সাহেব নামেই সমধিক পরিচিত। ইনি বাঙালি মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইনি বিদেশ থেকে এদেশে এসেছিলেন তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের আইনমন্ত্রী হয়ে। বাঙালি মেয়েদের করুণ অবস্থা দেখে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হন। তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রচলন করার জন্য। সেই উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতায় একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজে তার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের নাম ছিল ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’। বর্তমানে এর নাম ‘বেথুন স্কুল’। এটি কলেজ স্তরেও উন্নীত হয়েছে। অপর এক মহাপুরুষ, যিনিও আমৃত্যুকাল মহিলা শিক্ষার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করেছেন, সেই বিদ্যাসাগর মহাশয়েরও বেথুন সাহেবের ভালোবাসার কথা মনে পড়লে চোখে জল এসে যেত। লেখকের মতে, বঙ্গপ্রদেশের মানুষদের ঘরে ঘরে হেয়ার, রামমোহন ও বেথুন সাহেবের প্রতিমূর্তি রাখা উচিত।
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের একত্রিংশ অধ্যায় ‘ভালোবাসা কি বৃথা যায়’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, আপনি টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!