অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ভালোবাসা কি বৃথা যায়?

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের ভালোবাসা কি বৃথা যায়? অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে ভালোবাসা কি বৃথা যায়? অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় ভালোবাসা কি বৃথা যায়? অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই অভালোবাসা কি বৃথা যায়? অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

শিবনাথ শাস্ত্রী তার বিখ্যাত গদ্যাংশে “ভালোবাসা কি বৃথা যায়?” পরাধীন ভারতে দুই মহান ইংরেজ ব্যক্তি, ডেভিড হেয়ার এবং ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন (বেথুন)-এর পরিচয় তুলে ধরেছেন। এই গদ্যে লেখক যুক্তি দেন যে, যখন মানুষ নিঃস্বার্থভাবে অন্য মানুষকে ভালোবাসে, তখন সেই ভালোবাসা কখনোই বৃথা যায় না। তাদের ভালোবাসার প্রতিদানে মানুষ এমনকি তাদের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারে।

ডেভিড হেয়ার ছিলেন একজন স্কটিশ ঘড়িওয়ালা যিনি ভারতে এসেছিলেন। তিনি রাজা রামমোহন রায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন এবং তাদের দুজনের উদ্যোগে ১৮১৭ সালে হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান। হেয়ার কেবল স্কুল প্রতিষ্ঠাই করেননি, বরং তিনি স্কুলপাঠ্য পুস্তকও প্রকাশ করেন এবং বিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতি অত্যন্ত ভালোবাসা প্রদর্শন করেন। হেয়ারের মৃত্যুর পর, সমগ্র জনসমাজ শোকসন্তপ্ত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ তার কবরস্থলে শ্রদ্ধা জানাতে আসে।

ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন, যিনি বেথুন সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন, ছিলেন একজন আইনজীবী এবং তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের আইনমন্ত্রী। তিনি বাঙালি মেয়েদের করুণ অবস্থা দেখে দুঃখিত হন এবং তাদের শিক্ষার প্রসারের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ১৮৪৯ সালে কলকাতায় হিন্দু ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে বেথুন স্কুল ও কলেজ নামে পরিচিত। বেথুন সাহেবের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশে মহিলা শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিবনাথ শাস্ত্রী মনে করেন যে, হেয়ার, রামমোহন এবং বেথুন সাহেবের মতো মহান ব্যক্তিদের ভালোবাসা ও ত্যাগের জন্য তাদের বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে তাদের প্রতিমূর্তি স্থাপন করা উচিত। তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আমাদেরকে অন্যদের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখাতে শেখায়।

এই গদ্যটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভালোবাসা একটি শক্তিশালী শক্তি যা বিশ্বকে আরও ভালো জায়গা করে তুলতে পারে। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কেবল ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, সমাজের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই প্রবন্ধে, লেখক দুইজন মহান ব্যক্তি, ডেভিড হেয়ার এবং ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন (বেথুন) এর জীবন ও কর্মের উদাহরণ তুলে ধরেছেন। লেখকের মূল বক্তব্য হলো, ভালোবাসা কখনো বৃথা যায় না এবং যারা প্রকৃত বড়োমনের মানুষ তারা সকলকে ভালোবাসতে পারে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ভালোবাসা কি বৃথা যায়?

ভালোবাসা কি বৃথা যায়? অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মজিলপুরে ৩১ জানুয়ারি, ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে শিবনাথ শাস্ত্রীর জন্ম। তিনি সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল ও সংস্কৃত কলেজে শিক্ষার্জন করেন। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাশ করে ‘শাস্ত্রী’ উপাধি লাভ করেন। সমাজসংস্কার আন্দোলন ও ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সংযোগ গড়ে ওঠে। সেকালের বিখ্যাত ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ভবানিপুরের সাউথ সাবার্বণ স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদ অলংকৃত করেন তিনি। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে হেয়ার স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষক পদে যোগ দেন। তবুও সরকারি কাজে নিরুৎসাহ এবং ব্রাহ্মসমাজের কাজে আত্মনিয়োগের কারণে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করেন। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে শিবনাথ শাস্ত্রী ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন। কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ‘Indian Reforms Association’-এ তিনি যোগ দিয়েছিলেন। ব্রাহ্মসমাজের পক্ষ থেকে ‘সখা’ নামক এক কিশোর পত্রিকা তিনি প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘যুগান্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল – ‘বঙ্গসাহিত্য’, ‘দূর্বা’, ‘সাঁওতালি উপকথা’, ‘বীরভূমের ইতিবৃত্ত’ ইত্যাদি। বাল্যবিবাহের বিরোধিতা, বিধবাবিবাহের পক্ষে জোরালো মত দান, কুসংস্কারের বিরোধিতা, অর্থহীন আচার-আচরণের প্রতি বিরাগ শিবনাথের জীবনের অনন্য কতকগুলি দিক। ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

ভালোবাসা কি বৃথা যায়? অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

ভালোবাসা কি বৃথা যায়? নামক গদ্যাংশের লেখক শিবনাথ শাস্ত্রী পরাধীন ইংরেজ পদদলিত ভারতবর্ষে দুই বিখ্যাত ইংরেজ মহাত্মার পরিচয় বিধৃত করেছেন। এদের মধ্যে একজন হলেন ডেভিড হেয়ার এবং অপরজন ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন (বেথুন)। এই গদ্যাংশে তিনি বলেছেন যে, মানুষ যদি মানুষকে অকুণ্ঠচিত্তে ভালোবেসে থাকে, তবে সে ভালোবাসা কখনোই বৃথা যায় না। তাদের ভালোবাসার প্রতিদানে মানুষ তাদের জন্য প্রাণও বিসর্জন দিতে পারে।

ডেভিড হেয়ার স্কটল্যান্ড থেকে এদেশে এসেছিলেন। ঘড়িওলার কাজ করার জন্য। পরম বন্ধু রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গে হেয়ার সাহেব প্রতিনিয়ত এদেশের ছেলেদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার উপায় বিষয়ে আলোচনা করতেন। ক্রমে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে উভয়ের উদ্যোগে এবং তৎকালীন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার হাইড ইস্টের সহায়তায় এদেশের ছেলেদের ইংরেজি শিক্ষার উদ্দেশ্যে হিন্দু স্কুল খোলা হল। কলকাতার অন্যান্য স্থানেও তিনি স্কুল খুলেছিলেন, সভাস্থাপনের মধ্য দিয়ে তিনি স্কুলপাঠ্য পুস্তকও প্রকাশ করতে লাগলেন। বিদ্যালয়ের ছোটো ছোটো ছেলেদের তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন। এককথায় বলা যায় যে, হেয়ার ছিলেন বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার জনক। হেয়ারের মৃত্যুর দিনে সমগ্র জনসমাজ কান্নায় ভেঙে পড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে হেয়ারের কবরস্থলে এসে উপস্থিত হয় হাজার হাজার নরনারী। পিতৃবিয়োগের ন্যায় অনেকে অশৌচও পালন করে।

অপর এক বিখ্যাত ইংরেজ মহাপুরুষ ছিলেন ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন। ইনি বেথুন সাহেব নামেই সমধিক পরিচিত। ইনি বাঙালি মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইনি বিদেশ থেকে এদেশে এসেছিলেন তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের আইনমন্ত্রী হয়ে। বাঙালি মেয়েদের করুণ অবস্থা দেখে তিনি অত্যন্ত দুঃখিত হন। তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রচলন করার জন্য। সেই উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতায় একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজে তার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের নাম ছিল ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’। বর্তমানে এর নাম ‘বেথুন স্কুল’। এটি কলেজ স্তরেও উন্নীত হয়েছে। অপর এক মহাপুরুষ, যিনিও আমৃত্যুকাল মহিলা শিক্ষার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করেছেন, সেই বিদ্যাসাগর মহাশয়েরও বেথুন সাহেবের ভালোবাসার কথা মনে পড়লে চোখে জল এসে যেত। লেখকের মতে, বঙ্গপ্রদেশের মানুষদের ঘরে ঘরে হেয়ার, রামমোহন ও বেথুন সাহেবের প্রতিমূর্তি রাখা উচিত।

লেখক মনে করেন, রামমোহন, বেথুন এবং হেয়ার সাহেবের মতো মহান ব্যক্তিদের প্রতিমূর্তি আমাদের ঘরে ঘরে থাকা উচিত। তাদের জীবন ও কর্ম আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং ভালোবাসার শিক্ষা দেবে।

শিবনাথ শাস্ত্রী তার বিখ্যাত গদ্য “ভালোবাসা কি বৃথা যায়?”-এ পরাধীন ভারতে দুই মহান ইংরেজ ব্যক্তিত্ব, ডেভিড হেয়ার এবং ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন (বেথুন) -এর অবদান তুলে ধরেছেন। লেখকের মতে, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কখনোই বৃথা যায় না এবং এটি ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হেয়ার ও বেথুন ছিলেন দুইজন এমন ব্যক্তি যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের উন্নয়নের জন্য। হেয়ার ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে ভারতীয়দের জ্ঞান বৃদ্ধিতে অবদান রাখেন, অন্যদিকে বেথুন মহিলা শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের অর্ধেক অংশের ক্ষমতায়ন করেন। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও ত্যাগের ফলে বাংলাদেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন এসেছিল।

শাস্ত্রী মনে করেন যে, হেয়ার, রামমোহন ও বেথুন-এর মতো মহান ব্যক্তিদের ত্যাগ ও ভালোবাসার জন্য তাদের স্মরণে বাংলার প্রতিটি ঘরে তাদের প্রতিমূর্তি স্থাপন করা উচিত। তাদের জীবন ও কর্ম আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং আমাদেরকে অন্যদের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখাতে শেখায়।

পরিশেষে বলা যায়, “ভালোবাসা কি বৃথা যায়?” শুধু একটি প্রশ্ন নয়, বরং এটি একটি মন্ত্র যা আমাদের সকলকে অন্যদের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখানোর জন্য অনুপ্রাণিত করে।

Share via:

মন্তব্য করুন