অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – সুভা – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ত্রয়োত্রিংশ অধ্যায়, ‘সুভা’র বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই বিষয়সংক্ষেপ অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অধ্যায়ের বিভিন্ন প্রশ্ন প্রায়ই পরীক্ষায় আসে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – সুভা – বিষয়সংক্ষেপ
অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – সুভা – বিষয়সংক্ষেপ

সুভা অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) – জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। কথাকাহিনী, সহজপাঠ, রাজর্ষি, ছেলেবেলা, শিশু, শিশু ভোলানাথ, হাস্যকৌতুক, ডাকঘর প্রভৃতি রচনা শিশু ও কিশোর মনকে আলোড়িত করে। দীর্ঘ জীবনে অজস্র কবিতা, গান, ছোটোগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন। ১৯১৩ সালে Song Offerings (গীতাঞ্জলি)-এর জন্য এশিয়ার মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পান। দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তাঁর রচনা।

সুভা অধ্যায়ের পাঠপ্রসঙ্গ

তিন বোনের কনিষ্ঠাটির নাম সুভাষিণী। সকলে তাকে সংক্ষেপে সুভা বলে ডাকে। সুভা বাকশক্তিহীনা অর্থাৎ কথা বলতে পারে না। চণ্ডীপুর গ্রামের এই মেয়েটি বড়ো হলে বাবা-মা তার বিয়ে দিলেন শুভলগ্নে পঞ্জিকা মিলিয়ে। কিন্তু সবাই যখন বুঝল নববধূ বোবা তখন সুভার স্বামী আবার অন্য একটি বিয়ে করে আনল। সুভার এই কষ্টের বিষয়টিই এই গল্পে প্রকাশ পেয়েছে। গল্পটি এক মুক বালিকার কষ্টের বিবরণ গাথা বলা যায়।

সুভা অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

চণ্ডীপুর গ্রামের বাণীকন্ঠের তিন মেয়ের কনিষ্ঠার নাম সুভাষিণী। ডাক নাম সুভা। সুভা বোবা। কিন্তু তার চোখ দুটি বড়ো বড়ো। খুব সুন্দর মন অচিরেই তার উপর ছায়া ফেলে। আর তার ঠোঁট দুটি ভাবের আভাস পেলেই কচি পাতার মতো কেঁপে ওঠে। সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল তাদের গোয়ালের দুটি গাভী – সর্বশী ও পাঙ্গুলি। আর ছিল একটা ছাগল আর একটা বিড়ালছানা। সুভার সঙ্গে একটা মানবসঙ্গীও জুটেছিল। তার নাম প্রতাপ। একেবারেই নিষ্কর্মা; অকর্মণ্য এক মানুষ। প্রতাপের শখ ছিল মাছ ধরা। সুভাকে সে’সু’ বলে ডাকত। সুভা তাকে মাছ ধরতে সাহায্য করত। সুভার বয়স বাড়লে বাবা-মা সমাজের চাপে তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সুভার ইচ্ছা না থাকলেও তাকে বিয়ে করতে হল। পঞ্জিকা মিলিয়ে শুভলগ্নে সুভার বিয়ে হয়ে গেল। বর পশ্চিমে কাজ করে। সে স্ত্রীকে নিয়ে পশ্চিমে চলে গেল। কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সে যখন বুঝতে পারল সুভা কথা বলতে পারে না, সেদিন সুভার দুর্দিন এল। সুভার স্বামী আবার একটা বিয়ে করে আনল এক ‘ভাষাবিশিষ্ট’ মেয়েকে।

সুভা অধ্যায়ের নামকরণ

গল্পের নামকরণ পাঠকের কাছে রচনায় প্রবেশের প্রধান চাবিকাঠি। এই গল্পের নামকরণ প্রধানত চরিত্রকেন্দ্রিক।

গল্পের প্রধান চরিত্র সুভাষিনী। ডাক নাম সুভা। এই বোবা মেয়েটিকে তার মা পছন্দ না করলেও বাবা একটু বেশি ভালোবাসতেন। সুভার বন্ধু ছিল দুটি গাভী, একটা ছাগল ও একটা বিড়ালছানা। এ ছাড়াও গ্রামের এক অকর্মণ্য মানুষ প্রতাপ তাকে ভালোবাসত। সুভার বয়স বাড়লে মা-বাবা সুভার অনিচ্ছাতেই বিয়ে দিলেন। কিন্তু তার স্বামী সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বুঝতে পারল যে সুভা বাকশক্তিহীনা। তাই সে দেখেশুনে আবার একটা বিয়ে করে আনল।

সুতরাং সুভার কষ্ট-বেদনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি নিয়েই আবর্তিত হয়েছে গল্পটি এবং এক বিষাদঘন পরিণতির দিকে গল্পটিকে নিয়ে গেছে। তাই গল্পটির নামকরণ সার্থক।

সুভা অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

প্রথম পরিচ্ছেদ –

দস্তুর মতো – রীতিমতো; বিলক্ষণ। অনুসন্ধান – খোঁজ; অন্বেষণ। অর্থব্যয়ে – পয়সা খরচে। নীরব – নিঃশব্দ; বাক্যহীন। বিরাজ – সগৌরবে অবস্থান। অনুভব – উপলব্ধি; জ্ঞান। বিধাতা – ঈশ্বর। বেদনা – ব্যথা; যন্ত্রণা। কেহ – কেউ। জাগরূক – সজাগ; জাগ্রত।বলিয়া – বলে। গর্ভ – উদর; গর্ভাশয়। কলঙ্ক – দুর্নাম। ওষ্ঠাধর – উপর ও নীচের ঠোঁট। আভাস – ক্ষীণ বা অস্পষ্ট প্রকাশ। কিশলয় – কচি পাতা। আমাদিগকে – আমাদেরকে। তর্জমা – অনুবাদ। প্রসারিত – বিস্তৃতিলাভ। মুদ্রিত – দাগ বা ছাপ পড়েছে এমন। জ্বলিয়া – জ্বলে। ম্লান – মলিন। অস্তমান – অস্তমুখী। চন্দ্র – চাঁদ। অনিমেষ – অপলক; পলকহীন। চাহিয়া – চেয়ে। দিগবিদিকে – চারদিকে। ঠিকরিয়া – ঠিকরে। যাহার – যার। অতলস্পর্শ – যার তলদেশ স্পর্শ করা যায় না। উদয়াস্ত – উদয় থেকে অস্ত। বৃহৎ – বড়ো। বিজন – জনহীন। দ্বিপ্রহর – দুপুর।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ –

তাহার – তার। প্রসার – বিস্তার। তন্বী – কৃশাঙ্গী; লঘু ও সুগঠিত দেহের নারী। লোকালয় – নগর-গ্রাম প্রভৃতি যেখানে মানুষজন বাস করে; জনপদ। স্রোতস্বিনী – যার স্রোত আছে; নদী। আত্মবিস্মৃত – নিজের অস্তিত্ব ও স্বাতন্ত্র্য ভুলে যাওয়া। দ্রুতপদক্ষেপে – তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে। প্রফুল্লহৃদয় – আনন্দিত হৃদয়। কল্যাণকার্য – মঙ্গলকাজ। বাখারি – বাঁশের ফালি বা চটা। আটচালা – আটটি চালা বা চালবিশিষ্ট ঘর বা মণ্ডপ। গার্হস্থ্য – গৃহস্থ জীবন; গৃহ সম্বন্ধীয়। কোলাহল – বহু লোকের মিলিত কণ্ঠস্বরে সৃষ্ট গোলমাল। সহিত – সঙ্গে। তরঙ্গরাশি – ঢেউয়ের রাশি। ন্যায় – মতো। চিরনিস্তদ্ধ – চিরকালীন সম্পূর্ণ নীরব; নিঃশব্দ। বিশ্বব্যাপী – পৃথিবীর সকল স্থানে বিস্তৃত। ক্রন্দন – কান্না। রুদ্র – উগ্র; ভীষণ। মহাকাশ – পৃথিবীর চারপাশের আকাশ ছাড়িয়ে বিদ্যমান আকাশ। সুবিস্তীর্ণ – অতি বিস্তৃত। ক্ষুদ্র – ছোটো। অন্তরঙ্গ – সুহৃদ; আত্মীয়। পদশব্দ – পায়ের আওয়াজ। অপেক্ষা – থেকে। তাহাদের – তাদের। ভর্ৎসনা – ধমক; তিরস্কার। মিনতি – বিনীত প্রার্থনা; নিবেদন। ঢুকিয়া – ঢুকে। গ্রীবা – ঘাড়; গলা। বেস্টন – জড়ানো। গণ্ডদেশ – গাল; কপোল। ঘর্ষণ – ঘষা। নিরীক্ষণ – দেখে। মূক – বোবা। সহিষ্ণু – সহনশীল; ধৈর্যশীল। বিষাদ – স্ফূর্তিহীনতা; দুঃখ। মর্মবেদনা – মনোকষ্ট। নির্বাক – বাক্যহীন; মূক; নীরব। ব্যাকুলতা – অত্যন্ত আকুলতা। আনুগত্য – বশ্যতা। অঙ্গুলি – আঙুল। বুলাইয়া – বুলিয়ে। অভিপ্রায় – ইচ্ছা।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ –

অকর্মণ্য – যে লোক কোনো কাজের নয়। নিঃসম্পর্ক – সম্পর্কহীন। আমোদ – আনন্দ; আহ্লাদ। অবসর – অবকাশ। তাহাদিগকে – তাদেরকে। অপরাহ্নে – বিকেলে। বাক্যহীন – নিশ্চুপ। বরাদ্দ – নির্ধারিত। অলৌকিক – লোকাতীত; যা ইহলোকের নয়। মন্ত্রবলে – মন্ত্রের জোরে বা ক্ষমতায়। জলকুমারী – জলে বাস করে এরকম কল্পিত নারী। অট্টালিকা – বড়ো পাকা বাড়ি; ইমারত। পালঙ্ক – খাট।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ –

অন্তরাত্মা – দেহের অন্তরে অবস্থিত আত্মা। নূতন – নতুন। অনির্বচনীয় – যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। একাকিনী – একা; নিঃসঙ্গ। সুপ্ত – নিদ্রিত। জাগিয়া – জেগে। বসিয়া – বসে। বিষাদে – দুঃখে। নিজর্নতা – জনহীন। ব্যাকুল – আকুল; অস্থির। জনরব – মানুষের কণ্ঠস্বর। বিস্তর – অনেক। উদ্যোগ – আয়োজন। প্রভাত – সকাল। আশঙ্কা – ভয়। ক্রমাগত – পরম্পরাগত; ধারাবাহিক। ডাগর – বড়ো। চক্ষু – চোখ। মর্মবিদ্ধ – হৃদয়ে যা বিদ্ধ হয়েছে। ব্যাধ – যে শিকার করে। চাহিয়া – চেয়ে। শুল্ক – শুকনো। কপোল – গাল; গণ্ড। অশ্রু – চোখের জল। স্বহস্তে – নিজ হাতে। নেত্রপল্লব – চোখের পাতা। শষ্প – কচি ঘাস। শষ্পশয্যা – কচি ঘাসের বিছানা। বাহুতে – হাতে। আঁটিয়া – এঁটে। বাঁধিয়া – বেঁধে। আচ্ছন্ন – আবৃত। শঙ্কিত – ভীত। শশব্যস্ত – অতি চঞ্চল বা ব্যস্ত। নেপথ্য – অন্তরাল। তর্জন – ক্রুদ্ধ গর্জন বা আস্ফালন। গর্জন – উঁচু গম্ভীর আওয়াজ। শুক্তি – ঝিনুক। পঞ্জিকা – পাঁজি; যে পুস্তকে তিথি, তারিখ ইত্যাদি থাকে। সমর্পণ – ত্যাগপূর্বক দান। অনতিবিলম্বে – বেশি দেরি নয়। প্রতারণা – ঠকানো; প্রবঞ্চনা। আজন্মপরিচিত – জন্মকাল থেকে যার সঙ্গে পরিচয় আছে। অব্যক্ত – প্রকাশ করা হয়নি এমন। অন্তর্যামী – ঈশ্বর; যিনি অন্তরে অবস্থান করেন।


আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের সপ্তত্রিংশ অধ্যায় সুভা’ – এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়টি অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় প্রায়ই এটি থেকে প্রশ্ন আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সাহায্যের প্রয়োজন হয়, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া, পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন তারাও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

নবাব সিরাজউদ্দোলা কে ছিলেন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – About Author and Story

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

Class 8 English – The Happy Prince – Question and Answer

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

দেশীর রাজ্য দফতর কেন গঠিত হয়েছিল?

ভারতের জনজীবনে নদনদীর প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর পার্থক্য লেখো।